পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে না দেওয়ায় নিজের দুই বোন ও তাদের স্বামীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে শিরিনা আক্তার (৪০) নামে চার সন্তানের জননী এখন কারাগারে। মূলত বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই ও বৃদ্ধা মায়ের প্রাপ্য অংশ দিতে বাধ্য করতে না পারায় শিরিনাকে কারাগারে যেতে হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও স্বজনদের। মায়ের কারাগারে যাওয়ার পর থেকে চরম মানবেতর অবস্থায় দিন কাটছে দুই প্রতিবন্ধী সন্তানসহ চার সন্তানের। ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফফর পুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামে।
জানাগেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শিরিনা আক্তারকে চেক ডিজঅনার মামলায় এক বছরের কারাদ- দিয়েছেন আদালত। আর মামলার বাদী শিরিনারই আপন দুই বোন ও বোন জামাই। শুধুমাত্র সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা সাজানো হয় বলে অভিযোগ স্বজন ও প্রতিবেশীদের।
শিরিনা আক্তারের বড় দুই ছেলে প্রবল শারীরিক প্রতিবন্ধি। চলাফেরা ও কথাও বলতে পারে না তারা। বাবা মিল্টন মিয়া বাধ্য হয়ে এক ঘরের বারান্দায় তালাবদ্ধ করে রাখেন দুই ছেলেকে, যাতে নিরাপদে থাকে ও কারো ক্ষতি না করে। ছোট দুই সন্তান তিন বছর ও পাঁচ বছর বয়সী মায়ের অনুপস্থিতিতে অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছে।
শিরিনা জেলে যাওয়ার পর থেকে পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর বিপদ। স্বামী মিল্টন মিয়ার দিন চলে নানা জায়গায় শ্রম বিক্রি করে। সেসব আয় দিয়ে একদিকে ছোট দু’টি শিশুর খাবার জোটানো, অন্যদিকে বারান্দায় বন্দী প্রতিবন্ধী ছেলেদের দেখাশোনা এসব নিয়ে দিশেহারা তিনি। মিল্টন বলেন, স্ত্রী কারাগারে থাকায় সন্তানদের নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন।
স্বজনরা জানান, চার বছর আগে দুই বোন ও তাদের স্বামীদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন শিরিনা। ঋণ গ্রহণের সময় দুইটি স্বাক্ষর করা চেক রেখে দেন অভিযুক্তরা। শিরিনা কিছু টাকা শোধ করলেও খালি দুই চেকে ৪১ লাখ টাকা লিখে চেক ডিজঅনার মামলা করে তার নিজের বোন ও বোন জামাই রফিকুল আলম। শিরিনার মা তাহেরা আক্তার (৭৮) বলেন, দুই মেয়ে ও জামাইরা স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদ লিখে নিতেই শিরিনাকে ফাঁসিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শিরিনার পরিবারই একমাত্র ভুক্তভোগী নয়। একই গ্রামের আরও অনেক পরিবার চড়া সুদের এই কৌশল ও সম্পত্তিগত দ্বন্দ্বে আক্রান্ত। সমিতির নামে সুদের ব্যবসায় খুলে পরিণত করেছে প্রতারণার একটা ফাঁদ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি শিরিনার মুক্তি দাবি স্বজন এলাকাবাসীর।
এদিকে এ ধরনের সুদের ব্যবসা বা সম্পত্তিগত প্রতারনা বেআইনি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়েছেন, কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার। তবে প্রশাসনের এই আশ্বাসও বাস্তব পরিস্থিতিতে বদল আনছে না। শিরিনার মতো একজন মা কারাগারে এবং তার দুই প্রতিবন্ধী সন্তানের মানবেতর পরিস্থিতি এটা শুধু একটি পরিবারের নয়, সমাজের ব্যর্থতার এক নির্মম ছবি। মানবিক বিবেচনায় দ্রুত ন্যায়বিচার ও সহায়তার জন্য সরকারি-বেসরকারি সকল মহলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন শিরিনের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। একজন মায়ের অনুপস্থিতিতে দণ্ডিত হচ্ছে চারটি নিষ্পাপ শিশু, যার মধ্যে দু’জন প্রতিবন্ধী। তাদের জন্যই এখন জরুরি সেবা ও সহায়তা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে না দেওয়ায় নিজের দুই বোন ও তাদের স্বামীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে শিরিনা আক্তার (৪০) নামে চার সন্তানের জননী এখন কারাগারে। মূলত বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই ও বৃদ্ধা মায়ের প্রাপ্য অংশ দিতে বাধ্য করতে না পারায় শিরিনাকে কারাগারে যেতে হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও স্বজনদের। মায়ের কারাগারে যাওয়ার পর থেকে চরম মানবেতর অবস্থায় দিন কাটছে দুই প্রতিবন্ধী সন্তানসহ চার সন্তানের। ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফফর পুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামে।
জানাগেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শিরিনা আক্তারকে চেক ডিজঅনার মামলায় এক বছরের কারাদ- দিয়েছেন আদালত। আর মামলার বাদী শিরিনারই আপন দুই বোন ও বোন জামাই। শুধুমাত্র সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা সাজানো হয় বলে অভিযোগ স্বজন ও প্রতিবেশীদের।
শিরিনা আক্তারের বড় দুই ছেলে প্রবল শারীরিক প্রতিবন্ধি। চলাফেরা ও কথাও বলতে পারে না তারা। বাবা মিল্টন মিয়া বাধ্য হয়ে এক ঘরের বারান্দায় তালাবদ্ধ করে রাখেন দুই ছেলেকে, যাতে নিরাপদে থাকে ও কারো ক্ষতি না করে। ছোট দুই সন্তান তিন বছর ও পাঁচ বছর বয়সী মায়ের অনুপস্থিতিতে অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছে।
শিরিনা জেলে যাওয়ার পর থেকে পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর বিপদ। স্বামী মিল্টন মিয়ার দিন চলে নানা জায়গায় শ্রম বিক্রি করে। সেসব আয় দিয়ে একদিকে ছোট দু’টি শিশুর খাবার জোটানো, অন্যদিকে বারান্দায় বন্দী প্রতিবন্ধী ছেলেদের দেখাশোনা এসব নিয়ে দিশেহারা তিনি। মিল্টন বলেন, স্ত্রী কারাগারে থাকায় সন্তানদের নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন।
স্বজনরা জানান, চার বছর আগে দুই বোন ও তাদের স্বামীদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন শিরিনা। ঋণ গ্রহণের সময় দুইটি স্বাক্ষর করা চেক রেখে দেন অভিযুক্তরা। শিরিনা কিছু টাকা শোধ করলেও খালি দুই চেকে ৪১ লাখ টাকা লিখে চেক ডিজঅনার মামলা করে তার নিজের বোন ও বোন জামাই রফিকুল আলম। শিরিনার মা তাহেরা আক্তার (৭৮) বলেন, দুই মেয়ে ও জামাইরা স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদ লিখে নিতেই শিরিনাকে ফাঁসিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শিরিনার পরিবারই একমাত্র ভুক্তভোগী নয়। একই গ্রামের আরও অনেক পরিবার চড়া সুদের এই কৌশল ও সম্পত্তিগত দ্বন্দ্বে আক্রান্ত। সমিতির নামে সুদের ব্যবসায় খুলে পরিণত করেছে প্রতারণার একটা ফাঁদ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি শিরিনার মুক্তি দাবি স্বজন এলাকাবাসীর।
এদিকে এ ধরনের সুদের ব্যবসা বা সম্পত্তিগত প্রতারনা বেআইনি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়েছেন, কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার। তবে প্রশাসনের এই আশ্বাসও বাস্তব পরিস্থিতিতে বদল আনছে না। শিরিনার মতো একজন মা কারাগারে এবং তার দুই প্রতিবন্ধী সন্তানের মানবেতর পরিস্থিতি এটা শুধু একটি পরিবারের নয়, সমাজের ব্যর্থতার এক নির্মম ছবি। মানবিক বিবেচনায় দ্রুত ন্যায়বিচার ও সহায়তার জন্য সরকারি-বেসরকারি সকল মহলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন শিরিনের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। একজন মায়ের অনুপস্থিতিতে দণ্ডিত হচ্ছে চারটি নিষ্পাপ শিশু, যার মধ্যে দু’জন প্রতিবন্ধী। তাদের জন্যই এখন জরুরি সেবা ও সহায়তা।