দিনাজপুরের ঐতিহাসিক রাজবাড়িতে চলছে সংস্কার কাজ -সংবাদ
রাজবংশের শেষ নিদর্শন দিনাজপুরের রাজবাড়ি দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। যা হিন্দু, মুসলিম ও ইংরেজ তিন যুগের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের এই অনন্য নিদর্শন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলার কারণে এটি ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় পরিণত হয়েছে। মাঝে মধ্যে দর্শনার্থীরা এখানে আসলেও হতাশ হয়ে ফিরে যান। সংস্কারের মাধ্যমে ভগ্নপ্রায় এই রাজবাড়ীর অবশিষ্ট চিহ্ন সংরক্ষণ করতে নতুনভাবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চলছে সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ।
রাজবাড়ীটি প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর অধীনে হলেও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি অধিদপ্তর। অবশেষে জেলা প্রশাসন থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজবংশের প্রতিষ্ঠাকাল ১৬০৮ সালে এই বিশাল প্রাসাদ ১৬৬ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠে। বিশাল প্রাসাদে রয়েছে আয়না মহল, রানী মহল, ঠাকুরবাড়ী মহল, কুমার হাউজ, বেশ কয়েকটি মন্দির, দরবার হল, পরিখা ও বাগান। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয় এবং সমস্ত ভূমি সরকারের অধীনে আসে। এরপর তৎকালীন জমিদার মহারাজা জগদীশ নাথ পরিবারসহ ভারত চলে যান।
সে সময়ে কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পরে রাজপ্রাসাদ অরক্ষিত হয়ে পড়ে। অনেক মূল্যবান জিনিস চুরি হয়ে যায়। আর অযত্ন ও দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলার কারণে ধ্বংসপ্রায় অবস্থা, ভগ্নপ্রায় দেয়াল ও নোংরা পরিবেশ রাজবাড়ীর ঐতিহ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছিল।
জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজবাড়ীতে চলছে অবর্জনা অপসারণ, দেয়ালের আগাছা পরিষ্কার, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পরিত্যক্ত স্থাপনা সংরক্ষণের কাজ। জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম রাজবাড়ীটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম শুরু করেছেন। গত কয়েক দিন ধরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চলছে রাজবাড়ীর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার ও সংস্কারের কাজ। ভগ্নপ্রায় দেয়াল ও পরিত্যক্ত স্থাপনা সংরক্ষণের জন্য বিশেষ দল কাজ করছে। সংস্কারযোগ্য অংশ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং জলাবদ্ধতা নিরসন ও আগাছা পরিষ্কারের মাধ্যমে রাজবাড়ীর খোয়া যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
এদিকে রাজবাড়ীর দরবার হলের পাশের পুরনো ভবনের মাটি খুঁড়তে গিয়ে শ্রমিকরা হঠাৎ একটি শতবর্ষের পুরনো লোহার কড়াই উদ্ধার করেন। জেলা প্রশাসন সেটিকে রাজবাড়ীর ভেতরে কালিয়াকান্তজিউ মন্দিরের পাশে রাখেন। সংবাদ পেয়ে শত শত মানুষ কড়াইটি দেখতে ভিড় করেন, আর পরের দিনও দর্শনার্থীর আগ্রহ অব্যাহত থাকে। কেউ বলে এটি ১৯৬০ সালের, আবার কারও দাবি শত বছরের।
সজিব চন্দ্র রায় ও সুমিল অধিকারি বলেন, এটি রাজাদের আমলেরই কড়াই হবে। সে সময় রাজাদের যারা খাজনা দিতো তাদের জন্য হালখাতার মতো অনুষ্ঠান করা হতো। সে অনুষ্ঠানে অনেক লুচি, পুরি, বুন্দিয়া তৈরি করতে এ কড়াই ব্যবহার হতো। এটি আকারে অনেক বড় ও অনেক ওজন হওয়ায় হয়তো কেউ নিয়ে পালাতে পারেনি। খসে পড়া সুড়কিতে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল।
রাজবাড়ীর মন্দিরের পুরোহিত সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘রাজ পরিবারের অনেক কীর্তি এখানে রয়েছে। কয়েক বছর আগেও বিষ্ণুমূর্তি পাওয়া গেছে। এখন এই কড়াইটি পাওয়া গেছে।’
হীরাবাগান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বিনোদ সরকার জানান, ‘আমরা রাজবাড়ীর ইতিহাসে এমন কড়াইসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের উল্লেখ পেয়েছি। এই কড়াইয়ে এক সময় পুড়ি বা জিলাপি ভাজা হতো।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘জেলার পর্যটন বিকাশের স্বার্থে এসব স্থাপনা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিছু কিছু ব্যবহার্য জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে। এক সময় যে রাজারা জাঁকজমকপূর্ণভাবে বসবাস করতেন, তা বোঝা যাচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে এই রাজবাড়ীকেও আগের মতো করা সম্ভব।’
স্থানীয় ইতিহাসবিদরা মনে করান, দিনাজপুর রাজবাড়ী শুধু একটি স্থাপনা নয়- এটি অঞ্চলের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের প্রতীক। প্রশাসনের এই উদ্যোগে ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ীর অবশিষ্ট চিহ্ন রক্ষা হবে এবং ভবিষ্যতে এটি দর্শনার্থী ও পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
দর্শনার্থীরা আশা করছেন, রাজবাড়ী দ্রুত তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে এবং নতুন প্রজন্মও দেখতে পারবে সেই ঐতিহাসিক মহিমা, যা একসময় রাজাদের জাঁকজমকপূর্ণ জীবনধারার সাক্ষী ছিল।
 
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            দিনাজপুরের ঐতিহাসিক রাজবাড়িতে চলছে সংস্কার কাজ -সংবাদ
শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
রাজবংশের শেষ নিদর্শন দিনাজপুরের রাজবাড়ি দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। যা হিন্দু, মুসলিম ও ইংরেজ তিন যুগের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের এই অনন্য নিদর্শন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলার কারণে এটি ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় পরিণত হয়েছে। মাঝে মধ্যে দর্শনার্থীরা এখানে আসলেও হতাশ হয়ে ফিরে যান। সংস্কারের মাধ্যমে ভগ্নপ্রায় এই রাজবাড়ীর অবশিষ্ট চিহ্ন সংরক্ষণ করতে নতুনভাবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চলছে সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ।
রাজবাড়ীটি প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর অধীনে হলেও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি অধিদপ্তর। অবশেষে জেলা প্রশাসন থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজবংশের প্রতিষ্ঠাকাল ১৬০৮ সালে এই বিশাল প্রাসাদ ১৬৬ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠে। বিশাল প্রাসাদে রয়েছে আয়না মহল, রানী মহল, ঠাকুরবাড়ী মহল, কুমার হাউজ, বেশ কয়েকটি মন্দির, দরবার হল, পরিখা ও বাগান। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয় এবং সমস্ত ভূমি সরকারের অধীনে আসে। এরপর তৎকালীন জমিদার মহারাজা জগদীশ নাথ পরিবারসহ ভারত চলে যান।
সে সময়ে কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পরে রাজপ্রাসাদ অরক্ষিত হয়ে পড়ে। অনেক মূল্যবান জিনিস চুরি হয়ে যায়। আর অযত্ন ও দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলার কারণে ধ্বংসপ্রায় অবস্থা, ভগ্নপ্রায় দেয়াল ও নোংরা পরিবেশ রাজবাড়ীর ঐতিহ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছিল।
জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজবাড়ীতে চলছে অবর্জনা অপসারণ, দেয়ালের আগাছা পরিষ্কার, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পরিত্যক্ত স্থাপনা সংরক্ষণের কাজ। জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম রাজবাড়ীটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম শুরু করেছেন। গত কয়েক দিন ধরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চলছে রাজবাড়ীর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার ও সংস্কারের কাজ। ভগ্নপ্রায় দেয়াল ও পরিত্যক্ত স্থাপনা সংরক্ষণের জন্য বিশেষ দল কাজ করছে। সংস্কারযোগ্য অংশ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং জলাবদ্ধতা নিরসন ও আগাছা পরিষ্কারের মাধ্যমে রাজবাড়ীর খোয়া যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
এদিকে রাজবাড়ীর দরবার হলের পাশের পুরনো ভবনের মাটি খুঁড়তে গিয়ে শ্রমিকরা হঠাৎ একটি শতবর্ষের পুরনো লোহার কড়াই উদ্ধার করেন। জেলা প্রশাসন সেটিকে রাজবাড়ীর ভেতরে কালিয়াকান্তজিউ মন্দিরের পাশে রাখেন। সংবাদ পেয়ে শত শত মানুষ কড়াইটি দেখতে ভিড় করেন, আর পরের দিনও দর্শনার্থীর আগ্রহ অব্যাহত থাকে। কেউ বলে এটি ১৯৬০ সালের, আবার কারও দাবি শত বছরের।
সজিব চন্দ্র রায় ও সুমিল অধিকারি বলেন, এটি রাজাদের আমলেরই কড়াই হবে। সে সময় রাজাদের যারা খাজনা দিতো তাদের জন্য হালখাতার মতো অনুষ্ঠান করা হতো। সে অনুষ্ঠানে অনেক লুচি, পুরি, বুন্দিয়া তৈরি করতে এ কড়াই ব্যবহার হতো। এটি আকারে অনেক বড় ও অনেক ওজন হওয়ায় হয়তো কেউ নিয়ে পালাতে পারেনি। খসে পড়া সুড়কিতে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল।
রাজবাড়ীর মন্দিরের পুরোহিত সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘রাজ পরিবারের অনেক কীর্তি এখানে রয়েছে। কয়েক বছর আগেও বিষ্ণুমূর্তি পাওয়া গেছে। এখন এই কড়াইটি পাওয়া গেছে।’
হীরাবাগান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বিনোদ সরকার জানান, ‘আমরা রাজবাড়ীর ইতিহাসে এমন কড়াইসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের উল্লেখ পেয়েছি। এই কড়াইয়ে এক সময় পুড়ি বা জিলাপি ভাজা হতো।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘জেলার পর্যটন বিকাশের স্বার্থে এসব স্থাপনা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিছু কিছু ব্যবহার্য জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে। এক সময় যে রাজারা জাঁকজমকপূর্ণভাবে বসবাস করতেন, তা বোঝা যাচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে এই রাজবাড়ীকেও আগের মতো করা সম্ভব।’
স্থানীয় ইতিহাসবিদরা মনে করান, দিনাজপুর রাজবাড়ী শুধু একটি স্থাপনা নয়- এটি অঞ্চলের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের প্রতীক। প্রশাসনের এই উদ্যোগে ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ীর অবশিষ্ট চিহ্ন রক্ষা হবে এবং ভবিষ্যতে এটি দর্শনার্থী ও পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
দর্শনার্থীরা আশা করছেন, রাজবাড়ী দ্রুত তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে এবং নতুন প্রজন্মও দেখতে পারবে সেই ঐতিহাসিক মহিমা, যা একসময় রাজাদের জাঁকজমকপূর্ণ জীবনধারার সাক্ষী ছিল।
