দশমিনা (পটুয়াখালী) : উপজেলা থেকে ঐতিহ্যবাহী কৃষকদের নবান্ন উৎসব আধুনিকতার স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছে -সংবাদ
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন থেকে ঐতিহ্যবাহী কৃষকদের নবান্ন উৎসব আধুনিকতার স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ে শীত মৌসুম শুরুর পর থেকেই গ্রাম বাংলার প্রত্যেকটি গৃহস্থের ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব ছড়িয়ে পড়তো। ফসলি জমির নতুন ধান বাড়িতে নিয়ে আসার খুশিতে উঠানে পিঠা-পায়েশ ও অতিথি আপ্যায়ন করে পরিবারের সবার মিলন মেলায় গ্রামীন জীবন মিলন মেলায় মুখর হয়ে উঠতো। বর্তমানে কালের বিবর্তন ও আধুনিকতার স্পর্শে সেই প্রান চাঞ্চল্যময় নবান্ন উৎসব আজ নীরবে হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষের আধুনিকতা,পরিবর্তিত জীবন, কর্ম ব্যস্ততা আর আধুনিক প্রযুক্তির দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমিন পাঁকা ধানের প্রানের নবান্ন উৎসব।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে দুই-এক দশক আগেও নতুন ধানের নবান্ন উৎসব ছিল গ্রামীন সংস্কৃতির মহোৎসব। সতুন ধানের সুগন্ধে বাড়ির উঠান ভরে যেত। সন্ধ্যার পারেই গ্রাম জুড়ে কৃষকের আনন্ন ছড়িয়ে পড়তো। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দ ভাগ করে নিতে ঘরে ঘরে অতিথি আ্যায়ন ছিল স্বাভাবিক দৃশ্য। এখন সেই আনন্দ আর আগের মতো নেই। উপজেলার বিস্তীর্ন মাঠ জুড়ে এই বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও নবান্ন উৎসব চোখে পড়ছে না। কৃষকেরা মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত থাকলেও ঘরে ঘরে নতুন ধান নিয়ে আসার আনন্দ কিংবা উৎসব এখন আর আগের মতো নেই। কৃষকরা সারা দিন মাঠে পরিশ্রম শেষে উৎসব আয়োজন করার মতো সময় তারা পায় না। বর্তমান সময়ে আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবের কারনে কৃষকদের মধ্যেও কর্মব্যস্ততার ধরন পরিবর্তন হয়ে গেছে। কৃষক পরিবারে বাড়তি কাজের ঝামেলায় পিঠা-পুলি তৈরি করতে পারছে না। উপজেলার হাট-বাজারে প্যাকেটজাত চাল,প্রক্রিয়াজাত খাবার থাকায় কৃষকরা বাড়িতে উৎসব করছে না। এছাড়া আর্থিক দৈন্যতার জন্য অনেক কৃষক পরিবার উৎসবের পরিবর্তে বাড়িতে ছোট-খাট অনুষ্ঠান করছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে নবান্নের ঐতিহ্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের গ্রাম বাংলায় কিছু কিছু কৃষক পরিবার পুরানো ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কৃষকরা বাড়িতে নতুন ধান নিয়ে আসলে বসতঘরের দেয়ালে লেপন,গোলাঘর পরিস্কার চালের খুদ ও গুড় দিয়ে পিঠা পায়েস তৈরি করে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ভালবাসার নবান্ন উৎসবের ধারা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আলম হাওলাদার জানায়,৮০-৯০ দশকের দিকে গ্রামগঞ্জে ধান কাঁটা মৌসুমে মাড়াইয়ের পরে নতুন চাল দিয়ে পিঠা-পায়েস তৈরি করে নবান্ন উৎসব করা হতো। এখন এই উৎসবটি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। ধান কাটার ব্যস্ততার কারন এবং সময়ের অভাবে এখন আর নবান্ন উৎসব আগের মতো উদযাপন করা হয় না। ফসল ভরা মাঠ থাকলেও গ্রামের কৃষকের মাঝে আনন্দ উৎসব করার আগ্রহ নেই। নবান্ন উৎসব গ্রামীন জীবনের আনন্দ,ভালবাসা,সর্ম্পক আর ঐতিহ্যের প্রতীক যা কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.জাফর আহমেদ বলেন,যান্ত্রিকতা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলা থেকে নবান্ন উৎসব আজ হারিয়ে গেছে। নতুন প্রজন্ম এই উৎসবের কথা শুনলেও দেখতে পারছে না। উপজেলার গ্রাম বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী কৃষকদের নবান্ন উৎসব আধুনিকতার স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে গ্রাম বাংলার পুরানো এই আনন্দ উৎসব ফিরিয়ে আনা হলে কৃষক ও সাধারন মানুষের মধ্যে সামাজিক বন্ধন,সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পূর্নজাগরনের পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক উন্নয়ন গতিশীল হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
দশমিনা (পটুয়াখালী) : উপজেলা থেকে ঐতিহ্যবাহী কৃষকদের নবান্ন উৎসব আধুনিকতার স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছে -সংবাদ
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন থেকে ঐতিহ্যবাহী কৃষকদের নবান্ন উৎসব আধুনিকতার স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ে শীত মৌসুম শুরুর পর থেকেই গ্রাম বাংলার প্রত্যেকটি গৃহস্থের ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব ছড়িয়ে পড়তো। ফসলি জমির নতুন ধান বাড়িতে নিয়ে আসার খুশিতে উঠানে পিঠা-পায়েশ ও অতিথি আপ্যায়ন করে পরিবারের সবার মিলন মেলায় গ্রামীন জীবন মিলন মেলায় মুখর হয়ে উঠতো। বর্তমানে কালের বিবর্তন ও আধুনিকতার স্পর্শে সেই প্রান চাঞ্চল্যময় নবান্ন উৎসব আজ নীরবে হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষের আধুনিকতা,পরিবর্তিত জীবন, কর্ম ব্যস্ততা আর আধুনিক প্রযুক্তির দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমিন পাঁকা ধানের প্রানের নবান্ন উৎসব।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে দুই-এক দশক আগেও নতুন ধানের নবান্ন উৎসব ছিল গ্রামীন সংস্কৃতির মহোৎসব। সতুন ধানের সুগন্ধে বাড়ির উঠান ভরে যেত। সন্ধ্যার পারেই গ্রাম জুড়ে কৃষকের আনন্ন ছড়িয়ে পড়তো। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দ ভাগ করে নিতে ঘরে ঘরে অতিথি আ্যায়ন ছিল স্বাভাবিক দৃশ্য। এখন সেই আনন্দ আর আগের মতো নেই। উপজেলার বিস্তীর্ন মাঠ জুড়ে এই বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও নবান্ন উৎসব চোখে পড়ছে না। কৃষকেরা মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত থাকলেও ঘরে ঘরে নতুন ধান নিয়ে আসার আনন্দ কিংবা উৎসব এখন আর আগের মতো নেই। কৃষকরা সারা দিন মাঠে পরিশ্রম শেষে উৎসব আয়োজন করার মতো সময় তারা পায় না। বর্তমান সময়ে আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবের কারনে কৃষকদের মধ্যেও কর্মব্যস্ততার ধরন পরিবর্তন হয়ে গেছে। কৃষক পরিবারে বাড়তি কাজের ঝামেলায় পিঠা-পুলি তৈরি করতে পারছে না। উপজেলার হাট-বাজারে প্যাকেটজাত চাল,প্রক্রিয়াজাত খাবার থাকায় কৃষকরা বাড়িতে উৎসব করছে না। এছাড়া আর্থিক দৈন্যতার জন্য অনেক কৃষক পরিবার উৎসবের পরিবর্তে বাড়িতে ছোট-খাট অনুষ্ঠান করছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে নবান্নের ঐতিহ্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের গ্রাম বাংলায় কিছু কিছু কৃষক পরিবার পুরানো ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কৃষকরা বাড়িতে নতুন ধান নিয়ে আসলে বসতঘরের দেয়ালে লেপন,গোলাঘর পরিস্কার চালের খুদ ও গুড় দিয়ে পিঠা পায়েস তৈরি করে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ভালবাসার নবান্ন উৎসবের ধারা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আলম হাওলাদার জানায়,৮০-৯০ দশকের দিকে গ্রামগঞ্জে ধান কাঁটা মৌসুমে মাড়াইয়ের পরে নতুন চাল দিয়ে পিঠা-পায়েস তৈরি করে নবান্ন উৎসব করা হতো। এখন এই উৎসবটি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। ধান কাটার ব্যস্ততার কারন এবং সময়ের অভাবে এখন আর নবান্ন উৎসব আগের মতো উদযাপন করা হয় না। ফসল ভরা মাঠ থাকলেও গ্রামের কৃষকের মাঝে আনন্দ উৎসব করার আগ্রহ নেই। নবান্ন উৎসব গ্রামীন জীবনের আনন্দ,ভালবাসা,সর্ম্পক আর ঐতিহ্যের প্রতীক যা কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.জাফর আহমেদ বলেন,যান্ত্রিকতা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলা থেকে নবান্ন উৎসব আজ হারিয়ে গেছে। নতুন প্রজন্ম এই উৎসবের কথা শুনলেও দেখতে পারছে না। উপজেলার গ্রাম বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী কৃষকদের নবান্ন উৎসব আধুনিকতার স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে গ্রাম বাংলার পুরানো এই আনন্দ উৎসব ফিরিয়ে আনা হলে কৃষক ও সাধারন মানুষের মধ্যে সামাজিক বন্ধন,সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পূর্নজাগরনের পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক উন্নয়ন গতিশীল হবে।