কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) : পোকায় আক্রান্ত ধান খেত -সংবাদ
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আমন ধানের ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও সুফল না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৩ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে কারেন্ট পোকা ও পচন রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক মোবাইল ফোন, সরাসরি ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বেশিরভাগ আমন খেতে কারেন্ট পোকার ব্যাপক আক্রমণ হয়েছে। ফসলের মাঠজুড়ে এখন শুধু পোকার রাজত্ব। এদের হাত থেকে ফসল রক্ষায় বাজারে পাওয়া কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। সময়মতো পোকা দমন করতে না পারলে এবার রোপা আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে। এছাড়া গোড়া পচন রোগও আছে। ধানগাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামি রং ধারণ করছে। কটিয়াদী অধিকাংশ ক্ষেতে এখন ধানের শীষ বেরিয়েছে। এমন অবস্থায় এই কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। দিনের বেলা যে ধান ভালো দেখা যাচ্ছে রাতারাতি তার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়ার মতো রঙ ধারণ করছে। এ আক্রমণ থেকে ধান রক্ষা করার জন্য কৃষকরা ছুটছেন স্থানীয় কীটনাশকের দোকানে। সেখান থেকে দোকানদারের ইচ্ছে মতো কীটনাশক নিয়ে ধান ক্ষেতে ছিটাচ্ছেন। কিন্তু পোকার আক্রমণ কম না হয়ে বরং বেশি হচ্ছে। একাধিকবার কীটনাশক ছিটিয়েও পোকা দমন না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। কয়েক দফা বালাইনাশক স্প্রে করার ফলে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এর ফলে ধানের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।
চারিপাড়া গ্রামেন কৃষক মো. মহসিন বলেন, এখনো ধানের গাছে থোর পর্যায়ে এসেছে। প্রতিবছর তিনবার বালাইনাশক ছিটালে আর দরকার হয় না। এবার এখনো ধানের শিষ বের না হলেও আর এর মধ্যেই তিনবার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে। আরো কতবার স্প্রে করতে হবে তা জানা নেই।
মসূয়া গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া বলেন আমনখেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণের পাশাপাশি খোল পঁচা রোগ আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি কীটনাশক প্রয়োগ করেছি। তবে আমন খেতে পুরোপুরি পোকামুক্ত হয়নি। গোড়া রোগের পঁচা বিনাশে কীটনাশকের কার্যকারিতা খুবই কম।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণ ও কৃষক ধান খেতে সঠিক সময়ে নিয়ম মতো কীটনাশক ব্যবহার না করায় পোকার আক্রমণ হচ্ছে। পোকা দমনে কৃষককে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম ভুইঞা জানান, প্রতিবছরই আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ হয়। আবহাওয়া জনিত কারণে এ বছর পোকার আক্রমনটা একটু বেশি ।তবে কৃষকেরা সঠিকভাবে সঠিক সময়ে কীটনাশক ব্যবহার করলে পোকা দমন ও গোড়া পচন রোধ করা সম্ভব। কৃষকরা একটু ভুল করেছেন। তারা ইউনিয়নভিত্তিক নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে না জানিয়ে সরাসরি দোকানদারের কাছ থেকে সিনথেটিক পাইরিথ্রয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেছেন। এতে পোকার আক্রমণ না কমে বরং বেড়ে গেছে। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী যে কৃষক জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করেছে তাদের জমিতে পোকার আক্রমণ এবং পচন রোগ কম এবং যারা বাজার থেকে কীটনাশকের দোকানীদের পরামর্শে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করছে তাদের জমিতে পোকা ও পচন রোগের আক্রমন বেশি। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগন কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ঈশা খান জানান, অতিমাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন কৃষিজ ও প্রাণিজ খাদ্যের মাধ্যমে কীটনাশক মানবদেহে প্রবেশ করায় মানুষের হার্ট, কিডনি, লিভার, স্নায়ু ও ত্বক আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে জমির উর্বরতা ও পরিবেশ রক্ষায় রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা আবশ্যক।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) : পোকায় আক্রান্ত ধান খেত -সংবাদ
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আমন ধানের ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও সুফল না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৩ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে কারেন্ট পোকা ও পচন রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক মোবাইল ফোন, সরাসরি ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বেশিরভাগ আমন খেতে কারেন্ট পোকার ব্যাপক আক্রমণ হয়েছে। ফসলের মাঠজুড়ে এখন শুধু পোকার রাজত্ব। এদের হাত থেকে ফসল রক্ষায় বাজারে পাওয়া কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। সময়মতো পোকা দমন করতে না পারলে এবার রোপা আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে। এছাড়া গোড়া পচন রোগও আছে। ধানগাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামি রং ধারণ করছে। কটিয়াদী অধিকাংশ ক্ষেতে এখন ধানের শীষ বেরিয়েছে। এমন অবস্থায় এই কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। দিনের বেলা যে ধান ভালো দেখা যাচ্ছে রাতারাতি তার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়ার মতো রঙ ধারণ করছে। এ আক্রমণ থেকে ধান রক্ষা করার জন্য কৃষকরা ছুটছেন স্থানীয় কীটনাশকের দোকানে। সেখান থেকে দোকানদারের ইচ্ছে মতো কীটনাশক নিয়ে ধান ক্ষেতে ছিটাচ্ছেন। কিন্তু পোকার আক্রমণ কম না হয়ে বরং বেশি হচ্ছে। একাধিকবার কীটনাশক ছিটিয়েও পোকা দমন না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। কয়েক দফা বালাইনাশক স্প্রে করার ফলে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এর ফলে ধানের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।
চারিপাড়া গ্রামেন কৃষক মো. মহসিন বলেন, এখনো ধানের গাছে থোর পর্যায়ে এসেছে। প্রতিবছর তিনবার বালাইনাশক ছিটালে আর দরকার হয় না। এবার এখনো ধানের শিষ বের না হলেও আর এর মধ্যেই তিনবার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে। আরো কতবার স্প্রে করতে হবে তা জানা নেই।
মসূয়া গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া বলেন আমনখেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণের পাশাপাশি খোল পঁচা রোগ আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি কীটনাশক প্রয়োগ করেছি। তবে আমন খেতে পুরোপুরি পোকামুক্ত হয়নি। গোড়া রোগের পঁচা বিনাশে কীটনাশকের কার্যকারিতা খুবই কম।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণ ও কৃষক ধান খেতে সঠিক সময়ে নিয়ম মতো কীটনাশক ব্যবহার না করায় পোকার আক্রমণ হচ্ছে। পোকা দমনে কৃষককে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম ভুইঞা জানান, প্রতিবছরই আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ হয়। আবহাওয়া জনিত কারণে এ বছর পোকার আক্রমনটা একটু বেশি ।তবে কৃষকেরা সঠিকভাবে সঠিক সময়ে কীটনাশক ব্যবহার করলে পোকা দমন ও গোড়া পচন রোধ করা সম্ভব। কৃষকরা একটু ভুল করেছেন। তারা ইউনিয়নভিত্তিক নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে না জানিয়ে সরাসরি দোকানদারের কাছ থেকে সিনথেটিক পাইরিথ্রয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেছেন। এতে পোকার আক্রমণ না কমে বরং বেড়ে গেছে। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী যে কৃষক জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করেছে তাদের জমিতে পোকার আক্রমণ এবং পচন রোগ কম এবং যারা বাজার থেকে কীটনাশকের দোকানীদের পরামর্শে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করছে তাদের জমিতে পোকা ও পচন রোগের আক্রমন বেশি। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগন কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ঈশা খান জানান, অতিমাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন কৃষিজ ও প্রাণিজ খাদ্যের মাধ্যমে কীটনাশক মানবদেহে প্রবেশ করায় মানুষের হার্ট, কিডনি, লিভার, স্নায়ু ও ত্বক আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে জমির উর্বরতা ও পরিবেশ রক্ষায় রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা আবশ্যক।