alt

অবিরাম বৃষ্টি, তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসের শঙ্কা

প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি : রোববার, ২০ জুন ২০২১

খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি-বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলা পাহাড়ে থামছে না বৃষ্টি। কখনও ভারি, কখনও মাঝারি, আবার কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে বেড়েছে পাহাড়ধসের শঙ্কা। ফলে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পাহাড়ের বাসিন্দাদের। এদিকে টানা বর্ষণের ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোর দু’পাশে মাটি সরে ও পাহাড়ের মাটি পড়ে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে যেকোন সময় ধসে পড়তে পারে পাহাড়- এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। আবহাওয়া অফিস বলছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ু অব্যাহত থাকার কারণে এ বৃষ্টি চলমান থাকবে। পাহাড়ের পদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পাহাড়ধসের শঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ধসের ঘটনা ঘটছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ঘটতে পারে ভয়াবহ পাহাড়ধস। অথচ ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে মানুষ বসবাস করছে। শুধু খাগড়াছড়ি পৌর শহরে পাহাড়ের পাদদেশে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি পরিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। ভারি বর্ষণেও তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নয়। প্রশাসনের সতর্কতা বার্তাও তারা পরোয়া করে না।

জানা গেছে, একটানা বৃষ্টি হলে খাগড়াছড়ি জেলার সবুজবাগ, শালবাগান, কুমিল্লা টিলা, কলাবাগান, কদমতলীসহ শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে।

সরেজমিন সবুজবাগে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পাঁচটি পাহাড়ের আংশিক ধস হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘর ধসে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে। এখানকার বাসিন্দা আবদুল মোতালেব, রহুল আমিন ও সানজিদা খাতুন জানান, মাত্র বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অথচ এর মধ্যে পাহাড়ের মাটি ধসে গেছে।

আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে বাস করছি। বৃষ্টি হলে ভয়ে রাতে তাদের ঘুম আসে না। গত বছর এখানে পাহাড়ধস হলেও তা রোধে প্রশাসন কোন উদ্যোগই নেয়নি। তবে জানা গেছে, পাহাড়ধস রোধে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু সেগুলো মূলত সাময়িক। প্রশাসন স্থায়ী ও টেকসই কোন পরিকল্পনা নেয়নি। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। বরং প্রতিবছরই পাহাড়ধসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে বসতি গড়ে তুলেছেন।

কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এখানে আমরা বছরের পর বছর বসবাস করছি। অন্য কোথাও আমাদের থাকার জায়গা নেই। এখনকার ভূসম্পত্তি ছেড়ে অন্য কোথাও আমরা যেতেও চাই না। অবৈধ বসতি স্থাপন এবং অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণের কারণে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। অবৈধভাবে পাহাড় কাটা রোধে প্রশাসন নির্বিকার থাকে। এ কারণে ভূমিদস্যুরা পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে নিয়ম না মেনে সরকারিভাবে পাহাড় কাটা হয়। আবার পাহাড় রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বাণিজ্যিক কারণে নির্বিচারে গাছ কাটায় পাহাড় প্রাকৃতিকভাবে ধস প্রতিরোধের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। ফলে পাহাড়ধস ঠেকানো যাচ্ছে না।

স্থানীয়দের মতে, ৯টি উপজেলায় ২ বছরে দুই শতাধিক ন্যাড়া পাহাড়ের পরিণত হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষ পাহাড়কেন্দ্রিক বনজ ও জুম চাষের অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের কারণে পাহাড়কেন্দ্রিক মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। পাহাড়ের ওপর অনেক মানুষ জীবন ও জীবিকা নির্ভর করলেও সেই পাহাড়কে সাবাড় করে দিচ্ছে কেউ কেউ। এতে বিপন্ন হচ্ছে পাহাড়ের প্রাণ ও প্রকৃতি। খাগড়াছড়িতে পাহাড়, বন উজাড়, ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলনসহ নানা কারণে পরিবেশের বিপর্যয় হচ্ছে।

সরেজমিনে খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই বছরে খাগড়াছড়ি থেকে সাবাড় হয়েছে অন্তত ২শ’ পাহাড়। কোথাও আংশিক আবার কোথাও পুরো পাহাড়ই সাবাড় করে দিয়েছে পাহাড় খেকোরা।

এর মধ্যে কেবল মাটিরাঙা উপজেলাতেই কাটা হয়েছে শতাধিক পাহাড়। রাতের আঁধারে কাটা হয়েছে বেশিরভাগ পাহাড়। মাটিরাঙা উপজেলার গোমতি, তাইন্দং, তবলছড়ি, বেলছড়ি, খেদাছড়া, আদর্শ গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক পাহাড় কাটা হয়েছে। বাড়ি নির্মাণ, রাস্তা সংস্কার এবং ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য পাহাড় কাটছে একটি চক্র। দিনের আলোয় পাহাড় কাটার মহোৎসব চললেও প্রশাসন কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবেশ কর্মীরা। গত কয়েক বছর ধরে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধসে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি। বিনা বাধায় পাহাড় খেকোরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।

এছাড়া বেশিরভাগ পাহাড়ই কাটা হয়েছে অত্যন্ত খাড়াভাবে। এতে পাহাড়ধসের শঙ্কা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। একই অবস্থা খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায়। উপজেলা চোংড়াছড়িসহ খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের লাগায়ো বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা হয়েছে। মহালছড়ি উপজেলায় মহালছড়ি-চোংড়াছড়ি সড়কের শান্তিনগর এলাকায় খাড়া পাহাড় কেটে সাবাড় করে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় শত ফুট উচ্চতার খাড়া পাহাড়ের একটি বড় অংশ কেটে নেয়া হয়েছে। একইভাবে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে জেলার দীঘিনালা, রামগড়, পানছড়িতে।

এছাড়া গুইমারা উপজেলার শনখোলাপাড়া, মুসলিমপাড়া, আমলতলীপাড়া, চিংগুলীপাড়া, সিন্দুকছড়ি, তৈকর্মা, বড়পিলাক, জালিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কর্তন হয়েছে। মানিকছড়ি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাহাড় কেটে ঢালু করা হয়েছে হাজীপাড়া, মুসলিমপাড়া, মাস্টারপাড়া, রহমাননগর, ডাইনছড়ি, সেম্প্রপাড়া, কালাপানি, গাড়িঢানা, সাপমারা ও তিন টহরিতে।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান, প্রশাসনিকভাবে পাহাড় কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দেদার পাহাড় কাটা চলছে। পাহাড় কাটা রোধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ না থাকায় পাহাড় কাটার প্রবণতা বাড়ছে। আবার সরকারিভাবেও পাহাড় কাটা হচ্ছে। প্রতিবছর প্রাণহানি ঘটলেও পাহাড়ধস রোধে সরকারের কোন টেকসই ব্যবস্থা নেই।

খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, পৌর এলাকায় চারটি স্থানে পাহাড়ধসের ঝুঁকি রয়েছে। প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বসবাসকারীদের সতর্ক করা হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের পৌরসভা সার্বিক সহায়তা করবে। ভবিষ্যতে পৌর আবাসন এলাকায় তাদের পুনর্বাসন করা হবে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা মতিন জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সার্বিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, টানা বর্ষণ শুরু হলে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পৌর এলাকায় ২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সড়কে পাহাড়ধস হলে দ্রুত সময়ে তা সরানোর ব্যবস্থা গ্রহণে ও জানমালের নিরাপত্তায় সার্বিক প্রস্তুতি সভায় অবহিত করা হয়।

এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টি বেশি হলেই পাহাড়ধসের ঝুঁকি রয়েছে যেসব স্থানে সেখান থেকে মানুষকে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। যোগাযোগ সচল রাখার জন্য সড়ক বিভাগসহ সব বিভাগকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। এবারের বর্ষায় যাতে কোন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে সেদিকে নজর রাখতে হবে। এছাড়া দুর্যোগসংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে’।

এছাড়া সভায় ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর প্রস্তুতি হিসেবে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করা হয় বলে জানান তিনি।

অপরদিকে বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরিয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টরাও কাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরানো বেশিরভাগ সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ থেকে জানা গেছে, সদর উপজেলার কালাঘাটা, কাসেমপাড়া, ইসলামপুর, বনরূপা পাড়া, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়াপাড়া, কসাইপাড়া, লামা উপজেলার হরিণমারা, তেলুমিয়া পাড়া, ইসলামপুর, গজালিয়া, মুসলিমপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিড়ি, টিঅ্যান্ডটি এলাকা, সরই, রুপসীপাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, মনজয় পাড়া, দৌছড়ি, বাইশারী, রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়াসহ সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার। এ বছরও পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড়ে ওঠায় গত বছরের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে গেছে।

জেলা তথ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে তিনজন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পাঁচজন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুইজন, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৫ সালে লামায় চারজন, সিদ্দিকনগরে একজন এবং সদরের বনরূপা পাড়ায় দুইজন এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় সাতজন ও রুমা সড়কে ২৩ জুলাই পাঁচজন পাহাড়ধসে মারা গেছেন।

পাহাড়ের নিচে ঝুঁকিতে থাকা কালাঘাটার মো. আলী হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমি অনেক কষ্ট করে এ জায়গাটি কিনে পাহাড়ের জঙ্গল সামান্য ছাঁটাই করে ঘর তৈরি করেছি। প্রতি বছর বর্ষাতে আমি পরিবারকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে রাত যাপন করি। পাহাড় প্রতি বছরই কম বেশি ধসে পড়ে। আমাদের এখানে বড় ধরনের সমস্যা না হলেও এবারের টানা বর্ষণে আমি পরিবার নিয়ে ভয়ে আছি।

বান্দরবান পৌরসভার ইসলামপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ লেয়াকত আলী জানান, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে লাঙ্গিপাড়া-সিকদারপাড়া-ইসলামপুরের সড়কের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দু’পাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে, পাহাড়ের মাটি এসে পড়েছে রাস্তার উপর।

বান্দরবানের মৃত্তিকা কর্মকর্তা মাহাবুব আলম জানান, পাহাড়ের মাটিগুলো অনন্ত প্রকৃতির অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মাটির ওপরের অংশ ক্ষয়ে যায়। পানি মাটির গভীরে প্রবেশ করে ড্রেনের সৃষ্টি করে। এতে মাটির ভীত সরে যায়। ফলে পাহাড় ধসে পড়ে। এছাড়া পাহাড় কাটা, জুমচাষ, পাথর উত্তোলন, নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন ইত্যাদি কারণে পাহাড়ের মাটি দুর্বল হয়ে যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এক সময় মাটি ধসে পড়ে।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে। তাদের সরিয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টরাও কাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর রয়েছে প্রশাসন।

ছবি

আসন ফিরে পেতে বাগেরহাটে নির্বাচন অফিস ঘেরাও, উচ্চ আদালতে রিট

ছবি

মোরেলগঞ্জে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা, সফল উদ্যোক্তা বাশার

ছবি

আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪২৮ জন

ছবি

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সিলেট, শঙ্কা প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির

ছবি

নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাট বাসা থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী

নাইক্ষ্যংছড়িতে রাবার বাগানের গাছ থেকে শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বাড়ছে নদীর পানি, সিলেটে বন্যার আভাস

সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকের শরীর টিপে না দেয়ায় ছাত্রকে আটক রেখে নির্যাতন

ফ্যানে ঝুলছিলেন যুবক, খাটে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ, আর্থিক দুরাবস্থায় ছিল পরিবারটি

ছবি

বিরামপুরে কুকুরে কামড়ানো সগাভীর মাংস বিক্রির চেষ্টা

ছবি

রায়পুরায় ভিডব্লিউবি উপকার ভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ

ছবি

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নতুন ঘর পেলেন মোজাম্মেল-জহুরা দম্পতি

ছবি

আদমদীঘিতে তিন মাদক ব্যবসায়ি আটক

ছবি

রাঙাছড়া সেতু যেন মরণ ফাঁদ

ছবি

বাঁশবোঝাই ট্রাকে বাসের ধাক্কা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ৩

ছবি

উদ্বোধনের দিনই বিকল বেরোবি ভাড়া বাস

ছবি

কেন্দুয়া থেকে তিন নারীকে চীনে পাচারের চেষ্টা, আটক ২

ছবি

সারিয়াকান্দিতে বিনা মূল্যে গরু বিতরণ

ছবি

পূর্বধলায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা

ছবি

কেশবপুর-কলাগাছি সড়ক বেহাল, ঘটছে দুর্ঘটনা

ছবি

মধুপুরে লাল মাটিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের পেঁপে চাষে লাভবান কৃষক

ছবি

গোবিপ্রবি ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদককে দুই সেমিস্টার বহিষ্কার

ছবি

বর্ষা মৌসুমেও দেশীয় মাছের আকাল

ছবি

পদ্মার ভাঙনে চর ছাড়ছেন বাসিন্দারা মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার শঙ্কা

ছবি

নদী খননের মাটি মজুদ রাখা নিয়ে উত্তেজনা

ছবি

রংপুরে প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে প্রেজেনটেশনে শেখ মুজিব ও হাসিনার ছবি

ছবি

আড়াইহাজারে ছাত্রলীগ নেতা রবিন গ্রেপ্তার

ছবি

রায়পুরায় ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা

ছবি

সামাজিক বনায়নের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি

গৌরনদীর হাট-বাজার সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি

ছবি

বাগেরহাটে অটো চালকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

নুরাল পাগলের মরদেহের ওপর তেল ছিটানো ব্যক্তি গ্রেপ্তার

ছবি

ভোলাহাটে ক্যানসার সচেতনতা সভা

ছবি

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি

সিরাজগঞ্জে বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলের মৃত্যুদন্ড

tab

news » bangladesh

অবিরাম বৃষ্টি, তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসের শঙ্কা

প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি

রোববার, ২০ জুন ২০২১

খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি-বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলা পাহাড়ে থামছে না বৃষ্টি। কখনও ভারি, কখনও মাঝারি, আবার কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে বেড়েছে পাহাড়ধসের শঙ্কা। ফলে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পাহাড়ের বাসিন্দাদের। এদিকে টানা বর্ষণের ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোর দু’পাশে মাটি সরে ও পাহাড়ের মাটি পড়ে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে যেকোন সময় ধসে পড়তে পারে পাহাড়- এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। আবহাওয়া অফিস বলছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ু অব্যাহত থাকার কারণে এ বৃষ্টি চলমান থাকবে। পাহাড়ের পদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পাহাড়ধসের শঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ধসের ঘটনা ঘটছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ঘটতে পারে ভয়াবহ পাহাড়ধস। অথচ ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে মানুষ বসবাস করছে। শুধু খাগড়াছড়ি পৌর শহরে পাহাড়ের পাদদেশে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি পরিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। ভারি বর্ষণেও তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নয়। প্রশাসনের সতর্কতা বার্তাও তারা পরোয়া করে না।

জানা গেছে, একটানা বৃষ্টি হলে খাগড়াছড়ি জেলার সবুজবাগ, শালবাগান, কুমিল্লা টিলা, কলাবাগান, কদমতলীসহ শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে।

সরেজমিন সবুজবাগে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পাঁচটি পাহাড়ের আংশিক ধস হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘর ধসে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে। এখানকার বাসিন্দা আবদুল মোতালেব, রহুল আমিন ও সানজিদা খাতুন জানান, মাত্র বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অথচ এর মধ্যে পাহাড়ের মাটি ধসে গেছে।

আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে বাস করছি। বৃষ্টি হলে ভয়ে রাতে তাদের ঘুম আসে না। গত বছর এখানে পাহাড়ধস হলেও তা রোধে প্রশাসন কোন উদ্যোগই নেয়নি। তবে জানা গেছে, পাহাড়ধস রোধে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু সেগুলো মূলত সাময়িক। প্রশাসন স্থায়ী ও টেকসই কোন পরিকল্পনা নেয়নি। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। বরং প্রতিবছরই পাহাড়ধসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে বসতি গড়ে তুলেছেন।

কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এখানে আমরা বছরের পর বছর বসবাস করছি। অন্য কোথাও আমাদের থাকার জায়গা নেই। এখনকার ভূসম্পত্তি ছেড়ে অন্য কোথাও আমরা যেতেও চাই না। অবৈধ বসতি স্থাপন এবং অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণের কারণে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। অবৈধভাবে পাহাড় কাটা রোধে প্রশাসন নির্বিকার থাকে। এ কারণে ভূমিদস্যুরা পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে নিয়ম না মেনে সরকারিভাবে পাহাড় কাটা হয়। আবার পাহাড় রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বাণিজ্যিক কারণে নির্বিচারে গাছ কাটায় পাহাড় প্রাকৃতিকভাবে ধস প্রতিরোধের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। ফলে পাহাড়ধস ঠেকানো যাচ্ছে না।

স্থানীয়দের মতে, ৯টি উপজেলায় ২ বছরে দুই শতাধিক ন্যাড়া পাহাড়ের পরিণত হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষ পাহাড়কেন্দ্রিক বনজ ও জুম চাষের অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের কারণে পাহাড়কেন্দ্রিক মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। পাহাড়ের ওপর অনেক মানুষ জীবন ও জীবিকা নির্ভর করলেও সেই পাহাড়কে সাবাড় করে দিচ্ছে কেউ কেউ। এতে বিপন্ন হচ্ছে পাহাড়ের প্রাণ ও প্রকৃতি। খাগড়াছড়িতে পাহাড়, বন উজাড়, ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলনসহ নানা কারণে পরিবেশের বিপর্যয় হচ্ছে।

সরেজমিনে খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই বছরে খাগড়াছড়ি থেকে সাবাড় হয়েছে অন্তত ২শ’ পাহাড়। কোথাও আংশিক আবার কোথাও পুরো পাহাড়ই সাবাড় করে দিয়েছে পাহাড় খেকোরা।

এর মধ্যে কেবল মাটিরাঙা উপজেলাতেই কাটা হয়েছে শতাধিক পাহাড়। রাতের আঁধারে কাটা হয়েছে বেশিরভাগ পাহাড়। মাটিরাঙা উপজেলার গোমতি, তাইন্দং, তবলছড়ি, বেলছড়ি, খেদাছড়া, আদর্শ গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক পাহাড় কাটা হয়েছে। বাড়ি নির্মাণ, রাস্তা সংস্কার এবং ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য পাহাড় কাটছে একটি চক্র। দিনের আলোয় পাহাড় কাটার মহোৎসব চললেও প্রশাসন কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবেশ কর্মীরা। গত কয়েক বছর ধরে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধসে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি। বিনা বাধায় পাহাড় খেকোরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।

এছাড়া বেশিরভাগ পাহাড়ই কাটা হয়েছে অত্যন্ত খাড়াভাবে। এতে পাহাড়ধসের শঙ্কা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। একই অবস্থা খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায়। উপজেলা চোংড়াছড়িসহ খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের লাগায়ো বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা হয়েছে। মহালছড়ি উপজেলায় মহালছড়ি-চোংড়াছড়ি সড়কের শান্তিনগর এলাকায় খাড়া পাহাড় কেটে সাবাড় করে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় শত ফুট উচ্চতার খাড়া পাহাড়ের একটি বড় অংশ কেটে নেয়া হয়েছে। একইভাবে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে জেলার দীঘিনালা, রামগড়, পানছড়িতে।

এছাড়া গুইমারা উপজেলার শনখোলাপাড়া, মুসলিমপাড়া, আমলতলীপাড়া, চিংগুলীপাড়া, সিন্দুকছড়ি, তৈকর্মা, বড়পিলাক, জালিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কর্তন হয়েছে। মানিকছড়ি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাহাড় কেটে ঢালু করা হয়েছে হাজীপাড়া, মুসলিমপাড়া, মাস্টারপাড়া, রহমাননগর, ডাইনছড়ি, সেম্প্রপাড়া, কালাপানি, গাড়িঢানা, সাপমারা ও তিন টহরিতে।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান, প্রশাসনিকভাবে পাহাড় কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দেদার পাহাড় কাটা চলছে। পাহাড় কাটা রোধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ না থাকায় পাহাড় কাটার প্রবণতা বাড়ছে। আবার সরকারিভাবেও পাহাড় কাটা হচ্ছে। প্রতিবছর প্রাণহানি ঘটলেও পাহাড়ধস রোধে সরকারের কোন টেকসই ব্যবস্থা নেই।

খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, পৌর এলাকায় চারটি স্থানে পাহাড়ধসের ঝুঁকি রয়েছে। প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বসবাসকারীদের সতর্ক করা হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের পৌরসভা সার্বিক সহায়তা করবে। ভবিষ্যতে পৌর আবাসন এলাকায় তাদের পুনর্বাসন করা হবে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা মতিন জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সার্বিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, টানা বর্ষণ শুরু হলে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পৌর এলাকায় ২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সড়কে পাহাড়ধস হলে দ্রুত সময়ে তা সরানোর ব্যবস্থা গ্রহণে ও জানমালের নিরাপত্তায় সার্বিক প্রস্তুতি সভায় অবহিত করা হয়।

এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টি বেশি হলেই পাহাড়ধসের ঝুঁকি রয়েছে যেসব স্থানে সেখান থেকে মানুষকে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। যোগাযোগ সচল রাখার জন্য সড়ক বিভাগসহ সব বিভাগকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। এবারের বর্ষায় যাতে কোন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে সেদিকে নজর রাখতে হবে। এছাড়া দুর্যোগসংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে’।

এছাড়া সভায় ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর প্রস্তুতি হিসেবে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করা হয় বলে জানান তিনি।

অপরদিকে বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরিয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টরাও কাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরানো বেশিরভাগ সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ থেকে জানা গেছে, সদর উপজেলার কালাঘাটা, কাসেমপাড়া, ইসলামপুর, বনরূপা পাড়া, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়াপাড়া, কসাইপাড়া, লামা উপজেলার হরিণমারা, তেলুমিয়া পাড়া, ইসলামপুর, গজালিয়া, মুসলিমপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিড়ি, টিঅ্যান্ডটি এলাকা, সরই, রুপসীপাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, মনজয় পাড়া, দৌছড়ি, বাইশারী, রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়াসহ সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার। এ বছরও পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড়ে ওঠায় গত বছরের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে গেছে।

জেলা তথ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে তিনজন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পাঁচজন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুইজন, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৫ সালে লামায় চারজন, সিদ্দিকনগরে একজন এবং সদরের বনরূপা পাড়ায় দুইজন এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় সাতজন ও রুমা সড়কে ২৩ জুলাই পাঁচজন পাহাড়ধসে মারা গেছেন।

পাহাড়ের নিচে ঝুঁকিতে থাকা কালাঘাটার মো. আলী হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমি অনেক কষ্ট করে এ জায়গাটি কিনে পাহাড়ের জঙ্গল সামান্য ছাঁটাই করে ঘর তৈরি করেছি। প্রতি বছর বর্ষাতে আমি পরিবারকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে রাত যাপন করি। পাহাড় প্রতি বছরই কম বেশি ধসে পড়ে। আমাদের এখানে বড় ধরনের সমস্যা না হলেও এবারের টানা বর্ষণে আমি পরিবার নিয়ে ভয়ে আছি।

বান্দরবান পৌরসভার ইসলামপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ লেয়াকত আলী জানান, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে লাঙ্গিপাড়া-সিকদারপাড়া-ইসলামপুরের সড়কের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দু’পাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে, পাহাড়ের মাটি এসে পড়েছে রাস্তার উপর।

বান্দরবানের মৃত্তিকা কর্মকর্তা মাহাবুব আলম জানান, পাহাড়ের মাটিগুলো অনন্ত প্রকৃতির অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মাটির ওপরের অংশ ক্ষয়ে যায়। পানি মাটির গভীরে প্রবেশ করে ড্রেনের সৃষ্টি করে। এতে মাটির ভীত সরে যায়। ফলে পাহাড় ধসে পড়ে। এছাড়া পাহাড় কাটা, জুমচাষ, পাথর উত্তোলন, নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন ইত্যাদি কারণে পাহাড়ের মাটি দুর্বল হয়ে যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এক সময় মাটি ধসে পড়ে।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে। তাদের সরিয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টরাও কাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর রয়েছে প্রশাসন।

back to top