alt

হবিগঞ্জের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী চাঁন মিয়ার মানবেতর জীবন

প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ : রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

হবিগঞ্জের চাঁন মিয়া (৫৮) চোখে দেখতে পান না। এ প্রতিবন্ধিতা নিয়েই তিনি প্রতিদিন পত্রিকা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেন। তিনি প্রতিদিন প্রায় ২০০ গ্রাহকের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেন। পত্রিকা বিক্রি বা বিলির কাজটি ২৪ বছর ধরে করছেন তিনি।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বারাপইল গ্রামের বাসিন্দা চাঁন মিয়া। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় ছোটবেলা থেকে সমাজে অবহেলিত ছিলেন। গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করা চাঁন মিয়ে তরুণ বয়স থেকেই কাজের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু চোখে দেখেন না বলে কেউ কাজ দিতেন না। আবার কাজ দিলেও পারিশ্রমিক কম দিতেন। চাঁন মিয়া নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, একদিন স্থানীয় এক ব্যক্তির পরামর্শে তিনি পত্রিকা বিক্রিতে সম্মত হন। ১৯৯৮ সালে দৈনিক এক্সপ্রেস নামের স্থানীয় একটি পত্রিকা বিক্রির সুযোগ পান। প্রথম দিন ৪০টি পত্রিকা বিক্রি করে ৪০ টাকা পেয়েই মহাখুশি তিনি। সেই থেকে এ পেশায় আছেন। বর্তমানে তার কাছ থেকে পত্রিকা নেন প্রায় ২০০ গ্রাহক। চোখে না দেখলেও কীভাবে গ্রাহকের কাছে পত্রিকা বিলি করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে চাঁন মিয়া বলেন, আমি চোখে না দেখলে কী হবে, মনের আলোয় সব দেখতে পাই। সময় বোঝেন সূর্যের তাপের ওঠা-নামা অনুভব করে। পেশাগত কারণে হবিগঞ্জ শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে বেড়ানোর ফলে শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতের অবস্থান তার আয়ত্তে। চাঁন মিয়া বলেন, প্রতিদিন সকাল সাতটায় পত্রিকা নিয়ে বের হয়ে সহকর্মীদের কাছে জেনে নেন সে দিনের পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের শিরোনাম। জোরে জোরে বলতে থাকেন সেসব শিরোনাম আর বিক্রি করেন পত্রিকা। বড় কাপড়ের ব্যাগে পত্রিকাগুলো ভাগ ভাগ করে সাজিয়ে রাখেন, যাতে গ্রাহক চাইলে সহজে বের করে দিতে পারেন।

চাঁন মিয়ার দুই সন্তান। মেয়ে ফারহানা আক্তার এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ছেলে বায়েজিদ রাহিন হবিগঞ্জ আলীয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেছেন। কয়েক বছর আগেও পত্রিকা বিক্রি করে সংসার ভালোই চলত তার। কিন্তু এখন মানুষ অনলাইনমুখী হওয়ায় পত্রিকা বিক্রি কমে গেছে। এর প্রভাব তাঁর জীবনেও পড়েছে। হবিগঞ্জ শহরের সংবাদপত্র এজেন্ট লায়েছ মিয়া জানান, চাঁন মিয়া প্রতিদিন হেঁটে শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে পত্রিকা বিলি করেন। কখনো ভুলে এক গ্রাহকের পছন্দের পত্রিকা অন্য গ্রাহককে দেননি। হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক হবিগঞ্জের জননী পত্রিকার বাতা সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, চোখে দেখেন না বলে দমে যাননি তিনি। প্রতিদিন গ্রাহকের কাছে পত্রিকা পৌঁছাতে তার কোনো অলসতা নেই। এ ব্যাপারে দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক এস এম সুরুজ আলী জানান, ছোট বেলা থেকে দেখেছি, চান মিয়া পত্রিকা বিক্রি করে আসছেন।

চোখে না দেখলেও তিনি সঠিক সময়ে গ্রাহকদের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেন। অত্যান্ত ভালো মানুষ তিনি। এখন সবকিছু জিনিসপত্র দাম বেশি হওয়ার পরিবার নিয়ে চলাচল করতে তার অনেক কষ্ট হয়। আমরা তাকে যন সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা হয়। গ্রাহক মঞ্জুর উদ্দিন আহমেদ জানান, চান মিয়ার কাছ থেকে অনেক দিন ধরে পত্রিকা রাখছি। একজন ভালো মানুষ তিনি। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা তার জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি।

ছবি

লালমনিরহাটে দামে ভালো পেয়ে খুশি ধনিয়া পাতা চাষিরা

ছবি

চকবাজার থানা ব্যারাকের বাথরুম থেকে এএসআইয়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

ছবি

সিলেটে ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের নির্দেশ

ছবি

দোয়ারাবাজারে মাদক, অনলাইন জুয়া ও কিশোর গ্যাং বিরোধী সচেতনতামূলক সভা

ছবি

আদমদীঘিতে চাল কলে লাখ টাকার মালামাল চুরি

ছবি

সমাজ পরিবর্তনে সাংবাদিকরা বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারেন

ছবি

শাহজাদপুরে দিনব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

ছবি

লালপুরে হাজারো ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় নবান্ন উৎসব

ছবি

সৈয়দপুরে সড়ক নির্মাণ কাজে প্রধান বাধা ৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি

ছবি

শিবপুরে ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা, অসহায় স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে

ছবি

অবৈধভাবে রাস্তা আটকানোর প্রতিবাদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

ছবি

চরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নাজুক, স্কুল ভাড়া হয় লেবারের আবাসিক হোটেল হিসাবে

ছবি

কলারোয়া সীমান্তে দুই লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ

পিরোজপুরে ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে একজন নিহত, একজন আহত

ছবি

গোয়ালন্দে মানবাধিকার রক্ষায় সাংবাদিকতা বিষয়ে কর্মশালা

ছবি

গুজবে নির্ঘুম রাত কাটাল ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শতাধিক মানুষ

ছবি

গৌরনদীতে প্রসূতির মৃত্যু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পলাতক

ছবি

নামছে পানিস্তর, শূন্য হচ্ছে মাটি, ঝুঁকিতে বরেন্দ্রভূমি

ছবি

আজ বামনা নবম সাব-সেক্টর পাকহানাদার মুক্ত দিবস

ছবি

ভালো দামের আশায় নন্দীগ্রামে আগাম আলু চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

ছবি

গৌরীপুরে মেকানিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

মুন্সীগঞ্জে ধানের শীষের পক্ষে উঠান বৈঠক মহিলাদের মাঝে উপহার বিতরণ

ছবি

ভূমিকম্পে ঘোড়াশালের পুরাতন রেলসেতুর দুই পিলারে ফাটল

ছবি

দুর্গাপুরে খুলে দেওয়া হলো অস্থায়ী বাঁশের সেতু

ছবি

কলমাকান্দায় ভারতীয় প্রসাধনী জব্দ পিকআপসহ যুবক আটক

ছবি

আদমদীঘিতে যুবকের আত্মহত্যা

ছবি

নবীনগর প্রেসক্লাবে ৪০ বছর পদার্পণ অনুষ্ঠিত

ছবি

বাগেরহাটের ফকিরহাটে বিক্রি হচ্ছে শিকার নিষিদ্ধ অতিথি পাখি

ছবি

চকরিয়ায় সরকারি জায়গায় বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ

ছবি

হারুয়ালছড়ি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করছে

ছবি

হবিগঞ্জে বিলে এক কৃষকের মরদেহ

ছবি

চাটখিল ও সোনাইমুড়ীতে সময়মতো বীজ সার নাপাওয়ায় কৃষকরা হতাশ

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় চাচা ভাতিজার মৃত্যু

ছবি

সেন্টমার্টিনে জেলের জালে ধরা পড়লো ৩২ কেজি ওজনের পোপা মাছ

ছবি

বঙ্গবন্ধু, হাসিনা ও তার পরিবারের নামে থাকা ৮৮০ স্থাপনার নাম পরিবর্তন, সংকলন প্রকাশ

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনা: একই পরিবারের ৪ জনসহ দুই জেলায় নিহত ৫

tab

হবিগঞ্জের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী চাঁন মিয়ার মানবেতর জীবন

প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ

রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

হবিগঞ্জের চাঁন মিয়া (৫৮) চোখে দেখতে পান না। এ প্রতিবন্ধিতা নিয়েই তিনি প্রতিদিন পত্রিকা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেন। তিনি প্রতিদিন প্রায় ২০০ গ্রাহকের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেন। পত্রিকা বিক্রি বা বিলির কাজটি ২৪ বছর ধরে করছেন তিনি।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বারাপইল গ্রামের বাসিন্দা চাঁন মিয়া। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় ছোটবেলা থেকে সমাজে অবহেলিত ছিলেন। গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করা চাঁন মিয়ে তরুণ বয়স থেকেই কাজের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু চোখে দেখেন না বলে কেউ কাজ দিতেন না। আবার কাজ দিলেও পারিশ্রমিক কম দিতেন। চাঁন মিয়া নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, একদিন স্থানীয় এক ব্যক্তির পরামর্শে তিনি পত্রিকা বিক্রিতে সম্মত হন। ১৯৯৮ সালে দৈনিক এক্সপ্রেস নামের স্থানীয় একটি পত্রিকা বিক্রির সুযোগ পান। প্রথম দিন ৪০টি পত্রিকা বিক্রি করে ৪০ টাকা পেয়েই মহাখুশি তিনি। সেই থেকে এ পেশায় আছেন। বর্তমানে তার কাছ থেকে পত্রিকা নেন প্রায় ২০০ গ্রাহক। চোখে না দেখলেও কীভাবে গ্রাহকের কাছে পত্রিকা বিলি করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে চাঁন মিয়া বলেন, আমি চোখে না দেখলে কী হবে, মনের আলোয় সব দেখতে পাই। সময় বোঝেন সূর্যের তাপের ওঠা-নামা অনুভব করে। পেশাগত কারণে হবিগঞ্জ শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে বেড়ানোর ফলে শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতের অবস্থান তার আয়ত্তে। চাঁন মিয়া বলেন, প্রতিদিন সকাল সাতটায় পত্রিকা নিয়ে বের হয়ে সহকর্মীদের কাছে জেনে নেন সে দিনের পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের শিরোনাম। জোরে জোরে বলতে থাকেন সেসব শিরোনাম আর বিক্রি করেন পত্রিকা। বড় কাপড়ের ব্যাগে পত্রিকাগুলো ভাগ ভাগ করে সাজিয়ে রাখেন, যাতে গ্রাহক চাইলে সহজে বের করে দিতে পারেন।

চাঁন মিয়ার দুই সন্তান। মেয়ে ফারহানা আক্তার এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ছেলে বায়েজিদ রাহিন হবিগঞ্জ আলীয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেছেন। কয়েক বছর আগেও পত্রিকা বিক্রি করে সংসার ভালোই চলত তার। কিন্তু এখন মানুষ অনলাইনমুখী হওয়ায় পত্রিকা বিক্রি কমে গেছে। এর প্রভাব তাঁর জীবনেও পড়েছে। হবিগঞ্জ শহরের সংবাদপত্র এজেন্ট লায়েছ মিয়া জানান, চাঁন মিয়া প্রতিদিন হেঁটে শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে পত্রিকা বিলি করেন। কখনো ভুলে এক গ্রাহকের পছন্দের পত্রিকা অন্য গ্রাহককে দেননি। হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক হবিগঞ্জের জননী পত্রিকার বাতা সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, চোখে দেখেন না বলে দমে যাননি তিনি। প্রতিদিন গ্রাহকের কাছে পত্রিকা পৌঁছাতে তার কোনো অলসতা নেই। এ ব্যাপারে দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক এস এম সুরুজ আলী জানান, ছোট বেলা থেকে দেখেছি, চান মিয়া পত্রিকা বিক্রি করে আসছেন।

চোখে না দেখলেও তিনি সঠিক সময়ে গ্রাহকদের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেন। অত্যান্ত ভালো মানুষ তিনি। এখন সবকিছু জিনিসপত্র দাম বেশি হওয়ার পরিবার নিয়ে চলাচল করতে তার অনেক কষ্ট হয়। আমরা তাকে যন সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা হয়। গ্রাহক মঞ্জুর উদ্দিন আহমেদ জানান, চান মিয়ার কাছ থেকে অনেক দিন ধরে পত্রিকা রাখছি। একজন ভালো মানুষ তিনি। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা তার জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি।

back to top