মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর জমিতে এখনো বর্ষার পানি আটকে আছে। এতে আলু চাষে ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়েছেন কৃষকরা। নভেম্বর মাস শেষ হতে চললেও এবং অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ পার হলেও বর্ষার পানি এখনো জমি থেকে নামেনি। ফলে আলু বপন নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষক সমাজ।
চাষিদের তথ্য অনুযায়ী, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর বাংলা কার্তিক মাসের মধ্যভাগ থেকে জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হয়। অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই আলু বপনে নেমে পড়েন কৃষকরা। জেলা জুড়ে বিশাল এই কৃষিকর্মযজ্ঞে মাঠে কাজ করতে বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক এসে থাকেন। কিন্তু জমিতে পানি থাকায় কৃষকরা চাষাবাদ শুরু করতে পারছেন না; এতে বেকার হয়ে পড়েছেন হাজারো কৃষিশ্রমিক।
এর ফলে উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর কৃষিজমি বছরের ৬–৭ মাস পানির নিচে থাকে। তিন ফসলি জমি হওয়া সত্ত্বেও কৃষকরা বছরে শুধু একবার রবি মৌসুমে আলু ও ধান উৎপাদন করতে পারেন; বাকিটা সময় এসব জমি ডুবে থাকে পানিতে। সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, লৌহজং উপজেলায় মোট ৭ হাজার ৮৫৮ হেক্টর আবাদি জমিতে আলু, ধান, সরিষা, বাদামসহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। কিন্তু পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা অত্যন্ত চিন্তিত। আবাদ মৌসুম শুরু হলেও বর্ষার পানি না কমায় তারা সময়মতো আলুসহ বিভিন্ন রবি ফসল বপন করতে পারছেন না। উঁচু জমিতে স্বল্প পরিসরে সবজি চাষ শুরু হলেও অধিকাংশ জমি পানির নিচে থাকায় মূল আবাদ কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।
কালুরগাঁও গ্রামের কৃষক মো. জসিম শেখ বলেন, জমি থেকে বর্ষার পানি নামার সব পথ দখল ও ভরাট করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই এ বছর আলু আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরে হয়তো গো-খাদ্য (ঘাস) রোপণ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
হাড়িদিয়া গ্রামের কৃষক মেরাজ শেখ বলেন, বিলের পানি প্রবাহের রাস্তা ভরাট হয়ে গেছে, তাই বর্ষার পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বিলে আমার ৫ একর আলু জমি এখনো পানির নিচে। এ বছর আলু চাষ করতে পারব কি না, তা নিয়েই শঙ্কায় আছি।”
প্রান্তিক কৃষক জয়নাল বলেন, আমি জমি বর্গা নিয়েছি আলু আবাদ করার জন্য, কিন্তু পানি না কমায় কিছুই করতে পারছি না। অন্য বছর এই সময়ে কাজে ব্যস্ত থাকতাম, এবার পানি না কমায় ঘরে বসে আছি।
গাঁওদিয়া, পাখিদিয়া, হাড়িদিয়া, কালুরগাঁও, ফলপাকর, আপর ও বনসেমন্ত বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ নুরপুর–কালুরগাঁও খাল এবং বনসেমন্ত খাল। এসব খাল মাটি ভরাট করে দখল হয়ে গেছে। কৃষকদের দাবি-খালগুলো পুনঃখনন করলে পানি নিষ্কাশনে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান-উদ দৌলা বলেন, উপজেলায় মোট ৭ হাজার ৮৫৮ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ১০৭ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে বিএডিসির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে, তবে এ বছর কোনো বরাদ্দ নেই বলে জানিয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর জমিতে এখনো বর্ষার পানি আটকে আছে। এতে আলু চাষে ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়েছেন কৃষকরা। নভেম্বর মাস শেষ হতে চললেও এবং অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ পার হলেও বর্ষার পানি এখনো জমি থেকে নামেনি। ফলে আলু বপন নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষক সমাজ।
চাষিদের তথ্য অনুযায়ী, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর বাংলা কার্তিক মাসের মধ্যভাগ থেকে জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হয়। অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই আলু বপনে নেমে পড়েন কৃষকরা। জেলা জুড়ে বিশাল এই কৃষিকর্মযজ্ঞে মাঠে কাজ করতে বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক এসে থাকেন। কিন্তু জমিতে পানি থাকায় কৃষকরা চাষাবাদ শুরু করতে পারছেন না; এতে বেকার হয়ে পড়েছেন হাজারো কৃষিশ্রমিক।
এর ফলে উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর কৃষিজমি বছরের ৬–৭ মাস পানির নিচে থাকে। তিন ফসলি জমি হওয়া সত্ত্বেও কৃষকরা বছরে শুধু একবার রবি মৌসুমে আলু ও ধান উৎপাদন করতে পারেন; বাকিটা সময় এসব জমি ডুবে থাকে পানিতে। সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, লৌহজং উপজেলায় মোট ৭ হাজার ৮৫৮ হেক্টর আবাদি জমিতে আলু, ধান, সরিষা, বাদামসহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। কিন্তু পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা অত্যন্ত চিন্তিত। আবাদ মৌসুম শুরু হলেও বর্ষার পানি না কমায় তারা সময়মতো আলুসহ বিভিন্ন রবি ফসল বপন করতে পারছেন না। উঁচু জমিতে স্বল্প পরিসরে সবজি চাষ শুরু হলেও অধিকাংশ জমি পানির নিচে থাকায় মূল আবাদ কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।
কালুরগাঁও গ্রামের কৃষক মো. জসিম শেখ বলেন, জমি থেকে বর্ষার পানি নামার সব পথ দখল ও ভরাট করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই এ বছর আলু আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরে হয়তো গো-খাদ্য (ঘাস) রোপণ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
হাড়িদিয়া গ্রামের কৃষক মেরাজ শেখ বলেন, বিলের পানি প্রবাহের রাস্তা ভরাট হয়ে গেছে, তাই বর্ষার পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বিলে আমার ৫ একর আলু জমি এখনো পানির নিচে। এ বছর আলু চাষ করতে পারব কি না, তা নিয়েই শঙ্কায় আছি।”
প্রান্তিক কৃষক জয়নাল বলেন, আমি জমি বর্গা নিয়েছি আলু আবাদ করার জন্য, কিন্তু পানি না কমায় কিছুই করতে পারছি না। অন্য বছর এই সময়ে কাজে ব্যস্ত থাকতাম, এবার পানি না কমায় ঘরে বসে আছি।
গাঁওদিয়া, পাখিদিয়া, হাড়িদিয়া, কালুরগাঁও, ফলপাকর, আপর ও বনসেমন্ত বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ নুরপুর–কালুরগাঁও খাল এবং বনসেমন্ত খাল। এসব খাল মাটি ভরাট করে দখল হয়ে গেছে। কৃষকদের দাবি-খালগুলো পুনঃখনন করলে পানি নিষ্কাশনে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান-উদ দৌলা বলেন, উপজেলায় মোট ৭ হাজার ৮৫৮ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ১০৭ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে বিএডিসির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে, তবে এ বছর কোনো বরাদ্দ নেই বলে জানিয়েছে।