রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) : জমি দখলে অস্তিত্ব সংকটে হাট -সংবাদ
চলনবিলসহ উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা - বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা হাট। ব্রিটিশ আমল থেকেই ধান, পাট থেকে শুরু করে গবাদিপশুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রয়- বিক্রয় হয়ে থাকে এই হাটে। ইতিহাস ঐতিহ্যের দিক দিয়েও হাটটি ব্যাপক সমৃদ্ধশালী। ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে বিলেতী পণ্য বর্জনের হাট এটি। সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন কেনাবেচা করতে আসা অসংখ্য হাটুরে। ইতিহাসে যেটি “সলঙ্গা বিদ্রোহ” নামে পরিচিত লাভ করে।
অবৈধ দখলে সেই সলঙ্গা হাটের এখন করুন দশা। দীর্ঘ কাল থেকে চলছে পেরিফেরির জমি দখলের মহোৎসব। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশে হাটের জায়গা নিজেদের নামে করে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। ইতিমধ্যে পেরিফেরির ৪৪ শতাংশ জমি দখল হয়ে গেছে। বাকী অংশেরেও বেশিরভাগে ছোট-বড় ঘর তুলে দখল করে রাখা হয়েছে। দখলে দখলে বৃহৎ হাটটি একদম সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে হাটের রাস্তায় যানজটসহ নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে ক্রেতা - বিক্রেতাসহ আগন্তুদের। সাথে রয়েছে অব্যবস্থাপনাও। যার ফলে হাট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। এভাবে ঐতিহ্যবাহী হাটটির অস্তিত্ব এখন সংকটাপন্ন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সলঙ্গা হাটের পেরিফেরিভূক্ত জমি ছাড়াও এই মৌজার প্রায় ৩৪ একর খাস জমি যার অধিকাংশই রয়েছে অবৈধ দখলদারদের হাতে। যার কারণে শুধু হাট নয়, রাস্তা ঘাটগুলোও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সে কারণে কোনভাবেই স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, মধ্যপাড়া ভরমোহনী মৌজাতে এই হাটটি অবস্থিত। এসএ রেকর্ডে হাটটির নামে পেরিফেরিভক্ত হয় ৯ দশমিক ৯৪ একর জমি। আরএস রেকর্ডে এসে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৭ একরে। আবার ৩৪ দশমিক ৭২ একর খাস খতিয়ানভূক্ত জমি ছিল, যার সবটুকুই অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে।
প্রভাবশালীরা কখনো নিজেদের নামে আবার কখনো দরিদ্র কাউকে ভূমিহীন সাজিয়ে তার নামে পত্তনী নিয়ে সুযোগ বুঝে তার নিকট থেকে রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছেন। ২ শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের ওয়ারিশানগনের দখলে রয়েছে এই হাটের সম্পত্তি। তাদের কেউ কেউ একতলা, দোতলা, তিনতলা, চারতলা ভবন নির্মাণ করেছেন আবার কেউ তলাবিশিষ্ট টিনের মার্কেট তৈরি করেছেন। সম্প্রতি উপজেলা ভূমি অফিসের একটি জরিপে সলঙ্গা হাটে অবৈধ স্থাপনার একটি তালিকা করেছে। যেখানে ২১৪ জন দখলকারীর নাম উঠে এসেছে। অপরদিকে এ হাটে অবস্থিত সরকারি অফিসগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। প্রাণিসম্পদ উপ কেন্দ্র ও কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট ও খাদ্য গুদাম পরিত্যক্ত। উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ভূমি রেজিস্ট্রার অফিসের অবস্থারও বেহাল। হাটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গাড়ুদহ নদী দখল- দূষণে মৃত প্রায়। সবমিলিয়ে মরণ দশায় পরিনত হয়েছে হাটটি।
শাহজালাল ও নুরুন্নাহার নামের ২ জন শিক্ষক বলেন, অবৈধ দখলদারেরা সলঙ্গা হাটের জায়গা নামে বেনামে দখল করে নিয়েছে। এসব জায়গা আবার কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযানে আসলেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করে সলঙ্গাবাসীকে রক্ষা করা হোক এবং রাজস্ব বৃদ্ধি পাক এই দাবি জানান তারা।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সলঙ্গায় প্রাচীতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সলঙ্গা ফাজিল মাদ্রাসা, সলঙ্গা ডিগ্রি কলেজ, মহিলা কলেজ সলঙ্গা ইসলামিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসা, নূরানী মাদ্রাসা, মোস্তফা প্রি ক্যাডেট স্কুল, শহীদ ক্যাডেট স্কুলসহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজারো ছাত্র ছাত্রীরা যাতায়াত করে। হাটের পাশের রাস্তা দিয়েই আমাদের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। অথচ রাস্তার দু’পাশ দখল করে দোকান তৈরি করায় রাস্তা একদম সংকুচিত হয়ে গেছে। এখান বিদ্যালয়ে যেতে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয়। ফলে সময়মত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয় না।
এ হাটে আসা গরু ব্যবসায়ী বেল্লাল হোসেন, ধান ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ ও গার্মেন্ট ব্যবসায়ী কাওছার আহমেদ নাঈম বলেন, বাপ- দাদার আমুল থেকে এই হাটে কেনাবেচা করে আমাদের সংসার চলে। এখান হাটের যে অবস্থা, হেঁটে চলার অবস্থায়ই নেই। অতি কষ্টে কেনাবেচা করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো হাটে আসা ছেড়েই দিতে হবে। ঘুড়কা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কেউ এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে রায়গঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদ রানা জানিয়েছেন, আমি নতুন এসেছি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) : জমি দখলে অস্তিত্ব সংকটে হাট -সংবাদ
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
চলনবিলসহ উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা - বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা হাট। ব্রিটিশ আমল থেকেই ধান, পাট থেকে শুরু করে গবাদিপশুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রয়- বিক্রয় হয়ে থাকে এই হাটে। ইতিহাস ঐতিহ্যের দিক দিয়েও হাটটি ব্যাপক সমৃদ্ধশালী। ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে বিলেতী পণ্য বর্জনের হাট এটি। সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন কেনাবেচা করতে আসা অসংখ্য হাটুরে। ইতিহাসে যেটি “সলঙ্গা বিদ্রোহ” নামে পরিচিত লাভ করে।
অবৈধ দখলে সেই সলঙ্গা হাটের এখন করুন দশা। দীর্ঘ কাল থেকে চলছে পেরিফেরির জমি দখলের মহোৎসব। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশে হাটের জায়গা নিজেদের নামে করে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। ইতিমধ্যে পেরিফেরির ৪৪ শতাংশ জমি দখল হয়ে গেছে। বাকী অংশেরেও বেশিরভাগে ছোট-বড় ঘর তুলে দখল করে রাখা হয়েছে। দখলে দখলে বৃহৎ হাটটি একদম সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে হাটের রাস্তায় যানজটসহ নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে ক্রেতা - বিক্রেতাসহ আগন্তুদের। সাথে রয়েছে অব্যবস্থাপনাও। যার ফলে হাট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। এভাবে ঐতিহ্যবাহী হাটটির অস্তিত্ব এখন সংকটাপন্ন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সলঙ্গা হাটের পেরিফেরিভূক্ত জমি ছাড়াও এই মৌজার প্রায় ৩৪ একর খাস জমি যার অধিকাংশই রয়েছে অবৈধ দখলদারদের হাতে। যার কারণে শুধু হাট নয়, রাস্তা ঘাটগুলোও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সে কারণে কোনভাবেই স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, মধ্যপাড়া ভরমোহনী মৌজাতে এই হাটটি অবস্থিত। এসএ রেকর্ডে হাটটির নামে পেরিফেরিভক্ত হয় ৯ দশমিক ৯৪ একর জমি। আরএস রেকর্ডে এসে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৭ একরে। আবার ৩৪ দশমিক ৭২ একর খাস খতিয়ানভূক্ত জমি ছিল, যার সবটুকুই অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে।
প্রভাবশালীরা কখনো নিজেদের নামে আবার কখনো দরিদ্র কাউকে ভূমিহীন সাজিয়ে তার নামে পত্তনী নিয়ে সুযোগ বুঝে তার নিকট থেকে রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছেন। ২ শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের ওয়ারিশানগনের দখলে রয়েছে এই হাটের সম্পত্তি। তাদের কেউ কেউ একতলা, দোতলা, তিনতলা, চারতলা ভবন নির্মাণ করেছেন আবার কেউ তলাবিশিষ্ট টিনের মার্কেট তৈরি করেছেন। সম্প্রতি উপজেলা ভূমি অফিসের একটি জরিপে সলঙ্গা হাটে অবৈধ স্থাপনার একটি তালিকা করেছে। যেখানে ২১৪ জন দখলকারীর নাম উঠে এসেছে। অপরদিকে এ হাটে অবস্থিত সরকারি অফিসগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। প্রাণিসম্পদ উপ কেন্দ্র ও কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট ও খাদ্য গুদাম পরিত্যক্ত। উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ভূমি রেজিস্ট্রার অফিসের অবস্থারও বেহাল। হাটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গাড়ুদহ নদী দখল- দূষণে মৃত প্রায়। সবমিলিয়ে মরণ দশায় পরিনত হয়েছে হাটটি।
শাহজালাল ও নুরুন্নাহার নামের ২ জন শিক্ষক বলেন, অবৈধ দখলদারেরা সলঙ্গা হাটের জায়গা নামে বেনামে দখল করে নিয়েছে। এসব জায়গা আবার কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযানে আসলেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করে সলঙ্গাবাসীকে রক্ষা করা হোক এবং রাজস্ব বৃদ্ধি পাক এই দাবি জানান তারা।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সলঙ্গায় প্রাচীতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সলঙ্গা ফাজিল মাদ্রাসা, সলঙ্গা ডিগ্রি কলেজ, মহিলা কলেজ সলঙ্গা ইসলামিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসা, নূরানী মাদ্রাসা, মোস্তফা প্রি ক্যাডেট স্কুল, শহীদ ক্যাডেট স্কুলসহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজারো ছাত্র ছাত্রীরা যাতায়াত করে। হাটের পাশের রাস্তা দিয়েই আমাদের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। অথচ রাস্তার দু’পাশ দখল করে দোকান তৈরি করায় রাস্তা একদম সংকুচিত হয়ে গেছে। এখান বিদ্যালয়ে যেতে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয়। ফলে সময়মত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয় না।
এ হাটে আসা গরু ব্যবসায়ী বেল্লাল হোসেন, ধান ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ ও গার্মেন্ট ব্যবসায়ী কাওছার আহমেদ নাঈম বলেন, বাপ- দাদার আমুল থেকে এই হাটে কেনাবেচা করে আমাদের সংসার চলে। এখান হাটের যে অবস্থা, হেঁটে চলার অবস্থায়ই নেই। অতি কষ্টে কেনাবেচা করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো হাটে আসা ছেড়েই দিতে হবে। ঘুড়কা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কেউ এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে রায়গঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদ রানা জানিয়েছেন, আমি নতুন এসেছি।