ইংল্যান্ডে আগামী বছর দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া গড় বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় সরকার ও পানি সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে জরুরিভিত্তিতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও চলতি গ্রীষ্মেই ইউরোপের এই দেশটির বড় অংশ খরাপ্রবণ হয়ে পড়েছিল। এমন অবস্থায় পানি ব্যবহারের ওপর দেশটিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে শনিবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, আগামী বছর ইংল্যান্ডে গত কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ খরা দেখা দিতে পারে বলে শনিবার এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান। এমন অবস্থায় দেশটির সরকার ও পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে।
এর ফলে পানি বাঁচাতে দেশটিতে ‘হোসপাইপ নিষেধাজ্ঞা’ বা বাগানে পানি ছিটানো বা গাড়ি ধোয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। যদিও শেষ পর্যন্ত এই ধরনের বিধি-নিষেধের সীমা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের একটি প্রধান পানি সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা গার্ডিয়ানকে জানান, তারা অস্বাভাবিকভাবে শুষ্ক শীত মৌসুমের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। এসময় দেশটির আবহাওয়া দপ্তরও গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে কম বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে পানি ব্যবহারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
অবশ্য চলতি গ্রীষ্মেই ইংল্যান্ডের বড় অংশ খরাপ্রবণ হয়ে পড়েছিল। তবে গত বছরের পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে তখনও জলাধার ও ভূগর্ভস্থ পানির মজুত কিছুটা টিকে ছিল। কিন্তু টানা কয়েক মাসের অস্বাভাবিক শুষ্ক আবহাওয়া সেই মজুত শেষ করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময় গড়ে যা বৃষ্টিপাত হয়েছে, সেটিও জলাধারগুলো পূরণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে বর্তমানে ইংল্যান্ডের জলাধারগুলোর গড় সংরক্ষণ ক্ষমতা নেমে এসেছে ৬৩ শতাংশে, যা মৌসুমি গড় ৭৬ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। এমনকি দক্ষিণ ইংল্যান্ডের কিছু জলাধারে এই হার ৩০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে।
এদিকে ভূগর্ভস্থ পানির পুনরায় পূরণ প্রক্রিয়া অনেক ধীরগতির এবং সেটিও এখন উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে। দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় পানি কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিক পানি ব্যবহারে নতুন নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছে। যার মধ্যে ভবন ধোয়া, সুইমিংপুলে পানি ভরাটের মতো কাজও নিষিদ্ধ করা হতে পারে। চার্টার্ড ইনস্টিটিউশন অব ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্টের নীতি পরিচালক অ্যালেস্টার চিশলম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, “শীত মৌসুম দুই বছর টানা শুষ্ক হলে সেটাই হয় বিপদের শুরু।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি শীত ও বসন্তজুড়ে টানা বৃষ্টিপাত না হয়, তাহলে দেশজুড়ে আরও খরা-সতর্কতা, পানি ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং নদী ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ চাপ তৈরি হবে। গার্ডিয়ান জানায়, ইংল্যান্ডের দীর্ঘমেয়াদি পানি নিরাপত্তা ক্রমেই নাজুক হয়ে পড়ছে কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে, গ্রীষ্ম ক্রমেই আরও উষ্ণ হচ্ছে। এছাড়া গত তিন দশকে আর নতুন কোনো জলাধারও নির্মাণ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানির জন্য নিয়মিত বৃষ্টিপাতের ওপর দেশটির নির্ভরতা এখন আর টেকসই কোনও পন্থা নয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রোববার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
ইংল্যান্ডে আগামী বছর দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া গড় বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় সরকার ও পানি সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে জরুরিভিত্তিতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও চলতি গ্রীষ্মেই ইউরোপের এই দেশটির বড় অংশ খরাপ্রবণ হয়ে পড়েছিল। এমন অবস্থায় পানি ব্যবহারের ওপর দেশটিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে শনিবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, আগামী বছর ইংল্যান্ডে গত কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ খরা দেখা দিতে পারে বলে শনিবার এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান। এমন অবস্থায় দেশটির সরকার ও পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে।
এর ফলে পানি বাঁচাতে দেশটিতে ‘হোসপাইপ নিষেধাজ্ঞা’ বা বাগানে পানি ছিটানো বা গাড়ি ধোয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। যদিও শেষ পর্যন্ত এই ধরনের বিধি-নিষেধের সীমা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের একটি প্রধান পানি সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা গার্ডিয়ানকে জানান, তারা অস্বাভাবিকভাবে শুষ্ক শীত মৌসুমের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। এসময় দেশটির আবহাওয়া দপ্তরও গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে কম বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে পানি ব্যবহারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
অবশ্য চলতি গ্রীষ্মেই ইংল্যান্ডের বড় অংশ খরাপ্রবণ হয়ে পড়েছিল। তবে গত বছরের পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে তখনও জলাধার ও ভূগর্ভস্থ পানির মজুত কিছুটা টিকে ছিল। কিন্তু টানা কয়েক মাসের অস্বাভাবিক শুষ্ক আবহাওয়া সেই মজুত শেষ করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময় গড়ে যা বৃষ্টিপাত হয়েছে, সেটিও জলাধারগুলো পূরণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে বর্তমানে ইংল্যান্ডের জলাধারগুলোর গড় সংরক্ষণ ক্ষমতা নেমে এসেছে ৬৩ শতাংশে, যা মৌসুমি গড় ৭৬ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। এমনকি দক্ষিণ ইংল্যান্ডের কিছু জলাধারে এই হার ৩০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে।
এদিকে ভূগর্ভস্থ পানির পুনরায় পূরণ প্রক্রিয়া অনেক ধীরগতির এবং সেটিও এখন উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে। দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় পানি কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিক পানি ব্যবহারে নতুন নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছে। যার মধ্যে ভবন ধোয়া, সুইমিংপুলে পানি ভরাটের মতো কাজও নিষিদ্ধ করা হতে পারে। চার্টার্ড ইনস্টিটিউশন অব ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্টের নীতি পরিচালক অ্যালেস্টার চিশলম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, “শীত মৌসুম দুই বছর টানা শুষ্ক হলে সেটাই হয় বিপদের শুরু।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি শীত ও বসন্তজুড়ে টানা বৃষ্টিপাত না হয়, তাহলে দেশজুড়ে আরও খরা-সতর্কতা, পানি ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং নদী ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ চাপ তৈরি হবে। গার্ডিয়ান জানায়, ইংল্যান্ডের দীর্ঘমেয়াদি পানি নিরাপত্তা ক্রমেই নাজুক হয়ে পড়ছে কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে, গ্রীষ্ম ক্রমেই আরও উষ্ণ হচ্ছে। এছাড়া গত তিন দশকে আর নতুন কোনো জলাধারও নির্মাণ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানির জন্য নিয়মিত বৃষ্টিপাতের ওপর দেশটির নির্ভরতা এখন আর টেকসই কোনও পন্থা নয়।