কিশোরগঞ্জ : মাঠে মাঠে আমন ধান সোনালী রঙ ধারণ করেছে -সংবাদ
কিশোরগঞ্জের মাঠে মাঠে আমন ধান সোনালী রঙ ধারণ করেছে। আর কয়েক দিন পরেই পুরোদমে আমন ধানকাটা ও মাড়াই শুরু হবে। তখন নতুন ধানের সুগন্ধে কৃষকের বাড়ি মুখরিত হবে। প্রতিটি কৃষক পরিবারে নবান্নের উৎসব বিরাজ করবে। তাই ধান কাটার আশায় কৃষক পরিবার মুখিয়ে রয়েছেন। তবে অনেক এলাকায় আমন জমিতে পোকা ও রোগবালাই দেখা দিয়েছে। এতে জমিতে আশানুরূপ ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহীনুল ইসলাম জানান, পোকার আক্রমণ ও রোগবালাই প্রায় দমন করা হয়েছে। আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জের মাঠে মাঠে কৃষকের স্বপ্নের আমন ধান সোনালী রং ধারণ করেছে। যেদিকেই চোখ যায় সোনালী ধান চোখে পড়বে। সে ধান কাটতে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মুখিয়ে রয়েছেন। আর কয়েকদিন পরই পুরোদমে ধানকাটা ও মাড়াই শুরু হবে। এসময় প্রতিটি কৃষক পরিবারে নবান্নের উৎসব বিরাজ করবে। কিন্তু অনেক কৃষকের মন ভালো নেই। কারণ মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকাসহ নানান রোগে আক্রান্ত হয়েছে অনেক কৃষকের জমি। তারা কাঙ্খিত আমন ধান ফলানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এসব রোগ সাড়াতে জমিতে বেশী বেশী কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
তাছাড়া অনেক এলাকায় পোকা ও রোগবালাই কিছুটা কমলেও অনেক জমিতে অন্তত ২০ভাগ ফসল কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের লোকজন কৃষকদেরকে সময়মতো সঠিক পরামর্শ না দেয়ার ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী, বজিতপুর ও কুলিয়ারচর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। আবার পোকা ও রোগবালাইয়ের কবলে না পড়া আমনের জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন।
করিমগঞ্জ উপজেলার কিরাটন মাইজপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম কাজল জানান, এবার তাদের এলাকায় পোকার আক্রমণ কিছুটা থাকলেও কীটনাশক প্রয়োগ করায় তেমন ক্ষতি হয়নি। তাছাড়া অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতেও আমনের আবাদ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার আমনের বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি জানান। করিমগঞ্জ পৌরসভার নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আবু সিদ্দিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকায় কৃষি বিভাগের লোকজন না আসায় তাদেরকে নিজেদের মতো করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে। জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণে চারবার ওষুধ দিয়েও পুরোপুরি পোকার আক্রমণ দূর করতে পারেননি বলে তিনি জানান।
জাফরাবাদ ইউনিয়নের শিমুলতলা বাদেশ্রী রামপুরের কৃষক মো. হৃদয় জানান, তিনি দুই একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। প্রথমদিকে জমি ভালই ছিল। কিন্তু মাজরাসহ নানান ধরণের পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। চারবার ওষুধ দিলেও তেমন কোনো কাজে আসছে না। জমিতে ২০ শতাংশ ধন কম হবে বলে তিনি জানান। মাঝিরকোনা গ্রামের কৃষক আব্দুর রাশিদ জানান, তিনি দুই একর ৪০ শতক জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমন জমিতে চারাবার ওষুধ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে তিনি জানান। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বাগপাড়া গ্রামের কৃষক শাহিদ মিয়া জানান তিনি মাত্র চার কাটা (৪০শতক) জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। এতে পাঁচ টাকার খরচ হয়েছে। পোকার আক্রমণের কারণে জমিতে ধান কম হবে। যেখানে ৩০ মণ ধান হওয়ার কথা সেখানে ২০ মণ হয় কি না, তা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২১৭ হেক্টর জমিতে পোকার আক্রমণ হলেও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে ২০১ হেক্টর জমির পোকা দমন করা হয়েছে। আর ৪৩ হেক্টর জমিতে রোগবালাই হলেও ৪২ হেক্টর জমির রোগবালাই দমন করা হয়েছে। তবে বাস্তবে পোকা ও রোগবালাইয়ের কারণে আমনের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশী বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলায় এবছর ৮৫ হাজার ১শ’ ৭৮ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭ মেট্রিক টন চাল। পোকার আক্রমণ কিছুটা থাকলেও বালাইনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে তা দমন করা হয়েছে। তাই আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
কিশোরগঞ্জ : মাঠে মাঠে আমন ধান সোনালী রঙ ধারণ করেছে -সংবাদ
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
কিশোরগঞ্জের মাঠে মাঠে আমন ধান সোনালী রঙ ধারণ করেছে। আর কয়েক দিন পরেই পুরোদমে আমন ধানকাটা ও মাড়াই শুরু হবে। তখন নতুন ধানের সুগন্ধে কৃষকের বাড়ি মুখরিত হবে। প্রতিটি কৃষক পরিবারে নবান্নের উৎসব বিরাজ করবে। তাই ধান কাটার আশায় কৃষক পরিবার মুখিয়ে রয়েছেন। তবে অনেক এলাকায় আমন জমিতে পোকা ও রোগবালাই দেখা দিয়েছে। এতে জমিতে আশানুরূপ ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহীনুল ইসলাম জানান, পোকার আক্রমণ ও রোগবালাই প্রায় দমন করা হয়েছে। আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জের মাঠে মাঠে কৃষকের স্বপ্নের আমন ধান সোনালী রং ধারণ করেছে। যেদিকেই চোখ যায় সোনালী ধান চোখে পড়বে। সে ধান কাটতে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মুখিয়ে রয়েছেন। আর কয়েকদিন পরই পুরোদমে ধানকাটা ও মাড়াই শুরু হবে। এসময় প্রতিটি কৃষক পরিবারে নবান্নের উৎসব বিরাজ করবে। কিন্তু অনেক কৃষকের মন ভালো নেই। কারণ মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকাসহ নানান রোগে আক্রান্ত হয়েছে অনেক কৃষকের জমি। তারা কাঙ্খিত আমন ধান ফলানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এসব রোগ সাড়াতে জমিতে বেশী বেশী কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
তাছাড়া অনেক এলাকায় পোকা ও রোগবালাই কিছুটা কমলেও অনেক জমিতে অন্তত ২০ভাগ ফসল কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের লোকজন কৃষকদেরকে সময়মতো সঠিক পরামর্শ না দেয়ার ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী, বজিতপুর ও কুলিয়ারচর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। আবার পোকা ও রোগবালাইয়ের কবলে না পড়া আমনের জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন।
করিমগঞ্জ উপজেলার কিরাটন মাইজপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম কাজল জানান, এবার তাদের এলাকায় পোকার আক্রমণ কিছুটা থাকলেও কীটনাশক প্রয়োগ করায় তেমন ক্ষতি হয়নি। তাছাড়া অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতেও আমনের আবাদ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার আমনের বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি জানান। করিমগঞ্জ পৌরসভার নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আবু সিদ্দিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকায় কৃষি বিভাগের লোকজন না আসায় তাদেরকে নিজেদের মতো করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে। জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণে চারবার ওষুধ দিয়েও পুরোপুরি পোকার আক্রমণ দূর করতে পারেননি বলে তিনি জানান।
জাফরাবাদ ইউনিয়নের শিমুলতলা বাদেশ্রী রামপুরের কৃষক মো. হৃদয় জানান, তিনি দুই একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। প্রথমদিকে জমি ভালই ছিল। কিন্তু মাজরাসহ নানান ধরণের পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। চারবার ওষুধ দিলেও তেমন কোনো কাজে আসছে না। জমিতে ২০ শতাংশ ধন কম হবে বলে তিনি জানান। মাঝিরকোনা গ্রামের কৃষক আব্দুর রাশিদ জানান, তিনি দুই একর ৪০ শতক জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমন জমিতে চারাবার ওষুধ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে তিনি জানান। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বাগপাড়া গ্রামের কৃষক শাহিদ মিয়া জানান তিনি মাত্র চার কাটা (৪০শতক) জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। এতে পাঁচ টাকার খরচ হয়েছে। পোকার আক্রমণের কারণে জমিতে ধান কম হবে। যেখানে ৩০ মণ ধান হওয়ার কথা সেখানে ২০ মণ হয় কি না, তা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২১৭ হেক্টর জমিতে পোকার আক্রমণ হলেও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে ২০১ হেক্টর জমির পোকা দমন করা হয়েছে। আর ৪৩ হেক্টর জমিতে রোগবালাই হলেও ৪২ হেক্টর জমির রোগবালাই দমন করা হয়েছে। তবে বাস্তবে পোকা ও রোগবালাইয়ের কারণে আমনের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশী বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলায় এবছর ৮৫ হাজার ১শ’ ৭৮ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭ মেট্রিক টন চাল। পোকার আক্রমণ কিছুটা থাকলেও বালাইনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে তা দমন করা হয়েছে। তাই আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান।