খুলনায় শনিবার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অংশীজনের ভূমিকা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থান ১৩তম গ্রেড। প্রধান শিক্ষকদের আমরা সম্প্রতি দশম গ্রেডে উন্নীত করেছি। তাহলে সহকারী শিক্ষকদের হঠাৎ করে ১৩তম গ্রেড থেকে কীভাবে দশম গ্রেডে উন্নীত করব?”
তিনি আরও জানান, “আমরা তিন দফা দাবি দেখেছি। প্রথমটা দশম গ্রেড, পরেরটা ১০ ও ১৬ বছরে সিলেকশন গ্রেড, তিন নম্বরটা শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি। পদোন্নতির ক্ষেত্রে আমরা শতভাগ প্রস্তাব করেছিলাম। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারের নীতি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশই দেওয়া যাবে, ২০ শতাংশ নতুন নিয়োগের জন্য রাখা হবে। তাই আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেটি করা হয়েছে। ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে যে টাইম স্কেল, তা বেতন কমিশন দেখবে, এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
দশম গ্রেড সংক্রান্ত দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি অংশ এই দাবিটা করছে, কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষক মনে করেন এটি যৌক্তিক নয়। প্রধান শিক্ষকেরা ১২ ও ১১ গ্রেডে বেতন পেতেন। বর্তমান সরকার তাদের দশম গ্রেডে উন্নীত করেছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং বড় আর্থিক প্রভাব রয়েছে। সরকার মনে করেছে প্রধান শিক্ষকের দাবিটা যুক্তিসংগত। এজন্য প্রধান শিক্ষকের দাবিটা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সহকারী শিক্ষকেরা ১৩তম গ্রেড থেকে সরাসরি দশম গ্রেডে যেতে চাইছেন, যেখানে মাত্র প্রধান শিক্ষকেরা দশম গ্রেড পেয়েছেন। এটি যুক্তিসংগত কি না, বিচার করা আপনারাই পারবেন। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বেতন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি যাতে সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেড পেতে পারেন। তবে দশম গ্রেডের দাবিতে আন্দোলন করা এখন যৌক্তিক মনে হয় না।”
শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে পড়াশোনার ক্ষতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “ওনারা স্বাধীন দেশের নাগরিক, তাই কথা বলার সুযোগ আছে এবং আন্দোলন করতে পারেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত করব পড়াশোনা বিঘ্নিত না হয়। অযৌক্তিক দাবির কারণে যদি পড়াশোনার ক্ষতি হয়, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মতবিনিময় সভায় তিনি আরও বলেন, “সফল স্কুলের দৃষ্টান্ত থেকে ধারণা নিয়ে বাকি স্কুলগুলো নিজেদের উন্নত করতে পারে। শিখন সাইকোলজি অনুযায়ী ক্লাসে সবাই সমমানের না হলেও একজন অন্যজন থেকে শিখতে পারে। শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রতি গুরুত্বারোপ করা জরুরি। শিক্ষকেরা তাদের সাংগঠনিক ও একাডেমিক নেতৃত্ব দিয়ে হাজারো শিশুর আদর্শ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেন।”
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মিরাজুল ইসলাম উকিল এবং খুলনার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফিরোজ শাহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন খুলনা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম, বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরীন আকতার এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাফফর উদ্দীন। সভার আয়োজন করে খুলনা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
খুলনায় শনিবার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অংশীজনের ভূমিকা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থান ১৩তম গ্রেড। প্রধান শিক্ষকদের আমরা সম্প্রতি দশম গ্রেডে উন্নীত করেছি। তাহলে সহকারী শিক্ষকদের হঠাৎ করে ১৩তম গ্রেড থেকে কীভাবে দশম গ্রেডে উন্নীত করব?”
তিনি আরও জানান, “আমরা তিন দফা দাবি দেখেছি। প্রথমটা দশম গ্রেড, পরেরটা ১০ ও ১৬ বছরে সিলেকশন গ্রেড, তিন নম্বরটা শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি। পদোন্নতির ক্ষেত্রে আমরা শতভাগ প্রস্তাব করেছিলাম। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারের নীতি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশই দেওয়া যাবে, ২০ শতাংশ নতুন নিয়োগের জন্য রাখা হবে। তাই আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেটি করা হয়েছে। ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে যে টাইম স্কেল, তা বেতন কমিশন দেখবে, এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
দশম গ্রেড সংক্রান্ত দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি অংশ এই দাবিটা করছে, কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষক মনে করেন এটি যৌক্তিক নয়। প্রধান শিক্ষকেরা ১২ ও ১১ গ্রেডে বেতন পেতেন। বর্তমান সরকার তাদের দশম গ্রেডে উন্নীত করেছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং বড় আর্থিক প্রভাব রয়েছে। সরকার মনে করেছে প্রধান শিক্ষকের দাবিটা যুক্তিসংগত। এজন্য প্রধান শিক্ষকের দাবিটা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সহকারী শিক্ষকেরা ১৩তম গ্রেড থেকে সরাসরি দশম গ্রেডে যেতে চাইছেন, যেখানে মাত্র প্রধান শিক্ষকেরা দশম গ্রেড পেয়েছেন। এটি যুক্তিসংগত কি না, বিচার করা আপনারাই পারবেন। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বেতন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি যাতে সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেড পেতে পারেন। তবে দশম গ্রেডের দাবিতে আন্দোলন করা এখন যৌক্তিক মনে হয় না।”
শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে পড়াশোনার ক্ষতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “ওনারা স্বাধীন দেশের নাগরিক, তাই কথা বলার সুযোগ আছে এবং আন্দোলন করতে পারেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত করব পড়াশোনা বিঘ্নিত না হয়। অযৌক্তিক দাবির কারণে যদি পড়াশোনার ক্ষতি হয়, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মতবিনিময় সভায় তিনি আরও বলেন, “সফল স্কুলের দৃষ্টান্ত থেকে ধারণা নিয়ে বাকি স্কুলগুলো নিজেদের উন্নত করতে পারে। শিখন সাইকোলজি অনুযায়ী ক্লাসে সবাই সমমানের না হলেও একজন অন্যজন থেকে শিখতে পারে। শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রতি গুরুত্বারোপ করা জরুরি। শিক্ষকেরা তাদের সাংগঠনিক ও একাডেমিক নেতৃত্ব দিয়ে হাজারো শিশুর আদর্শ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেন।”
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মিরাজুল ইসলাম উকিল এবং খুলনার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফিরোজ শাহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন খুলনা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম, বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরীন আকতার এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাফফর উদ্দীন। সভার আয়োজন করে খুলনা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।