জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে সরকারি হাসপাতালগুলো ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, একাধিকবার লিখিতভাবে প্রতিটি হাসপাতালে নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানা হয়নি। শনিবার, (০৮ নভেম্বর ২০২৫) সকালে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংকট’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ হেলথ্ ওয়াচ ও অ্যাসোসিয়েটস ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এমিনেন্স) যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানের একজন আহত স্বাস্থ্য কার্ড নিয়ে বিশেষ সহকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘সরকার বারবার লিখিত নির্দেশনা ও রিমাইন্ডার পাঠানোর পরও বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্য কার্ডধারী জুলাই আহত ব্যক্তিদের প্রাপ্য সম্মান ও ফাস্ট ট্র্যাক সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একাধিকবার লিখিতভাবে প্রতিটি হাসপাতালে লিখিত নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানা হয়নি।’ ভবিষ্যতে এ ধরনের গাফিলতি এড়াতে আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে আবারও নির্দেশনা পাঠাবেন বলেও জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, ‘কোনো হাসপাতাল যদি আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, হাসপাতালে প্রাপ্ত ওষুধ এবং হাসপাতালে করা যায় এমন পরীক্ষা না করে বা করাতে দেরি করে, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।’
অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন জনস্বাস্থ্য গবেষক আহমদ এহসানুর রহমান ও এমিনেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হায়দার তালুকদার।
অনুষ্ঠানে গবেষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে গবেষক দলের সদস্য শিশির মোড়ল জানান, গত বছরের জুলাই মাসে রাজধানীর ৩৮টি হাসপাতাল ঘুরে তিনি দেখতে পান সেখানে চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে না এবং নানা রকম জটিলতা রয়েছে। তিনি বলেন, এই পর্যবেক্ষণ থেকেই গত বছরের আগস্টের তিন তারিখে এ গবেষণা করার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ডিজি অফিস এবং মন্ত্রীর ভূমিকা কেমন ছিল, তা খতিয়ে দেখা।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, গত বছর জুলাইয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতে তিন ধরনের প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো- চিকিৎসা গ্রহণে, কার্যকর চিকিৎসায় ও সম্মানজনক শেষকৃত্যে। চিকিৎসা গ্রহণে বাধাগুলোর মধ্যে ছিল- রাজনৈতিক নিপীড়নের ভয়, চলাচলে অসুবিধা, অ্যাম্বুলেন্সের অভাব ও সহকারীর অনুপস্থিতি। কার্যকর চিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা দেখা যায় হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসায় দেরি, অনুপযুক্ত ব্যবস্থা, অতিরিক্ত ভিড়, রেফারেল জট, রিসোর্স সংকট, অনৈতিক আচরণ, প্রয়োজনীয় জনবল ও প্রযুক্তির অভাব, উচ্চ খরচ ও ঘুষ। শেষকৃত্যে সমস্যা দেখা দেয় মৃতদেহ শনাক্তকরণে জটিলতা, পুলিশি বাধা, মর্গসুবিধার ঘাটতি ও নথি ভুক্তিকরণে ত্রুটিতে।
মূল কারণ হিসেবে উঠে আসে জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় প্রস্তুতি ও নেতৃত্বের ঘাটতি, মেডিকো-লিগ্যাল (চিকিৎসা ও আইন সংক্রান্ত) দুর্বলতা, স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার না দেয়া এবং নীতিনৈতিকতার অভাব।
ওয়াটারএইডের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- সুইডিশ সিডার প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক প্রমুখ।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে সরকারি হাসপাতালগুলো ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, একাধিকবার লিখিতভাবে প্রতিটি হাসপাতালে নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানা হয়নি। শনিবার, (০৮ নভেম্বর ২০২৫) সকালে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংকট’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ হেলথ্ ওয়াচ ও অ্যাসোসিয়েটস ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এমিনেন্স) যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানের একজন আহত স্বাস্থ্য কার্ড নিয়ে বিশেষ সহকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘সরকার বারবার লিখিত নির্দেশনা ও রিমাইন্ডার পাঠানোর পরও বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্য কার্ডধারী জুলাই আহত ব্যক্তিদের প্রাপ্য সম্মান ও ফাস্ট ট্র্যাক সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একাধিকবার লিখিতভাবে প্রতিটি হাসপাতালে লিখিত নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানা হয়নি।’ ভবিষ্যতে এ ধরনের গাফিলতি এড়াতে আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে আবারও নির্দেশনা পাঠাবেন বলেও জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, ‘কোনো হাসপাতাল যদি আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, হাসপাতালে প্রাপ্ত ওষুধ এবং হাসপাতালে করা যায় এমন পরীক্ষা না করে বা করাতে দেরি করে, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।’
অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন জনস্বাস্থ্য গবেষক আহমদ এহসানুর রহমান ও এমিনেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হায়দার তালুকদার।
অনুষ্ঠানে গবেষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে গবেষক দলের সদস্য শিশির মোড়ল জানান, গত বছরের জুলাই মাসে রাজধানীর ৩৮টি হাসপাতাল ঘুরে তিনি দেখতে পান সেখানে চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে না এবং নানা রকম জটিলতা রয়েছে। তিনি বলেন, এই পর্যবেক্ষণ থেকেই গত বছরের আগস্টের তিন তারিখে এ গবেষণা করার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ডিজি অফিস এবং মন্ত্রীর ভূমিকা কেমন ছিল, তা খতিয়ে দেখা।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, গত বছর জুলাইয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতে তিন ধরনের প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো- চিকিৎসা গ্রহণে, কার্যকর চিকিৎসায় ও সম্মানজনক শেষকৃত্যে। চিকিৎসা গ্রহণে বাধাগুলোর মধ্যে ছিল- রাজনৈতিক নিপীড়নের ভয়, চলাচলে অসুবিধা, অ্যাম্বুলেন্সের অভাব ও সহকারীর অনুপস্থিতি। কার্যকর চিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা দেখা যায় হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসায় দেরি, অনুপযুক্ত ব্যবস্থা, অতিরিক্ত ভিড়, রেফারেল জট, রিসোর্স সংকট, অনৈতিক আচরণ, প্রয়োজনীয় জনবল ও প্রযুক্তির অভাব, উচ্চ খরচ ও ঘুষ। শেষকৃত্যে সমস্যা দেখা দেয় মৃতদেহ শনাক্তকরণে জটিলতা, পুলিশি বাধা, মর্গসুবিধার ঘাটতি ও নথি ভুক্তিকরণে ত্রুটিতে।
মূল কারণ হিসেবে উঠে আসে জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় প্রস্তুতি ও নেতৃত্বের ঘাটতি, মেডিকো-লিগ্যাল (চিকিৎসা ও আইন সংক্রান্ত) দুর্বলতা, স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার না দেয়া এবং নীতিনৈতিকতার অভাব।
ওয়াটারএইডের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- সুইডিশ সিডার প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক প্রমুখ।