সরকারি চাকরি হারিয়ে নিদারুণ হতাশাএই যেন শুরু হয়েছিল মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের একামধু গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের জীবনে নতুন এক দুঃসময়। পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের পর বিনা অপরাধে চাকরি হারিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে তীব্র সংকটে পড়েন তিনি। কিছুদিন এনজিওতে চাকরি করলেও স্থায়ী সমাধান মিলছিল না। এরপর কৃষির প্রতি আগ্রহ থেকেই শুরু হয় তার নতুন পথচলা। স্ট্রবেরি চাষে ব্যর্থতার পর কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০২১ সালে এক বিঘা জমিতে যশোর থেকে আনা কোল বরইয়ের চারা রোপণ করেন গিয়াস উদ্দিন। একই সঙ্গে আপেল, বলসুন্দরী ও রেড আপেল কুলের চারা লাগান। সাত মাস পর গাছে আসে প্রথম ফল। সফলতা দেখে তিনি বাগান বাড়ান। এখন মনু নদীর তীরে তার পাঁচ বিঘার বিস্তীর্ণ বরইবাগান ৪০০-৪৫০টি গাছে ঝুলে আছে কচিকাঁচা রসাল বরই। পুরো বরই বাগান হালকা সুতোয় ঢেকে রাখাদূর থেকে দেখতে যেন বিশাল মশারি টানানো। বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন চাষিরা। সারি সারি গাছের পাতার ফাঁকে ঝুলে আছে থোকা থোকা অস্ট্রেলিয়ান জাতের লালচে সবুজ বরই। আরেক পাশে বলসুন্দরী আকারে ছোট হলেও রসালো ও সুস্বাদু। গিয়াস উদ্দিন জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে বলসুন্দরী ও অস্ট্রেলিয়ান আপেল কোলের চাষ করেছেন তিনি। তিন বছরে বাগান থেকে আয় করেছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। এ বছর পাঁচ লাখ টাকার বেশি আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন। তার কথায়, বরই বহু বর্ষজীবী। যত্ন নিলেই প্রতিবছর ভালো ফলন পাওয়া যায়। আলো-বাতাস, নিয়মিত ছাঁটাই, সার ও পানি সব ঠিক থাকলে ফলন ভালো হয়। পাখির আক্রমণ ঠেকাতে নেট দিতে হয়। পোকামাকড় দমনে নিয়মিত ওষুধও লাগে। সিজনে প্রতিদিন ৬০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন পাশের গ্রামের শ্রমিক এখলাছুর রহমান। গিয়াসের বাগানে মৌসুমে আরও কয়েকজন কাজের সুযোগ পান। এখলাছুর জানান, কার্তিক মাসে গাছে ফুল আসে, অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ পর্যন্ত চলে ফল সংগ্রহ। নদীর পলি পড়লে ফলন হয় আরও ভালো।
গিয়াস উদ্দিনের সফলতা দেখে একই গ্রামের আরও কয়েকজন কোল বরই চাষ শুরু করেছেন। তিনি এখন শুধু একজন সফল কৃষকই নন, বরং গ্রামের অনুপ্রেরণার প্রতীক। রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল আমীন বলেন, এই অঞ্চলে বিদেশি জাতের বরই চাষ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। নতুন নতুন জাত চাষে কৃষকেরা আগ্রহী। গিয়াস উদ্দিনদের মতো কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। একসময় জীবনের কঠিন বাস্তবতায় দিশেহারা হয়ে পড়া গিয়াস উদ্দিন আজ বরই চাষে হয়েছেন স্বাবলম্বী। বদলে দিয়েছেন নিজের জীবন, বদলে দিয়েছেন গ্রামের চাষাবাদের গল্প।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
সরকারি চাকরি হারিয়ে নিদারুণ হতাশাএই যেন শুরু হয়েছিল মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের একামধু গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের জীবনে নতুন এক দুঃসময়। পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের পর বিনা অপরাধে চাকরি হারিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে তীব্র সংকটে পড়েন তিনি। কিছুদিন এনজিওতে চাকরি করলেও স্থায়ী সমাধান মিলছিল না। এরপর কৃষির প্রতি আগ্রহ থেকেই শুরু হয় তার নতুন পথচলা। স্ট্রবেরি চাষে ব্যর্থতার পর কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০২১ সালে এক বিঘা জমিতে যশোর থেকে আনা কোল বরইয়ের চারা রোপণ করেন গিয়াস উদ্দিন। একই সঙ্গে আপেল, বলসুন্দরী ও রেড আপেল কুলের চারা লাগান। সাত মাস পর গাছে আসে প্রথম ফল। সফলতা দেখে তিনি বাগান বাড়ান। এখন মনু নদীর তীরে তার পাঁচ বিঘার বিস্তীর্ণ বরইবাগান ৪০০-৪৫০টি গাছে ঝুলে আছে কচিকাঁচা রসাল বরই। পুরো বরই বাগান হালকা সুতোয় ঢেকে রাখাদূর থেকে দেখতে যেন বিশাল মশারি টানানো। বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন চাষিরা। সারি সারি গাছের পাতার ফাঁকে ঝুলে আছে থোকা থোকা অস্ট্রেলিয়ান জাতের লালচে সবুজ বরই। আরেক পাশে বলসুন্দরী আকারে ছোট হলেও রসালো ও সুস্বাদু। গিয়াস উদ্দিন জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে বলসুন্দরী ও অস্ট্রেলিয়ান আপেল কোলের চাষ করেছেন তিনি। তিন বছরে বাগান থেকে আয় করেছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। এ বছর পাঁচ লাখ টাকার বেশি আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন। তার কথায়, বরই বহু বর্ষজীবী। যত্ন নিলেই প্রতিবছর ভালো ফলন পাওয়া যায়। আলো-বাতাস, নিয়মিত ছাঁটাই, সার ও পানি সব ঠিক থাকলে ফলন ভালো হয়। পাখির আক্রমণ ঠেকাতে নেট দিতে হয়। পোকামাকড় দমনে নিয়মিত ওষুধও লাগে। সিজনে প্রতিদিন ৬০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন পাশের গ্রামের শ্রমিক এখলাছুর রহমান। গিয়াসের বাগানে মৌসুমে আরও কয়েকজন কাজের সুযোগ পান। এখলাছুর জানান, কার্তিক মাসে গাছে ফুল আসে, অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ পর্যন্ত চলে ফল সংগ্রহ। নদীর পলি পড়লে ফলন হয় আরও ভালো।
গিয়াস উদ্দিনের সফলতা দেখে একই গ্রামের আরও কয়েকজন কোল বরই চাষ শুরু করেছেন। তিনি এখন শুধু একজন সফল কৃষকই নন, বরং গ্রামের অনুপ্রেরণার প্রতীক। রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল আমীন বলেন, এই অঞ্চলে বিদেশি জাতের বরই চাষ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। নতুন নতুন জাত চাষে কৃষকেরা আগ্রহী। গিয়াস উদ্দিনদের মতো কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। একসময় জীবনের কঠিন বাস্তবতায় দিশেহারা হয়ে পড়া গিয়াস উদ্দিন আজ বরই চাষে হয়েছেন স্বাবলম্বী। বদলে দিয়েছেন নিজের জীবন, বদলে দিয়েছেন গ্রামের চাষাবাদের গল্প।