alt

অর্থ-বাণিজ্য

চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় হাইকোর্টের রায়

মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেলেন বাবরসহ সাতজন, পরেশ বড়ুয়ার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক: : বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সাতজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) এই রায় ঘোষণা করেন। ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) এবং আসামিদের আপিলের ওপর দীর্ঘ শুনানি শেষে এই রায় দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন:

১. সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর

২. এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী

৩. রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসিন তালুকদার

৪. সিইউএফএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ কে এম এনামুল হক

৫. সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্প সচিব নুরুল আমিন

৬. এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম

৭. জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (তিনি অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তার মামলাটি অকার্যকর হয়ে গেছে)।

এর মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী এবং আব্দুর রহিম মৃত্যুবরণ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা অকার্যকর হয়ে গেছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পরেশ বড়ুয়ার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। উল্লেখ্য, তিনি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (উইন্ডিপেন্ডেন্ট লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) সামরিক কমান্ডার।

হাইকোর্ট আরও ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। তারা হলেন:

১. এনএসআইয়ের সাবেক উপ-পরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন

২. এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক (নিরাপত্তা) উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহমেদ

৩. এনএসআইয়ের সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান

৪. চোরাচালানি হিসেবে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান

৫. দীন মোহাম্মদ

৬. ট্রলার মালিক হাজী আবদুস সোবহান।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। আসামিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান এবং বাবরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

রায়ের পর শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, “মোট সাতজন খালাস পেয়েছেন, যাদের মধ্যে চারজন কন্টেস্ট করেছেন এবং একজন পলাতক ছিলেন। বাকি দুইজনের (নিজামী ও আব্দুর রহিম) মৃত্যুর কারণে তাদের মামলা এবেটেড হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাকে দ্বিতীয় তদন্তের ভিত্তিতে মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছিল, যা আদালত গ্রহণযোগ্য মনে করেননি।”

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর সিইউএফএল ঘাট থেকে ১০ ট্রাক ভর্তি চোরাচালান করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটক করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার কাছে পাচারের উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল।

ঘটনার পরদিন কর্ণফুলী থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়।একটি অস্ত্র আইনে এবং আরেকটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে। তদন্তে বেরিয়ে আসে, এই অস্ত্র চোরাচালানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্টতা ছিল।

২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এসএম মজিবুর রহমান ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন:

লুৎফুজ্জামান বাবর,মতিউর রহমান নিজামী,পরেশ বড়ুয়া,রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী,আব্দুর রহিম,নুরুল আমিন,মোহসিন তালুকদার,এ কে এম এনামুল হক

অন্যদিকে, অস্ত্র আইনে করা মামলায় আসামিদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং একটি ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ডসহ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

জজ আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছায়। একই বছরের মধ্যেই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন।

হাইকোর্ট তার রায়ে উল্লেখ করেন, “মামলাটির তদন্তে গাফিলতি ছিল এবং সঠিক প্রক্রিয়ায় তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে লুৎফুজ্জামান বাবরসহ কয়েকজনকে খালাস দেওয়া হলো।”

১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় চোরাচালান মামলা। এই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দ্বিতীয় তদন্তে নতুন করে বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

এই মামলার রায়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসে।

এই রায়ের ফলে উচ্চ আদালত তদন্তের মান এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছে। একইসঙ্গে চোরাচালানের মতো গুরুতর অপরাধে রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।

সংশোধিত এই রায়ের মাধ্যমে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার দীর্ঘ ২০ বছরের আইনি লড়াইয়ে নতুন মোড় নিল।

ছবি

দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা সম্প্রসারণে ‘বেসিস জাপান ডে ২০২৪’

ছবি

ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে শেয়ারবাজার

ছবি

বাজারে লজিটেকের এম১৯৬ ব্লু-টুথ মাউস

ছবি

চট্টগ্রামবাসীদের জন্য পাঠাও এর ক্যাম্পেইন ও’বদ্দা অনলি চিটাং

ছবি

দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে ১ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ, মজুরি না বাড়ালে দুর্দশা অব্যাহত

ছবি

চিকিৎসার নামে প্রতিবছর ৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

ছবি

সি-সুইট অ্যাওয়ার্ড পেলেন বিএটি বাংলাদেশের সারজিল সারওয়ার

ছবি

ব্লুুমবার্গ টেকসই উন্নয়ন তালিকায় ১০ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান

ছবি

বেক্সিমকো গ্রুপের ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণ, হাইকোর্টে শুনানি ২২ জানুয়ারি

ছবি

করছাড় সীমিত করার তাগিদ অর্থ উপদেষ্টার, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতার সমালোচনা

ছবি

সিলেটে আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহ সিরাজের ওপর হামলার অভিযোগ

সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি, বেড়েছে ব্রয়লারের দামও

ছবি

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের ১২ মাসে ১২ হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি

এস আলম-আকিজের বিরুদ্ধে নারী ব্যবসায়ীর প্রতারণা মামলা

ছবি

১৫তম বিজমায়েস্ট্রোজ এর চূড়ান্ত পর্ব উদযাপন করেছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ

ছবি

বিদ্যুতে ‘অসম’ চুক্তি বাতিল ‘অতটা সহজ নয়’: পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

নতুন বছরে প্রথম এলএনজি কেনায় প্রতি ইউনিট ১৫.০২ ডলারে চূড়ান্ত অনুমোদন

ছবি

টিসিবি কার্ড বিতরণে অনিয়ম বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

করছাড়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার

ছবি

খেলাপি ঋণের ৭০ শতাংশ ১০টি ব্যাংকে, বিপাকে ব্যাংকিং খাত

ছবি

রাজধানীতে বুধবার শুরু হচ্ছে সূতা, বস্ত্র ও আনুষাঙ্গিক পণ্যের প্রদর্শনী

ছবি

মূসক ৯ শতাংশে নামানোর উদ্যোগ, শুল্ক ছাড় কমানোর পরিকল্পনা: এনবিআর চেয়ারম্যান

ছবি

কাল শুরু হচ্ছে অর্থনৈতিক শুমারি, চাওয়া হবে বিদেশিদের তথ্য

প্রযুক্তির ব্যবহার ৫০ শতাংশ বাড়লে চাকরি হারাতে পারেন ১৮ লাখ মানুষ: বিআইডিএস

ছবি

বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট এবং দেশে ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধি করতে সহযোগি হবে ফিকি

ছবি

নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেডের বেশিরভাগ শেয়ার অধিগ্রহণ করবে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস

ছবি

জ্বালানির আমদানি নির্ভরতা কমাতে নিজস্ব উৎস ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে মনোনিবেশের আহ্বান

ছবি

চামচা পুঁজিবাদের বিকাশ থেকে অগণতান্ত্রিক মনোভাব তৈরি হয়েছে : রেহমান সোবহান

ছবি

উবার বাংলাদেশের ৮ বছর পূর্তি উদযাপন

ছবি

করপোরেট গভর্নেন্সে স্বীকৃতি পেল বিএটি বাংলাদেশ

রাণীনগরে ন্যায্যমূল্যের দোকান : স্বল্প আয়ের মানুষের স্বস্তি

ছবি

পুঁজিবাজারে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ১১৫ কোটি টাকা জরিমানা

ছবি

মূল্যস্ফীতির চাপে নিত্যপণ্যের বাজার, খাদ্যদ্রব্যে ১৩.৮০% মূল্যবৃদ্ধি

আইএমএফ-এর অধিকাংশ শর্ত পূরণ, চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় ফেব্রুয়ারিতে

এইচআর ম্যানেজমেন্টে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে ‘ট্যালেন্ট লেন্স হাব’

ছবি

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার প্রসারে টিকটকের কর্মশালা

tab

অর্থ-বাণিজ্য

চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় হাইকোর্টের রায়

মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেলেন বাবরসহ সাতজন, পরেশ বড়ুয়ার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক:

বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সাতজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) এই রায় ঘোষণা করেন। ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) এবং আসামিদের আপিলের ওপর দীর্ঘ শুনানি শেষে এই রায় দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন:

১. সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর

২. এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী

৩. রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসিন তালুকদার

৪. সিইউএফএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ কে এম এনামুল হক

৫. সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্প সচিব নুরুল আমিন

৬. এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম

৭. জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (তিনি অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তার মামলাটি অকার্যকর হয়ে গেছে)।

এর মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী এবং আব্দুর রহিম মৃত্যুবরণ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা অকার্যকর হয়ে গেছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পরেশ বড়ুয়ার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। উল্লেখ্য, তিনি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (উইন্ডিপেন্ডেন্ট লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) সামরিক কমান্ডার।

হাইকোর্ট আরও ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। তারা হলেন:

১. এনএসআইয়ের সাবেক উপ-পরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন

২. এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক (নিরাপত্তা) উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহমেদ

৩. এনএসআইয়ের সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান

৪. চোরাচালানি হিসেবে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান

৫. দীন মোহাম্মদ

৬. ট্রলার মালিক হাজী আবদুস সোবহান।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। আসামিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান এবং বাবরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

রায়ের পর শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, “মোট সাতজন খালাস পেয়েছেন, যাদের মধ্যে চারজন কন্টেস্ট করেছেন এবং একজন পলাতক ছিলেন। বাকি দুইজনের (নিজামী ও আব্দুর রহিম) মৃত্যুর কারণে তাদের মামলা এবেটেড হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাকে দ্বিতীয় তদন্তের ভিত্তিতে মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছিল, যা আদালত গ্রহণযোগ্য মনে করেননি।”

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর সিইউএফএল ঘাট থেকে ১০ ট্রাক ভর্তি চোরাচালান করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটক করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার কাছে পাচারের উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল।

ঘটনার পরদিন কর্ণফুলী থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়।একটি অস্ত্র আইনে এবং আরেকটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে। তদন্তে বেরিয়ে আসে, এই অস্ত্র চোরাচালানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্টতা ছিল।

২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এসএম মজিবুর রহমান ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন:

লুৎফুজ্জামান বাবর,মতিউর রহমান নিজামী,পরেশ বড়ুয়া,রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী,আব্দুর রহিম,নুরুল আমিন,মোহসিন তালুকদার,এ কে এম এনামুল হক

অন্যদিকে, অস্ত্র আইনে করা মামলায় আসামিদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং একটি ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ডসহ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

জজ আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছায়। একই বছরের মধ্যেই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন।

হাইকোর্ট তার রায়ে উল্লেখ করেন, “মামলাটির তদন্তে গাফিলতি ছিল এবং সঠিক প্রক্রিয়ায় তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে লুৎফুজ্জামান বাবরসহ কয়েকজনকে খালাস দেওয়া হলো।”

১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় চোরাচালান মামলা। এই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দ্বিতীয় তদন্তে নতুন করে বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

এই মামলার রায়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসে।

এই রায়ের ফলে উচ্চ আদালত তদন্তের মান এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছে। একইসঙ্গে চোরাচালানের মতো গুরুতর অপরাধে রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।

সংশোধিত এই রায়ের মাধ্যমে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার দীর্ঘ ২০ বছরের আইনি লড়াইয়ে নতুন মোড় নিল।

back to top