সৈয়দপুর (নীলফামারী) : হিমাগারের সেডে স্তুপ করে রাখা আলু -সংবাদ
আলুর বাজারে দামের ধস নামায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন নীলফামারীর সেয়দপুরে হিমাগারে আলু মজুদ করে রাখা কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। মৌসুমের শেষে উৎপাদন খরচ, পরিবহন ব্যয় ও হিমাগার ভাড়া মিলিয়ে প্রতি কেজি আলুতে লোকসান গুনতে হচ্ছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা। ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না। এতে করে হিমাগার মালিকরা আলুর মজুদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন।
মৌসুমের শুরুতে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার আশায় হিমাগারে আলু মজুত করেছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাজারে আলুর চাহিদা কম থাকায় দাম ক্রমেই পড়ে যায়। যে দামে আলু বিক্রি হচ্ছে, তাতে খরচই উঠছে না বরং উল্টো বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে মজুত করা আলু। জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর লাভের স্বপ্ন নিয়ে হিমাগারে ব্যাপক পরিমাণ আলু মজুত করেন। তবে এবার দাম না থাকায় স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে তাদের।
সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুরের কৃষক আয়নাল হক বলেন, গতবছরের তুলনায় এবার আলুর বাজারের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা প্রতি বছর হিমাগারে আলু মজুত করি তবে এবার আলুর দাম নেই। খরচ সবমিলিয়ে কেজি প্রতি ১০ টাকা লোকসান হয়েছে। ৬০ কেজি আলু রেখে ভাড়া গুণতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকায়।
সৈয়দপুরের বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার নির্ধারণ করা মূল্যে বিক্রি না হয়ে বাজারে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মজুত করা আলু বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে অপরদিকে ক্রয় করার তেমন ব্যবসায়ীও নেই। তিনি বলেন, লাভের আশা করে হিমাগারে আলু রেখেছিলাম কিন্তু এবার লোকসান হয়ে গেল। অনেক টাকা খরচ করে আলু আবাদ করেছিলাম যে ব্যয় হয়েছে সেটাও উঠছে না।
সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ির কৃষক সুমন ইসলাম বলেন, ঋণ করে আলু রোপণ করেছিলাম। পরে হিমাগারে মজুত রাখি ভালো দাম পাওয়ার আশায়। তবে এবার আলুতে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম।
সরকারের উচিত আলু রপ্তানিতে উদ্যোগ নেওয়া এতে আলুর বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। এতে কৃষকদের ক্ষতি অনেকটা লাঘব হবে। কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আলুর দাম না থাকায় ২/১ বস্তা করে আলু হিমাগার থেকে বের করে গৃহপালিত গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
গত বছর আলুতে দাম মেলায় লাভবান হন কৃষক ও হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা ব্যবসায়ীরা। এবারও লাভের আশায় সৈয়দপুরের কয়েকজন মৌসুমী ব্যবসায়ী স্থানীয় হিমাগারে আলু রাখেন। বর্তমান বাজারে তাঁরা পুঁজি হারাতে বসেছেন। এমন ধরা খাবেন চিন্তাও করেননি তাঁরা।
সৈয়দপুরের আলু ব্যবসায়ী হাজী টুনটুন বলেন, আমি ব্যাবসায়িকভাবে কয়েক হাজার বস্তা আলু হিমাগারে মজুত করেছি। পরিবহন শ্রমিকসহ কেজি প্রতি প্রায় ১০ টাকা লোকসান হচ্ছে। আমার কয়েক হাজার বস্তা আলু হিমাগারে মজুত করা আছে লোকসানের কারণে এখনো বের করিনি।
সৈয়দপুরের নর্দান কোল্ড স্টোরেজ, ইসমাঈল বীজ হিমাগার ও সাজেদা কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা জানান, প্রতি বছর আমাদের হিমাগারে কৃষকেরা আলু মজুত করে রাখেন। গত বছর আলুর দাম ভালো থাকার কারণে সময়ের আগে আলু বের করেছে অনেক কৃষক, তবে এবার দাম না থাকায় হিমাগারে পড়ে আছে আলু। এতে আমাদের লোকসানের পাশাপাশি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে। কেউ লোকসানের কারণে আলু বের করছেন না। আমরা ইতিমধ্যে মাইকিং করে আলু বের করার জন্য বলেছি। কারণ সামনে নতুন চলে আসবে। তাই এছাড়া কোনো উপায় নেই আমাদের।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষন জানান, চাহিদার তুলনায় আলুর আবাদ বেশী হওয়ায় দামে ধস নেমেছে। ইতোমধ্যে আগাম আলু বাজারে আসতে শুরু করেছে। যদি দাম ভালো থাকে, কৃষকরা কিছুটা লোকসান পুষিয়ে নিতে পারেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সৈয়দপুর (নীলফামারী) : হিমাগারের সেডে স্তুপ করে রাখা আলু -সংবাদ
বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
আলুর বাজারে দামের ধস নামায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন নীলফামারীর সেয়দপুরে হিমাগারে আলু মজুদ করে রাখা কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। মৌসুমের শেষে উৎপাদন খরচ, পরিবহন ব্যয় ও হিমাগার ভাড়া মিলিয়ে প্রতি কেজি আলুতে লোকসান গুনতে হচ্ছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা। ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না। এতে করে হিমাগার মালিকরা আলুর মজুদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন।
মৌসুমের শুরুতে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার আশায় হিমাগারে আলু মজুত করেছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাজারে আলুর চাহিদা কম থাকায় দাম ক্রমেই পড়ে যায়। যে দামে আলু বিক্রি হচ্ছে, তাতে খরচই উঠছে না বরং উল্টো বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে মজুত করা আলু। জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর লাভের স্বপ্ন নিয়ে হিমাগারে ব্যাপক পরিমাণ আলু মজুত করেন। তবে এবার দাম না থাকায় স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে তাদের।
সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুরের কৃষক আয়নাল হক বলেন, গতবছরের তুলনায় এবার আলুর বাজারের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা প্রতি বছর হিমাগারে আলু মজুত করি তবে এবার আলুর দাম নেই। খরচ সবমিলিয়ে কেজি প্রতি ১০ টাকা লোকসান হয়েছে। ৬০ কেজি আলু রেখে ভাড়া গুণতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকায়।
সৈয়দপুরের বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার নির্ধারণ করা মূল্যে বিক্রি না হয়ে বাজারে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মজুত করা আলু বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে অপরদিকে ক্রয় করার তেমন ব্যবসায়ীও নেই। তিনি বলেন, লাভের আশা করে হিমাগারে আলু রেখেছিলাম কিন্তু এবার লোকসান হয়ে গেল। অনেক টাকা খরচ করে আলু আবাদ করেছিলাম যে ব্যয় হয়েছে সেটাও উঠছে না।
সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ির কৃষক সুমন ইসলাম বলেন, ঋণ করে আলু রোপণ করেছিলাম। পরে হিমাগারে মজুত রাখি ভালো দাম পাওয়ার আশায়। তবে এবার আলুতে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম।
সরকারের উচিত আলু রপ্তানিতে উদ্যোগ নেওয়া এতে আলুর বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। এতে কৃষকদের ক্ষতি অনেকটা লাঘব হবে। কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আলুর দাম না থাকায় ২/১ বস্তা করে আলু হিমাগার থেকে বের করে গৃহপালিত গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
গত বছর আলুতে দাম মেলায় লাভবান হন কৃষক ও হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা ব্যবসায়ীরা। এবারও লাভের আশায় সৈয়দপুরের কয়েকজন মৌসুমী ব্যবসায়ী স্থানীয় হিমাগারে আলু রাখেন। বর্তমান বাজারে তাঁরা পুঁজি হারাতে বসেছেন। এমন ধরা খাবেন চিন্তাও করেননি তাঁরা।
সৈয়দপুরের আলু ব্যবসায়ী হাজী টুনটুন বলেন, আমি ব্যাবসায়িকভাবে কয়েক হাজার বস্তা আলু হিমাগারে মজুত করেছি। পরিবহন শ্রমিকসহ কেজি প্রতি প্রায় ১০ টাকা লোকসান হচ্ছে। আমার কয়েক হাজার বস্তা আলু হিমাগারে মজুত করা আছে লোকসানের কারণে এখনো বের করিনি।
সৈয়দপুরের নর্দান কোল্ড স্টোরেজ, ইসমাঈল বীজ হিমাগার ও সাজেদা কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা জানান, প্রতি বছর আমাদের হিমাগারে কৃষকেরা আলু মজুত করে রাখেন। গত বছর আলুর দাম ভালো থাকার কারণে সময়ের আগে আলু বের করেছে অনেক কৃষক, তবে এবার দাম না থাকায় হিমাগারে পড়ে আছে আলু। এতে আমাদের লোকসানের পাশাপাশি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে। কেউ লোকসানের কারণে আলু বের করছেন না। আমরা ইতিমধ্যে মাইকিং করে আলু বের করার জন্য বলেছি। কারণ সামনে নতুন চলে আসবে। তাই এছাড়া কোনো উপায় নেই আমাদের।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষন জানান, চাহিদার তুলনায় আলুর আবাদ বেশী হওয়ায় দামে ধস নেমেছে। ইতোমধ্যে আগাম আলু বাজারে আসতে শুরু করেছে। যদি দাম ভালো থাকে, কৃষকরা কিছুটা লোকসান পুষিয়ে নিতে পারেন।