alt

সারাদেশ

সেতু ঝুঁকিপূর্ণ, সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায় সেরেছে সওজ

মো: পলাশ খান, শরীয়তপুর(জাজিরা) : মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই ২০২২

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সুফল পাওয়া দুরে থাক যোগাযোগ ব্যবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে শরীয়তপুরবাসী। কারন পদ্মা সেতু থেকে শরীয়তপুর জেলার সংযোগ সড়কের জন্য ২০২০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি (একনেক) চার লেন সড়কের প্রকল্প অনুমোদন দিলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন কাজই হয়নি এই প্রকল্পের। শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার এই সড়কের কিছু অংশে ১২ ফুট আর কিছু অংশে রয়েছে ১৮ ফুট প্রশস্ত। এই সড়ক দিয়ে দিনের বেশীরভাগ সময়ে যানজট মাথায় নিয়ে চলছে গণপবিহণ সহ সব ধরণের যানবাহনগুলো। বিপত্তি আরো বেধেঁছে এই সড়কের পুরোনো সেতু ও কালভার্টগুলোর কারনে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে জেলার প্রেমতলা কোটাপাড়া সেতু ও ডুবিসায়বর বন্দর কাজীরহাট সেতু। এই দুটি সেতু সহ এই সড়কের ২৭ কিলোমিটারের মধ্যে যেসকল ছোট সেতু ও কালভার্ট রয়েছে তার সবকয়টিই এখন ঝঁকিপূর্ণ ও সরু। একবার কোনো গাড়ি আটকে গেলে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। গাড়ী খাদে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোটাপাড়া সেতুর দুই মাথায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ(সওজ) এর পক্ষ থেকে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে সতর্কতা মূলক সাইনবোর্ড। ওই সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, সামনে এল.জি.ই.ডি কর্তৃক নির্মিত পুরাতন, জরাজীর্ণ, বিপদ জনক, ক্ষতিগ্রস্থ সরু সেতু, হালকা যান ব্যতিত ভারী যান (বাস/লড়ি/কাভার্ড ভ্যান) চলাচল নিষেধ। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ সেতু দিয়ে বিভিন্ন ভারী যানবাহন পারাপার হচ্ছে।

দেখা যায়, সেতু দিয়ে ইজিবাইক, যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে।

আরো দেখা যায়, সেতুর দুই পাশে চারজন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নিয়োজিত গ্রাম পুলিশ ইছাহাক বলেন, আমাদের বলা হয়েছে সেতুতে যেন যানজট সৃষ্টি না হয় তার জন্য সেতুতে গাড়ী চলাচলে সমন্বয় করে দেয়ার জন্য।

বাস চালক আরিফ আকন বলেন, শরীয়তপুর সদর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাওয়ার এটি একমাত্র পথ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু দিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হতে হচ্ছে।

প্রেমতলা কোটাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সফিক বলেন, ‘সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভারী যানবাহন উঠলে দুলতে থাকে। মনে হয় এই যেন মাঝখান থেকে দেবে গেল। সরক বিভাগ ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙালেও তা কেউ মানছে না। প্রতিনিয়ত এই সেতু দিয়ে বড় বড় যাত্রীবাহী বাস আর ট্রাক চলাচল করছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সতর্কবার্তা দিয়ে তাদের দায় শেষ করেছে। মনে হচ্ছে বড় কোন দুর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত এর কোনো সমাধান হবে না।’

জোড়া ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা শাখাওয়াত শামীম বলেন, “সরু রাস্তা আর সরু ব্রিজের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে যাত্রীবাহী বাস সহ বড় বড় যানবাহন। যখন এই সরু ব্রিজ দিয়ে পাশাপাশি দুটি গাড়ী যাওয়া ধরে মনে হয় এখনি নাকি একপাশের গাড়ী খাদে পরে যায়।”

এদিকে ডুবিসায়বর বন্দর কাজীরহাট সেতুর অবস্থাও একি জরাজীর্ণ, বিপদ জনক ও ক্ষতিগ্রস্থ সরু সেতু। এই সেতু দিয়েও সকল ধরণের ভারী যানবাহন চলাচল করছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু সওজের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সতর্কতা মূলক কোন ধরণের নির্দেশনা বা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

ডুবিসায়বর বন্দর কাজীরহাটের ব্যবসায়ী নুরুল হক মোল্লা বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি এই সেতু দিয়ে অধিক পরিমাণ যানবাহন চলাচল করছে। আমরা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি, কখন যেন দুর্ঘটনা ঘটে।’

শরীয়তপুর ও পদ্মা সেতু সংযোগ সড়কটি কোথাও ১২ ফুট, কোথাও আবার ১৮ ফুট। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কটি এখন পরিণত হয়েছে বিষফোঁড়ার মত। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। আর এই ২৭ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সময় লেগে যায় তিন থেকে চার ঘন্টা, কোন কোন সময় ৬ ঘন্টা।

জাজিরা টিএন্ডটি মোড়, কাজীরহাট বাজার, সাহেব বাজার, ডগ্রি বাজার ও প্রেমতলা সেতু এলাকায় প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার যানজট এখন প্রতিদিনের চিত্র।

শরীয়তপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, জমি অধিগ্রহণ জটিলতার নিরসন হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ হবে।

আপাতত দুর্ঘটনার আতঙ্ক মাথায় নিয়েই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হবে শরীয়তপুরের বাসিন্দাদের।

শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সুফল পেলেও শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কটি অত্যন্ত সরু হওয়ায় দুটি বাস পাশাপাশি চলতে পারছে না যার কারণে যানজট লেগে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রাস্তাটির অধিকাংশ জায়গায় দুটি গাড়ী পাশাপাশি হলেই যানজটে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে কোটাপাড়া সেতুর ওপর, জাজিরা উপজেলার টিএন্ডটির মোড়, কাজীরহাট এলাকায়। এতে আতংক নিয়ে আমাদের চালকরা বাস চালাচ্ছে। যদিও দেখা যাচ্ছে এই রাস্তাটি প্রশস্ত করার কাজ চলছে। তবে কাজের গতি আরও বাড়িয়ে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা দরকার।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম সংবাদকে বলেন, কোটাপাড়া সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমরা সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপণ করেছি। এখন নির্দেশনা না মেনে ভারী যানবাহন চলাচল করলে আমরা কি করতে পারি। ডুবিসায়বর বন্দর কাজীরহাট সেতুটি কোটাপাড়া সেতুর তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছেনা।

সওজ জানায়, শরীয়তপুর সদর ফায়ার সার্ভিস থেকে নাওডোবা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কটি বর্তমান অবস্থা থেকে ৩৪ ফিটে উন্নীত করা হবে। এছাড়া এ সড়কটিতে যতগুলো ব্রিজ কালভার্ট রয়েছে সেগুলোর কাজও করা হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে শরীয়পুরের যে সরু সড়কটি রয়েছে তাতে চাপ অনেক বেশী বেড়েছে, এবং সরু রাস্তা হওয়ায় প্রতিনিয়ত যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সময়ে আমাদের যে প্রকল্পটি রয়েছে তা চলতি বছরের জুন মাসে মেয়াদ শেষ হয়েছে। যেহেতু সড়কটি ফোর লেনে উন্নীত করা হবে তাই ভূমি অধিগ্রহণের এখনো অনেকটা বাকি রয়েছে। ক্যাস প্রোগ্রামের মাধ্যমে কীভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করা যায় তার পরিকল্পনা চলছে। বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণে যৌথ তদন্ত চলছে। তদন্ত হয়ে গেলে গণশুনানি ও জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে সমস্যাগুলো খুব দ্রুত সমাধান করা হবে।

ছবি

নাফ নদী থেকে ২ জেলেকে অপহরণের অভিযোগ

লংগদুতে প্রতিপক্ষের গুলিতে ইউপিডিএফ কর্মীসহ দুজন নিহত

ছবি

শেরপুরে নারী পোশাক শ্রমিকের লাশ

মোংলায় আচরণ বিধি লংঘনের দায়ে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের জরিমানা

ছবি

চন্দনা কমিউটার থামবে ফরিদপুরে : রেলমন্ত্রী

ছবি

জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নওগাঁর মটকা চা

রিকশা চালককে পিঠিয়ে পা ভাঙার ঘটনায় সেই ট্রাফিক পুলিশ ক্লোজড

বছর পার হলেও শুরু হয়নি জাজিরা পৌরসভার আলোকসজ্জা প্রকল্পের কাজ

ছবি

জাল ভোট পড়লেই কেন্দ্র বন্ধ: ইসি হাবিব

ছবি

গোপালগঞ্জে দুই শ্রমিকের মৃত্যু

চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদীতে নিখোঁজ মাদ্রাসার ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার

মুন্সীগঞ্জে পুকুরে বৃদ্ধের মরদেহ, পকেটে ঘুমের ঔষধ

চিকিৎসা আর পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে অতিরিক্ত খরচের প্রবনতা থেকে সরে আসার আহবান

ছবি

চাঁদপুরে ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ বাস্তবায়নে বিশেষ অভিযান শুরু

নরসিংদীতে বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ ৪ জনের মৃত্যু

ধান শুকানোর কাজ করতে গিয়ে গাজীপুরে বজ্রপাতে প্রাণ গেল নারীর

ছবি

চট্টগ্রামে লরির ধাক্কায় শিশুসহ ২ জন নিহত

ছবি

কেএনএফের আঞ্চলিক নারী সমন্বয়ক গ্রেপ্তার

ছবি

মদিনায় এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

ছবি

চট্টগ্রামে লরির ধাক্কায় পুকুরে পড়ে ১ শিশু নিখোঁজ, আহত ৩

ছবি

ট্রাফিক পুলিশ লোহার পাইপে দিয়ে পিঠিয়ে পা ভাঙলো রিকশা চালককের

ছবি

টেকনাফে দুই কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস জব্দ করল বিজিবি

ছবি

বেনাপোল বন্দরে ৫ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

ছবি

কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাস উল্টে নিহত ৫

ছবি

কিশোরগঞ্জে শ্রেণিকক্ষে ২৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ

ছবি

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কাজের সময় গ্যাস লাইনে লিকেজ

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের জামিন নামঞ্জুর

ছবি

চাঁদপুরে দুই ইটভাটার মালিককে ৪ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

দেশে কোরবানির জন্য প্রস্তুত এক কোটি ২৯ লাখ পশু

ছবি

হোসেনপুরে গরমে ক্লাসেই অসুস্থ ৩০ প্রাইমারী শিক্ষার্থী

ছবি

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের আম পাড়া শুরু

ছবি

বিলীনের পথে জলকদর খাল

ছবি

উখিয়ায় বাসা থেকে এনজিও কর্মীর লাশ উদ্ধার

ছবি

গাজীপুরে টিনশেড মার্কেট ও বসতবাড়িতে আগুন

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস থেকে ‘নগর উন্নয়ন মাশুল’ চান :মেয়র

বাংলাদেশি রোগীদের জন্য আসামের গুয়াহাটিতে মানসম্মত চিকিৎসাসেবার উদ্যোগ

tab

সারাদেশ

সেতু ঝুঁকিপূর্ণ, সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায় সেরেছে সওজ

মো: পলাশ খান, শরীয়তপুর(জাজিরা)

মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই ২০২২

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সুফল পাওয়া দুরে থাক যোগাযোগ ব্যবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে শরীয়তপুরবাসী। কারন পদ্মা সেতু থেকে শরীয়তপুর জেলার সংযোগ সড়কের জন্য ২০২০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি (একনেক) চার লেন সড়কের প্রকল্প অনুমোদন দিলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন কাজই হয়নি এই প্রকল্পের। শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার এই সড়কের কিছু অংশে ১২ ফুট আর কিছু অংশে রয়েছে ১৮ ফুট প্রশস্ত। এই সড়ক দিয়ে দিনের বেশীরভাগ সময়ে যানজট মাথায় নিয়ে চলছে গণপবিহণ সহ সব ধরণের যানবাহনগুলো। বিপত্তি আরো বেধেঁছে এই সড়কের পুরোনো সেতু ও কালভার্টগুলোর কারনে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে জেলার প্রেমতলা কোটাপাড়া সেতু ও ডুবিসায়বর বন্দর কাজীরহাট সেতু। এই দুটি সেতু সহ এই সড়কের ২৭ কিলোমিটারের মধ্যে যেসকল ছোট সেতু ও কালভার্ট রয়েছে তার সবকয়টিই এখন ঝঁকিপূর্ণ ও সরু। একবার কোনো গাড়ি আটকে গেলে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। গাড়ী খাদে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোটাপাড়া সেতুর দুই মাথায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ(সওজ) এর পক্ষ থেকে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে সতর্কতা মূলক সাইনবোর্ড। ওই সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, সামনে এল.জি.ই.ডি কর্তৃক নির্মিত পুরাতন, জরাজীর্ণ, বিপদ জনক, ক্ষতিগ্রস্থ সরু সেতু, হালকা যান ব্যতিত ভারী যান (বাস/লড়ি/কাভার্ড ভ্যান) চলাচল নিষেধ। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ সেতু দিয়ে বিভিন্ন ভারী যানবাহন পারাপার হচ্ছে।

দেখা যায়, সেতু দিয়ে ইজিবাইক, যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে।

আরো দেখা যায়, সেতুর দুই পাশে চারজন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নিয়োজিত গ্রাম পুলিশ ইছাহাক বলেন, আমাদের বলা হয়েছে সেতুতে যেন যানজট সৃষ্টি না হয় তার জন্য সেতুতে গাড়ী চলাচলে সমন্বয় করে দেয়ার জন্য।

বাস চালক আরিফ আকন বলেন, শরীয়তপুর সদর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাওয়ার এটি একমাত্র পথ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু দিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হতে হচ্ছে।

প্রেমতলা কোটাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সফিক বলেন, ‘সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভারী যানবাহন উঠলে দুলতে থাকে। মনে হয় এই যেন মাঝখান থেকে দেবে গেল। সরক বিভাগ ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙালেও তা কেউ মানছে না। প্রতিনিয়ত এই সেতু দিয়ে বড় বড় যাত্রীবাহী বাস আর ট্রাক চলাচল করছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সতর্কবার্তা দিয়ে তাদের দায় শেষ করেছে। মনে হচ্ছে বড় কোন দুর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত এর কোনো সমাধান হবে না।’

জোড়া ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা শাখাওয়াত শামীম বলেন, “সরু রাস্তা আর সরু ব্রিজের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে যাত্রীবাহী বাস সহ বড় বড় যানবাহন। যখন এই সরু ব্রিজ দিয়ে পাশাপাশি দুটি গাড়ী যাওয়া ধরে মনে হয় এখনি নাকি একপাশের গাড়ী খাদে পরে যায়।”

এদিকে ডুবিসায়বর বন্দর কাজীরহাট সেতুর অবস্থাও একি জরাজীর্ণ, বিপদ জনক ও ক্ষতিগ্রস্থ সরু সেতু। এই সেতু দিয়েও সকল ধরণের ভারী যানবাহন চলাচল করছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু সওজের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সতর্কতা মূলক কোন ধরণের নির্দেশনা বা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

ডুবিসায়বর বন্দর কাজীরহাটের ব্যবসায়ী নুরুল হক মোল্লা বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি এই সেতু দিয়ে অধিক পরিমাণ যানবাহন চলাচল করছে। আমরা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি, কখন যেন দুর্ঘটনা ঘটে।’

শরীয়তপুর ও পদ্মা সেতু সংযোগ সড়কটি কোথাও ১২ ফুট, কোথাও আবার ১৮ ফুট। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কটি এখন পরিণত হয়েছে বিষফোঁড়ার মত। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। আর এই ২৭ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সময় লেগে যায় তিন থেকে চার ঘন্টা, কোন কোন সময় ৬ ঘন্টা।

জাজিরা টিএন্ডটি মোড়, কাজীরহাট বাজার, সাহেব বাজার, ডগ্রি বাজার ও প্রেমতলা সেতু এলাকায় প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার যানজট এখন প্রতিদিনের চিত্র।

শরীয়তপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, জমি অধিগ্রহণ জটিলতার নিরসন হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ হবে।

আপাতত দুর্ঘটনার আতঙ্ক মাথায় নিয়েই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হবে শরীয়তপুরের বাসিন্দাদের।

শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সুফল পেলেও শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কটি অত্যন্ত সরু হওয়ায় দুটি বাস পাশাপাশি চলতে পারছে না যার কারণে যানজট লেগে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রাস্তাটির অধিকাংশ জায়গায় দুটি গাড়ী পাশাপাশি হলেই যানজটে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে কোটাপাড়া সেতুর ওপর, জাজিরা উপজেলার টিএন্ডটির মোড়, কাজীরহাট এলাকায়। এতে আতংক নিয়ে আমাদের চালকরা বাস চালাচ্ছে। যদিও দেখা যাচ্ছে এই রাস্তাটি প্রশস্ত করার কাজ চলছে। তবে কাজের গতি আরও বাড়িয়ে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা দরকার।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম সংবাদকে বলেন, কোটাপাড়া সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমরা সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপণ করেছি। এখন নির্দেশনা না মেনে ভারী যানবাহন চলাচল করলে আমরা কি করতে পারি। ডুবিসায়বর বন্দর কাজীরহাট সেতুটি কোটাপাড়া সেতুর তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছেনা।

সওজ জানায়, শরীয়তপুর সদর ফায়ার সার্ভিস থেকে নাওডোবা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কটি বর্তমান অবস্থা থেকে ৩৪ ফিটে উন্নীত করা হবে। এছাড়া এ সড়কটিতে যতগুলো ব্রিজ কালভার্ট রয়েছে সেগুলোর কাজও করা হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে শরীয়পুরের যে সরু সড়কটি রয়েছে তাতে চাপ অনেক বেশী বেড়েছে, এবং সরু রাস্তা হওয়ায় প্রতিনিয়ত যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সময়ে আমাদের যে প্রকল্পটি রয়েছে তা চলতি বছরের জুন মাসে মেয়াদ শেষ হয়েছে। যেহেতু সড়কটি ফোর লেনে উন্নীত করা হবে তাই ভূমি অধিগ্রহণের এখনো অনেকটা বাকি রয়েছে। ক্যাস প্রোগ্রামের মাধ্যমে কীভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করা যায় তার পরিকল্পনা চলছে। বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণে যৌথ তদন্ত চলছে। তদন্ত হয়ে গেলে গণশুনানি ও জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে সমস্যাগুলো খুব দ্রুত সমাধান করা হবে।

back to top