বরগুনা : শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে শিশু রোগীদের ভিড় -সংবাদ
শীত মৌসুমের শুরু হতে না হতেই বরগুনায় বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই প্রায় ১৫-২০ জন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। তবে নির্ধারিত শয্যার বিপরীতে প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি হওয়ায় জায়গা সংকটে চিকিৎসা সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন অধিকাংশ শিশুর অভিভাবক।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও ওষুধ সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় প্রায় সকল পরীক্ষা এবং ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংকট দূর করে শিশুদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক মাস ধরেই হঠাৎ বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে বাড়তে শুরু করেছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তির সংখ্যা। এসব শিশু রোগীদের জন্য হাসপাতালে নির্ধারিত বেড সংখ্যা ৫০টি হলেও বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি থাকেন ১২০-১৩০ জন শিশু। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে অতিরিক্ত রোগীর চাপে বেড সংকটে পড়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অধিকাংশ শিশু রোগীদের।
সরেজমিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা ভর্তি শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ ছাড়া অনেকেই আবার ভর্তি হয়েছে সর্দি-জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে। হঠাৎ করে নির্ধারিত বেডের বিপরীতে প্রায় তিনগুণ শিশু রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালে সৃষ্টি হয়েছে বাড়তি রোগীর চাপ। এ কারণে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীদের চিকিৎসাসেবা পেতে বাধ্য হয়ে স্থান নিতে হয়েছে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায়। এতে একদিকে যেমন চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের, তেমনি নানা ধরনের ভোগান্তিতেও পড়তে হচ্ছে আক্রান্ত শিশু রোগীসহ তাদের স্বজনদের।
বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর এলাকার বাসিন্দা মো. সুলতান আহাম্মেদ অসুস্থ এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে চারদিন ধরে ভর্তি আছেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, শিশু ওয়ার্ডে সিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে বারান্দায় জায়গা করে বাচ্চাদের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে অল্প কিছু ওষুধ পেলেও বাকি সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি এক শিশুর মা মোসা. আসমা বেগম বলেন, বাচ্চা নিয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কোনো ওষুধই এখান থেকে দেয়নি। প্রতিদিন প্রায় ২০০ টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে তাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি সরকারি ওষুধের ব্যবস্থা করতো তাহলে যাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তাদের সুবিধা হতো। হঠাৎ করে বরগুনায় শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুদের অভিভাবকদের উদ্দেশে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মেহেদী পারভেজ বলেন, শীত মৌসুমে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। এ সময় শিশুদের বাবা-মাকে সচেতন হতে হয়। বিশেষ করে রাতের বেলা বাচ্চাদের ঘরের বাইরে কম বের করতে হবে। যদিও বের হতে হয়, তাহলে অবশ্যই গরম পোশাক এবং সম্ভব হলে শিশুর মুখে মাস্ক পরাতে হবে। এছাড়াও ঘরে বড়দের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হলে তাদেরকেও মাস্ক পরতে হবে, তাহলে ভাইরাল ইনফেকশন অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর শঙ্কা কমে যায়।
বরগুনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে প্রায় ১৫০ জন শিশু রোগী ভর্তি আছে। এসব শিশু রোগীর জন্য সার্বক্ষণিক একজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে তাদের সীমাবদ্ধতা আছে, রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ হওয়ায় আমাদের কিছু কিছু ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমরা প্রস্তুত আছি। পাশাপাশি ওষুধের যে সংকট তৈরি হয়েছে তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বরগুনা : শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে শিশু রোগীদের ভিড় -সংবাদ
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
শীত মৌসুমের শুরু হতে না হতেই বরগুনায় বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই প্রায় ১৫-২০ জন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। তবে নির্ধারিত শয্যার বিপরীতে প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি হওয়ায় জায়গা সংকটে চিকিৎসা সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন অধিকাংশ শিশুর অভিভাবক।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও ওষুধ সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় প্রায় সকল পরীক্ষা এবং ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংকট দূর করে শিশুদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক মাস ধরেই হঠাৎ বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে বাড়তে শুরু করেছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তির সংখ্যা। এসব শিশু রোগীদের জন্য হাসপাতালে নির্ধারিত বেড সংখ্যা ৫০টি হলেও বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি থাকেন ১২০-১৩০ জন শিশু। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে অতিরিক্ত রোগীর চাপে বেড সংকটে পড়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অধিকাংশ শিশু রোগীদের।
সরেজমিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা ভর্তি শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ ছাড়া অনেকেই আবার ভর্তি হয়েছে সর্দি-জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে। হঠাৎ করে নির্ধারিত বেডের বিপরীতে প্রায় তিনগুণ শিশু রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালে সৃষ্টি হয়েছে বাড়তি রোগীর চাপ। এ কারণে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীদের চিকিৎসাসেবা পেতে বাধ্য হয়ে স্থান নিতে হয়েছে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায়। এতে একদিকে যেমন চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের, তেমনি নানা ধরনের ভোগান্তিতেও পড়তে হচ্ছে আক্রান্ত শিশু রোগীসহ তাদের স্বজনদের।
বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর এলাকার বাসিন্দা মো. সুলতান আহাম্মেদ অসুস্থ এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে চারদিন ধরে ভর্তি আছেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, শিশু ওয়ার্ডে সিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে বারান্দায় জায়গা করে বাচ্চাদের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে অল্প কিছু ওষুধ পেলেও বাকি সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি এক শিশুর মা মোসা. আসমা বেগম বলেন, বাচ্চা নিয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কোনো ওষুধই এখান থেকে দেয়নি। প্রতিদিন প্রায় ২০০ টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে তাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি সরকারি ওষুধের ব্যবস্থা করতো তাহলে যাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তাদের সুবিধা হতো। হঠাৎ করে বরগুনায় শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুদের অভিভাবকদের উদ্দেশে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মেহেদী পারভেজ বলেন, শীত মৌসুমে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। এ সময় শিশুদের বাবা-মাকে সচেতন হতে হয়। বিশেষ করে রাতের বেলা বাচ্চাদের ঘরের বাইরে কম বের করতে হবে। যদিও বের হতে হয়, তাহলে অবশ্যই গরম পোশাক এবং সম্ভব হলে শিশুর মুখে মাস্ক পরাতে হবে। এছাড়াও ঘরে বড়দের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হলে তাদেরকেও মাস্ক পরতে হবে, তাহলে ভাইরাল ইনফেকশন অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর শঙ্কা কমে যায়।
বরগুনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে প্রায় ১৫০ জন শিশু রোগী ভর্তি আছে। এসব শিশু রোগীর জন্য সার্বক্ষণিক একজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে তাদের সীমাবদ্ধতা আছে, রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ হওয়ায় আমাদের কিছু কিছু ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমরা প্রস্তুত আছি। পাশাপাশি ওষুধের যে সংকট তৈরি হয়েছে তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে।