ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ২ টি পৌরসভা ও ৭ টি ইউনিয়নে নারীদের দুবাই ও সৌদি আরবে পাঠানোর নামে একাধিক দালাল চক্র রমরমা ব্যবসা করছে। পাচারের শিকার হয়ে অনেকেই হয়ে যাচ্ছেন স্থায়ী যৌন কর্মী, আবার বহু নারীর জীবনে ভয়ানক দুর্ভোগ নেমে এসেছে। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকেই ফিরে আসছেন দেশে। তবুও বন্ধ হচ্ছেনা নারী পাচার।
বিভিন্ন সুত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলায় কয়েকটি নারী পাচারকারী সিন্ডিকেট রয়েছে ধরা ছোয়ার বাহিরে। প্রতিদিনই কোন না কোন নারীকে মোটা অংকের টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে দুবাই, সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কার্যক্রম চালাচ্ছেন চক্রটি। নারী কর্মীরা সেখানে প্রতিনিয়ত যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। নির্যাতিতরা নানা কারণে তা প্রকাশ করেন না, তাদের সঙ্গে দাসের মতো আচরণ করার অভিযোগও উঠে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে চনপাড়া পূণর্বাসন কেন্দ্র, পূর্বগ্রাম, চনপাড়া গ্রাম, পশ্চিমগাঁও, গোলাকান্দাইল, সাওঘাট, ভুলতা, মাসুমাবাদ, মুড়াপাড়া, মাছিমপুর, ভোলাবো, কাঞ্চন, দাউদপুর, পিতলগঞ্জ, আতলাপুর, হাটাবো, বরপা, বরাবোসহ কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় নারী পাচারকারী দালালরা ফের শুরু করেছেন তাদের অপতৎপরতা। নারী পাচারকারী চক্রটি বেকার নারীদের সোনালী স্বপ্ন এবং মোটা অংকের টাকা আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরবে পাঠানোর নামে প্রতারনা করে আসছেন। তারা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে নারীদের পাঠান দুবাই ও সৌদি আরব। সৌদি আরবে যারা রয়েছেন তাদের সাথে পরার্মশ করে বয়স যতো দেওয়া প্রয়োজন তা দিয়ে তৈরী করছেন পাসপোর্ট। এভাবে সৌদি আরব গিয়ে নানা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন গৃহবধুসহ নারীরা। অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, নারী পাচারকারীরা বেশ কয়েকটি অভিনব কৌশল নিয়েছে। এর মধ্যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নারী পাচারকারীরা টার্গেট করছে কলেজের ছাত্রীদের। উপজেলার চনপাড়া পূণর্বাসন কেন্দ্রের কলেজ ছাত্রীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে বেশি পাচার করা হচ্ছে। প্রথমে পাচারকারীরা কোনো এক ছাত্রীকে টার্গেট করে। পরে তাদের নিয়োগকৃত তরুণ বা যুবকেরা সেই টার্গেটের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ছাত্রীর কথিত প্রেমিক এ সময় তার পেছনে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে। গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে তারা টার্গেটকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে আনে। পরে পাচারকারী মূল চক্রের হাতে তুলে দেয়।
এনজিও কর্মকর্তারা বলছেন, ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণত দরিদ্র-অসহায় পরিবারের সহজ-সরল কিশোরী, তরুণী-গৃহবধূদের পাচার করা হয়। তবে সম্প্রতি প্রেমের ফাঁদে ফেলে বা নানা কৌশলে নারী পাচারের ঘটনা বেড়ে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কিছু সংখ্যক নারী উদ্ধারসহ পাচারকারী সদস্যরা ধরা পড়লেও বেশীর ভাগ চলে যাচ্ছে বিদেশের আদম পাচার চক্রের হাতে। পাচারকারী সদস্যরা ভাল চাকরী দেওয়ার লোভ দেখিয়ে দুবাই, সৌদি আরবসহ অন্য কোন দেশে নিয়ে গিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বিক্রয় করে দিচ্ছে। কেহ যদি পতিতাবৃত্তিতে যেতে না চায় তাদেরকে জোর করে পতিতাবৃত্তিতে বিক্রয় করে দেওয়া হচ্ছে। পতিতাবৃত্তিতে রাজি না হলে নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন ও অত্যাচার। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, নারী পাচারের বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রূপগঞ্জে নারী পাচারকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। ইতিমধ্যে একাধিক নারী পাচারকারী চক্রকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, সচেতনতাই পারে নারী ও শিশু পাচার বন্ধ করতে। এ জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে গণমাধ্যমকে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, নারী ও শিশু পাচার একটি জঘন্য অপরাধ এবং পাচারের ফলে নারী ও শিশুরা চরম নির্যাতনের শিকার হয়। আর পাচার হওয়া নারীরা গৃহপরিচালিকা ও যৌন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই মানব পাচার রোধে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ২ টি পৌরসভা ও ৭ টি ইউনিয়নে নারীদের দুবাই ও সৌদি আরবে পাঠানোর নামে একাধিক দালাল চক্র রমরমা ব্যবসা করছে। পাচারের শিকার হয়ে অনেকেই হয়ে যাচ্ছেন স্থায়ী যৌন কর্মী, আবার বহু নারীর জীবনে ভয়ানক দুর্ভোগ নেমে এসেছে। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকেই ফিরে আসছেন দেশে। তবুও বন্ধ হচ্ছেনা নারী পাচার।
বিভিন্ন সুত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলায় কয়েকটি নারী পাচারকারী সিন্ডিকেট রয়েছে ধরা ছোয়ার বাহিরে। প্রতিদিনই কোন না কোন নারীকে মোটা অংকের টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে দুবাই, সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কার্যক্রম চালাচ্ছেন চক্রটি। নারী কর্মীরা সেখানে প্রতিনিয়ত যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। নির্যাতিতরা নানা কারণে তা প্রকাশ করেন না, তাদের সঙ্গে দাসের মতো আচরণ করার অভিযোগও উঠে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে চনপাড়া পূণর্বাসন কেন্দ্র, পূর্বগ্রাম, চনপাড়া গ্রাম, পশ্চিমগাঁও, গোলাকান্দাইল, সাওঘাট, ভুলতা, মাসুমাবাদ, মুড়াপাড়া, মাছিমপুর, ভোলাবো, কাঞ্চন, দাউদপুর, পিতলগঞ্জ, আতলাপুর, হাটাবো, বরপা, বরাবোসহ কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় নারী পাচারকারী দালালরা ফের শুরু করেছেন তাদের অপতৎপরতা। নারী পাচারকারী চক্রটি বেকার নারীদের সোনালী স্বপ্ন এবং মোটা অংকের টাকা আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরবে পাঠানোর নামে প্রতারনা করে আসছেন। তারা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে নারীদের পাঠান দুবাই ও সৌদি আরব। সৌদি আরবে যারা রয়েছেন তাদের সাথে পরার্মশ করে বয়স যতো দেওয়া প্রয়োজন তা দিয়ে তৈরী করছেন পাসপোর্ট। এভাবে সৌদি আরব গিয়ে নানা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন গৃহবধুসহ নারীরা। অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, নারী পাচারকারীরা বেশ কয়েকটি অভিনব কৌশল নিয়েছে। এর মধ্যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নারী পাচারকারীরা টার্গেট করছে কলেজের ছাত্রীদের। উপজেলার চনপাড়া পূণর্বাসন কেন্দ্রের কলেজ ছাত্রীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে বেশি পাচার করা হচ্ছে। প্রথমে পাচারকারীরা কোনো এক ছাত্রীকে টার্গেট করে। পরে তাদের নিয়োগকৃত তরুণ বা যুবকেরা সেই টার্গেটের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ছাত্রীর কথিত প্রেমিক এ সময় তার পেছনে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে। গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে তারা টার্গেটকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে আনে। পরে পাচারকারী মূল চক্রের হাতে তুলে দেয়।
এনজিও কর্মকর্তারা বলছেন, ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণত দরিদ্র-অসহায় পরিবারের সহজ-সরল কিশোরী, তরুণী-গৃহবধূদের পাচার করা হয়। তবে সম্প্রতি প্রেমের ফাঁদে ফেলে বা নানা কৌশলে নারী পাচারের ঘটনা বেড়ে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কিছু সংখ্যক নারী উদ্ধারসহ পাচারকারী সদস্যরা ধরা পড়লেও বেশীর ভাগ চলে যাচ্ছে বিদেশের আদম পাচার চক্রের হাতে। পাচারকারী সদস্যরা ভাল চাকরী দেওয়ার লোভ দেখিয়ে দুবাই, সৌদি আরবসহ অন্য কোন দেশে নিয়ে গিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বিক্রয় করে দিচ্ছে। কেহ যদি পতিতাবৃত্তিতে যেতে না চায় তাদেরকে জোর করে পতিতাবৃত্তিতে বিক্রয় করে দেওয়া হচ্ছে। পতিতাবৃত্তিতে রাজি না হলে নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন ও অত্যাচার। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, নারী পাচারের বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রূপগঞ্জে নারী পাচারকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। ইতিমধ্যে একাধিক নারী পাচারকারী চক্রকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, সচেতনতাই পারে নারী ও শিশু পাচার বন্ধ করতে। এ জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে গণমাধ্যমকে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, নারী ও শিশু পাচার একটি জঘন্য অপরাধ এবং পাচারের ফলে নারী ও শিশুরা চরম নির্যাতনের শিকার হয়। আর পাচার হওয়া নারীরা গৃহপরিচালিকা ও যৌন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই মানব পাচার রোধে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।