মাধবপুরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের সিন্ডিকেট
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় এমপিওভুক্ত হাইস্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নাদিরা বেগম, মনতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সালমা আক্তার ও তালিবপুর আহছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আলমাস উদ্দিন দীর্ঘ বছর ধরে বিধি বহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে বহাল রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, তারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে নিজের পদ নিশ্চিত করছেন এবং এডহক কমিটিকে প্রভাবিত করে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ আটকে রাখছেন। এর ফলে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পরিবেশ ও মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাঘাসুরা ইউনিয়নের কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার অবৈধ পদ দখল নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক পবিত্র দেবনাথ হামলার শিকার হন।
তিনি জানিয়েছেন, তারা শিক্ষা কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রাখেন। এদের ঘুষ সংক্রান্ত অডিও রেকর্ডিং সাংবাদিক পবিত্র দেবনাথকে মব সৃষ্টি করে জোরপূর্বক মুছে দেওয়া হয়।
পবিত্র দেবনাথ অভিযোগ করেছেন, এরা শুধু কালিকাপুরেই নয়, উপজেলার আরও অনেক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত পদে বহাল রয়েছেন। কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিয়মিত শিক্ষা কর্মকর্তাকে মাসে ২ হাজার টাকা দিয়ে স্বপদে টিকে আছেন।
মনতলা হাইস্কুলেও সালমা আক্তার দীর্ঘদিন দায়িত্বে রয়েছেন। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ জানান, প্রধান শিক্ষিকা প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দায়িত্বে বহাল আছেন, ফলে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না এবং শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে, তালিবপুর আহছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়েও একই অবস্থা। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আলমাস উদ্দিনও দীর্ঘদিন ধরে বিধি বহির্ভূতভাবে ওই পদ দখল করে আছেন। সম্প্রতি মিহির চন্দ্র দেব নামে একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পেয়েও সিন্ডিকেটের নানা বাধার কারণে তার নিয়োগ স্থগিত রাখা হয়। এই বিষয়ে শিক্ষক আদালতের দ্বারস্থ হলেও এখনও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা মির্জা ইকরাম জানান, স্কুলটি শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া জরুরী। সেখানের সকল ধরনের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বিধিমালা স্পষ্ট। ২০২১ সালের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় অন্য কোনো শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। যদি দায়িত্ব পালনে অসক্ষমতা দেখা দেয়, তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন। কেউ একটানা ছয় মাসের বেশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ছয় মাসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হলে জ্যেষ্ঠ তিনজন শিক্ষকের মধ্যে একজনকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব দিতে হবে। তাতেও ব্যর্থ হলে অন্য তিন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক থেকে একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। একবার দায়িত্ব পালন শেষে এক বছর পর্যন্ত পুনরায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া যাবে না।
অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও এই পরিস্থিতিতে ভোগান্তির শিকার। স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ দ্রুত তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিনা প্রমানে কোনো অভিযোগ দেওয়া ঠিক নয়। এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে যে অভিযোগ এসেছে, মন্ত্রণালয় সেটি দেখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মাধবপুরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের সিন্ডিকেট
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় এমপিওভুক্ত হাইস্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নাদিরা বেগম, মনতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সালমা আক্তার ও তালিবপুর আহছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আলমাস উদ্দিন দীর্ঘ বছর ধরে বিধি বহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে বহাল রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, তারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে নিজের পদ নিশ্চিত করছেন এবং এডহক কমিটিকে প্রভাবিত করে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ আটকে রাখছেন। এর ফলে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পরিবেশ ও মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাঘাসুরা ইউনিয়নের কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার অবৈধ পদ দখল নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক পবিত্র দেবনাথ হামলার শিকার হন।
তিনি জানিয়েছেন, তারা শিক্ষা কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রাখেন। এদের ঘুষ সংক্রান্ত অডিও রেকর্ডিং সাংবাদিক পবিত্র দেবনাথকে মব সৃষ্টি করে জোরপূর্বক মুছে দেওয়া হয়।
পবিত্র দেবনাথ অভিযোগ করেছেন, এরা শুধু কালিকাপুরেই নয়, উপজেলার আরও অনেক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত পদে বহাল রয়েছেন। কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিয়মিত শিক্ষা কর্মকর্তাকে মাসে ২ হাজার টাকা দিয়ে স্বপদে টিকে আছেন।
মনতলা হাইস্কুলেও সালমা আক্তার দীর্ঘদিন দায়িত্বে রয়েছেন। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ জানান, প্রধান শিক্ষিকা প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দায়িত্বে বহাল আছেন, ফলে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না এবং শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে, তালিবপুর আহছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়েও একই অবস্থা। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আলমাস উদ্দিনও দীর্ঘদিন ধরে বিধি বহির্ভূতভাবে ওই পদ দখল করে আছেন। সম্প্রতি মিহির চন্দ্র দেব নামে একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পেয়েও সিন্ডিকেটের নানা বাধার কারণে তার নিয়োগ স্থগিত রাখা হয়। এই বিষয়ে শিক্ষক আদালতের দ্বারস্থ হলেও এখনও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা মির্জা ইকরাম জানান, স্কুলটি শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া জরুরী। সেখানের সকল ধরনের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বিধিমালা স্পষ্ট। ২০২১ সালের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় অন্য কোনো শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। যদি দায়িত্ব পালনে অসক্ষমতা দেখা দেয়, তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন। কেউ একটানা ছয় মাসের বেশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ছয় মাসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হলে জ্যেষ্ঠ তিনজন শিক্ষকের মধ্যে একজনকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব দিতে হবে। তাতেও ব্যর্থ হলে অন্য তিন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক থেকে একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। একবার দায়িত্ব পালন শেষে এক বছর পর্যন্ত পুনরায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া যাবে না।
অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও এই পরিস্থিতিতে ভোগান্তির শিকার। স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ দ্রুত তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিনা প্রমানে কোনো অভিযোগ দেওয়া ঠিক নয়। এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে যে অভিযোগ এসেছে, মন্ত্রণালয় সেটি দেখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।