alt

আত্মসম্মান তাকে আজও ধরে রেখেছে নিজের কাজে, নিজের উপার্জনে

প্রতিনিধি, হিলি (দিনাজপুর) : বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫

মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শক্তি মনোবল, যা হার মানায় শারীরিক অক্ষমতাকেও। সেই সত্যের জীবন্ত উদাহরণ দিনাজপুরের হিলি পৌরসভার ছোট ডাঙ্গাপাড়ার অন্ধ আব্দুল মাবুদ। দু’ চোখের দৃষ্টি হারালেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর আত্মসম্মান তাকে আজও ধরে রেখেছে নিজের কাজে, নিজের উপার্জনে। ৬৫ বছরের আব্দুল মাবুদ জন্ম থেকেই কম দেখতেন, এখন পুরোপুরি অন্ধ। স্ত্রীকে নিয়ে তাদের ছোট সংসার। ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে নিজেরা না খেয়ে কষ্ট করে পড়ালেখা করিয়েছেন। বিয়ে, শাদি সব দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ আজ সেই সন্তানই তাদের খোঁজ রাখে না। নেই কোনো দায়িত্ববোধ, নেই কোনো শ্রদ্ধা। সন্তান থাকা সত্ত্বেও বাবা, মাকে অসহায়ভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয়। এ যেন শুধু এক পরিবারের নয়, সমাজেরও গভীর ব্যর্থতা।

প্রতিদিন সকাল হলেই কাঁধে বাহক ঝুলিয়ে ৩০০-৪০০ টাকার বাদাম, বুট, কটকটি আর মিঠাই নিয়ে রাস্তায় বের হন তিনি। হিলি পৌর শহরের মাঠপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, চারমাথা, মহিলা কলেজ, চুড়িপট্টি, এসব এলাকায় ভাঙরির বিনিময়ে বিক্রি করেন খাবার। মানুষের দয়া নয়, নিজের পরিশ্রমেই সংসার চালান তিনি। বলা হয়, অন্ধ মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় থাকে। মাবুদের ক্ষেত্রেও তাই। চোখে দেখতে না পেলেও মনের চোখ দিয়ে পথ চিনে নেন। কোথাও ভুল হলে আশপাশের মানুষকে অনুরোধ করে পথ জেনে নেন। মানুষও তাকে সাহায্য করে।

প্রায় প্রতিদিন দুপুরে হাকিমপুর থানার মসজিদে নামাজ আদায় করতে দেখা যায় তাকে। নামাজের পর মসজিদের বারান্দায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। এখানেই তাকে চিনেছেন অনেক মানবিক পুলিশ সদস্য, যারা প্রয়োজন হলে পাশে দাঁড়ান। সাউফুল ইসলাম, রাসেদুল ইসলাম, এনামুলসহ এলাকার কয়েকজন বলেন, প্রায়ই দেখি দু’ জনকে বস্তা নিয়ে হাঁটতে। খুব কষ্ট লাগে। ছেলেমেয়ে থাকলে বাবা, মাকে এই বয়সে এভাবে ঘুরতে হয় কেন? তবু তারা কারও কাছে হাত পাতেন না। নিজেরা কষ্ট করে রোজগার করেন। মাবুদ চোখে দেখতে পান না, কিন্তু মনের চোখে পথ চলেন। মানুষ ছেলেমেয়েদের কতো আশা নিয়ে মানুষ করে। আমরা অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু আমাদের কপালে কষ্টই লেখা। তাই এই বয়সেও স্বামীর সঙ্গে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন অন্ধ মাবুদের স্ত্রী।

অন্ধ আব্দুল মাবুদ বলেন, ছেলেটারে মানুষ করতে পারিনাই। নিজেরা না খাইয়া তারে খাইয়াছি। লেখাপড়া, বিয়া সব দিছি। এখন সে আমাদের চেনে না। খোঁজ নেয় না। কথা পর্যন্ত কয় না। কিন্তু বাঁচতে তো হইবো। তাই চোখে দেখি না তয় ফেরি করি, গ্রামে গ্রামে ঘুরি। যেটুকু কামাই হয় তাই দিয়া কোনো রকম চলে। কষ্ট আছে, কিন্তু শান্তি আছে, কারো কাছে হাত পাতি না। হাকিমপুর (হিলি) থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, প্রায়ই দেখি তিনি থানা মসজিদে নামাজ আদায় করেন, পরে বারান্দায় বিশ্রাম নেন। একদিন তার জীবনের গল্প শুনে সত্যিই স্তব্ধ হয়ে যাই। অর্থের অভাবের চেয়েও বড় অভাব হচ্ছে সম্মান, ভালোবাসা ও যত্নের অভাব। যা এই মানুষটির জীবনে নেই। আমরা তাকে সাহায্য করেছি এবং যতটা পারি পাশে থাকবো। সমাজের সবাইকেই এমন মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

সচ্ছল সন্তান থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ বাবা, মাকে এভাবে দিনের পর দিন সংগ্রাম করতে দেখা। এ শুধু ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়, পুরো সমাজের জন্য লজ্জাজনক। সমাজে যতদিন সন্তানের দায়িত্বহীনতা আর মানুষের প্রতি অবহেলা থাকবে, ততদিন অন্ধ মাবুদের মতো মানুষেরা অন্ধকারেই পথ খুঁজে বেড়াবে।

ছবি

দশমিনায় দেশীয় প্রজাতির কামরাঙ্গা শিম বিলুপ্তির পথে

ছবি

মীরসরাইয়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতি পালন

ছবি

সবকিছু থেমে গেছে আমাদের জীবনে প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে কমলার

ছবি

ভিনদেশি বরই চাষে ভাগ্যের চাকা ঘুরল গিয়াসের

ছবি

সৈয়দপুরে লোকসানের মুখে হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারীরা

ছবি

ঈশ্বরদীতে ৮ কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় সেই নারী গ্রেপ্তার

ছবি

মোরেলগঞ্জে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে র‌্যালি

ছবি

রায়গঞ্জে উন্নতজাতের ক্রসব্রীড বকনাহ উপকরণ বিতরণ

ছবি

শিবগঞ্জে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতি

ছবি

নীলফামারী-রংপুর রুটে বাস চলাচল শুরু

ছবি

পলাশে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি।

গজারিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ৪ বসতঘর ভস্মীভূত

ছবি

হাটহাজারীতে ইটভাটায় অভিযান গুঁড়িয়ে দেয়া হলো কিলন-চিমনি

চাটখিলে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ৩ স্কুল ছাত্রের মৃত্যু

মহেশপুরে ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার, ৪ বাংলাদেশি আটক

মোহনগঞ্জে পিঠার ব্যবসা জমজমাট

ছবি

চার মাসে ভারত থেকে এলো ১৮ হাজার মেট্রিক টন চাল

ছবি

সিদ্ধিরগঞ্জে পাঁচ মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা

ছবি

ভালুকায় খেজুর গাছ কাটায় ব্যস্ত গাছিরা

ছবি

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় রূপগঞ্জের মহিউদ্দিন নিহত

ছবি

সলঙ্গায় গৃহবধূ লাবনী হত্যার রহস্য উন্মোচন

ছবি

সিরাজগঞ্জে নারী ইউপি সদস্য হত্যার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

মানিকগঞ্জে কবরস্থান থেকে পাঁচটি কঙ্কাল চুরি

ছবি

পূর্বধলায় শিক্ষকদের কর্মবিরতি, বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন

ছবি

নাগেশ্বরীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করলেন এসিল্যান্ড

পদ্মা থেকে রাতের আঁধারে বালু লুটের অভিযোগ

ছবি

মহাদেবপুরে বণিক সমিতির দাপট নারী উদ্যোক্তার দোকানে তালা

ছবি

পীরগঞ্জের করতোয়া নদীর জয়ন্তীপুর ঘাটে সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন নিয়ে সংশয়

ছবি

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় লাবনী হত্যা-চাঞ্চল্যকর রহস্যউদ্ঘাটন

ছবি

আইনজিবীর সদস্য পদ স্থগিত মোহরারের লাইসেন্স বাতিল

ছবি

শীতের আগমনে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

ছবি

শ্রীপুরে অগ্নিকাণ্ডে অটোরিকশা গ্যারেজসহ ১৫টি অটো পুড়ে ছাই

ছবি

লালপুরে ট্রাকচাপায় শিশুর করুণ মৃত্যু

ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক: বিভাজনের গ্রিল ভেঙে মহাসড়ক পারাপার

ছবি

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ৪ মাসে পাসপোর্টধারী যাতায়াত কমেছে ৪ লাখ ২ হাজার

ছবি

দামুড়হুদায় পুঁইশাকের মেঁচুড়ি চাষে চমক ফেলেছে আব্দুল হাকিম

tab

আত্মসম্মান তাকে আজও ধরে রেখেছে নিজের কাজে, নিজের উপার্জনে

প্রতিনিধি, হিলি (দিনাজপুর)

বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫

মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শক্তি মনোবল, যা হার মানায় শারীরিক অক্ষমতাকেও। সেই সত্যের জীবন্ত উদাহরণ দিনাজপুরের হিলি পৌরসভার ছোট ডাঙ্গাপাড়ার অন্ধ আব্দুল মাবুদ। দু’ চোখের দৃষ্টি হারালেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর আত্মসম্মান তাকে আজও ধরে রেখেছে নিজের কাজে, নিজের উপার্জনে। ৬৫ বছরের আব্দুল মাবুদ জন্ম থেকেই কম দেখতেন, এখন পুরোপুরি অন্ধ। স্ত্রীকে নিয়ে তাদের ছোট সংসার। ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে নিজেরা না খেয়ে কষ্ট করে পড়ালেখা করিয়েছেন। বিয়ে, শাদি সব দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ আজ সেই সন্তানই তাদের খোঁজ রাখে না। নেই কোনো দায়িত্ববোধ, নেই কোনো শ্রদ্ধা। সন্তান থাকা সত্ত্বেও বাবা, মাকে অসহায়ভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয়। এ যেন শুধু এক পরিবারের নয়, সমাজেরও গভীর ব্যর্থতা।

প্রতিদিন সকাল হলেই কাঁধে বাহক ঝুলিয়ে ৩০০-৪০০ টাকার বাদাম, বুট, কটকটি আর মিঠাই নিয়ে রাস্তায় বের হন তিনি। হিলি পৌর শহরের মাঠপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, চারমাথা, মহিলা কলেজ, চুড়িপট্টি, এসব এলাকায় ভাঙরির বিনিময়ে বিক্রি করেন খাবার। মানুষের দয়া নয়, নিজের পরিশ্রমেই সংসার চালান তিনি। বলা হয়, অন্ধ মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় থাকে। মাবুদের ক্ষেত্রেও তাই। চোখে দেখতে না পেলেও মনের চোখ দিয়ে পথ চিনে নেন। কোথাও ভুল হলে আশপাশের মানুষকে অনুরোধ করে পথ জেনে নেন। মানুষও তাকে সাহায্য করে।

প্রায় প্রতিদিন দুপুরে হাকিমপুর থানার মসজিদে নামাজ আদায় করতে দেখা যায় তাকে। নামাজের পর মসজিদের বারান্দায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। এখানেই তাকে চিনেছেন অনেক মানবিক পুলিশ সদস্য, যারা প্রয়োজন হলে পাশে দাঁড়ান। সাউফুল ইসলাম, রাসেদুল ইসলাম, এনামুলসহ এলাকার কয়েকজন বলেন, প্রায়ই দেখি দু’ জনকে বস্তা নিয়ে হাঁটতে। খুব কষ্ট লাগে। ছেলেমেয়ে থাকলে বাবা, মাকে এই বয়সে এভাবে ঘুরতে হয় কেন? তবু তারা কারও কাছে হাত পাতেন না। নিজেরা কষ্ট করে রোজগার করেন। মাবুদ চোখে দেখতে পান না, কিন্তু মনের চোখে পথ চলেন। মানুষ ছেলেমেয়েদের কতো আশা নিয়ে মানুষ করে। আমরা অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু আমাদের কপালে কষ্টই লেখা। তাই এই বয়সেও স্বামীর সঙ্গে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন অন্ধ মাবুদের স্ত্রী।

অন্ধ আব্দুল মাবুদ বলেন, ছেলেটারে মানুষ করতে পারিনাই। নিজেরা না খাইয়া তারে খাইয়াছি। লেখাপড়া, বিয়া সব দিছি। এখন সে আমাদের চেনে না। খোঁজ নেয় না। কথা পর্যন্ত কয় না। কিন্তু বাঁচতে তো হইবো। তাই চোখে দেখি না তয় ফেরি করি, গ্রামে গ্রামে ঘুরি। যেটুকু কামাই হয় তাই দিয়া কোনো রকম চলে। কষ্ট আছে, কিন্তু শান্তি আছে, কারো কাছে হাত পাতি না। হাকিমপুর (হিলি) থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, প্রায়ই দেখি তিনি থানা মসজিদে নামাজ আদায় করেন, পরে বারান্দায় বিশ্রাম নেন। একদিন তার জীবনের গল্প শুনে সত্যিই স্তব্ধ হয়ে যাই। অর্থের অভাবের চেয়েও বড় অভাব হচ্ছে সম্মান, ভালোবাসা ও যত্নের অভাব। যা এই মানুষটির জীবনে নেই। আমরা তাকে সাহায্য করেছি এবং যতটা পারি পাশে থাকবো। সমাজের সবাইকেই এমন মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

সচ্ছল সন্তান থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ বাবা, মাকে এভাবে দিনের পর দিন সংগ্রাম করতে দেখা। এ শুধু ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়, পুরো সমাজের জন্য লজ্জাজনক। সমাজে যতদিন সন্তানের দায়িত্বহীনতা আর মানুষের প্রতি অবহেলা থাকবে, ততদিন অন্ধ মাবুদের মতো মানুষেরা অন্ধকারেই পথ খুঁজে বেড়াবে।

back to top