চুয়াডাঙ্গা : ভূমিকম্পে সেচনালায় ধস -সংবাদ
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের অভিঘাতে সেচ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ১নং বৈদ্যুতিক সেচপাম্পের প্রধান নালা হঠাৎ ধসে পড়ায় পুরো পাম্পই অচল হয়ে পড়েছে। ফলে এই সেচনালার ওপর নির্ভরশীল প্রায় দুই শতাধিক বিঘা জমির ভুট্টা, গম, ড্রাগন, মাল্টা এবং বারা-উফশী ধানের আবাদ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। মাঠের মাটি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে, আর তা দেখেই কৃষকদের চোখে হতাশার ছায়া ঘন হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকদের তথ্য অনুযায়ী, ২১ নভেম্বর ঢাকাকে কেন্দ্র করে অনুভূত হওয়া ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের দোলনে সুবলপুর সড়কের হাউলি মাঠসংলগ্ন অংশ এবং সেচপাম্পের পাকা মেইন নালার বেশ বড় অংশ নিচে নেমে যায়। মাথাভাঙ্গা নদী থেকে পানি তুলে এই নালার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া হতো।
কিন্তু নালা ধসে যাওয়ার পরপরই পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়। এতে জমির উপরের স্তর দ্রুত শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে, ভুট্টা ও গমের চারাগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে এবং মাল্টা বাগানেও পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
বর্তমান সময়টি বারা-উফশী ও বারা-হাইব্রিড ধানের চারা রোপণের শীর্ষ মৌসুম। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি না থাকায় অনেকেই চারা তৈরি করেও জমিতে নামাতে পারছেন না।
কৃষক মনজু, আব্দুল হামিদ ও আবুবকর জানান,ফসল এখন পুরোপুরি পানির অপেক্ষায়। সেচ না পেলে দিন দিন জমি পাথরের মতো শক্ত হয়ে যাচ্ছে, এভাবে আবাদ বাচানো অসম্ভব।
সেচপাম্প পরিচালনা কমিটির সম্পাদক আজিজুর রহমান জানান, নালার পাকা কাঠামো এবং রাস্তার একটি অংশ ভূমিকম্পে ভেঙে যাওয়ায় পানি প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এটা ছোট খরচ নয়। নালা মেরামত করতে কৃষকদের পক্ষে অর্থ জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে। তার দাবি, নালা এবং আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৭০০ মিটার অংশ সংস্কার করা গেলে সেচ কার্যক্রম আবার স্বাভাবিকভাবে চালু করা যাবে।
পাম্প পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল করিম জানান, পুরো নালাটি নদীর তলা থেকে অনেক ওপরে তৈরি হওয়ায় নিচ থেকে নতুন পিলার বসিয়ে পুনর্নিমাণ ছাড়া স্থায়ী সমাধাণ সম্ভব নয়। তার ভাষায়, এ কাজে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। কৃষকেরা এই ব্যয় সামলাতে পারবেন না ফলে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে দ্রুত সহায়তা না পেলে বিপুল পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
ক্ষেতে দাঁড়িয়ে থাকা ভুট্টা, গম, ধান ও ফলের বাগান, সবই এখন সেচ সংকটের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। কৃষকেরা বলছেন, দ্রুত নালা সংস্কার না হলে চলতি রবি মৌসুমের আবাদ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার প্রভাব পুরো এলাকার কৃষি অর্থনীতিতেও পড়বে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
চুয়াডাঙ্গা : ভূমিকম্পে সেচনালায় ধস -সংবাদ
সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের অভিঘাতে সেচ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ১নং বৈদ্যুতিক সেচপাম্পের প্রধান নালা হঠাৎ ধসে পড়ায় পুরো পাম্পই অচল হয়ে পড়েছে। ফলে এই সেচনালার ওপর নির্ভরশীল প্রায় দুই শতাধিক বিঘা জমির ভুট্টা, গম, ড্রাগন, মাল্টা এবং বারা-উফশী ধানের আবাদ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। মাঠের মাটি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে, আর তা দেখেই কৃষকদের চোখে হতাশার ছায়া ঘন হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকদের তথ্য অনুযায়ী, ২১ নভেম্বর ঢাকাকে কেন্দ্র করে অনুভূত হওয়া ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের দোলনে সুবলপুর সড়কের হাউলি মাঠসংলগ্ন অংশ এবং সেচপাম্পের পাকা মেইন নালার বেশ বড় অংশ নিচে নেমে যায়। মাথাভাঙ্গা নদী থেকে পানি তুলে এই নালার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া হতো।
কিন্তু নালা ধসে যাওয়ার পরপরই পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়। এতে জমির উপরের স্তর দ্রুত শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে, ভুট্টা ও গমের চারাগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে এবং মাল্টা বাগানেও পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
বর্তমান সময়টি বারা-উফশী ও বারা-হাইব্রিড ধানের চারা রোপণের শীর্ষ মৌসুম। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি না থাকায় অনেকেই চারা তৈরি করেও জমিতে নামাতে পারছেন না।
কৃষক মনজু, আব্দুল হামিদ ও আবুবকর জানান,ফসল এখন পুরোপুরি পানির অপেক্ষায়। সেচ না পেলে দিন দিন জমি পাথরের মতো শক্ত হয়ে যাচ্ছে, এভাবে আবাদ বাচানো অসম্ভব।
সেচপাম্প পরিচালনা কমিটির সম্পাদক আজিজুর রহমান জানান, নালার পাকা কাঠামো এবং রাস্তার একটি অংশ ভূমিকম্পে ভেঙে যাওয়ায় পানি প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এটা ছোট খরচ নয়। নালা মেরামত করতে কৃষকদের পক্ষে অর্থ জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে। তার দাবি, নালা এবং আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৭০০ মিটার অংশ সংস্কার করা গেলে সেচ কার্যক্রম আবার স্বাভাবিকভাবে চালু করা যাবে।
পাম্প পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল করিম জানান, পুরো নালাটি নদীর তলা থেকে অনেক ওপরে তৈরি হওয়ায় নিচ থেকে নতুন পিলার বসিয়ে পুনর্নিমাণ ছাড়া স্থায়ী সমাধাণ সম্ভব নয়। তার ভাষায়, এ কাজে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। কৃষকেরা এই ব্যয় সামলাতে পারবেন না ফলে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে দ্রুত সহায়তা না পেলে বিপুল পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
ক্ষেতে দাঁড়িয়ে থাকা ভুট্টা, গম, ধান ও ফলের বাগান, সবই এখন সেচ সংকটের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। কৃষকেরা বলছেন, দ্রুত নালা সংস্কার না হলে চলতি রবি মৌসুমের আবাদ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার প্রভাব পুরো এলাকার কৃষি অর্থনীতিতেও পড়বে।