সরকারের প্রকাশিত মূল্যস্ফীতির তথ্যের সঙ্গে বাজারের বাস্তব অবস্থার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার মূল্যস্ফীতির তথ্যে বলছে, নিত্যপণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু বাজারে দিয়ে দেখা যায়, চাল, ডাল, সবজি, মাছ-মাংস, ডিম থেকে শুরু করে অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তবে অর্থনীতিবিদরা দাবি করছেন, দাম বাড়লেও বৃদ্ধির হার আগের চেয়ে কমেছে। কিছুদিন পর হয়তো স্থীতিশীল পর্যায়ে চলে আসবে।
বুধবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই-আগস্টের পর দুই অঙ্কের নিচে নেমে এসেছে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় মিলেছে, তা এ বছরের সেপ্টেম্বরে কিনতে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা। জুলাইয়ে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ যা আগস্টে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমে আসে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সবশেষ এক অঙ্কের ঘরে ছিল মূল্যস্ফীতি। সে সময় পয়েন্ট-টু- পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য কমে যাওয়া। সেপ্টেম্বরে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪০ যা আগস্টে ছিল ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
অর্থাৎ, মাসের ব্যবধানে শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। অথচ গতবছর সেপ্টেম্বরেও খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত খাতে কমার প্রবণতা ছিল নিতান্তই কম। সেপ্টেম্বরে এ খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫০ যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
তবে সরকারের এই মূল্যস্থীতির তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। কারণ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গত এক, দেড় মাসের ব্যবধানে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। যেমন, বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, এক কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। অথচ মাসখানেক আগে বরবটি ও বেগুনের কেজি বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে প্রায় ৬০ ও ৭০ টাকায়।
অন্যান্য সবজির মধ্যে, এক মাস আগে কাঁকরোল, ঢ্যাঁড়শের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বুধবার এই সবজিটি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৮০ টাকায়। এ ছাড়া পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে, যা এক মাস আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কেনা গেছে।
বুধবার এই বিষয়ে কথা হয় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, দাম বাড়লেও আগের চেয়ে বৃদ্ধির হার কিছুটা কমছে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘দাম এখনও কিছুটা বাড়ছে। তবে এই বাড়তির হারটা কিছুটা কমেছে। যেসব পণ্য নি¤œ আয়ের মানুষ বেশি ভোগ করেন সেসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির হারটা আরেকটু বেশি।’
শুধু সবজি নয়, দাম বেড়েছে ডিম-মুরগিরও। গত এক মাস আগে প্রতিডজন ডিমের দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। সেই ডিম বুধবার বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির কেজি কিনতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগির কেজি উঠেছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। মাস দেড়েক আগে ব্রয়লারের কেজি ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
এই সময়ে চালের দামও বেড়েছে। বাজারে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় মাঝারি আকারের (বিআর-২৮ ও পায়জাম) জাতের চাল। খুচরায় বর্তমানে এ দুই জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকায়। মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এ ছাড়া চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। দুই মাস আগে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০, মাঝারি চাল ৫৪ থেকে ৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে নিত্যপণ্যের দাম একটা সময় স্থীতিশীল পর্যায়ে যাবে-এমনটা আশা করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘গত সরকারের সময়ে যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তো সে হারে বাড়বে না। আরও হয়তো কিছুদিন বেড়ে সেটা এক সময় স্থীতিশীল পর্যায়ে চলে আসবে। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪
সরকারের প্রকাশিত মূল্যস্ফীতির তথ্যের সঙ্গে বাজারের বাস্তব অবস্থার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার মূল্যস্ফীতির তথ্যে বলছে, নিত্যপণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু বাজারে দিয়ে দেখা যায়, চাল, ডাল, সবজি, মাছ-মাংস, ডিম থেকে শুরু করে অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তবে অর্থনীতিবিদরা দাবি করছেন, দাম বাড়লেও বৃদ্ধির হার আগের চেয়ে কমেছে। কিছুদিন পর হয়তো স্থীতিশীল পর্যায়ে চলে আসবে।
বুধবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই-আগস্টের পর দুই অঙ্কের নিচে নেমে এসেছে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় মিলেছে, তা এ বছরের সেপ্টেম্বরে কিনতে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা। জুলাইয়ে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ যা আগস্টে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমে আসে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সবশেষ এক অঙ্কের ঘরে ছিল মূল্যস্ফীতি। সে সময় পয়েন্ট-টু- পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য কমে যাওয়া। সেপ্টেম্বরে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪০ যা আগস্টে ছিল ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
অর্থাৎ, মাসের ব্যবধানে শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। অথচ গতবছর সেপ্টেম্বরেও খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত খাতে কমার প্রবণতা ছিল নিতান্তই কম। সেপ্টেম্বরে এ খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫০ যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
তবে সরকারের এই মূল্যস্থীতির তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। কারণ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গত এক, দেড় মাসের ব্যবধানে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। যেমন, বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, এক কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। অথচ মাসখানেক আগে বরবটি ও বেগুনের কেজি বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে প্রায় ৬০ ও ৭০ টাকায়।
অন্যান্য সবজির মধ্যে, এক মাস আগে কাঁকরোল, ঢ্যাঁড়শের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বুধবার এই সবজিটি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৮০ টাকায়। এ ছাড়া পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে, যা এক মাস আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কেনা গেছে।
বুধবার এই বিষয়ে কথা হয় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, দাম বাড়লেও আগের চেয়ে বৃদ্ধির হার কিছুটা কমছে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘দাম এখনও কিছুটা বাড়ছে। তবে এই বাড়তির হারটা কিছুটা কমেছে। যেসব পণ্য নি¤œ আয়ের মানুষ বেশি ভোগ করেন সেসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির হারটা আরেকটু বেশি।’
শুধু সবজি নয়, দাম বেড়েছে ডিম-মুরগিরও। গত এক মাস আগে প্রতিডজন ডিমের দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। সেই ডিম বুধবার বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির কেজি কিনতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগির কেজি উঠেছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। মাস দেড়েক আগে ব্রয়লারের কেজি ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
এই সময়ে চালের দামও বেড়েছে। বাজারে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় মাঝারি আকারের (বিআর-২৮ ও পায়জাম) জাতের চাল। খুচরায় বর্তমানে এ দুই জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকায়। মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এ ছাড়া চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। দুই মাস আগে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০, মাঝারি চাল ৫৪ থেকে ৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে নিত্যপণ্যের দাম একটা সময় স্থীতিশীল পর্যায়ে যাবে-এমনটা আশা করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘গত সরকারের সময়ে যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তো সে হারে বাড়বে না। আরও হয়তো কিছুদিন বেড়ে সেটা এক সময় স্থীতিশীল পর্যায়ে চলে আসবে। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’