তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সোমবার শহীদ মিনারে ছিল অনশন কর্মসূচি। আগের দিন তারা একই দাবিতে থালা নিয়ে ভুখা মিছিল করেন -সংবাদ
বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তিন দফা দাবিতে টানা ৯ম দিনের মতো রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। সোমবার,(২০ অক্টোবর ২০২৫) সকাল থেকে অনশন শুরু করে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। দুপুরে মধ্যে অন্তত ৪ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিকে শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
শিক্ষকদের আন্দোলনের সমন্বয়কারী ফয়েজ আহমেদ বলেন, তারা সকাল থেকে অনশন শুরু করেছিলেন। তীব্র গরমে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গাইবান্ধার আকবর আলি আব্দুল হাই স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী মন্ডল অচেতন হয়ে পড়লে দুপুর ১২টার দিকে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হয়। এছাড়া জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজীজিও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সরকার সম্প্রতি ৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তারা ঘোষণা দিয়েছেন দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজীজি বলেন, ‘সরকারের ৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন শিক্ষকদের সঙ্গে অবিচার। আমরা তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়বো না।’
সোমবার, সকাল ১০টায় শিক্ষক সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। দুপুর গড়াতেই শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষকদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত শিক্ষক-কর্মচারী কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ শতাংশ ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষকরা তিন দফা দাবির পক্ষে অনড় রয়েছেন। তাদের দাবি বাড়ি ভাড়া ভাতা ২০ শতাংশে উন্নীত করা, পূর্ণ উৎসব ভাতা প্রদান এবং শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ।
শিক্ষা উপদেষ্টার ক্লাসে ফেরার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যক্ষ আজীজি বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টাকে বলে দিতে চাই, শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবে না। হয়তো দাবি মেনে নেবেন, না হয় আপনাকে মন্ত্রণালয় ছাড়তে হবে।’
গত আটদিন ধরে ৩০ হাজারেরও বেশি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষক আন্দোলনে সংহতি জানালো বিএনপি
মূল বেতনের ২০ শতাংশ (নূন্যতম ৩ হাজার টাকা) বাড়ি ভাড়া
বাড়ানোসহ তিন দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি দলের পক্ষ থেকে এই দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, ৫ পারসেন্ট এনাফ (পর্যাপ্ত) নয়। বিশেষ বিবেচনা আপনাদের করতে হবে।’
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যেভাবে গত ৯দিন প্রখর রোদে আপনারা আন্দোলন করছেন, এটা তো করার কথা ছিল না। আমরা অনেক সময় অনেকভাবে দেখেছি। শিক্ষকদের বারবার রাস্তায় আসতে হয়, আন্দোলন করতে হয়, আবেদন করতে হয়। সেই কেন-এর উত্তরটা দিতে যেয়ে আমরা আপনাদের বলছি, আগামী দিনে আর যাতে আন্দোলন না করতে হয়, সেজন্য ওই পূর্ণ জাতীয়করণের কথাটাই আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিয়ে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, এই প্রতিশ্রুতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে বিএনপির পক্ষ থেকে সংহতির কথাও জানান।
শিক্ষক-কর্মচারীদের উদ্দেশে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি আরও বলেন, ‘আপনাদের দাবি অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে মেনে নিয়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত দাবি কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছানোর জন্য, ২০ পারসেন্টের যে দাবি, সেটা এখনও হয়তো আপনারা পান নাই। তাই আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, ৫ পারসেন্ট এনাফ (পর্যাপ্ত) নয়। বিশেষ বিবেচনা আপনাদের করতে হবে।’
মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম তিন হাজার টাকা) বাড়ি ভাড়া, দেড় হাজার টাকা চিকিৎসাভাতা ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ১২ অক্টোবর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা সব ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন।
শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে সিপিবির সংহতি, দাবি মেনে শ্রেণীকক্ষে ফেরানোর আহ্বান
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টানা নবম দিন আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তিন দফা দাবি অবিলম্বে মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
সোমবার ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে সিপিবির উদ্যোগে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে মিছিলসহ পার্টির নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনরত শিক্ষকদের মাঝে উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান।
সংহতি সমাবেশে সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, শিক্ষকনেতা জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।
সংহতি সমাবেশে সিপিবি সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন অবিলম্বে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, মাসিক ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহু অপ্রয়োজনীয় ও এখতিয়ার বহির্ভুত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির প্রতি কর্ণপাত করছে না। উপরন্তু শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশ নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে।’
সিপিবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম সরকারের কালক্ষেপণের জন্য সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে থাকায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে তাদের শ্রেণীকক্ষে ফেরাতে হবে। দাবি মেনে নিতে বিলম্ব করে শিক্ষকদের অপদস্ত ও লাঞ্ছিত করে খোলা আকাশের নিচে আর একদিনও ফেলে রাখা হলে সরকারকে তার জন্য জবাব দিতে হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান আন্দোলনে সংহতি বক্তব্যে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ‘সারাদেশে চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ৪০-৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া ভাতা পান। সেখানে ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরির কারিগর এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ মাত্র ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, এই টাকায় সপরিবার তো দূরের কথা মেসের সিট ভাড়া সংকুলান সম্ভব নয়। শিক্ষকগণ মাত্র ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া চেয়েছেন, বিনিময়ে পেয়েছেন অপমান ও পুলিশের নির্যাতন।’ তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যায্য দাবি উত্থাপন করা শিক্ষকদের প্রতি যে অবমাননা ও অসম্মানজনক আচরণ করেছে তা কোন সভ্য নজির নয়। তিনি ন্যায্য দাবির আন্দোলনে সর্বাত্মকভাবে সিপিবি শিক্ষকদের পাশে থাকবে বলে অঙ্গীকার করেন। আগামীতে সিপিবিসহ বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তি সরকার গঠন করলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন সিপিবির এ নেতা। শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আগামী ২৩ অক্টোবর দেশব্যাপী ‘শিক্ষক সংহতি দিবস’ ঘোষণা করেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সোমবার শহীদ মিনারে ছিল অনশন কর্মসূচি। আগের দিন তারা একই দাবিতে থালা নিয়ে ভুখা মিছিল করেন -সংবাদ
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তিন দফা দাবিতে টানা ৯ম দিনের মতো রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। সোমবার,(২০ অক্টোবর ২০২৫) সকাল থেকে অনশন শুরু করে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। দুপুরে মধ্যে অন্তত ৪ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিকে শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
শিক্ষকদের আন্দোলনের সমন্বয়কারী ফয়েজ আহমেদ বলেন, তারা সকাল থেকে অনশন শুরু করেছিলেন। তীব্র গরমে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গাইবান্ধার আকবর আলি আব্দুল হাই স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী মন্ডল অচেতন হয়ে পড়লে দুপুর ১২টার দিকে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হয়। এছাড়া জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজীজিও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সরকার সম্প্রতি ৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তারা ঘোষণা দিয়েছেন দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজীজি বলেন, ‘সরকারের ৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন শিক্ষকদের সঙ্গে অবিচার। আমরা তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়বো না।’
সোমবার, সকাল ১০টায় শিক্ষক সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। দুপুর গড়াতেই শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষকদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত শিক্ষক-কর্মচারী কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ শতাংশ ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষকরা তিন দফা দাবির পক্ষে অনড় রয়েছেন। তাদের দাবি বাড়ি ভাড়া ভাতা ২০ শতাংশে উন্নীত করা, পূর্ণ উৎসব ভাতা প্রদান এবং শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ।
শিক্ষা উপদেষ্টার ক্লাসে ফেরার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যক্ষ আজীজি বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টাকে বলে দিতে চাই, শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবে না। হয়তো দাবি মেনে নেবেন, না হয় আপনাকে মন্ত্রণালয় ছাড়তে হবে।’
গত আটদিন ধরে ৩০ হাজারেরও বেশি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষক আন্দোলনে সংহতি জানালো বিএনপি
মূল বেতনের ২০ শতাংশ (নূন্যতম ৩ হাজার টাকা) বাড়ি ভাড়া
বাড়ানোসহ তিন দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি দলের পক্ষ থেকে এই দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, ৫ পারসেন্ট এনাফ (পর্যাপ্ত) নয়। বিশেষ বিবেচনা আপনাদের করতে হবে।’
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যেভাবে গত ৯দিন প্রখর রোদে আপনারা আন্দোলন করছেন, এটা তো করার কথা ছিল না। আমরা অনেক সময় অনেকভাবে দেখেছি। শিক্ষকদের বারবার রাস্তায় আসতে হয়, আন্দোলন করতে হয়, আবেদন করতে হয়। সেই কেন-এর উত্তরটা দিতে যেয়ে আমরা আপনাদের বলছি, আগামী দিনে আর যাতে আন্দোলন না করতে হয়, সেজন্য ওই পূর্ণ জাতীয়করণের কথাটাই আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিয়ে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, এই প্রতিশ্রুতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে বিএনপির পক্ষ থেকে সংহতির কথাও জানান।
শিক্ষক-কর্মচারীদের উদ্দেশে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি আরও বলেন, ‘আপনাদের দাবি অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে মেনে নিয়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত দাবি কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছানোর জন্য, ২০ পারসেন্টের যে দাবি, সেটা এখনও হয়তো আপনারা পান নাই। তাই আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, ৫ পারসেন্ট এনাফ (পর্যাপ্ত) নয়। বিশেষ বিবেচনা আপনাদের করতে হবে।’
মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম তিন হাজার টাকা) বাড়ি ভাড়া, দেড় হাজার টাকা চিকিৎসাভাতা ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ১২ অক্টোবর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা সব ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন।
শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে সিপিবির সংহতি, দাবি মেনে শ্রেণীকক্ষে ফেরানোর আহ্বান
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টানা নবম দিন আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তিন দফা দাবি অবিলম্বে মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
সোমবার ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে সিপিবির উদ্যোগে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে মিছিলসহ পার্টির নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনরত শিক্ষকদের মাঝে উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান।
সংহতি সমাবেশে সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, শিক্ষকনেতা জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।
সংহতি সমাবেশে সিপিবি সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন অবিলম্বে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, মাসিক ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহু অপ্রয়োজনীয় ও এখতিয়ার বহির্ভুত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির প্রতি কর্ণপাত করছে না। উপরন্তু শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশ নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে।’
সিপিবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম সরকারের কালক্ষেপণের জন্য সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে থাকায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে তাদের শ্রেণীকক্ষে ফেরাতে হবে। দাবি মেনে নিতে বিলম্ব করে শিক্ষকদের অপদস্ত ও লাঞ্ছিত করে খোলা আকাশের নিচে আর একদিনও ফেলে রাখা হলে সরকারকে তার জন্য জবাব দিতে হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান আন্দোলনে সংহতি বক্তব্যে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ‘সারাদেশে চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ৪০-৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া ভাতা পান। সেখানে ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরির কারিগর এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ মাত্র ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, এই টাকায় সপরিবার তো দূরের কথা মেসের সিট ভাড়া সংকুলান সম্ভব নয়। শিক্ষকগণ মাত্র ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া চেয়েছেন, বিনিময়ে পেয়েছেন অপমান ও পুলিশের নির্যাতন।’ তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যায্য দাবি উত্থাপন করা শিক্ষকদের প্রতি যে অবমাননা ও অসম্মানজনক আচরণ করেছে তা কোন সভ্য নজির নয়। তিনি ন্যায্য দাবির আন্দোলনে সর্বাত্মকভাবে সিপিবি শিক্ষকদের পাশে থাকবে বলে অঙ্গীকার করেন। আগামীতে সিপিবিসহ বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তি সরকার গঠন করলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন সিপিবির এ নেতা। শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আগামী ২৩ অক্টোবর দেশব্যাপী ‘শিক্ষক সংহতি দিবস’ ঘোষণা করেন।