alt

নিত্যপণ্যের দাম : আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করা হলেও পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা

রেজাউল করিম : বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩

দেশে নিত্যপণ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। আর তা দীর্ঘদিন ধরে দেশে সাধারণ মানুষের বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দাম বৃদ্ধির চাপের কারণে নিম্নআয়ের অনেক মানুষ খাবার কমিয়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। আর খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি বা মূল্যস্ফীতি আরও বেশি, যা আগস্টের হিসাবে সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এই হার গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে দাম বাড়ছে বলেই বলেন। কিন্তু তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, দেশের বাজারে তার চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশের বাজারের নিত্যপণ্যের দাম আর আন্তর্জাতিক বাজারে দামের তুলনামূলক বিশ্লেষে এই তথ্য উঠে এসেছে। যেসব পণ্য আমদানিনির্ভর মূলত তারই তুলনামূলক চিত্র এটা।

গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দেশের বাজারে আটার দাম বেড়েছে ১২০ শতাংশ। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে আটার দাম কমেছে ৩২ শতাংশ।

সয়াবিন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে, তবে বেশি বেড়েছে দেশের বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশ। আর দেশের বাজারে বেড়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ।

চিনির দামও দেশ ও দেশের বাইরে সব বাজারেই বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে ১৫৭ শতাংশ। আর দেশের বাজারে বেড়েছে ১৮০ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম যেখানে কমেছে, সেখানে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে ১১ শতাংশ। অন্যদিকে দেশের বাজারে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। তবে সবসময়ই যুক্তি দেয়া হয় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই জ্বালানির দাম ঠিক করা হয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম সামান্য বাড়লেও দেশের বাজারের তুলনায় কম।

দুধের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে ১৬ শতাংশ। আর দেশের বাজারে বেড়েছে ৬৩ শতাংশ।

যেসব পণ্য আমদানির ওপর নিরভরশীল নয়, দেশের উৎপাদনেই চাহিদা মিটে। সেসব পণ্যের দামও বেড়েছে এবং তা আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি।

যেমন আলুর দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে অনেক বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে আলুর দাম কমেছে ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে দেশের বাজারে আলুর দাম বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। আর ডিমের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে ২৬ শতাংশ এবং দেশের বাজারে বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

ব্রয়লার মুরগির দাম সারাবিশ্বেই বেড়েছে। দেশের বাজারে বেড়েছে ৬৬ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। আর গরুর মাংসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে ৫৬ শতাংশ এবং দেশের বাজারে বেড়েছে ৭৭ শতাংশ।

মোটা, মিনিকেট, পোলাও ইত্যাদি সব চালের গড় দাম বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। তবে চালের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি বেড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে।

দেশের বাজারে এই হারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এমন একাধিক পণ্য আছে, যেগুলোর দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে কিন্তু দেশের বাজারে বেড়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার নয়, ব্যবসায়ীদের অতিলোভ দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধির কারণ। ক্যাবিনেটে ৬২ শতাংশই ব্যবসায়ী। তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যের নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, ও মনিটরিংয়ে এর প্রতিফলন থাকার কথা। অর্থাৎ সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি। দেশে একটি বিশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দাতাদের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করলেও মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা ফ্রাংকেস্টাইন হয়ে গেছে। তাদের কঠোর হাতে রুখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে সিন্ডিকেট নাই। কিন্তু কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে সেটা কি সিন্ডিকেট নয়? এটা যদি সিন্ডিকেট না হয় তাহলে সিন্ডিকেট কোনটা?’

পরোক্ষভাবে এই সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করেছেন খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার, (সিন্ডিকেটের হোতাদের) জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম। সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে যে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে, সেটা সইতে তো আমাদের কষ্ট হবে।’

এদিকে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও মজুরি বাড়েনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে দেশে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৪ শতাংশ। এই হার গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অথচ ওই মাসে শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির গড় হার ৭.৫৮ শতাংশ।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের শ্রমজীবী মানুষসহ নিম্নআয়ের মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য গ্রহণ করছেন এবং চাহিদা কমিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়েছেন। এতে বড় একটি জনগোষ্ঠীর দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টিহীনতা ও শিক্ষায় ঘাটতি দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশের বাজারে প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি দুশ্চিন্তার বলে বলছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি সংবাদকে বলেছেন, ‘যেখানে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমছে, সেখানে দেশের বাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটি দুশ্চিন্তার। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর অন্যতম হলো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। আর সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব। এ ছাড়া অনেক পণ্য আছে, যেগুলো দেশেই উৎপাদন হয়। এসব পণ্যের দাম বাড়ার কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া।’

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘সরকারকে প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আমদানি ও উৎপাদনের সঠিক হিসাব রাখতে হবে, যাতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সহজ হয়। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

ছবি

সোনার দাম ভরিপ্রতি তিন দিনে কমেছে ১৫ হাজার টাকার বেশি

ছবি

ওয়ালটনের ১৯তম এজিএম অনুষ্ঠিত, ১৭৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ডে সন্তুষ্ট ওয়ালটনের বিনিয়োগকারীরা

ছবি

২০ জনে ট্রেড ইউনিয়ন হলে পোশাক শিল্প ‘অস্থিতিশীল হবে’: বিজিএমইএ

ছবি

৩ মাস ২৬ দিনে পৌনে ১০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স

ছবি

যানবাহন ক্রয় বন্ধই থাকবে, সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমণে লাগাম

ছবি

বিদ্যুৎ আমদানির অর্থ পরিশোধে নিয়ম সহজ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম এক সপ্তাহে ৮ শতাংশ কমলো

ছবি

এসডোর গবেষণা : নিম্নমানের রঙে বিপজ্জনক মাত্রায় সিসা

ছবি

সূচকের বড় পতন শেয়ারবাজারে, লেনদেন ৩০০ কোটির ঘরে

ছবি

১৩ শতাংশ পোশাকশ্রমিক এখনো বর্ধিত মজুরি পাননি: গবেষণা

ছবি

একীভূত ব্যাংকের নাম হবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’

ছবি

প্রকল্পের এক টাকাও খরচ করতে পারেনি ৩ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ

ছবি

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে টিকে থাকতে দরকার স্মার্ট মানবসম্পদ: ডিসিসিআই

ছবি

দেশের সর্ববৃহৎ ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট এখন ওয়ালটনে

ছবি

দেশেই তৈরি হবে সব ধরনের কীটনাশক

ছবি

আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন গ্রামীণফোনের সিইওসহ ৩ জন

ছবি

আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত চেয়ে মানববন্ধন ফারইস্ট লাইফের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

ছবি

আয়কর রিটার্ন এখন আরও সহজ, আপলোড করতে হবে না কাগজপত্র

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় পতন, কমেছে লেনদেন ও সূচক

ছবি

রিজার্ভ বৃদ্ধি হওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করলো আইএমএফ

ছবি

ঢাকা জেলায় মাথাপিছু আয় ৫১৬৩ ডলার: ডিসিসিআই

ছবি

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ শিকারে শরণখোলার জেলেরা

ছবি

রাজনৈতিক অস্থিরতা, এক বছরে চট্টগ্রামে বন্ধ ২২ পোশাক কারখানা

ছবি

শেয়ারবাজারের মূলধনে যোগ হলো ৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যসংযোজিত পণ্য রপ্তানিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশ: আইএমএফ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে এলো গম

ছবি

ঢাকা জেলার মাথাপিছু আয় জাতীয় গড়ের প্রায় দ্বিগুণ: ডিসিসিআই রিপোর্ট

ছবি

সবজির দাম সামান্য কমেছে, অন্য নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে

ছবি

দেশে কার্ডভিত্তিক লেনদেন দ্রুত বাড়ছে

ছবি

২০ শ্রমিকের সম্মতিতেও করা যাবে ট্রেড ইউনিয়ন

ছবি

এক বছরে বাংলাদেশের ৩৬ কারখানা পেল আন্তর্জাতিক ‘সবুজ’ সনদ

ছবি

প্রবাসী করদাতাদের জন্য ই-রিটার্ন দাখিল সহজ হল

ছবি

ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ৪৮৫০ কোটি টাকা

ছবি

চালু হলো প্যাসিফিকের সাত কারখানা

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে টেকনো’র নতুন স্মার্টফোন স্পার্ক ৪০ ফাইভজি

ছবি

দেশে ‘চামচা পুঁজিবাদী’ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে: সিলেটে ড. দেবপ্রিয়

tab

নিত্যপণ্যের দাম : আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করা হলেও পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা

রেজাউল করিম

বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩

দেশে নিত্যপণ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। আর তা দীর্ঘদিন ধরে দেশে সাধারণ মানুষের বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দাম বৃদ্ধির চাপের কারণে নিম্নআয়ের অনেক মানুষ খাবার কমিয়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। আর খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি বা মূল্যস্ফীতি আরও বেশি, যা আগস্টের হিসাবে সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এই হার গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে দাম বাড়ছে বলেই বলেন। কিন্তু তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, দেশের বাজারে তার চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশের বাজারের নিত্যপণ্যের দাম আর আন্তর্জাতিক বাজারে দামের তুলনামূলক বিশ্লেষে এই তথ্য উঠে এসেছে। যেসব পণ্য আমদানিনির্ভর মূলত তারই তুলনামূলক চিত্র এটা।

গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দেশের বাজারে আটার দাম বেড়েছে ১২০ শতাংশ। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে আটার দাম কমেছে ৩২ শতাংশ।

সয়াবিন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে, তবে বেশি বেড়েছে দেশের বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশ। আর দেশের বাজারে বেড়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ।

চিনির দামও দেশ ও দেশের বাইরে সব বাজারেই বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে ১৫৭ শতাংশ। আর দেশের বাজারে বেড়েছে ১৮০ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম যেখানে কমেছে, সেখানে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে ১১ শতাংশ। অন্যদিকে দেশের বাজারে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। তবে সবসময়ই যুক্তি দেয়া হয় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই জ্বালানির দাম ঠিক করা হয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম সামান্য বাড়লেও দেশের বাজারের তুলনায় কম।

দুধের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে ১৬ শতাংশ। আর দেশের বাজারে বেড়েছে ৬৩ শতাংশ।

যেসব পণ্য আমদানির ওপর নিরভরশীল নয়, দেশের উৎপাদনেই চাহিদা মিটে। সেসব পণ্যের দামও বেড়েছে এবং তা আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি।

যেমন আলুর দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে অনেক বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে আলুর দাম কমেছে ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে দেশের বাজারে আলুর দাম বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। আর ডিমের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে ২৬ শতাংশ এবং দেশের বাজারে বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

ব্রয়লার মুরগির দাম সারাবিশ্বেই বেড়েছে। দেশের বাজারে বেড়েছে ৬৬ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। আর গরুর মাংসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে ৫৬ শতাংশ এবং দেশের বাজারে বেড়েছে ৭৭ শতাংশ।

মোটা, মিনিকেট, পোলাও ইত্যাদি সব চালের গড় দাম বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। তবে চালের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি বেড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে।

দেশের বাজারে এই হারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এমন একাধিক পণ্য আছে, যেগুলোর দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে কিন্তু দেশের বাজারে বেড়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার নয়, ব্যবসায়ীদের অতিলোভ দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধির কারণ। ক্যাবিনেটে ৬২ শতাংশই ব্যবসায়ী। তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যের নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, ও মনিটরিংয়ে এর প্রতিফলন থাকার কথা। অর্থাৎ সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি। দেশে একটি বিশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দাতাদের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করলেও মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা ফ্রাংকেস্টাইন হয়ে গেছে। তাদের কঠোর হাতে রুখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে সিন্ডিকেট নাই। কিন্তু কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে সেটা কি সিন্ডিকেট নয়? এটা যদি সিন্ডিকেট না হয় তাহলে সিন্ডিকেট কোনটা?’

পরোক্ষভাবে এই সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করেছেন খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার, (সিন্ডিকেটের হোতাদের) জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম। সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে যে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে, সেটা সইতে তো আমাদের কষ্ট হবে।’

এদিকে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও মজুরি বাড়েনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে দেশে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৪ শতাংশ। এই হার গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অথচ ওই মাসে শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির গড় হার ৭.৫৮ শতাংশ।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের শ্রমজীবী মানুষসহ নিম্নআয়ের মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য গ্রহণ করছেন এবং চাহিদা কমিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়েছেন। এতে বড় একটি জনগোষ্ঠীর দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টিহীনতা ও শিক্ষায় ঘাটতি দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশের বাজারে প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি দুশ্চিন্তার বলে বলছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি সংবাদকে বলেছেন, ‘যেখানে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমছে, সেখানে দেশের বাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটি দুশ্চিন্তার। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর অন্যতম হলো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। আর সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব। এ ছাড়া অনেক পণ্য আছে, যেগুলো দেশেই উৎপাদন হয়। এসব পণ্যের দাম বাড়ার কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া।’

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘সরকারকে প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আমদানি ও উৎপাদনের সঠিক হিসাব রাখতে হবে, যাতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সহজ হয়। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

back to top