বাংলাদেশের বাজারে অব্যাহতভাবে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি ও নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়াতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রব্যমূল্য কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়াসহ, ‘কর অব্যাহতি’ অপসারণ, ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের’ রাশ টেনে ধরা, মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা, বিনিময় হার আরও নমনীয় করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি তাদের মিশন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধিদলের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এসব কথা বলেন। এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করেছে সংস্থাটি।
চতুর্থ কিস্তি ঋণ দেয়ার আগে গত ৩ থেকে ১৮ ডিসেম্বর আইএমএফের ১৩ সদস্যসের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। সফরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ও বিদ্যমান ঋণের চতুর্থ কিস্তির কাঠামোগত সংস্কারের শর্ত পালন নিয়ে পর্যালোচনা করে দলটি।
সংস্থাটির প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে অব্যাহতভাবে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রব্যমূল্য কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’
সংস্থাটি মনে করে, মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এজন্য প্রবৃদ্ধি কমবে। রাজস্ব আদায়ও কমেছে। রিজার্ভের অবস্থাও চাপের মুখে রয়েছে বলে মনে করে আইএমএফ। নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়াতেও সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে আইএমএফ বিশ্বাস করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, তারা যে টাকাটা নতুন করে বাজারে ছেড়েছে সেটা তারা দ্রুত বাজার থেকে তুলেও নেবে। তবে সেটা যদি না করে তাহলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে যা দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়াবে।
সংস্থাটি আরও বলছে, বাংলাদেশে কর রাজস্ব অনুপাত কম। একটি স্বচ্ছ ও ন্যায্য রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জরুরি ভিত্তিতে রাজস্ব সংক্রান্ত সংস্কার করতে হবে। ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করার পরামর্শ দিয়ে আইএমএফ বলেছে, ‘দ্রুত যেসব কাজ করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে সঠিকভাবে খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করা, বর্তমানে যেসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা রয়েছে তার কার্যকর বাস্তবায়ন এবং আর্থিক খাতে পুনর্গঠনের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা।’ আর্থিক খাতের সংস্কার কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সংস্থাটি।
এছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো এবং তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে রপ্তানি খাত আরও বৈচিত্র্য আনতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের পাশাপাশি সুশাসন বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে আইএমএফের পক্ষ থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের পূর্বের শর্ত পূরণের পর ফেব্রুয়ারিতে চতুর্থ ধাপে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ দেবে। এ লক্ষ্যে আগামী বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবটি সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদ বোর্ড সভায় রাখা হবে। পর্যালোচনা শেষে অনুমোদনের পর ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অর্থ বিতরণ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি চিত্র খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়, দীর্ঘদিনেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মূল্যস্ফীতি, যা আইএমএফের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি। তবে বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতের সংস্কার চলমান রাখতে হবে।’
উল্লেখ্য, সাড়ে তিন বছরের মেয়াদের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কার্যক্রমের বিপরীতে আইএমএফ কিছু শর্ত দেয় বাংলাদেশকে। সব শর্ত পূরণ করতে না পারলেও তিন কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ কিস্তি মিলবে গত জুন পর্যন্ত আইএমএফের দেয়া শর্ত পূরণের মূল্যায়নের ভিত্তিতে। তিনবারই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ।
আইএমএফের মতে, নিট রিজার্ভ হচ্ছে প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ। আইএমএফের শর্ত মেনে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এ নিট রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাধ্যবাধকতা আছে। ব্যর্থ হওয়ায় আইএমএফের কাছে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে আনুষ্ঠানিকভাবে অব্যাহতি চায় বাংলাদেশ, সংস্থাটি তা অনুমোদনও করে। গত ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ পরে তা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রাখার শর্ত দেয়।
তবে ডিসেম্বর-ভিত্তিক নিট রিজার্ভ ছিল ১৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি মার্চেও নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। মার্চ শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে তা ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার।
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশের বাজারে অব্যাহতভাবে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি ও নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়াতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রব্যমূল্য কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়াসহ, ‘কর অব্যাহতি’ অপসারণ, ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের’ রাশ টেনে ধরা, মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা, বিনিময় হার আরও নমনীয় করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি তাদের মিশন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধিদলের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এসব কথা বলেন। এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করেছে সংস্থাটি।
চতুর্থ কিস্তি ঋণ দেয়ার আগে গত ৩ থেকে ১৮ ডিসেম্বর আইএমএফের ১৩ সদস্যসের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। সফরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ও বিদ্যমান ঋণের চতুর্থ কিস্তির কাঠামোগত সংস্কারের শর্ত পালন নিয়ে পর্যালোচনা করে দলটি।
সংস্থাটির প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে অব্যাহতভাবে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রব্যমূল্য কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’
সংস্থাটি মনে করে, মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এজন্য প্রবৃদ্ধি কমবে। রাজস্ব আদায়ও কমেছে। রিজার্ভের অবস্থাও চাপের মুখে রয়েছে বলে মনে করে আইএমএফ। নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়াতেও সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে আইএমএফ বিশ্বাস করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, তারা যে টাকাটা নতুন করে বাজারে ছেড়েছে সেটা তারা দ্রুত বাজার থেকে তুলেও নেবে। তবে সেটা যদি না করে তাহলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে যা দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়াবে।
সংস্থাটি আরও বলছে, বাংলাদেশে কর রাজস্ব অনুপাত কম। একটি স্বচ্ছ ও ন্যায্য রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জরুরি ভিত্তিতে রাজস্ব সংক্রান্ত সংস্কার করতে হবে। ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করার পরামর্শ দিয়ে আইএমএফ বলেছে, ‘দ্রুত যেসব কাজ করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে সঠিকভাবে খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করা, বর্তমানে যেসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা রয়েছে তার কার্যকর বাস্তবায়ন এবং আর্থিক খাতে পুনর্গঠনের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা।’ আর্থিক খাতের সংস্কার কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সংস্থাটি।
এছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো এবং তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে রপ্তানি খাত আরও বৈচিত্র্য আনতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের পাশাপাশি সুশাসন বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে আইএমএফের পক্ষ থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের পূর্বের শর্ত পূরণের পর ফেব্রুয়ারিতে চতুর্থ ধাপে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ দেবে। এ লক্ষ্যে আগামী বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবটি সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদ বোর্ড সভায় রাখা হবে। পর্যালোচনা শেষে অনুমোদনের পর ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অর্থ বিতরণ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি চিত্র খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়, দীর্ঘদিনেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মূল্যস্ফীতি, যা আইএমএফের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি। তবে বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতের সংস্কার চলমান রাখতে হবে।’
উল্লেখ্য, সাড়ে তিন বছরের মেয়াদের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কার্যক্রমের বিপরীতে আইএমএফ কিছু শর্ত দেয় বাংলাদেশকে। সব শর্ত পূরণ করতে না পারলেও তিন কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ কিস্তি মিলবে গত জুন পর্যন্ত আইএমএফের দেয়া শর্ত পূরণের মূল্যায়নের ভিত্তিতে। তিনবারই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ।
আইএমএফের মতে, নিট রিজার্ভ হচ্ছে প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ। আইএমএফের শর্ত মেনে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এ নিট রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাধ্যবাধকতা আছে। ব্যর্থ হওয়ায় আইএমএফের কাছে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে আনুষ্ঠানিকভাবে অব্যাহতি চায় বাংলাদেশ, সংস্থাটি তা অনুমোদনও করে। গত ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ পরে তা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রাখার শর্ত দেয়।
তবে ডিসেম্বর-ভিত্তিক নিট রিজার্ভ ছিল ১৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি মার্চেও নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। মার্চ শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে তা ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার।