শরীয়তপুরে লঞ্চ দুর্ঘটনা
এক দিন পর বিয়ে। বাড়িতে গায়ে হলুদ ও বিয়ের আয়োজনের তোরজোর চলছিল। আত্মীয় স্বজনেরা আসতে শুরু করেছিলেন। ঢাকা থেকে লঞ্চে করে ছেলে তানজিদ মোল্লাকে সাথে নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন শাহ আলী মোল্লা ও ফাতেমা আক্তার। সঙ্গে ছেলের বন্ধুরাও ছিলেন। সেতুর সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কায় পানির ট্যাংকের নিচে পড়ে প্রাণ গেছে ছেলে ও তাঁর দুই বন্ধুর। মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয়েছে বিয়ে বাড়ির আনন্দ।
নিহত তানজিদের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর গ্রামে। তিনি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। দুর্ঘটনায় তাঁর সঙ্গে মারা গেছেন তাঁর দুই বন্ধু জামালপুরের বোরহান আলীর ছেলে সাগর আলী (২৩) ও টাঙ্গাইলের নাজিমউদ্দিনের ছেলে শাকিল আহমেদ (২৩)। রোববার(২৩ অক্টোবর) ভোরে ঢাকা থেকে ডামুড্যাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ স্বর্ণদ্বীপ প্লাস গোসাইরহাট উপজেলার সাইক্কা সেতুতে ধাক্কা খেয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তানজিদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোসাইরহাটের কোদালপুর এলাকার বাসিন্দা শাহ আলী ও ফাতেমা দম্পতি তাঁদের দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায় থাকেন। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন শাহ আলী। আর বড় ছেলে তানজিদ ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়াশোনা করতেন। অভাবের সংসারে সচ্ছলতা আনতে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন তানজিদ। সম্প্রতি তার নিজ গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়। সোমবার(২৪ অক্টোবর) বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আর রবিবার(২৩ অক্টোবর) রাতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। বিয়ের বাজার নিয়ে লঞ্চে করে বাড়িতে আসার পথে মারা যান তিনি।
নিহত তানজিদের ভাই ও প্রতক্ষ্যদর্শী সজিব মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে আসার পর আমরা সবাই দ্বিতীয় তলায় ছিলাম। রাতে ভাইয়া তাঁর বন্ধুদের নিয়ে তৃতীয় তলায় যান। সেখানেই তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাতের দিকে হঠাৎ সেতুর সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কা লাগে। চিৎকার শুনে আমরা দ্বিতীয় তলা থেকে সেখানে যাই। এরপর পানির ট্যাংকের নিচে ভাই ও তাঁর দুই বন্ধুকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি।’
রবিবার তানজিদের কোদালপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিয়ে বাড়ির জিনিসপত্র এদিক–সেদিক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। বাড়িভরা আত্মীয় স্বজন। মা ফাতেমা আক্তার কান্না করছেন আর বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে সেখানে আসেন তানজিদের হবু স্ত্রী সাবরিনা আক্তার ও তাঁর মা মর্জিনা বেগম। তাঁরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তানজিদের মা ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘বাড়ি ভরা আত্মীয় স্বজন। বিয়ের আনন্দ করার কথা। আমার বাবাটার নিথর দেহ হাসপাতালে রেখে বাড়িতে আসছি। আল্লাহ কেন এমন করল!’
তানজিদের চাচা আলতাফ হোসেন মোল্লা বলেন, তানজিদের বাবা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না।
গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাফী বিন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, নিহত তিন যাত্রীর দাফনের জন্য পরিবার প্রতি ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।
গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম সিকদার বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হাস্তান্তর করা হয়েছে। লঞ্চের মাস্টার ও চালককে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শরীয়তপুরে লঞ্চ দুর্ঘটনা
সোমবার, ২৪ অক্টোবর ২০২২
এক দিন পর বিয়ে। বাড়িতে গায়ে হলুদ ও বিয়ের আয়োজনের তোরজোর চলছিল। আত্মীয় স্বজনেরা আসতে শুরু করেছিলেন। ঢাকা থেকে লঞ্চে করে ছেলে তানজিদ মোল্লাকে সাথে নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন শাহ আলী মোল্লা ও ফাতেমা আক্তার। সঙ্গে ছেলের বন্ধুরাও ছিলেন। সেতুর সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কায় পানির ট্যাংকের নিচে পড়ে প্রাণ গেছে ছেলে ও তাঁর দুই বন্ধুর। মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয়েছে বিয়ে বাড়ির আনন্দ।
নিহত তানজিদের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর গ্রামে। তিনি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। দুর্ঘটনায় তাঁর সঙ্গে মারা গেছেন তাঁর দুই বন্ধু জামালপুরের বোরহান আলীর ছেলে সাগর আলী (২৩) ও টাঙ্গাইলের নাজিমউদ্দিনের ছেলে শাকিল আহমেদ (২৩)। রোববার(২৩ অক্টোবর) ভোরে ঢাকা থেকে ডামুড্যাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ স্বর্ণদ্বীপ প্লাস গোসাইরহাট উপজেলার সাইক্কা সেতুতে ধাক্কা খেয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তানজিদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোসাইরহাটের কোদালপুর এলাকার বাসিন্দা শাহ আলী ও ফাতেমা দম্পতি তাঁদের দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায় থাকেন। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন শাহ আলী। আর বড় ছেলে তানজিদ ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়াশোনা করতেন। অভাবের সংসারে সচ্ছলতা আনতে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন তানজিদ। সম্প্রতি তার নিজ গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়। সোমবার(২৪ অক্টোবর) বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আর রবিবার(২৩ অক্টোবর) রাতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। বিয়ের বাজার নিয়ে লঞ্চে করে বাড়িতে আসার পথে মারা যান তিনি।
নিহত তানজিদের ভাই ও প্রতক্ষ্যদর্শী সজিব মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে আসার পর আমরা সবাই দ্বিতীয় তলায় ছিলাম। রাতে ভাইয়া তাঁর বন্ধুদের নিয়ে তৃতীয় তলায় যান। সেখানেই তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাতের দিকে হঠাৎ সেতুর সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কা লাগে। চিৎকার শুনে আমরা দ্বিতীয় তলা থেকে সেখানে যাই। এরপর পানির ট্যাংকের নিচে ভাই ও তাঁর দুই বন্ধুকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি।’
রবিবার তানজিদের কোদালপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিয়ে বাড়ির জিনিসপত্র এদিক–সেদিক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। বাড়িভরা আত্মীয় স্বজন। মা ফাতেমা আক্তার কান্না করছেন আর বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে সেখানে আসেন তানজিদের হবু স্ত্রী সাবরিনা আক্তার ও তাঁর মা মর্জিনা বেগম। তাঁরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তানজিদের মা ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘বাড়ি ভরা আত্মীয় স্বজন। বিয়ের আনন্দ করার কথা। আমার বাবাটার নিথর দেহ হাসপাতালে রেখে বাড়িতে আসছি। আল্লাহ কেন এমন করল!’
তানজিদের চাচা আলতাফ হোসেন মোল্লা বলেন, তানজিদের বাবা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না।
গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাফী বিন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, নিহত তিন যাত্রীর দাফনের জন্য পরিবার প্রতি ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।
গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম সিকদার বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হাস্তান্তর করা হয়েছে। লঞ্চের মাস্টার ও চালককে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।