alt

অর্থ-বাণিজ্য

বাজেটের অর্থায়ন নিয়ে সংশয় অর্থনীতিবিদদের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

দেশের বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, কয়েক বছর আগে অর্থনীতির সূচকগুলো শক্ত অবস্থান শক্তিশালী ছিল। সেই ধারণা থেকে এবার বাজেট উপস্থাপন হয়েছে। কিন্তু বাজেটের অর্থায়ন দায়-দেনার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট পরবর্তী’ এক আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদেরা এমন ধারণার কথা প্রকাশ করেন।

এই সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা এবং সঞ্চালনা করেন ইআরএফ এক্সিকিউটিভ মেম্বার সাইফুল ইসলাম। আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন তার প্রবন্ধে বলেন, বাজেটে ২০২৫ সালে রিজার্ভ বৃদ্ধি করে ৩২ বিলিয়ন ডলার করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে এটি কিভাবে করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের বাজেট প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ করের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের আকার প্রতিনিয়ত বাড়ানো হচ্ছে। তবে কোনোভাবেই করজাল বিস্তৃত করা সম্ভব হচ্ছে না। একইসঙ্গে কর ফাঁকিও কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না।’

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এবার বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি কম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। তবে, অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে দুই লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বৈদেশি ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যার ৭২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং ৬৪ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি। ব্যাংক-বহির্ভূত ঋণ নেয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দুই বছরে সামষ্টিক অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এমন অবস্থায় আগামী অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে এখন ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি চলমান। আর আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ দশদিক ৫ শতাংশ। আগামী এক মাসের মধ্যে এটা অর্জন সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। চলতি বছরের ১১ মাসে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ। এক মাসের মধ্যে ৮ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব না। একইভাবে আগামী অর্থবছরে আমদানির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ; বর্তমানে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি বিরাজমান। এক-দুই মাসের মধ্যে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে পৌঁছানো সম্ভব নয়।’

দেশের স্বাধীনতার এত বছর পরে শুধু একটি পতাকা ও জাতীয় সংগীত পেয়েছি আমরা। কারণ এর ভেতরের অন্যান্য পিলারগুলো খুবই দুর্বল। বাংলাদেশের ‘স্টক মার্কেট’ নামের পিলারটিও খুব দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশের পুঁজিবাজারের সেনসেক্স বেড়ে অনন্য উচ্চতায় উঠেছে। আর আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখনো দূর্বল অবস্থায় রয়েছে।’

সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে না। দেশের মানুষেরাই দেশে বিনিয়োগ করছে না, তারা বিদেশে টাকা পাচার করছে। সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপক সমস্যা রয়েছে।’

এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংক কিনে ফেলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক। তিনি বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য এখন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা মুনাফা যদি বিদেশে না নিয়ে যেতে পারে তাহলে তারা বিনিয়োগ করবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের শিল্পের দেখাশোনা করার জন্য কোনো মন্ত্রণালয় নেই। একজন শিল্পমন্ত্রী আছেন তিনি সরকারি শিল্পকারখানা দেখেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আছে, সেখানকার মন্ত্রী বেসরকারি ব্যবসা-বাণিজ্য দেখেন। দেশের শিল্প দেখবে এমন মন্ত্রণালয় দেশে নেই।’

এনামুল হক আরও বলেন, ‘যত ধনী লোক আছে সবাই বিদেশে চলে যেতে চায়। শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। বাংলাদেশে ব্যবসা করে বিদেশে গিয়ে সেরা ধনী লোক হয়ে বসে আছে। তার মানে হলো, তারাও দেশে থাকতে চাইছে না। এটা রোধ করতে হলে অর্থনীতিকে রিফর্ম করতে হবে। অর্থনীতিকে রিফর্ম না করলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।’

ব্যাংক এখন কাজ করছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংক এখন কয়েকজন মানুষের হাতের মুঠোয়। ব্যাংক খেলাপি নামের যে শব্দগুলো শুনছেন এগুলো গৎবাঁধা শব্দ। এগুলোর কোনো পরিবর্তন হবে না, যতক্ষণ না ব্যাংকিং খ্যাত রিফর্ম না হয়। ব্যাংক থেকে টাকা নেয়া হয় ব্যবসা করার জন্য। এখন যেটা হচ্ছে, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংক কিনে ফেলছে। এই অবস্থায় বিনিয়োগ আশা করা যায় না। নতুন অর্থমন্ত্রী হয়েছেন, আশা করেছিলাম এই বিষয়গুলো সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা থাকবে। কিন্তু সেটা পাওয়া যায়নি।

মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান এই অধ্যাপক। প্রস্তুতি ছাড়া মধ্যম আয়ের দেশ হবে না। এ জন্য মধ্যম আয়ের উপযোগী সত্যিকার আয় করতে হবে। এ জন্য জীবনবিমা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বৃদ্ধ মানুষ রাস্তায় পড়ে মরে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘এখন অর্থনীতির পাশাপাশি মানুষ বিশ্বাস করে, ভরসা করতে পারে এমন স্থিতিশীল নীতিও নিশ্চিত করতে হবে।’

বাজেটের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়ে থাকে কিন্তু বাজেটে ব্যবসায়ীদের কোনো প্রস্তাব রাখা হয়না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খান।

মোহাম্মদ আলী খান বলেন, ‘বাজেটের তিন মাস আগে থেকেই আলোচনা হয়ে থাকে। আমি বিটিএমএর সভাপতি হিসেবে গত পাঁচ বছর ধরে একই আলোচনা করে আসছি। সে আলোচনা কোনো কিছুই এনবিআরের দরজা অতিক্রম করে প্রবেশ করে না। আলোচনাগুলো টেবিলেই থেকে যায়। আমাদের আলোচনা ও পরামর্শগুলো কোনো কিছুই এনবিআর আমলে নেয়না। এনবিআর যেটা ভালো মনে করে যেটাই বাজেটে লিখে।’

তিনি বলেন, ‘বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রাজস্ব আয় থেকে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা বাজেটে ধরা হয়েছে। এর ভিতরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা এনবিআরের আয়, বাকি আয় নন এনবিআরের আয়। কিন্তু একটি জিনিসি করা দেখেন, গরুর দুধ গরুই খাচ্ছে। সরকারের পরিচালনা ব্যয় ৪ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। সরকার যা আয় করে সেটাই তারা ব্যয় করবে। জাতির জন্য একটা টাকাও বরাদ্ধ নেই এনবিআরের।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে একই কথা বলতেছি বাজেটে। এনবিআর বাজেটের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে কিন্তু তাদের মতো করে তারা বাজেট লিখে। সেখানে বাজেটে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে পাট ও চামড়া শিল্প ধ্বংসের দারপ্রান্তে। এখন শুধু বাকি আছে শিল্প-কারখানা। তবে এভাবে চলতে থাকলে সেটাও বেশি দিন লাগবে না ধ্বংসের দারপ্রান্তে যেতে। ব্যবসায়ীরা এখন ঋণ পাচ্ছে না। ব্যাংকে গেলে বলে কোথায় থেকে ঋণ দিবে। ঋণ সব যাচ্ছে বন্ডে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক সংকটময় চলছে এখাতে। সেই সংকট কাটাতে বাজেটে কোনো প্রকার বরাদ্দ রাখা হয়নি। যা এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ পাওয়া যাবে। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে এখানে বিশেষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব রাখছি।’

‘গত পাঁচ বছর ধরে একই কথা বলতেছি বাজেটে। এনবিআর বাজেটের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে করে কিন্তু তাদের মতো করে তারা বাজেট লিখে। সেখানে বাজেটে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, দেশে পাট ও চামড়া শিল্প ধ্বংসের দারপ্রান্তে। এখন শুধু বাকি আছে শিল্প-কারখানা। তবে এভাবে চলতে থাকলে সেটাও বেশি দিন লাগবে না ধ্বংসের দারপ্রান্তে যেতে। ব্যবসায়ীরা এখন ঋণ পাচ্ছে না। ব্যাংকে গেলে বলে কোথায় থেকে ঋণ দিবে। ঋণ সব যাচ্ছে বন্ডে।

তিনি বলেন, ‘অনেক সংকটময় চলছে এখাতে। সেই সংকট কাটাতে বাজেটে কোন প্রকার বরাদ্দ রাখা হয়নি। যা এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ পাওয়া যাবে। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে এখানে বিশেষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব রাখছি।’

ছবি

ইউসিবি ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মধ্যে চুক্তি

ছবি

রিয়েলমি ঈদ ক্যাম্পেইন বিজয়ী পেলেন মোটরসাইকেল

ছবি

২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের মার্কেট শেয়ারে ইনফিনিক্সের প্রবৃদ্ধি অর্জন

ছবি

সূচক বেড়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে

বাংলাদেশের জন্য ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন দিয়েছে আইএমএফ

ছবি

কক্সবাজার-ময়মনসিংহে প্রিয়শপের হাব চালু

ছবি

১০ মাসে বিদেশি ঋণের সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে জাপান

ছবি

ছাগল কান্ডঃ মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের বোর্ড থেকেও সরানো হয়েছে

ছবি

আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি নিয়ে সংশয়

ছবি

বিশ্বব্যাংক ৯০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে

সব ধরনের সবজিসহ মাছ-মাংসের বাজারও উত্তপ্ত

ছবি

কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকা, বেড়েছে আলু-শসার দাম

বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে চামড়ার দাম কম

ছবি

ধারাবাহিক পতনে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা মূলধন কমল ডিএসইতে

ছবি

ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের অফিসিয়াল পার্টনার ভিভো

ছবি

উত্তরাঞ্চলে এগ্রিটেক স্টার্টআপ ‘ফসল’ ও ‘সেফ’ এর ফারমার্স সেন্টার চালু

ছবি

বাংলাদেশে হুয়াওয়ের ওয়াই-ফাই ৭ ব্যবহার উপযোগী অ্যাকসেস পয়েন্ট পণ্য উন্মোচন

ছবি

এক সপ্তাহে রিজার্ভ বেড়েছে ৫৪ কোটি ডলার

বুড়িমারী স্থলবন্দরে ৮ দিন আমদানি-রফতানি বন্ধ

ছবি

ইনফিনিক্স স্মার্টফোন কিনে বাইক জিতলেন গাজীপুরের রাসেল

ছবি

ইউসিবি এখন এসএমই খাতে বেশি জোর দিচ্ছে : এমডি আরিফ কাদরী

ছবি

চট্টগ্রাম ও সিলেটের সেরা পাঠাও হিরোরা পুরস্কৃত

ব্যাংকারদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ‘শিথিল’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার প্রায় শতভাগ

ছবি

নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা না গেলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না: প্রতিমন্ত্রী পলক

ছবি

নাটোরের সিংড়ার পশুরহাটে ক্যাশলেস লেনদেনে নগদ

হজযাত্রীদের বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা জরুরি ডাক্তারের পরামর্শ সেবা প্রদান করবে মেটলাইফ

ছবি

বাজেটে রপ্তানি খাতে প্রস্তাবনার প্রতিফলন ঘটেনি : ইএবি

ছবি

শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক পতন, ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন সূচক

ছবি

বিক্রয় বিরাট হাট ২০২৪ ক্যাম্পেইন শুরু

ছবি

টেকসই উন্নয়নের জন্য টেকসই আর্থিক নীতির তাগিদ দিয়েছে ফিকি

ছবি

দেশ ‘অনৈতিক’ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে ‘যাচ্ছে’

ছবি

প্রস্তাবিত বাজেট বে-নজির বাজেট : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

ছবি

খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখছে ‘কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’

ছবি

বাজেটের পর প্রথমদিনেই শেয়ারবাজারে বড় পতন

ছবি

‘লোকসানে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে’ সিএনজি ফিলিং স্টেশন

tab

অর্থ-বাণিজ্য

বাজেটের অর্থায়ন নিয়ে সংশয় অর্থনীতিবিদদের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

দেশের বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, কয়েক বছর আগে অর্থনীতির সূচকগুলো শক্ত অবস্থান শক্তিশালী ছিল। সেই ধারণা থেকে এবার বাজেট উপস্থাপন হয়েছে। কিন্তু বাজেটের অর্থায়ন দায়-দেনার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট পরবর্তী’ এক আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদেরা এমন ধারণার কথা প্রকাশ করেন।

এই সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা এবং সঞ্চালনা করেন ইআরএফ এক্সিকিউটিভ মেম্বার সাইফুল ইসলাম। আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন তার প্রবন্ধে বলেন, বাজেটে ২০২৫ সালে রিজার্ভ বৃদ্ধি করে ৩২ বিলিয়ন ডলার করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে এটি কিভাবে করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের বাজেট প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ করের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের আকার প্রতিনিয়ত বাড়ানো হচ্ছে। তবে কোনোভাবেই করজাল বিস্তৃত করা সম্ভব হচ্ছে না। একইসঙ্গে কর ফাঁকিও কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না।’

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এবার বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি কম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। তবে, অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে দুই লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বৈদেশি ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যার ৭২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং ৬৪ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি। ব্যাংক-বহির্ভূত ঋণ নেয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দুই বছরে সামষ্টিক অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এমন অবস্থায় আগামী অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে এখন ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি চলমান। আর আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ দশদিক ৫ শতাংশ। আগামী এক মাসের মধ্যে এটা অর্জন সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। চলতি বছরের ১১ মাসে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ। এক মাসের মধ্যে ৮ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব না। একইভাবে আগামী অর্থবছরে আমদানির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ; বর্তমানে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি বিরাজমান। এক-দুই মাসের মধ্যে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে পৌঁছানো সম্ভব নয়।’

দেশের স্বাধীনতার এত বছর পরে শুধু একটি পতাকা ও জাতীয় সংগীত পেয়েছি আমরা। কারণ এর ভেতরের অন্যান্য পিলারগুলো খুবই দুর্বল। বাংলাদেশের ‘স্টক মার্কেট’ নামের পিলারটিও খুব দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশের পুঁজিবাজারের সেনসেক্স বেড়ে অনন্য উচ্চতায় উঠেছে। আর আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখনো দূর্বল অবস্থায় রয়েছে।’

সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে না। দেশের মানুষেরাই দেশে বিনিয়োগ করছে না, তারা বিদেশে টাকা পাচার করছে। সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপক সমস্যা রয়েছে।’

এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংক কিনে ফেলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক। তিনি বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য এখন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা মুনাফা যদি বিদেশে না নিয়ে যেতে পারে তাহলে তারা বিনিয়োগ করবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের শিল্পের দেখাশোনা করার জন্য কোনো মন্ত্রণালয় নেই। একজন শিল্পমন্ত্রী আছেন তিনি সরকারি শিল্পকারখানা দেখেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আছে, সেখানকার মন্ত্রী বেসরকারি ব্যবসা-বাণিজ্য দেখেন। দেশের শিল্প দেখবে এমন মন্ত্রণালয় দেশে নেই।’

এনামুল হক আরও বলেন, ‘যত ধনী লোক আছে সবাই বিদেশে চলে যেতে চায়। শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। বাংলাদেশে ব্যবসা করে বিদেশে গিয়ে সেরা ধনী লোক হয়ে বসে আছে। তার মানে হলো, তারাও দেশে থাকতে চাইছে না। এটা রোধ করতে হলে অর্থনীতিকে রিফর্ম করতে হবে। অর্থনীতিকে রিফর্ম না করলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।’

ব্যাংক এখন কাজ করছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংক এখন কয়েকজন মানুষের হাতের মুঠোয়। ব্যাংক খেলাপি নামের যে শব্দগুলো শুনছেন এগুলো গৎবাঁধা শব্দ। এগুলোর কোনো পরিবর্তন হবে না, যতক্ষণ না ব্যাংকিং খ্যাত রিফর্ম না হয়। ব্যাংক থেকে টাকা নেয়া হয় ব্যবসা করার জন্য। এখন যেটা হচ্ছে, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংক কিনে ফেলছে। এই অবস্থায় বিনিয়োগ আশা করা যায় না। নতুন অর্থমন্ত্রী হয়েছেন, আশা করেছিলাম এই বিষয়গুলো সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা থাকবে। কিন্তু সেটা পাওয়া যায়নি।

মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান এই অধ্যাপক। প্রস্তুতি ছাড়া মধ্যম আয়ের দেশ হবে না। এ জন্য মধ্যম আয়ের উপযোগী সত্যিকার আয় করতে হবে। এ জন্য জীবনবিমা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বৃদ্ধ মানুষ রাস্তায় পড়ে মরে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘এখন অর্থনীতির পাশাপাশি মানুষ বিশ্বাস করে, ভরসা করতে পারে এমন স্থিতিশীল নীতিও নিশ্চিত করতে হবে।’

বাজেটের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়ে থাকে কিন্তু বাজেটে ব্যবসায়ীদের কোনো প্রস্তাব রাখা হয়না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খান।

মোহাম্মদ আলী খান বলেন, ‘বাজেটের তিন মাস আগে থেকেই আলোচনা হয়ে থাকে। আমি বিটিএমএর সভাপতি হিসেবে গত পাঁচ বছর ধরে একই আলোচনা করে আসছি। সে আলোচনা কোনো কিছুই এনবিআরের দরজা অতিক্রম করে প্রবেশ করে না। আলোচনাগুলো টেবিলেই থেকে যায়। আমাদের আলোচনা ও পরামর্শগুলো কোনো কিছুই এনবিআর আমলে নেয়না। এনবিআর যেটা ভালো মনে করে যেটাই বাজেটে লিখে।’

তিনি বলেন, ‘বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রাজস্ব আয় থেকে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা বাজেটে ধরা হয়েছে। এর ভিতরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা এনবিআরের আয়, বাকি আয় নন এনবিআরের আয়। কিন্তু একটি জিনিসি করা দেখেন, গরুর দুধ গরুই খাচ্ছে। সরকারের পরিচালনা ব্যয় ৪ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। সরকার যা আয় করে সেটাই তারা ব্যয় করবে। জাতির জন্য একটা টাকাও বরাদ্ধ নেই এনবিআরের।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে একই কথা বলতেছি বাজেটে। এনবিআর বাজেটের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে কিন্তু তাদের মতো করে তারা বাজেট লিখে। সেখানে বাজেটে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে পাট ও চামড়া শিল্প ধ্বংসের দারপ্রান্তে। এখন শুধু বাকি আছে শিল্প-কারখানা। তবে এভাবে চলতে থাকলে সেটাও বেশি দিন লাগবে না ধ্বংসের দারপ্রান্তে যেতে। ব্যবসায়ীরা এখন ঋণ পাচ্ছে না। ব্যাংকে গেলে বলে কোথায় থেকে ঋণ দিবে। ঋণ সব যাচ্ছে বন্ডে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক সংকটময় চলছে এখাতে। সেই সংকট কাটাতে বাজেটে কোনো প্রকার বরাদ্দ রাখা হয়নি। যা এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ পাওয়া যাবে। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে এখানে বিশেষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব রাখছি।’

‘গত পাঁচ বছর ধরে একই কথা বলতেছি বাজেটে। এনবিআর বাজেটের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে করে কিন্তু তাদের মতো করে তারা বাজেট লিখে। সেখানে বাজেটে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, দেশে পাট ও চামড়া শিল্প ধ্বংসের দারপ্রান্তে। এখন শুধু বাকি আছে শিল্প-কারখানা। তবে এভাবে চলতে থাকলে সেটাও বেশি দিন লাগবে না ধ্বংসের দারপ্রান্তে যেতে। ব্যবসায়ীরা এখন ঋণ পাচ্ছে না। ব্যাংকে গেলে বলে কোথায় থেকে ঋণ দিবে। ঋণ সব যাচ্ছে বন্ডে।

তিনি বলেন, ‘অনেক সংকটময় চলছে এখাতে। সেই সংকট কাটাতে বাজেটে কোন প্রকার বরাদ্দ রাখা হয়নি। যা এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ পাওয়া যাবে। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে এখানে বিশেষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব রাখছি।’

back to top