সিলেট : শাহজালাল সার কারখানা -সংবাদ
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত শাহজালাল সার কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটি পিছু ছাড়ছে না। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কারখানাটিতে প্রতিবছর অন্তত সাত থেকে আট দফা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়।বর্তমানে ওই সার কারখানাটির তদারকি করছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। বার বার যান্ত্রিক ত্রুটির এই বিড়ম্বনার কারণে কারখানাটি এখন সংশ্লিষ্টদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১২ মার্চ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটানা সাত মাস সরকারি সিদ্ধান্তে সার কারখানাটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। ১ অক্টোবর থেকে আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে সার কারখানা সক্রিয় করা হয় ইউরিয়া অ্যামোনিয়া সেকশনের সব মেশিন চালুর মাধ্যমে। ১০ অক্টোবর বিকেলে উৎপাদনে যায় শাহজালাল কারখানাটি। তবে মাত্র ২২ ঘণ্টা চলার পরই অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিলে থমকে যায় উৎপাদন কার্যক্রম। প্ল্যান্টের ত্রুটি মেরামত সম্পন্ন হলে ১৭ অক্টোবর সার কারখানা ফের চালু করা হয়। ২৪ ঘণ্টা চলার পর আবারও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর টানা এক সপ্তাহ বন্ধ থাকে উৎপাদন। ত্রুটি সারাতে কারখানার প্রকৌশলীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে ৩০ অক্টোবর সেটিকে চালু করে। এতে উৎপাদনে ফেরে সার কারখানাটি। শাহজালালসার কারখানার কারিগরি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে ১০ বার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দফায় দফায় বাধাগ্রস্ত হয় উৎপাদন কার্যক্রম। বছরের শুরুতে অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে দুই মাস ১০ দিন বন্ধ থাকে কারখানা। বিদেশি প্রকৌশলীরা এসে সংস্কার করলে শুরু হয় উৎপাদন।মাত্র দেড় মাসের মাথায় ফের যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয় কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এতে বন্ধ হয়ে যায় ইউরিয়া উৎপাদন। এ অবস্থায় শাহজালাল সার কারখানায় চলতি অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি সার কারখানার অ্যামোনিয়া গ্যাস টারবাইনের এয়ার কম্প্রেসারের কন্ট্রোল সিস্টেমে সফটওয়্যারজনিত ত্রুটি দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় পুরো প্ল্যান্ট। শেষ পর্যন্ত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইতালির জি ই ওয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানির প্রকৌশলীরা ফেঞ্চুগঞ্জে এসে ১০ দিনের প্রচেষ্টায় আধুনিক সফটওয়্যার প্রতিস্থাপন করেন।এর আগে ২০২২ সালের ৭ মে শাহজালাল সার কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে উৎপাদন থমকে যায়। কারখানার বিদ্যুৎকেন্দ্রর সহায়ক বয়লারের একটি বন্ধ হয়ে গেলে বষ্প স্বল্পতার কারণে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে তিন দিন বন্ধ ছিল কারখানার ইউরিয়া উৎপাদন। ৯ মে রাতে ফের চালু হয় উৎপাদন। ২০২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্ভর পর্যন্ত আট দফা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয় শাহজালাল সার কারখানা। ২০১৯ সালে ১৬ জুন থেকে ২১ জুলাই বয়লারে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের টারবাইন ব্লেড ভেঙে যাওয়ায় কারখানায় উৎপাদন এক মাস বন্ধ ছিল। দেশে ক্রমবর্ধমান ইউরিয়া সারের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ২০১০ সালে চীন সরকারের সঙ্গে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির মাধ্যমে এই কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয় বিগত সরকারের আমলে। বছরে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন ইউরিয়া ও তিন লাখ ৩০ হাজার টন অ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য শাহজালাল সার কারখানা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স কমপ্লাইন্ট ৩৮ মাসে কারখানাটি নির্মাণ করে। নির্মাণকালে প্রকল্পে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নির্মাণকাজ ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিযোগ ছিল শুরু থেকেই।
সার কারখানা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স কমপ্লাইন্ট ও প্রশিক্ষণ কোম্পানি মেসার্স ঝাংফু সার কারখানাটি তড়িগড়ি করে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিসিআইসির কাছে হস্তান্তর করে। শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, অত্যাধুনিক এই সার কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে কারখানার যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যায়। আবার উৎপাদনে ফিরতে বেগ পেতে হয়।শাহজালাল সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (কারিগরি) শম্ভুলাল দাশ জানান, প্রথমে গ্যাস সংযোগ না থাকায় পরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কারখানাটি বন্ধ ছিল। বর্তমানে এটি সচল রয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সিলেট : শাহজালাল সার কারখানা -সংবাদ
বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত শাহজালাল সার কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটি পিছু ছাড়ছে না। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কারখানাটিতে প্রতিবছর অন্তত সাত থেকে আট দফা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়।বর্তমানে ওই সার কারখানাটির তদারকি করছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। বার বার যান্ত্রিক ত্রুটির এই বিড়ম্বনার কারণে কারখানাটি এখন সংশ্লিষ্টদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১২ মার্চ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটানা সাত মাস সরকারি সিদ্ধান্তে সার কারখানাটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। ১ অক্টোবর থেকে আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে সার কারখানা সক্রিয় করা হয় ইউরিয়া অ্যামোনিয়া সেকশনের সব মেশিন চালুর মাধ্যমে। ১০ অক্টোবর বিকেলে উৎপাদনে যায় শাহজালাল কারখানাটি। তবে মাত্র ২২ ঘণ্টা চলার পরই অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিলে থমকে যায় উৎপাদন কার্যক্রম। প্ল্যান্টের ত্রুটি মেরামত সম্পন্ন হলে ১৭ অক্টোবর সার কারখানা ফের চালু করা হয়। ২৪ ঘণ্টা চলার পর আবারও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর টানা এক সপ্তাহ বন্ধ থাকে উৎপাদন। ত্রুটি সারাতে কারখানার প্রকৌশলীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে ৩০ অক্টোবর সেটিকে চালু করে। এতে উৎপাদনে ফেরে সার কারখানাটি। শাহজালালসার কারখানার কারিগরি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে ১০ বার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দফায় দফায় বাধাগ্রস্ত হয় উৎপাদন কার্যক্রম। বছরের শুরুতে অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে দুই মাস ১০ দিন বন্ধ থাকে কারখানা। বিদেশি প্রকৌশলীরা এসে সংস্কার করলে শুরু হয় উৎপাদন।মাত্র দেড় মাসের মাথায় ফের যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয় কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এতে বন্ধ হয়ে যায় ইউরিয়া উৎপাদন। এ অবস্থায় শাহজালাল সার কারখানায় চলতি অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি সার কারখানার অ্যামোনিয়া গ্যাস টারবাইনের এয়ার কম্প্রেসারের কন্ট্রোল সিস্টেমে সফটওয়্যারজনিত ত্রুটি দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় পুরো প্ল্যান্ট। শেষ পর্যন্ত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইতালির জি ই ওয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানির প্রকৌশলীরা ফেঞ্চুগঞ্জে এসে ১০ দিনের প্রচেষ্টায় আধুনিক সফটওয়্যার প্রতিস্থাপন করেন।এর আগে ২০২২ সালের ৭ মে শাহজালাল সার কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে উৎপাদন থমকে যায়। কারখানার বিদ্যুৎকেন্দ্রর সহায়ক বয়লারের একটি বন্ধ হয়ে গেলে বষ্প স্বল্পতার কারণে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে তিন দিন বন্ধ ছিল কারখানার ইউরিয়া উৎপাদন। ৯ মে রাতে ফের চালু হয় উৎপাদন। ২০২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্ভর পর্যন্ত আট দফা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয় শাহজালাল সার কারখানা। ২০১৯ সালে ১৬ জুন থেকে ২১ জুলাই বয়লারে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের টারবাইন ব্লেড ভেঙে যাওয়ায় কারখানায় উৎপাদন এক মাস বন্ধ ছিল। দেশে ক্রমবর্ধমান ইউরিয়া সারের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ২০১০ সালে চীন সরকারের সঙ্গে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির মাধ্যমে এই কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয় বিগত সরকারের আমলে। বছরে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন ইউরিয়া ও তিন লাখ ৩০ হাজার টন অ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য শাহজালাল সার কারখানা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স কমপ্লাইন্ট ৩৮ মাসে কারখানাটি নির্মাণ করে। নির্মাণকালে প্রকল্পে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নির্মাণকাজ ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিযোগ ছিল শুরু থেকেই।
সার কারখানা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স কমপ্লাইন্ট ও প্রশিক্ষণ কোম্পানি মেসার্স ঝাংফু সার কারখানাটি তড়িগড়ি করে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিসিআইসির কাছে হস্তান্তর করে। শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, অত্যাধুনিক এই সার কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে কারখানার যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যায়। আবার উৎপাদনে ফিরতে বেগ পেতে হয়।শাহজালাল সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (কারিগরি) শম্ভুলাল দাশ জানান, প্রথমে গ্যাস সংযোগ না থাকায় পরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কারখানাটি বন্ধ ছিল। বর্তমানে এটি সচল রয়েছে।