alt

সাগরে প্রথম জাল ফেলেই ১৪০ মণ ইলিশ ধরলো জেলেরা

প্রতিনিধি, বরগুনা : শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

টানা ২২ দিনের অবরোধ শেষে শুক্রবার সাগরে নেমেছে জেলেরা। রূপালী ইলিশ বন্দী জাল টেনে তুলছে তারা -সংগৃহীত

নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম সাগরে গিয়েই কপাল খুলেছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার একদল জেলের। একটানে জালে ১৪০ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে, যা বিক্রি হয়েছে ৩১ লাখ টাকায়। কুয়াকাটা সৈকত থেকে ৬০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে এসব ইলিশ ধরা পড়ে বলে জানান এফবি সাফাওয়ান-৩ ট্রলারের মাঝি রুবেল।

একটি ট্রলারে জায়গায় সংকুলান না হওয়ায় একই কোম্পানির আরেকটি ট্রলার সাইফ-২ এ মাছ ভাগাভাগি করে সাগর থেকে ঘাটে নেয়া হয়। শুক্রবার সকালে পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সাইফ ফিশ আড়তে এসব মাছ বিক্রির জন্য তোলা হয়। সেখানে ডাকের মাধ্যমে মাছগুলো ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

মাঝি রুবেল বলেন, গত বুধবার ১৯ জন জেলে নিয়ে সাগরে যাই। ওইদিন বিকেলে কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে জাল ফেলার পরই রাতে মাছগুলো ধরা পড়ে। রাত ৮টা থেকে জেলেরা জাল টানা শুরু করে পরদিন দুপুর দেড়টা পর্যন্ত জাল ট্রলারে উঠানো শেষ হয়। তবে জেলেদের দাবি, সব মিলিয়ে ১৭০-১৭৫ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে।

সাইফ ফিশিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক মনিরুল হক মাসুম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে সাগরে খুব একটা মাছ ধরা পড়ছিল না। ইলিশ মৌসুমে কাক্সিক্ষত মাছ ধরা না পড়ায় আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছিল। ‘তবে সাগরে অবৈধ ট্রলিং বোট বন্ধ করা হলে জেলেদের জালে আগের মতন মাছ ধরা পড়বে। ফিরে আসবে সাধারণ জেলেদের সুদিন।’

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী ও আড়তদার মোস্তফা আলম বলেন, ইলিশের প্রকারভেদ অনুযায়ী ২৭ হাজার, ২২ হাজার ও ১২ হাজার টাকা মণ দরে সবমিলিয়ে ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা সাগরে গিয়েই মাছ পেয়েছে, এটা খুশির খবর। তবে দীর্ঘদিন ধরে কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা মিলছে না। হঠাৎ এক ট্রলারে ১৪০ মণ ইলিশ পাওয়ায় আমরাও খুশি।’

আমাদের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথমদিনই বঙ্গোপসাগরে এক জেলের জালে আড়াই কেজি ওজনের ইলিশ ধরা পড়েছে। ইলিশটি লক্ষ্মীপুরের মাছঘাটে নিলামে ৯ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। কমলনগরের মতিরহাট মাছঘাট থেকে স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী আমির হোসেন ইলিশটি কেনেন বলে জানিয়েছেন আড়তদার মো. বাবুল। সাদ্দাম হোসেনের ইলিশটি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মতিরহাট মাছঘাটে ডাকে ৯ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

আড়তদার মো. বাবুল বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ভোলার জেলে সাদ্দাম ১৫ জন সঙ্গী নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে যান। গত শনিবার রাতে তাদের জালে অন্যান্য ইলিশের সঙ্গে ওই বড় ইলিশটিও ধরা পড়ে। পরে অনেকগুলো মাছসহ বড় ইলিশটি আড়তে নিয়ে আসেন তিনি। মাছটি আড়তে আনা হলে ডাকে (নিলামে) ৯ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।

বেশি দামেই মাছটি বিক্রি হয়েছে জানিয়ে আড়তদার বলেন, ‘সচরাচর এতো বড় ইলিশ ধরা পড়ে না, তার ওপর মেঘনা নদীতে মাছ কম পাওয়াতে তিনি এমন চড়া দাম পেয়েছেন।’ ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘ঢাকার মোকামে বড় ইলিশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আড়াই কেজি ওজনের মাছটি সেখানে পাঠানো হবে। আশা করছি অন্তত ১১-১২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো।’

জানা গেছে, ডিম ছাড়া ও প্রজননের জন্য গত ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, আনা-নেয়া, বাজারজাত ও মজুদ নিষিদ্ধ করে সরকার। ওই সময়ে ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছিল বলে জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষা করতে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের মতামত অনুযায়ী ওই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।’

ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম (৪ থেকে ২৫ অক্টোবর)। আশ্বিনী পূর্ণিমার পূর্বের চারদিন এবং অমাবস্যার পরের তিনদিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন এই অভিযান চলে। ‘প্রজনন মৌসুমের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা উভয় সময়ই ডিম পাড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, দুটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ প্রজনন নিশ্চিত করা হয়েছে। এই কর্মসূচি ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ নামে পরিচিত। অভিযান পরিচালনায় মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশগ্রহণ করেছে।’

ওই সময়ে জেলেদের জন্য সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, ৩৭টি জেলার ১৬৫টি উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০ জেলে পরিবারকে ভিজিএফ (চাল) দেয়া হয়েছে, পরিবার প্রতি বরাদ্দ ২৫ কেজি করে চাল, যা পুরো কার্যক্রমে মোট ১৫ হাজার ৫০৩ দশমিক ৫ টন চালের প্রয়োজন হয়েছে। ‘অভিযানের সময় জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। নদীতে ড্রেজিং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। সমুদ্র, উপকূল ও মোহনায়ও প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ধরে ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল।’

ফরিদা আখতার বলেন, ‘বিএফআরআই-এর গবেষণা অনুযায়ী ২০২৪ সালের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছেড়েছিল। এর ফলে ৪৪ দশমিক ২৫ হাজার কোটি জাটকা বা রেণু ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। এই ডিম থেকে উৎপন্ন রেণু বা পোনা (জাটকা) ভবিষ্যতে পরিপক্ক ইলিশে পরিণত হবে।’ গত ৫ বছরে প্রায় ১০ শতাংশ ইলিশ আহরণ কমার তথ্য দিয়ে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে।

ছবি

সুনামগঞ্জে জমি থেকে ৫ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে রোহিঙ্গা যুবকের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার

‘গুলির শব্দ শুনে’ অভিযান: অভিনেতা মন্টুর ছেলেসহ চারজন কারাগারে

ছবি

অবশেষে সংরক্ষণের কাজ চলছে দিনাজপুরের ভগ্নপ্রায় সেই রাজবাড়ির

ছবি

মোন্থার প্রভাবে ৩ বিভাগে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে ‘নিখোঁজ’ ডিআইজি এহসানউল্লাহ

ছবি

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

জয়দেবপুর রেলক্রসিং: দোকান আর অটোরিকশার দাপট, জনদুর্ভোগ চরমে

স্বল্পমূল্যের ওএমএস আটা: দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও অধিকাংশই ব্যর্থ

ছবি

বিশ্বে ভূপৃষ্টের তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে

ছবি

যুদ্ধ বন্ধের আশা হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা

ভোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু

ছবি

জয়পুরহাটে চিলাহাটি এক্সপ্রেস যাত্রাবিরতির অনুমোদন

ছবি

মহাদেবপুরে নির্বিঘ্নে সার ও বীজ সরবরাহে মতবিনিময় সভা

ছবি

সাঘাটায় মেয়াদের ৪ মাস অতিবাহিত হলেও বাস্তবায়ন হয়নি এডিপি প্রকল্প

ছবি

শেরপুরে নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

ছবি

শেরপুরে নাবিল হাইওয়ে রেস্টুরেন্টকে জরিমানা

ছবি

জাল স্বাক্ষরে পদত্যাগপত্র তৈরির অভিযোগ মোরেলগঞ্জে ১৫ বছর ধরে নিজ কর্মস্থল থেকে বিতাড়িত অধ্যক্ষ

ছবি

ডিম ছাড়া শেষ, শুরু হলো জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা

ছবি

অবৈধ ড্রেজারের তাণ্ডবে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি

ছবি

কটিয়াদী সড়কে বড় বড় গর্ত, যেন মরণ ফাঁদ

ছবি

কিশোরগঞ্জে খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ

ছবি

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ বিনোদনের প্রাচীন ঐতিহ্য- বানরের খেলা

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে বিজিবির অভিযানে মাদক উদ্ধার ও ৯ বাংলাদেশি আটক

ছবি

ধোবাউড়ায় তুচ্চ ঘটনায় চুরিকাঘাতে খুন, আটক ৩

ছবি

সলঙ্গায় প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ

ফকিরহাটে স্কুল শিক্ষিকার বাড়িতে লুটপাট

ছবি

নড়াইলে ২ ব্যবসায়ীকে জরিমানা

ছবি

মাদকসেবীকে বাঁচাতে সহকারী প্রক্টরকে লাঞ্ছনা

ছবি

নড়াইলে চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ

ছবি

মোরেলগঞ্জের কমলা চাষে সফল নাসির মল্লিক

ছবি

নন্দীগ্রামে প্রশিক্ষণ পেয়েও ঋণ পাচ্ছেন না যুবকরা

ছবি

বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে গলাচিপার গুরিন্দা জামে মসজিদ

ছবি

চরভদ্রাসনে পদ্মার ভাঙনে ৩০ মিটার বাঁধ বিলীন

ছবি

দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে ইছামতী নদী

ছবি

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের সরাসরি আদেশ দাবি হাসনাতের

tab

সাগরে প্রথম জাল ফেলেই ১৪০ মণ ইলিশ ধরলো জেলেরা

প্রতিনিধি, বরগুনা

টানা ২২ দিনের অবরোধ শেষে শুক্রবার সাগরে নেমেছে জেলেরা। রূপালী ইলিশ বন্দী জাল টেনে তুলছে তারা -সংগৃহীত

শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম সাগরে গিয়েই কপাল খুলেছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার একদল জেলের। একটানে জালে ১৪০ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে, যা বিক্রি হয়েছে ৩১ লাখ টাকায়। কুয়াকাটা সৈকত থেকে ৬০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে এসব ইলিশ ধরা পড়ে বলে জানান এফবি সাফাওয়ান-৩ ট্রলারের মাঝি রুবেল।

একটি ট্রলারে জায়গায় সংকুলান না হওয়ায় একই কোম্পানির আরেকটি ট্রলার সাইফ-২ এ মাছ ভাগাভাগি করে সাগর থেকে ঘাটে নেয়া হয়। শুক্রবার সকালে পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সাইফ ফিশ আড়তে এসব মাছ বিক্রির জন্য তোলা হয়। সেখানে ডাকের মাধ্যমে মাছগুলো ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

মাঝি রুবেল বলেন, গত বুধবার ১৯ জন জেলে নিয়ে সাগরে যাই। ওইদিন বিকেলে কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে জাল ফেলার পরই রাতে মাছগুলো ধরা পড়ে। রাত ৮টা থেকে জেলেরা জাল টানা শুরু করে পরদিন দুপুর দেড়টা পর্যন্ত জাল ট্রলারে উঠানো শেষ হয়। তবে জেলেদের দাবি, সব মিলিয়ে ১৭০-১৭৫ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে।

সাইফ ফিশিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক মনিরুল হক মাসুম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে সাগরে খুব একটা মাছ ধরা পড়ছিল না। ইলিশ মৌসুমে কাক্সিক্ষত মাছ ধরা না পড়ায় আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছিল। ‘তবে সাগরে অবৈধ ট্রলিং বোট বন্ধ করা হলে জেলেদের জালে আগের মতন মাছ ধরা পড়বে। ফিরে আসবে সাধারণ জেলেদের সুদিন।’

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী ও আড়তদার মোস্তফা আলম বলেন, ইলিশের প্রকারভেদ অনুযায়ী ২৭ হাজার, ২২ হাজার ও ১২ হাজার টাকা মণ দরে সবমিলিয়ে ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা সাগরে গিয়েই মাছ পেয়েছে, এটা খুশির খবর। তবে দীর্ঘদিন ধরে কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা মিলছে না। হঠাৎ এক ট্রলারে ১৪০ মণ ইলিশ পাওয়ায় আমরাও খুশি।’

আমাদের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথমদিনই বঙ্গোপসাগরে এক জেলের জালে আড়াই কেজি ওজনের ইলিশ ধরা পড়েছে। ইলিশটি লক্ষ্মীপুরের মাছঘাটে নিলামে ৯ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। কমলনগরের মতিরহাট মাছঘাট থেকে স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী আমির হোসেন ইলিশটি কেনেন বলে জানিয়েছেন আড়তদার মো. বাবুল। সাদ্দাম হোসেনের ইলিশটি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মতিরহাট মাছঘাটে ডাকে ৯ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

আড়তদার মো. বাবুল বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ভোলার জেলে সাদ্দাম ১৫ জন সঙ্গী নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে যান। গত শনিবার রাতে তাদের জালে অন্যান্য ইলিশের সঙ্গে ওই বড় ইলিশটিও ধরা পড়ে। পরে অনেকগুলো মাছসহ বড় ইলিশটি আড়তে নিয়ে আসেন তিনি। মাছটি আড়তে আনা হলে ডাকে (নিলামে) ৯ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।

বেশি দামেই মাছটি বিক্রি হয়েছে জানিয়ে আড়তদার বলেন, ‘সচরাচর এতো বড় ইলিশ ধরা পড়ে না, তার ওপর মেঘনা নদীতে মাছ কম পাওয়াতে তিনি এমন চড়া দাম পেয়েছেন।’ ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘ঢাকার মোকামে বড় ইলিশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আড়াই কেজি ওজনের মাছটি সেখানে পাঠানো হবে। আশা করছি অন্তত ১১-১২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো।’

জানা গেছে, ডিম ছাড়া ও প্রজননের জন্য গত ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, আনা-নেয়া, বাজারজাত ও মজুদ নিষিদ্ধ করে সরকার। ওই সময়ে ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছিল বলে জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষা করতে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের মতামত অনুযায়ী ওই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।’

ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম (৪ থেকে ২৫ অক্টোবর)। আশ্বিনী পূর্ণিমার পূর্বের চারদিন এবং অমাবস্যার পরের তিনদিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন এই অভিযান চলে। ‘প্রজনন মৌসুমের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা উভয় সময়ই ডিম পাড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, দুটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ প্রজনন নিশ্চিত করা হয়েছে। এই কর্মসূচি ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ নামে পরিচিত। অভিযান পরিচালনায় মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশগ্রহণ করেছে।’

ওই সময়ে জেলেদের জন্য সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, ৩৭টি জেলার ১৬৫টি উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০ জেলে পরিবারকে ভিজিএফ (চাল) দেয়া হয়েছে, পরিবার প্রতি বরাদ্দ ২৫ কেজি করে চাল, যা পুরো কার্যক্রমে মোট ১৫ হাজার ৫০৩ দশমিক ৫ টন চালের প্রয়োজন হয়েছে। ‘অভিযানের সময় জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। নদীতে ড্রেজিং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। সমুদ্র, উপকূল ও মোহনায়ও প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ধরে ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল।’

ফরিদা আখতার বলেন, ‘বিএফআরআই-এর গবেষণা অনুযায়ী ২০২৪ সালের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছেড়েছিল। এর ফলে ৪৪ দশমিক ২৫ হাজার কোটি জাটকা বা রেণু ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। এই ডিম থেকে উৎপন্ন রেণু বা পোনা (জাটকা) ভবিষ্যতে পরিপক্ক ইলিশে পরিণত হবে।’ গত ৫ বছরে প্রায় ১০ শতাংশ ইলিশ আহরণ কমার তথ্য দিয়ে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে।

back to top