করোনাকালে স্বেচ্ছায় কৌশলে স্বদেশে ফিরছে রোহিঙ্গারা। গত ২১ দিনে ৫০ টিরও বেশি পরিবার ক্যাম্প ছেড়েছে। ফেরত গিয়ে তারা বাপ-দাদার ভিটেবাড়িতে বসবাস করছে। সেখানে তারা ভালো আছে। আরও রোহিঙ্গা পরিবার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে চলে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ক্যাম্পের অবস্থানরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয়ে জানা গেছে।
তারা বলছে, মিয়ানমার থেকে অনেক পরিবার বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে আগমন করে। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করে আসছিল। বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপরে কোনো অত্যাচার নির্যাতন করছে না ভেবে অসংখ্য রোহিঙ্গা পরিবার ইতোমধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে তাদের নিজস্ব বসতভিটা মায়ানমারে ফেরত যাচ্ছে। যদিও ক্যাম্পগুলোতে কাঁটাতারের বেড়াসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নজরধারিতে রয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা কিভাবে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে মিয়ানমারে ফিরছে; সে বিষয়ে কোনো রোহিঙ্গা মুখ খুলছে না।
অনুসন্ধানে পাওয়া সূত্র মতে, গত ২১ দিনে প্রায় ৫০ টিরও বেশি রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার চলে গেছে। তার মধ্যে, গত ১৬ মে রাত ১০টার দিকে ক্যাম্প-১৬ (শফিউল্লাহ কাটা) ব্লক-এ-৪-এ, ঘর-৫৮৪ এর রোহিঙ্গা মো. আয়ুব (৩৬) তার পিতা হাফিজুর রহমানসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে নিয়ে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে মায়ানমার চলে যায়।
১১ মে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ক্যাম্প-১৪ (হাকিম পাড়া) ব্লক-বি-১ এ রোহিঙ্গা অছিউল্লাহ (৫০) (ঘর-৩৯৬ এফসিএন-২১১৩৮০) পিতা-হোসেন এবং আয়েশা বেগম (৩৫) পিতা অছিউল্লাহ ব্লক-বি (ঘর-৩৯৭ এফসিএন-২১১৩৭৯) পরিবারের ৮ সদস্য ক্যাম্প ছেড়ে যায়। গত ৯ মে দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্প-৯, ব্লক-সি-৯, এফসিএন-১১৩৮৩০ এর ইলিয়াছ (৪২) পিতা শরীফ হোসেনসহ পরিবারের ৮ সদস্য, আবদুর রহমান (২৫) পিতা কালামিয়াসহ ৪ জন মিয়ানমার চলে যায়।
পালংখালীস্থ রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প-১৬ (শফিউল্লাহ কাটা)তে বসবাসরত কামাল মোস্তফা (৪০) (ব্লক-এ/১ ঘর-৯৭৫, এফসিএন-২৪৬৭০৯) পরিবারের ৯ সদস্যসহ গত ১ মে মিয়ানমার চলে যায়। বালুখালী-১ রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প-৯, ব্লক-সি-১৩ এ বসবাসরত আবদুর রহমান (৩৫), পিতা কালা মিয়া পরিবারের ৫ সদস্যসহ মিয়ানমার চলে যায়।
তার আগে ২৪ মার্চ রাতে ক্যাম্প- ১৬ শফিউল্লাহ কাটার সাবেক সি-ব্লকের হেডমাঝি নুরুল কবির ক্যাম্প ছেড়ে মিয়ানমার পালিয়েছে। এছাড়া ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া আরও কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবারের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা হলো, আয়শা খাতুন (৩৬), ছেলে মোস্তফা শেখ (১৪), মোস্তফা আলিমা (১২), মোস্তফা সৈয়দুল (৮), রাজ্জাক (৫), মোস্তফা সালেক (৪), আব্দুল্লাহ শেখ (২), শহিদুল মোস্তফা (৮ মাস)।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য আমাদের কাছে জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে দেখব।
এদিকে প্রতিনিয়ত অশান্ত হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। ক্যাম্পে মাদক বিক্রি এবং মাদকের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়েও ঘটেছে মারামারি খুনাখুনি। তাদের এসব কর্মকান্ড প্রতিরোধ, নজরদারি এবং রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানা উদ্যোগ হাতে নিয়ে সরকার ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে থেকে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধাপে প্রায় ১৪ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উপরন্তু রোহিঙ্গাদের কারণে প্রতিনিয়ত স্থানীয়ভাবে নানা সঙ্কট ও সমস্যা জটিল আকার ধারণ করছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখের বেশি।
২০১৭ সালের আগষ্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় সাড়ে ১০ লাখ রোহিঙ্গাদের গেল সাড়ে ৩ বছর ধরে আশ্রয় দিয়ে এক অনন্য উদারণ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে বাংলাদেশের এ মানবিকতা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ সাড়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে যে উদারতার পরিচয় দিয়েছে সেটা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ করে কক্সবাজারবাসীদের জন্য অনেক গর্বের বিষয়।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের এই উদারতার ভূয়সী প্রশংসা হলেও যে দেশের কারনে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে সেই মিয়ানমারের উপর গেল সাড়ে ৩ বছরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তেমন একটা চাপ সৃষ্টি হয়নি।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু। বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার একর বনভূমি ব্যবহার করছে আশ্রিত এ রোহিঙ্গারা।
শনিবার, ০৫ জুন ২০২১
করোনাকালে স্বেচ্ছায় কৌশলে স্বদেশে ফিরছে রোহিঙ্গারা। গত ২১ দিনে ৫০ টিরও বেশি পরিবার ক্যাম্প ছেড়েছে। ফেরত গিয়ে তারা বাপ-দাদার ভিটেবাড়িতে বসবাস করছে। সেখানে তারা ভালো আছে। আরও রোহিঙ্গা পরিবার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে চলে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ক্যাম্পের অবস্থানরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয়ে জানা গেছে।
তারা বলছে, মিয়ানমার থেকে অনেক পরিবার বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে আগমন করে। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করে আসছিল। বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপরে কোনো অত্যাচার নির্যাতন করছে না ভেবে অসংখ্য রোহিঙ্গা পরিবার ইতোমধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে তাদের নিজস্ব বসতভিটা মায়ানমারে ফেরত যাচ্ছে। যদিও ক্যাম্পগুলোতে কাঁটাতারের বেড়াসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নজরধারিতে রয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা কিভাবে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে মিয়ানমারে ফিরছে; সে বিষয়ে কোনো রোহিঙ্গা মুখ খুলছে না।
অনুসন্ধানে পাওয়া সূত্র মতে, গত ২১ দিনে প্রায় ৫০ টিরও বেশি রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার চলে গেছে। তার মধ্যে, গত ১৬ মে রাত ১০টার দিকে ক্যাম্প-১৬ (শফিউল্লাহ কাটা) ব্লক-এ-৪-এ, ঘর-৫৮৪ এর রোহিঙ্গা মো. আয়ুব (৩৬) তার পিতা হাফিজুর রহমানসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে নিয়ে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে মায়ানমার চলে যায়।
১১ মে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ক্যাম্প-১৪ (হাকিম পাড়া) ব্লক-বি-১ এ রোহিঙ্গা অছিউল্লাহ (৫০) (ঘর-৩৯৬ এফসিএন-২১১৩৮০) পিতা-হোসেন এবং আয়েশা বেগম (৩৫) পিতা অছিউল্লাহ ব্লক-বি (ঘর-৩৯৭ এফসিএন-২১১৩৭৯) পরিবারের ৮ সদস্য ক্যাম্প ছেড়ে যায়। গত ৯ মে দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্প-৯, ব্লক-সি-৯, এফসিএন-১১৩৮৩০ এর ইলিয়াছ (৪২) পিতা শরীফ হোসেনসহ পরিবারের ৮ সদস্য, আবদুর রহমান (২৫) পিতা কালামিয়াসহ ৪ জন মিয়ানমার চলে যায়।
পালংখালীস্থ রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প-১৬ (শফিউল্লাহ কাটা)তে বসবাসরত কামাল মোস্তফা (৪০) (ব্লক-এ/১ ঘর-৯৭৫, এফসিএন-২৪৬৭০৯) পরিবারের ৯ সদস্যসহ গত ১ মে মিয়ানমার চলে যায়। বালুখালী-১ রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প-৯, ব্লক-সি-১৩ এ বসবাসরত আবদুর রহমান (৩৫), পিতা কালা মিয়া পরিবারের ৫ সদস্যসহ মিয়ানমার চলে যায়।
তার আগে ২৪ মার্চ রাতে ক্যাম্প- ১৬ শফিউল্লাহ কাটার সাবেক সি-ব্লকের হেডমাঝি নুরুল কবির ক্যাম্প ছেড়ে মিয়ানমার পালিয়েছে। এছাড়া ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া আরও কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবারের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা হলো, আয়শা খাতুন (৩৬), ছেলে মোস্তফা শেখ (১৪), মোস্তফা আলিমা (১২), মোস্তফা সৈয়দুল (৮), রাজ্জাক (৫), মোস্তফা সালেক (৪), আব্দুল্লাহ শেখ (২), শহিদুল মোস্তফা (৮ মাস)।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য আমাদের কাছে জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে দেখব।
এদিকে প্রতিনিয়ত অশান্ত হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। ক্যাম্পে মাদক বিক্রি এবং মাদকের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়েও ঘটেছে মারামারি খুনাখুনি। তাদের এসব কর্মকান্ড প্রতিরোধ, নজরদারি এবং রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানা উদ্যোগ হাতে নিয়ে সরকার ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে থেকে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধাপে প্রায় ১৪ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উপরন্তু রোহিঙ্গাদের কারণে প্রতিনিয়ত স্থানীয়ভাবে নানা সঙ্কট ও সমস্যা জটিল আকার ধারণ করছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখের বেশি।
২০১৭ সালের আগষ্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় সাড়ে ১০ লাখ রোহিঙ্গাদের গেল সাড়ে ৩ বছর ধরে আশ্রয় দিয়ে এক অনন্য উদারণ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে বাংলাদেশের এ মানবিকতা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ সাড়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে যে উদারতার পরিচয় দিয়েছে সেটা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ করে কক্সবাজারবাসীদের জন্য অনেক গর্বের বিষয়।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের এই উদারতার ভূয়সী প্রশংসা হলেও যে দেশের কারনে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে সেই মিয়ানমারের উপর গেল সাড়ে ৩ বছরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তেমন একটা চাপ সৃষ্টি হয়নি।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু। বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার একর বনভূমি ব্যবহার করছে আশ্রিত এ রোহিঙ্গারা।