মাকিগঞ্জ : হরিরামপুরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদী। এখন মৃতপ্রায় -সংবাদ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদীর টলমলে জলে এক সময়ে চলতো পাল তোলা নৌকা। জেলেদের জালে ধরা পড়তো রূপালী মাছ কিন্তু আজ সেই নদীর বুক শুকনো, তলদেশে জমে আছে আবর্জনা আর কচুরিপানা। দখল, দূষণ আর অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণে সেই প্রাণ চঞ্চল ইছামতি নদী নাব্যতা হারিয়ে আজ তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থেকে ঘিওর, শিবালয়ের উথুলী, নালী, নয়াকান্দি হয়ে হরিরামপুরের মাচাইন, বাল্লা, ঝিটকা অতিক্রম করে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদী বাহাদুরপুরে গিয়ে পদ্মায় মিশেছে।
কিন্তু আজ সেই ইছামতি নদী দখলদারদের আগ্রাসনে হারাচ্ছে অস্তিত্ব। নদীর বিভিন্ন অংশে নির্মিত হয়েছে প্রায় ১০–১২টি বাঁধ ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে।
বর্ষাকালে জমে থাকা পানিতে কচুরিপানা আটকে গিয়ে নদীজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্গন্ধ। তাতে যুক্ত হচ্ছে মানববর্জ্য ও আবর্জনা, যা নদীর পানি দূষিত করছে ভয়াবহভাবে। এতে স্থানীয়রা পড়েছেন পানির সংকটে।
নদীটি পুনরুদ্ধারে স্থানীয়দের একটাই দাবি অবিলম্বে বাঁধ অপসারণ, দখল উচ্ছেদ ও খনন কার্যক্রম শুরু করা হোক। ইছামতী একসময় ছিল জীবনের প্রতীক, আজ তা হয়ে উঠেছে হতাশার প্রতীক। কৃষক-জেলের জীবিকা, গ্রামীণ জীববৈচিত্র্য আর মানুষের টিকে থাকার জন্য নদী সচল করার বিকল্প নেই এমনটাই বলছেন হরিরামপুরবাসী। সরেজমিন যেয়ে দেখা যায়, নদীর মাঝ দিয়ে যাওয়া একাধিক বাঁধের ওপর এখন গড়ে উঠেছে রাস্তা, দোকানপাট ও বসতবাড়ি। বাহিরচর পূর্বপাড়া থেকে আন্ধারমানিক–পিঁয়াজচর সংযোগস্থলের বাঁধের ওপর এখনো কয়েকটি পরিবার বসতি গড়ে তুলেছে। দোকানঘর ভাড়া দিয়ে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে নদীর প্রকৃত পানি প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে আন্ধারমানিক গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘২৫ বছর আগে পদ্মায় ভিটেমাটি হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিই। তখন নদীর বুকে ছিল প্রাণ, এখন কেবল কচুরিপানা আর দুর্গন্ধ।নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়েছে। নদী হারিয়েছে তার অস্তিত্ব। অস্তিত্বের রক্ষাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে বাঁধ অপসারণ, দখল উচ্ছেদ ও খনন কার্যক্রম শুরু করবেন বলে আশা করেন তিনি।
আগ্রাইল গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, ‘ইছামতী ছিল আমাদের জীবনের অংশ। এখন নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেলার কারণে মাছ কমে গেছে, বিলে পানি আসে না। শত শত কৃষক ও জেলে পরিবার কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।’
পরিবেশ সংগঠন শ্যামল নিসর্গ এর সদস্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম মাহী বলেন, ‘অপরিকল্পিত বাঁধ ও দখলদারদের কারণে ইছামতী আজ মৃতপ্রায়। এতে কৃষি, মৎস্য, এমনকি মানুষের জীবনও বিপর্যস্ত হচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে কয়েক বছরের মধ্যেই মানচিত্র থেকে মুছে যাবে এই নদী।’ মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ইছামতী নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য আমরা কাজ করছি। একটি প্রকল্পের আওতায় বাঁধগুলো অপসারণ করে সেখানে হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার স্থাপনের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ফসল রক্ষায় স্থানীয়রা নিজেরাই বিভিন্ন বাঁধ দিয়েছিল, যা এখন সমস্যা তৈরি করছে। ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাঁধগুলো অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য। আশা করছি দ্রুতই ইছামতী আবার প্রাণ ফিরে পাবে।
 
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            মাকিগঞ্জ : হরিরামপুরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদী। এখন মৃতপ্রায় -সংবাদ
শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদীর টলমলে জলে এক সময়ে চলতো পাল তোলা নৌকা। জেলেদের জালে ধরা পড়তো রূপালী মাছ কিন্তু আজ সেই নদীর বুক শুকনো, তলদেশে জমে আছে আবর্জনা আর কচুরিপানা। দখল, দূষণ আর অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণে সেই প্রাণ চঞ্চল ইছামতি নদী নাব্যতা হারিয়ে আজ তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থেকে ঘিওর, শিবালয়ের উথুলী, নালী, নয়াকান্দি হয়ে হরিরামপুরের মাচাইন, বাল্লা, ঝিটকা অতিক্রম করে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদী বাহাদুরপুরে গিয়ে পদ্মায় মিশেছে।
কিন্তু আজ সেই ইছামতি নদী দখলদারদের আগ্রাসনে হারাচ্ছে অস্তিত্ব। নদীর বিভিন্ন অংশে নির্মিত হয়েছে প্রায় ১০–১২টি বাঁধ ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে।
বর্ষাকালে জমে থাকা পানিতে কচুরিপানা আটকে গিয়ে নদীজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্গন্ধ। তাতে যুক্ত হচ্ছে মানববর্জ্য ও আবর্জনা, যা নদীর পানি দূষিত করছে ভয়াবহভাবে। এতে স্থানীয়রা পড়েছেন পানির সংকটে।
নদীটি পুনরুদ্ধারে স্থানীয়দের একটাই দাবি অবিলম্বে বাঁধ অপসারণ, দখল উচ্ছেদ ও খনন কার্যক্রম শুরু করা হোক। ইছামতী একসময় ছিল জীবনের প্রতীক, আজ তা হয়ে উঠেছে হতাশার প্রতীক। কৃষক-জেলের জীবিকা, গ্রামীণ জীববৈচিত্র্য আর মানুষের টিকে থাকার জন্য নদী সচল করার বিকল্প নেই এমনটাই বলছেন হরিরামপুরবাসী। সরেজমিন যেয়ে দেখা যায়, নদীর মাঝ দিয়ে যাওয়া একাধিক বাঁধের ওপর এখন গড়ে উঠেছে রাস্তা, দোকানপাট ও বসতবাড়ি। বাহিরচর পূর্বপাড়া থেকে আন্ধারমানিক–পিঁয়াজচর সংযোগস্থলের বাঁধের ওপর এখনো কয়েকটি পরিবার বসতি গড়ে তুলেছে। দোকানঘর ভাড়া দিয়ে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে নদীর প্রকৃত পানি প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে আন্ধারমানিক গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘২৫ বছর আগে পদ্মায় ভিটেমাটি হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিই। তখন নদীর বুকে ছিল প্রাণ, এখন কেবল কচুরিপানা আর দুর্গন্ধ।নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়েছে। নদী হারিয়েছে তার অস্তিত্ব। অস্তিত্বের রক্ষাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে বাঁধ অপসারণ, দখল উচ্ছেদ ও খনন কার্যক্রম শুরু করবেন বলে আশা করেন তিনি।
আগ্রাইল গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, ‘ইছামতী ছিল আমাদের জীবনের অংশ। এখন নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেলার কারণে মাছ কমে গেছে, বিলে পানি আসে না। শত শত কৃষক ও জেলে পরিবার কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।’
পরিবেশ সংগঠন শ্যামল নিসর্গ এর সদস্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম মাহী বলেন, ‘অপরিকল্পিত বাঁধ ও দখলদারদের কারণে ইছামতী আজ মৃতপ্রায়। এতে কৃষি, মৎস্য, এমনকি মানুষের জীবনও বিপর্যস্ত হচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে কয়েক বছরের মধ্যেই মানচিত্র থেকে মুছে যাবে এই নদী।’ মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ইছামতী নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য আমরা কাজ করছি। একটি প্রকল্পের আওতায় বাঁধগুলো অপসারণ করে সেখানে হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার স্থাপনের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ফসল রক্ষায় স্থানীয়রা নিজেরাই বিভিন্ন বাঁধ দিয়েছিল, যা এখন সমস্যা তৈরি করছে। ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাঁধগুলো অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য। আশা করছি দ্রুতই ইছামতী আবার প্রাণ ফিরে পাবে।
