মধুপুর (টাঙ্গাইল): গাদিলা পাতা শুকাচ্ছে রমজান আলী দম্পতি -সংবাদ
খুব বেশি দিনের কথা নয়। সত্তর দশকের শেষের দিকেও দেশের তৃতীয় বৃহত্তর লাল মাটির মধুপুর বনেও আধিক্য ছিল গাদিলা গাছের। বহুবর্ষজীবী এ গাছটির পাতা ছিল ঐ সময়ে চাহিদার শীর্ষে। বনাঞ্চলের মানুষের কাছে অতি প্রিয় একটি গাছের নাম। টেকসই দেশি প্রজাতির গাদিলার পাতা ছিল মোটামুটি বড় সাইজের। ছিল শিরা উপশিরায় বিভক্ত। এ পাতা দিয়ে তৈরি হতো বিড়ি। পাতা কেটে সাইজ মতো ভেতরে তামাক ভরে সুঁতা দিয়ে বেঁধে বিড়ি বানানোর কোন জোড়ি ছিল না। অবশ্য তখনও কাগজের বিড়ির তেমন প্রচলন শুরু হয়নি। রাজধানী করাচিতে পাতা যেত পূর্ববাংলার এজেন্সিদের মাধ্যমে। ঐ দেশেই বিড়ি হিসেবে দেদারসে চলতো। এদেশেও অনেকেই বিড়ি বানিয়ে তৃষ্ণা মেটাতো ধুমছে। বৃদ্ধরা হুক্কা আর যুবক থেকে শুরু করে কৃষক রাখাল আউল বাউল তাঁতি কামার কুমারসহ সব বয়সীদের কাছে প্রিয় ছিল গাদিলা পাতার বিড়ি। ক্রমাগত বন উজাড়ের ফলে এ গাছটির অস্তিত্ব প্রায় বিলিনের পথে। মধুপুর বনে এখনও দেখা মেলে প্রাচীন এ বৃক্ষটির। অনেকেই হারানো দিনের পেশাকে এখনও বুকে আগলে রেখেছেন অসীম মায়া মমতায়। তাদের দাবি, সামাজিক বনায়ন বন্ধ করে প্রাকৃতিক বনের অবয়ব ফিরে আনা গেলেই আবার গজারির আজুলি হিজল সিদা বট গাদিলার রাজত্ব ফিরে আসবে বলে মনে করেন বনপ্রেমী বনবাসীরা।
উজান গাছাবাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গাদিলা পাতা শুকানো ও প্রক্রিয়াজাত করার দৃশ্য। দু’চালা টিনের ঘর। চারপাশে কোন বেড়া নেই। পড়ে থাকা ঘরটিতে স্বামী স্ত্রী দম্পতি দু’জনে মিলে রশি টানিয়ে গাদিলার মরিচা রঙের পাতাগুলো লাইন করে বেঁধে দিচ্ছে। পাতাগুলো লম্বাটে, প্রশস্ত মোটামুটি। দেখাতে অনেকটা বড় গাছের পাতার মতো। বন থেকে গাদিরা পাতা সংগ্রহ করে চরে রমজান আলরি জীবন জীবিকা। রমজান আলী(৬০) জানালেন, কয়েক বছর যাবত মধুপুর বন থেকে পাতা তোলে এনে সিদ্ধ করে শুকিয়ে বিশ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করেছেন। তার স্ত্রী জানালেন, আগের মত গাছ নেই। পাতাও কম। বৃদ্ধ বয়সে অন্য কাজ করতে পারে না। তাই বনে ঘুরে ঘুরে গাদিলা পাতা এনে বিক্রি করেন। তার মতে, রমজানের বড় ভাই আগে গাদিলা পাতা বিক্রি করতেন। রমজান আলী জানালেন, এখন বিড়ি নয় কয়েল তৈরি হয়। স্থানীয় কাকরাইদ এলাকার পাইকার কিনে নেন। এক সময় বিড়ি তৈরিতে জনপ্রিয় ছিল। এখন আর গাদিলা পাতার বিড়ি হয় না বলে তিনি জানালেন।
মধুপুরের জলচত্র, গাছাবাড়ি, অরনখোলা, পিরোজপুর চাপাইদ, মালিবাজার, দোখলা, পীরগাছা, বেরিবাইদাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গাদিলা গাছকে ঘিরে নানা কথা। বেড়িয়ে আসে পাতা বিড়ি নিয়ে নানা অজানা তথ্য। স্থানীয়রা জানালেন, মধুপুর বন এক সময় ছিল গহীণ অরণ্য। ছিল শাল গজারির অবারিত সবুজ আচ্ছাদন। লাল মাটির বৈচিত্র্যময় গজারি, আজুলি, আনাইগোটা, পিল্লাগোটা, বেহুর, তিতিজাম, গাদিলা, সিদা, জারুল, অর্জুন, বানরনড়ি, শিমুল, গামারি, মনকাটা, বট, বনজাম, বনআলুসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষে ছিল সজ্জিত । অরণ্যচারি আদিবাসী গারো কোচ বর্মণ সম্প্রদায়ের লোকেরা জুম চাষ থেকে শুরু করে বন আলু সংগ্রহ করতো। আবার বনের লতাপাতা সংগ্রহ করে খেত স্থানীয়রা। গ্রাম্য কবিরাজরা বনের নানা ভেষজ লতা পাতা দিয়ে চিকিৎসা করতো। গাদিলা ছিল ঐ সময়ের অর্থকরি যোগানের মধ্যে অন্যতম। স্থানীয়দের মতে, গাদিলা গাছের আধিক্য থাকার কারণে বনের চারপাশের অধিকাংশ মানুষ পাতা আহরন, শুকানো ও প্রক্রিয়াজাত করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত পাতা আহরনের ধুম পড়ত। এজেন্টের মাধ্যমে করাচি যেত। সেখানে বিড়ি তৈরি করা হতো। তাদের মতে, এ দেশেও পাতার বিড়ি তৈরি হতো। সবাই তখন পাতার বিড়ি আর হুক্কা খেতে। জনপ্রিয় ছিল পাতার তৈরি বিড়ি। গাছ থেকে পাতা তোলে সিদ্ধ করে শুকানো হতো। তবে গাছ থেকে ছিড়ে সুইচা দিয়ে সুতা বেঁধে সিদ্ধ ও শুকিয়ে বান্ডিল করে এজেন্টদের কাছে নিয়ে বিক্রি করা হতো। এভাবে গাদিলা পাতা দিয়ে বিড়ি তৈরির উপকরণ হতো।
আনোয়ার হোসেন (৬০) বলেন, তিনি তখন ছোট ছিলেন। তখন তাদের বাড়ির চারপাশে গাদিলার অনেক গাছ ছিল। প্রতিবান্ডিল পাতা আহরোণ করে তিনি ৪ টাকা পেতেন। তবে এক বান্ডিলে অনেক পাতা লাগতো। কয়েকদিন একটানা পাতা তোলে শুকিয়ে দিলে পাওয়া যেত আনুপাতিক হারে পারিশ্রমিক।
উত্তর জাঙ্গালিয়া গ্রামের হারুন জানান, তাদের বাড়ির বাড়ির পাশেই ঘন অরণ্য ছিল। চারদিকে নানা লতাপাতা গজারি আজুলি পিল্লাগুটা, গাদিলাসহ নানা বৃক্ষে ভরপুর ছিল। তাদের গ্রামের অনেক মানুষে গাদিলার পাতা তোলতেন। তখন অভাব ছিল। কাজের সন্ধানে অন্যত্র না গিয়ে বনের ভেতরের এজেন্টদের পাতা তোলে দিতেন। এ জন্য পাতা তোলে সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে বান্ডিল করে দিতেন। এ জন্য বান্ডিল প্রতি পেতেন তিন চার টাকা। এভাবে পাতা তোলে জীবিকা নির্বাহ করতেন তার মত তাদের গ্রামের অনেকেই এ কাজ করতো।
্ঐ সময়েরর পিরোজপুর গ্রামের গাদিলা পাতার এজেন্ট বাদশা মিয়া বলেন, তিনি এবং প্রয়াত মেম্বার জোয়াহের আলী ওই এলাকা থেকে পাতা কিনে কাকরাইদ তৎকালীন বৃহত্তর অরণখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম সরকার কে দিতেন। চেয়ারম্যান ছিলেন পুরো মধুপুর বন সরকারের কাছ থেকে নিলামে ঢেকে নেয়া এজেন্ট। আহরণকারিদের দিতেন চার টাকা হারে আর তিনি পেতেন এক টাকা কমিশন। নায়েব আলী জানালেন, বৈশাখ মাসে নতুন পাতা ছাড়ার পর থেকে পাতা পরিপুষ্ট হওয়ার জন্য বিষ প্রয়োগ করা হতো। যাতে অনিষ্টকারি পোকা মাকড় পাতা নষ্ট করতে না পারে। পাতা সুন্দর পরিপুষ্ট থাকলে দাম বেশি হতো। বান্ডিল হতো ভালো, মাঝারি ও নিম্ন মানের। দামের প্রকারভেদ ছিল।
জলছত্র গ্রামের লোকেরা জানালেন, হক নামের এক লোক দূর থেকে এসে পাতার এজেন্ট নিয়ে ছিলেন। স্বাধীনতার আগের করা বিল্ডিং এখন রয়েছে জলছত্র বাজারে । হক সাহেবের নামেই সবাই এখনও চিনেন বিল্ডিংটি। বনের গাদিলা পাতা আহরোণ ও প্রক্রিয়াজাত করে এ ঘরে এনে বিক্রি করা হতো। গাদিলা গজারিসহ মধুপুর বনের নানা জানা অজানা বৃক্ষ বিদায় নিচ্ছে উজাড়ের কারণে। সামাজিক বনায়নের ফলে ক্রমাগত নিশ্চিহ্ন হচ্ছে বনের আয়তন। বনের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা গেলে আবার গজিয়ে উঠতে পারে বিলুপ্ত প্রায় নানা বৃক্ষ এমনটাই ধারনা স্থানীয়দের।
মধুপুর (টাঙ্গাইল): গাদিলা পাতা শুকাচ্ছে রমজান আলী দম্পতি -সংবাদ
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
খুব বেশি দিনের কথা নয়। সত্তর দশকের শেষের দিকেও দেশের তৃতীয় বৃহত্তর লাল মাটির মধুপুর বনেও আধিক্য ছিল গাদিলা গাছের। বহুবর্ষজীবী এ গাছটির পাতা ছিল ঐ সময়ে চাহিদার শীর্ষে। বনাঞ্চলের মানুষের কাছে অতি প্রিয় একটি গাছের নাম। টেকসই দেশি প্রজাতির গাদিলার পাতা ছিল মোটামুটি বড় সাইজের। ছিল শিরা উপশিরায় বিভক্ত। এ পাতা দিয়ে তৈরি হতো বিড়ি। পাতা কেটে সাইজ মতো ভেতরে তামাক ভরে সুঁতা দিয়ে বেঁধে বিড়ি বানানোর কোন জোড়ি ছিল না। অবশ্য তখনও কাগজের বিড়ির তেমন প্রচলন শুরু হয়নি। রাজধানী করাচিতে পাতা যেত পূর্ববাংলার এজেন্সিদের মাধ্যমে। ঐ দেশেই বিড়ি হিসেবে দেদারসে চলতো। এদেশেও অনেকেই বিড়ি বানিয়ে তৃষ্ণা মেটাতো ধুমছে। বৃদ্ধরা হুক্কা আর যুবক থেকে শুরু করে কৃষক রাখাল আউল বাউল তাঁতি কামার কুমারসহ সব বয়সীদের কাছে প্রিয় ছিল গাদিলা পাতার বিড়ি। ক্রমাগত বন উজাড়ের ফলে এ গাছটির অস্তিত্ব প্রায় বিলিনের পথে। মধুপুর বনে এখনও দেখা মেলে প্রাচীন এ বৃক্ষটির। অনেকেই হারানো দিনের পেশাকে এখনও বুকে আগলে রেখেছেন অসীম মায়া মমতায়। তাদের দাবি, সামাজিক বনায়ন বন্ধ করে প্রাকৃতিক বনের অবয়ব ফিরে আনা গেলেই আবার গজারির আজুলি হিজল সিদা বট গাদিলার রাজত্ব ফিরে আসবে বলে মনে করেন বনপ্রেমী বনবাসীরা।
উজান গাছাবাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গাদিলা পাতা শুকানো ও প্রক্রিয়াজাত করার দৃশ্য। দু’চালা টিনের ঘর। চারপাশে কোন বেড়া নেই। পড়ে থাকা ঘরটিতে স্বামী স্ত্রী দম্পতি দু’জনে মিলে রশি টানিয়ে গাদিলার মরিচা রঙের পাতাগুলো লাইন করে বেঁধে দিচ্ছে। পাতাগুলো লম্বাটে, প্রশস্ত মোটামুটি। দেখাতে অনেকটা বড় গাছের পাতার মতো। বন থেকে গাদিরা পাতা সংগ্রহ করে চরে রমজান আলরি জীবন জীবিকা। রমজান আলী(৬০) জানালেন, কয়েক বছর যাবত মধুপুর বন থেকে পাতা তোলে এনে সিদ্ধ করে শুকিয়ে বিশ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করেছেন। তার স্ত্রী জানালেন, আগের মত গাছ নেই। পাতাও কম। বৃদ্ধ বয়সে অন্য কাজ করতে পারে না। তাই বনে ঘুরে ঘুরে গাদিলা পাতা এনে বিক্রি করেন। তার মতে, রমজানের বড় ভাই আগে গাদিলা পাতা বিক্রি করতেন। রমজান আলী জানালেন, এখন বিড়ি নয় কয়েল তৈরি হয়। স্থানীয় কাকরাইদ এলাকার পাইকার কিনে নেন। এক সময় বিড়ি তৈরিতে জনপ্রিয় ছিল। এখন আর গাদিলা পাতার বিড়ি হয় না বলে তিনি জানালেন।
মধুপুরের জলচত্র, গাছাবাড়ি, অরনখোলা, পিরোজপুর চাপাইদ, মালিবাজার, দোখলা, পীরগাছা, বেরিবাইদাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গাদিলা গাছকে ঘিরে নানা কথা। বেড়িয়ে আসে পাতা বিড়ি নিয়ে নানা অজানা তথ্য। স্থানীয়রা জানালেন, মধুপুর বন এক সময় ছিল গহীণ অরণ্য। ছিল শাল গজারির অবারিত সবুজ আচ্ছাদন। লাল মাটির বৈচিত্র্যময় গজারি, আজুলি, আনাইগোটা, পিল্লাগোটা, বেহুর, তিতিজাম, গাদিলা, সিদা, জারুল, অর্জুন, বানরনড়ি, শিমুল, গামারি, মনকাটা, বট, বনজাম, বনআলুসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষে ছিল সজ্জিত । অরণ্যচারি আদিবাসী গারো কোচ বর্মণ সম্প্রদায়ের লোকেরা জুম চাষ থেকে শুরু করে বন আলু সংগ্রহ করতো। আবার বনের লতাপাতা সংগ্রহ করে খেত স্থানীয়রা। গ্রাম্য কবিরাজরা বনের নানা ভেষজ লতা পাতা দিয়ে চিকিৎসা করতো। গাদিলা ছিল ঐ সময়ের অর্থকরি যোগানের মধ্যে অন্যতম। স্থানীয়দের মতে, গাদিলা গাছের আধিক্য থাকার কারণে বনের চারপাশের অধিকাংশ মানুষ পাতা আহরন, শুকানো ও প্রক্রিয়াজাত করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত পাতা আহরনের ধুম পড়ত। এজেন্টের মাধ্যমে করাচি যেত। সেখানে বিড়ি তৈরি করা হতো। তাদের মতে, এ দেশেও পাতার বিড়ি তৈরি হতো। সবাই তখন পাতার বিড়ি আর হুক্কা খেতে। জনপ্রিয় ছিল পাতার তৈরি বিড়ি। গাছ থেকে পাতা তোলে সিদ্ধ করে শুকানো হতো। তবে গাছ থেকে ছিড়ে সুইচা দিয়ে সুতা বেঁধে সিদ্ধ ও শুকিয়ে বান্ডিল করে এজেন্টদের কাছে নিয়ে বিক্রি করা হতো। এভাবে গাদিলা পাতা দিয়ে বিড়ি তৈরির উপকরণ হতো।
আনোয়ার হোসেন (৬০) বলেন, তিনি তখন ছোট ছিলেন। তখন তাদের বাড়ির চারপাশে গাদিলার অনেক গাছ ছিল। প্রতিবান্ডিল পাতা আহরোণ করে তিনি ৪ টাকা পেতেন। তবে এক বান্ডিলে অনেক পাতা লাগতো। কয়েকদিন একটানা পাতা তোলে শুকিয়ে দিলে পাওয়া যেত আনুপাতিক হারে পারিশ্রমিক।
উত্তর জাঙ্গালিয়া গ্রামের হারুন জানান, তাদের বাড়ির বাড়ির পাশেই ঘন অরণ্য ছিল। চারদিকে নানা লতাপাতা গজারি আজুলি পিল্লাগুটা, গাদিলাসহ নানা বৃক্ষে ভরপুর ছিল। তাদের গ্রামের অনেক মানুষে গাদিলার পাতা তোলতেন। তখন অভাব ছিল। কাজের সন্ধানে অন্যত্র না গিয়ে বনের ভেতরের এজেন্টদের পাতা তোলে দিতেন। এ জন্য পাতা তোলে সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে বান্ডিল করে দিতেন। এ জন্য বান্ডিল প্রতি পেতেন তিন চার টাকা। এভাবে পাতা তোলে জীবিকা নির্বাহ করতেন তার মত তাদের গ্রামের অনেকেই এ কাজ করতো।
্ঐ সময়েরর পিরোজপুর গ্রামের গাদিলা পাতার এজেন্ট বাদশা মিয়া বলেন, তিনি এবং প্রয়াত মেম্বার জোয়াহের আলী ওই এলাকা থেকে পাতা কিনে কাকরাইদ তৎকালীন বৃহত্তর অরণখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম সরকার কে দিতেন। চেয়ারম্যান ছিলেন পুরো মধুপুর বন সরকারের কাছ থেকে নিলামে ঢেকে নেয়া এজেন্ট। আহরণকারিদের দিতেন চার টাকা হারে আর তিনি পেতেন এক টাকা কমিশন। নায়েব আলী জানালেন, বৈশাখ মাসে নতুন পাতা ছাড়ার পর থেকে পাতা পরিপুষ্ট হওয়ার জন্য বিষ প্রয়োগ করা হতো। যাতে অনিষ্টকারি পোকা মাকড় পাতা নষ্ট করতে না পারে। পাতা সুন্দর পরিপুষ্ট থাকলে দাম বেশি হতো। বান্ডিল হতো ভালো, মাঝারি ও নিম্ন মানের। দামের প্রকারভেদ ছিল।
জলছত্র গ্রামের লোকেরা জানালেন, হক নামের এক লোক দূর থেকে এসে পাতার এজেন্ট নিয়ে ছিলেন। স্বাধীনতার আগের করা বিল্ডিং এখন রয়েছে জলছত্র বাজারে । হক সাহেবের নামেই সবাই এখনও চিনেন বিল্ডিংটি। বনের গাদিলা পাতা আহরোণ ও প্রক্রিয়াজাত করে এ ঘরে এনে বিক্রি করা হতো। গাদিলা গজারিসহ মধুপুর বনের নানা জানা অজানা বৃক্ষ বিদায় নিচ্ছে উজাড়ের কারণে। সামাজিক বনায়নের ফলে ক্রমাগত নিশ্চিহ্ন হচ্ছে বনের আয়তন। বনের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা গেলে আবার গজিয়ে উঠতে পারে বিলুপ্ত প্রায় নানা বৃক্ষ এমনটাই ধারনা স্থানীয়দের।