ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন দ্বীপ মুজিবনগরের বাসিন্দা কমলা বেগম। ভোরের আলো ফোটার আগেই দিনের শুরু হয় তার। বয়স পঁয়ত্রিশের কোঠায়, কিন্তু মুখের বলিরেখা বলে দেয় জীবন কতটা কঠিন ছিল তার জন্য। প্রতিবন্ধী স্বামী মনির হোসেন ও দুই সন্তানকে নিয়ে টিকে থাকার লড়াই যেন প্রতিদিনই নতুন করে শুরু হয় তার।
স্বামী অসুস্থ হওয়ায় কমলা অন্যের ঘরবাড়ির কাজ, ধানের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। গ্রামের কিছু মানুষ মাঝে মাঝে সাহায্য করেন। কেউ চাল দেয়, কেউ পুরোনো কাপড় দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তা নিয়মিত নয়। স্বামী মনিরের নামে প্রতিবন্ধী ভাতা হয়েছে। তবে যে টাকা পায় তা দিয়ে স্বামীর ওষুধের খরচও চলে না।
জানা যায়, মনির এক সময় রিকশা চালাতেন। প্রায় ৩০ বছর আগে টাইফয়েট জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তার দু’পা পঙ্গু হয়ে যায়। এর পর ধীরে ধীরে বাক প্রতিবন্ধী হয়ে যান তিনি। সেই থেকে শয্যাশায়ী মনিরের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে কমলার কাঁধে। দরিদ্র পরিবারে হঠাৎ করেই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে যাওয়ায় ঘন কালো অন্ধকার নেমে আসে তাদের জীবনে।
কমলা বলেন, আগে আমার স্বামী মনির রিকশা চালিয়ে যা রোজগার করত তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলত। আমার ছেলেটা জন্ম হওয়ার পর থেকে মনিরের দু’পা পঙ্গু হয়ে একেবারেই অচল হয়ে যায়। তারপর সবকিছু থেমে গেছে আমাদের জীবনে। কারও কাছে হাত পাততে ইচ্ছে করে না, কিন্তু না চাইলে তো বাচ্চাদের মুখে খাবার তোলা যায় না। দুই সন্তানই স্কুলে যায়, কিন্তু নিয়মিত যেতে পারে না। কারন ছেলেটা অন্যের কাজ করতে হয়। যেদিন ছেলেটা কাজ না করে সেইদিন আর সংসার চলেনা। কখনও বই-খাতা নেই, কখনও খাওয়ার অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। কমলা আরো বলেন, সংসারটা চালাতে অনেক কষ্ট হয়। স্বামীর প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা করে চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়। মেয়েটাও পড়ছে, তার পিছনে খরচ চালাতে হয়। স্বামীর নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা আছে। ৬ মাস পর আড়াই হাজার টাকা পাই, তা দিয়ে কিছুই হয়না। সরকারি ডাল, চাল যা আসে আমরা কিছুই পাই না। স্থানীয় মনির মাষ্টার বলেন, প্রতিবন্ধী মনির আমার পাশ্ববর্তী এলাকার লোক। সে শুধু একটি প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। এছাড়া বিকল্প কিছু পায় না। খুবই কষ্টে তাদের সংসার চলে। মনিরকে এমন একটি ভাতা করে দেয়া হোক, যাতে তার ছেলে সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসাইন জানান, মুজিবনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মনিরকে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। জেনেছি তার স্ত্রী অন্যথায় কাজ করে। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সেই পরিবারটিকে পূর্ণবাসনের আওতায় এনে স্বচ্চল করা যায় কিনা, এ ক্ষেত্রে সমাজ কল্যাণ পরিষদের তহবিল থেকে সহযোগিতা করা হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন দ্বীপ মুজিবনগরের বাসিন্দা কমলা বেগম। ভোরের আলো ফোটার আগেই দিনের শুরু হয় তার। বয়স পঁয়ত্রিশের কোঠায়, কিন্তু মুখের বলিরেখা বলে দেয় জীবন কতটা কঠিন ছিল তার জন্য। প্রতিবন্ধী স্বামী মনির হোসেন ও দুই সন্তানকে নিয়ে টিকে থাকার লড়াই যেন প্রতিদিনই নতুন করে শুরু হয় তার।
স্বামী অসুস্থ হওয়ায় কমলা অন্যের ঘরবাড়ির কাজ, ধানের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। গ্রামের কিছু মানুষ মাঝে মাঝে সাহায্য করেন। কেউ চাল দেয়, কেউ পুরোনো কাপড় দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তা নিয়মিত নয়। স্বামী মনিরের নামে প্রতিবন্ধী ভাতা হয়েছে। তবে যে টাকা পায় তা দিয়ে স্বামীর ওষুধের খরচও চলে না।
জানা যায়, মনির এক সময় রিকশা চালাতেন। প্রায় ৩০ বছর আগে টাইফয়েট জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তার দু’পা পঙ্গু হয়ে যায়। এর পর ধীরে ধীরে বাক প্রতিবন্ধী হয়ে যান তিনি। সেই থেকে শয্যাশায়ী মনিরের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে কমলার কাঁধে। দরিদ্র পরিবারে হঠাৎ করেই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে যাওয়ায় ঘন কালো অন্ধকার নেমে আসে তাদের জীবনে।
কমলা বলেন, আগে আমার স্বামী মনির রিকশা চালিয়ে যা রোজগার করত তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলত। আমার ছেলেটা জন্ম হওয়ার পর থেকে মনিরের দু’পা পঙ্গু হয়ে একেবারেই অচল হয়ে যায়। তারপর সবকিছু থেমে গেছে আমাদের জীবনে। কারও কাছে হাত পাততে ইচ্ছে করে না, কিন্তু না চাইলে তো বাচ্চাদের মুখে খাবার তোলা যায় না। দুই সন্তানই স্কুলে যায়, কিন্তু নিয়মিত যেতে পারে না। কারন ছেলেটা অন্যের কাজ করতে হয়। যেদিন ছেলেটা কাজ না করে সেইদিন আর সংসার চলেনা। কখনও বই-খাতা নেই, কখনও খাওয়ার অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। কমলা আরো বলেন, সংসারটা চালাতে অনেক কষ্ট হয়। স্বামীর প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা করে চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়। মেয়েটাও পড়ছে, তার পিছনে খরচ চালাতে হয়। স্বামীর নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা আছে। ৬ মাস পর আড়াই হাজার টাকা পাই, তা দিয়ে কিছুই হয়না। সরকারি ডাল, চাল যা আসে আমরা কিছুই পাই না। স্থানীয় মনির মাষ্টার বলেন, প্রতিবন্ধী মনির আমার পাশ্ববর্তী এলাকার লোক। সে শুধু একটি প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। এছাড়া বিকল্প কিছু পায় না। খুবই কষ্টে তাদের সংসার চলে। মনিরকে এমন একটি ভাতা করে দেয়া হোক, যাতে তার ছেলে সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসাইন জানান, মুজিবনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মনিরকে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। জেনেছি তার স্ত্রী অন্যথায় কাজ করে। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সেই পরিবারটিকে পূর্ণবাসনের আওতায় এনে স্বচ্চল করা যায় কিনা, এ ক্ষেত্রে সমাজ কল্যাণ পরিষদের তহবিল থেকে সহযোগিতা করা হবে।