alt

শেয়ারবাজারে পতন : ফ্লোর প্রাইস, আতঙ্ক না জুয়া

রেজাউল করিম : শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

দীর্ঘদিন ধরে পতনের বৃত্তে আটকে আছে দেশের শেয়ারবাজার। এক কার্যদিবস কিছুটা উত্থান হলে পরের কয়েক কার্যদিবসে বড় পতন হচ্ছে।

এতে আতঙ্কিত হয়ে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা এই পতনকে স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন বললেও বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার কারণে এই পতন হচ্ছে। আর এর পেছনে জুয়াড়িদেরও (ম্যানিপুলেটর) হাত রয়েছে বলেই তাদের ধারণা।

গতবছর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মাঝে মাঝে উত্থান, মাঝে মাঝে পতন হয়েছে। অর্থাৎ উত্থান- পতনে সঙ্গতি রেখে বাজার সংশোধন হচ্ছিল। কিন্তু চলতি বছর এসে উত্থানের চেয়ে পতনের পাল্লা ভারী হতে শুরু।

চলতি বছর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এর অবস্থান ছিল ৬২৪২ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে। এরপর ধীরে ধীরে বেড়ে ১৭ জানুয়ারি সূচক ৬৩৪৬ দশমিক ২১ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এর কিছুদিন পর বড় পতন হয়ে ২৮ জানুয়ারি সূচক নেমে দাঁড়ায় ৬০৭৯ দশমিক ০৬ পয়েন্টে। অর্থাৎ মাঝে সামান্য উত্থান হয়ে যেটুকু বৃদ্ধি হয়, তারপরের পতনে বেশি হ্রাস পায়।

এরপরের মাসে সূচক সামান্য বেড়ে ১১ ফেব্রুয়ারি দাঁড়ায় ৬৪৪৭ দশমিক ০৭ পয়েন্টে। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক বড় পতন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৮ মার্চ ডিএসইএক্স নেমে যায় ৫৭৭৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে। এই পতনে আতঙ্কিত হয়ে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়ে দিচ্ছেন। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে লেনদেন বন্ধ রেখেছেন।

এই পতনকে স্বাভাবিক বলছেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সংবাদকে বলেন, ‘আসলে ফোর্স সেল এর কারণে বাজারে পতন হচ্ছে। আর ফ্লোস প্রাইস না থাকার কারণটাও আছে।’

এ প্রসঙ্গে গতকাল কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে পতন হচ্ছে সেটা ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার কারণে। আগে ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণে খুব কম কোম্পানির শেয়ার নিয়ে জুয়া খেলতে পারতো জুয়াড়িরা। এখন সব শেয়ার উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এখন তারা আগে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম আকাশচুম্বী করে রেখেছিল, সেগুলো এখন বিক্রি করে ফেলছে। এজন্য মূলত বড় পতন শুরু হয়েছে।’ তবে দীর্ঘমেয়াদে এই পতনকে তিনি স্বাভাবিকভাবে দেখছেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস যদি না থাকতো তাহলে আগে থেকেই কোম্পানির শেয়ারগুলোর দাম বার বার কারেকশান হওয়ার পর স্বাভাবিক হয়ে যেত। কিন্তু সেটা যেহেতু আগে হতে পারছিল না, এখন হওয়া শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, কিছুদিন পর বাজার ঠিক হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তো ভালো নয়। আর অর্থনীতির সঙ্গে শেয়ারবাজারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এখন মানুষের হাতে টান পড়ছে তাই শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আর নতুন কিছু মানুষ ঢুকছেও। তবে সেই সংখ্যাটা তুলনামূলক কম।’

গত এক সপ্তাহে (২৪-২৮ মার্চ) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমেছে ১৬৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট। আর তাতে সপ্তাহশেষে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে গেছে ১৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। একই অবস্থা দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকায়। আর গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে কমেছে ডিএসইর সব কটি সূচকও। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৬৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ২৬ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বা ০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এদিকে, ডিএসইএস সূচক কমেছে ৩৮ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৬ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বা ০ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর ডিএসই- ৩০ সূচক কমেছে ৪৬ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে আগের সপ্তাহে এটি বেড়েছিল ৬ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা ০ দশমিক ৩০ শতাংশ।

সূচকের এই নিম্নমুখী প্রবণতার পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৮৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। লেনদেন কমেছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

আবু আহমেদ বলছেন, ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজার আজব শেয়ারবাজার। এই বাজারে এমন কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে যেগুলোর বাস্তবে কোনো কার্যক্রমে নেই। এসব কোম্পানি শুধু নামে চলে। তারপরও জুয়াড়িরা এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম আকাশচুম্বী করে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তারা। সাধারণ বিনিয়োগকারীকে বেকায়দায় ফেলে শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাচ্ছে। তখন মার্কেটে পতন হচ্ছে।’ শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করতে কারো হাত থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যদি বাজারকে প্রভাবিত করতে কারো হাত থাকে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

বাজার স্থিতিশীল রাখতে বড় ও বিদেশি বিনিয়োগ খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন আবু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের মার্কেটে তো বিদেশি বিনিয়োগকারী নাই বললেই চলে। যদি বিদেশি বিনিয়োগ থাকতো তাহলে বাজারটা বড় হতো। আর বাজার বড় হলে ছোটখাটো কারেকশান তেমন প্রভাব ফেলতে পারতো না। ছোট মার্কেটে একটু ধাক্কায় বড় পতন হয়ে যায়।’

এই পতনের আরেকটা কারণ ‘বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক’ বলে উল্লেখ করেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমরা আহবান জানাই, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেন আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করে। বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার জন্য ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।’

ছবি

মেট্রোরেল প্রকল্প বাতিল হয়নি, ব্যয় কমানোর চেষ্টা চলছে: ডিএমটিসিএল এমডি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে চিঠি

ছবি

নতুন পে-স্কেলের ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে যাবে বর্তমান সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চট্টগ্রামে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল: ৩০ বছর চালাবে ডেনমার্কের কোম্পানি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ প্রশাসকদের

ছবি

বৃহস্পতিবার দোকান ও বিপণিবিতান খোলা রাখার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের

ছবি

চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

তিন শতাধিক শেয়ারের দরপতনে তলানিতে লেনদেন শেয়ারবাজারে

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা একতরফা সিদ্ধান্ত: বিএমবিএ

ছবি

সাবেক এমপিদের ৩১ বিলাসবহুল গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিল এনবিআর

ছবি

তরূণদের অংশগ্রহনে নারায়ণগঞ্জে উদ্যোক্তা সম্মেলন হলো

ছবি

বাজারে নতুন স্মার্টফোন হেলিও ৪৫

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে রিয়েলমি সি৮৫ প্রো উন্মোচন

ছবি

এলডিসি উত্তরণ ৩ বছর পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

ছবি

শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করবে আরএসসি, সায় দিচ্ছে না বিজিএমইএ

ছবি

শেয়ারবাজারে ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

ছবি

বাংলাদেশের তৈরি ফ্যাশনেবল পোশাকের আমদানি বাড়াবে জাপান

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

একনেকে ৭১৫০ কোটি টাকার ১২ প্রকল্প পাস

আবারও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সুপারিশ

ছবি

আকুর বিল পরিশোধের পরও ৩১ বিলিয়নের ওপরে রিজার্ভ

ছবি

লাইসেন্স পেলো ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’, চেয়ারম্যান নাজমা

ছবি

মুঠোফোনের ওপর শুল্ক-কর কমাতে এনবিআরকে বিটিআরসির চিঠি

ছবি

এলডিসি পেছানোর আবেদন করলে অন্য দেশ বিরোধিতা করবে: সেলিম রায়হান

ছবি

শেয়ারবাজারে পরপর সাত দিন পতন, লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার ঘরে

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার শূন্য বিষয়ে গভর্নরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

সিলেটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০তম বিডিনগ সম্মেলন

ছবি

নতুন পে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সরকার: অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

ছবি

বাজারে অনারের নতুন স্মার্টফোন প্লে ১০

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় পতন, ডিএসইর প্রধান সূচক কমলো ৬৮ পয়েন্ট

ছবি

সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতনের সিদ্ধান্ত নেবে আগামী সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চলতি সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম না কমলে আমদানির অনুমতি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

সুন্দরাতে ব্ল্যাক ফ্রাইডে এখন শপফেস্ট!

ছবি

কীটনাশক উৎপাদনের বাধা দূর করতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

ছবি

ব্যাংক খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা হচ্ছে

ছবি

ধারাবাহিক পতনে বাজার মূলধন হারালো সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা

tab

শেয়ারবাজারে পতন : ফ্লোর প্রাইস, আতঙ্ক না জুয়া

রেজাউল করিম

শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

দীর্ঘদিন ধরে পতনের বৃত্তে আটকে আছে দেশের শেয়ারবাজার। এক কার্যদিবস কিছুটা উত্থান হলে পরের কয়েক কার্যদিবসে বড় পতন হচ্ছে।

এতে আতঙ্কিত হয়ে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা এই পতনকে স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন বললেও বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার কারণে এই পতন হচ্ছে। আর এর পেছনে জুয়াড়িদেরও (ম্যানিপুলেটর) হাত রয়েছে বলেই তাদের ধারণা।

গতবছর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মাঝে মাঝে উত্থান, মাঝে মাঝে পতন হয়েছে। অর্থাৎ উত্থান- পতনে সঙ্গতি রেখে বাজার সংশোধন হচ্ছিল। কিন্তু চলতি বছর এসে উত্থানের চেয়ে পতনের পাল্লা ভারী হতে শুরু।

চলতি বছর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এর অবস্থান ছিল ৬২৪২ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে। এরপর ধীরে ধীরে বেড়ে ১৭ জানুয়ারি সূচক ৬৩৪৬ দশমিক ২১ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এর কিছুদিন পর বড় পতন হয়ে ২৮ জানুয়ারি সূচক নেমে দাঁড়ায় ৬০৭৯ দশমিক ০৬ পয়েন্টে। অর্থাৎ মাঝে সামান্য উত্থান হয়ে যেটুকু বৃদ্ধি হয়, তারপরের পতনে বেশি হ্রাস পায়।

এরপরের মাসে সূচক সামান্য বেড়ে ১১ ফেব্রুয়ারি দাঁড়ায় ৬৪৪৭ দশমিক ০৭ পয়েন্টে। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক বড় পতন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৮ মার্চ ডিএসইএক্স নেমে যায় ৫৭৭৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে। এই পতনে আতঙ্কিত হয়ে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়ে দিচ্ছেন। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে লেনদেন বন্ধ রেখেছেন।

এই পতনকে স্বাভাবিক বলছেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সংবাদকে বলেন, ‘আসলে ফোর্স সেল এর কারণে বাজারে পতন হচ্ছে। আর ফ্লোস প্রাইস না থাকার কারণটাও আছে।’

এ প্রসঙ্গে গতকাল কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে পতন হচ্ছে সেটা ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার কারণে। আগে ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণে খুব কম কোম্পানির শেয়ার নিয়ে জুয়া খেলতে পারতো জুয়াড়িরা। এখন সব শেয়ার উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এখন তারা আগে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম আকাশচুম্বী করে রেখেছিল, সেগুলো এখন বিক্রি করে ফেলছে। এজন্য মূলত বড় পতন শুরু হয়েছে।’ তবে দীর্ঘমেয়াদে এই পতনকে তিনি স্বাভাবিকভাবে দেখছেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস যদি না থাকতো তাহলে আগে থেকেই কোম্পানির শেয়ারগুলোর দাম বার বার কারেকশান হওয়ার পর স্বাভাবিক হয়ে যেত। কিন্তু সেটা যেহেতু আগে হতে পারছিল না, এখন হওয়া শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, কিছুদিন পর বাজার ঠিক হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তো ভালো নয়। আর অর্থনীতির সঙ্গে শেয়ারবাজারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এখন মানুষের হাতে টান পড়ছে তাই শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আর নতুন কিছু মানুষ ঢুকছেও। তবে সেই সংখ্যাটা তুলনামূলক কম।’

গত এক সপ্তাহে (২৪-২৮ মার্চ) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমেছে ১৬৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট। আর তাতে সপ্তাহশেষে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে গেছে ১৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। একই অবস্থা দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকায়। আর গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে কমেছে ডিএসইর সব কটি সূচকও। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৬৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ২৬ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বা ০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এদিকে, ডিএসইএস সূচক কমেছে ৩৮ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৬ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বা ০ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর ডিএসই- ৩০ সূচক কমেছে ৪৬ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে আগের সপ্তাহে এটি বেড়েছিল ৬ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা ০ দশমিক ৩০ শতাংশ।

সূচকের এই নিম্নমুখী প্রবণতার পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৮৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। লেনদেন কমেছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

আবু আহমেদ বলছেন, ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজার আজব শেয়ারবাজার। এই বাজারে এমন কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে যেগুলোর বাস্তবে কোনো কার্যক্রমে নেই। এসব কোম্পানি শুধু নামে চলে। তারপরও জুয়াড়িরা এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম আকাশচুম্বী করে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তারা। সাধারণ বিনিয়োগকারীকে বেকায়দায় ফেলে শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাচ্ছে। তখন মার্কেটে পতন হচ্ছে।’ শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করতে কারো হাত থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যদি বাজারকে প্রভাবিত করতে কারো হাত থাকে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

বাজার স্থিতিশীল রাখতে বড় ও বিদেশি বিনিয়োগ খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন আবু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের মার্কেটে তো বিদেশি বিনিয়োগকারী নাই বললেই চলে। যদি বিদেশি বিনিয়োগ থাকতো তাহলে বাজারটা বড় হতো। আর বাজার বড় হলে ছোটখাটো কারেকশান তেমন প্রভাব ফেলতে পারতো না। ছোট মার্কেটে একটু ধাক্কায় বড় পতন হয়ে যায়।’

এই পতনের আরেকটা কারণ ‘বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক’ বলে উল্লেখ করেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমরা আহবান জানাই, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেন আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করে। বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার জন্য ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।’

back to top