ফ্লোর প্রাইসের প্রভাব ও কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ জোরদার
দেশের শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নতুন পরিকল্পনা ও নীতি গ্রহণ করেছে। শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলমান আস্থাহীনতা, ফ্লোর প্রাইসের প্রভাব, এবং আর্থিক অনিয়মের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে ডিএসইর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
শেয়ারবাজারে বিদ্যমান সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে শনিবার সকালে রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’-এ বক্তব্য রাখেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানি ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু আলীও উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, “শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ বড় দেশীয় বিনিয়োগকারীরা এখনো এই নীতির কারণে বাজারে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে শেয়ারবাজারে কাঙ্ক্ষিত বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের অর্থনীতিতে প্রকৃত বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে শেয়ারবাজারেও গতি ফিরে আসবে না। উচ্চ সুদহার, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, এবং অন্যান্য আর্থিক খাতের চাপ শেয়ারবাজারের স্থবিরতার অন্যতম কারণ।”
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ চারটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
১. কর প্রণোদনা: শেয়ারবাজারের জন্য আলাদা করসুবিধা দিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন বাজেটে এই প্রস্তাবের প্রতিফলন দেখা যাবে।
২. ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তি: দেশি ও বিদেশি কিছু ভালো মানের কোম্পানিকে দ্রুত তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৩. নেগেটিভ ইকুইটি সমাধান: ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণাত্মক ঋণহিসাবের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কাজ চলছে।
৪. কারসাজি রোধ: শেয়ারবাজারে সুবিধাভোগী লেনদেন এবং কারসাজি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম শেয়ারবাজারের কাঠামোগত সংস্কারের উপর জোর দিয়ে বলেন, “বাজারের নীতিমালা এবং আইনি কাঠামোতে অনেক গলদ রয়েছে। আমরা এসব গলদ চিহ্নিত করে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের মান বৃদ্ধি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ডিএসইর ভূমিকা গত ১৫ বছরে সংকুচিত হয়ে গেছে। আমরা এই ভূমিকাকে পুনরুদ্ধার করতে চাই। স্টক এক্সচেঞ্জকে বাজার উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে চাই। এর জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের আইনি ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিদর্শন এবং তদন্তে সরাসরি ক্ষমতা পেতে আমরা কাজ করছি।”
অনিয়মকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে ডিএসই ডিলিস্টিং নীতিমালার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। চেয়ারম্যান বলেন, “যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর যৌক্তিক কারণ ছাড়া আর্থিক দুরবস্থায় পড়ে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বিধান আরোপ করা হবে। এ ধরনের কোম্পানিগুলো যাতে সরকারি সুবিধা না পায় এবং নতুন করে ব্যবসার সুযোগ না পায়, সে জন্য সংশোধিত নীতিমালা তৈরি হচ্ছে।”
মমিনুল ইসলাম শেয়ারবাজারের কারসাজি এবং সুবিধাভোগী লেনদেনকে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “ডিএসইর অবস্থান এ ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতা। বাজারে কারসাজির ঘটনায় যদি ডিএসইর কেউ জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারসাজি রোধে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারেও কাজ চলছে।”
ডিএসই নতুন ও ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে আর্থিক প্রণোদনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। কর সুবিধা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আসতে উৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের মান নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, “কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির আগে বেশি লাভজনক দেখানো হয়, কিন্তু পরে তা রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এটি রোধে আর্থিক প্রতিবেদনের মান উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে ডিএসই সমন্বিত ব্যাকঅফিস সফটওয়্যার চালুর পরিকল্পনা করেছে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারী সহায়তা তহবিলের আকার বাড়ানোর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হবে।
ডিএসই চেয়ারম্যান আশাবাদী যে, নতুন উদ্যোগগুলো সফল হলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং বাজারে গতি ফিরে আসবে। তিনি বলেন, “আগামী জুনের মধ্যে শেয়ারবাজারে দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন আশা করছি। ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাজারে গতি সঞ্চার করবে।”
ফ্লোর প্রাইসের প্রভাব ও কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ জোরদার
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
দেশের শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নতুন পরিকল্পনা ও নীতি গ্রহণ করেছে। শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলমান আস্থাহীনতা, ফ্লোর প্রাইসের প্রভাব, এবং আর্থিক অনিয়মের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে ডিএসইর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
শেয়ারবাজারে বিদ্যমান সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে শনিবার সকালে রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’-এ বক্তব্য রাখেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানি ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু আলীও উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, “শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ বড় দেশীয় বিনিয়োগকারীরা এখনো এই নীতির কারণে বাজারে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে শেয়ারবাজারে কাঙ্ক্ষিত বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের অর্থনীতিতে প্রকৃত বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে শেয়ারবাজারেও গতি ফিরে আসবে না। উচ্চ সুদহার, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, এবং অন্যান্য আর্থিক খাতের চাপ শেয়ারবাজারের স্থবিরতার অন্যতম কারণ।”
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ চারটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
১. কর প্রণোদনা: শেয়ারবাজারের জন্য আলাদা করসুবিধা দিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন বাজেটে এই প্রস্তাবের প্রতিফলন দেখা যাবে।
২. ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তি: দেশি ও বিদেশি কিছু ভালো মানের কোম্পানিকে দ্রুত তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৩. নেগেটিভ ইকুইটি সমাধান: ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণাত্মক ঋণহিসাবের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কাজ চলছে।
৪. কারসাজি রোধ: শেয়ারবাজারে সুবিধাভোগী লেনদেন এবং কারসাজি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম শেয়ারবাজারের কাঠামোগত সংস্কারের উপর জোর দিয়ে বলেন, “বাজারের নীতিমালা এবং আইনি কাঠামোতে অনেক গলদ রয়েছে। আমরা এসব গলদ চিহ্নিত করে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের মান বৃদ্ধি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ডিএসইর ভূমিকা গত ১৫ বছরে সংকুচিত হয়ে গেছে। আমরা এই ভূমিকাকে পুনরুদ্ধার করতে চাই। স্টক এক্সচেঞ্জকে বাজার উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে চাই। এর জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের আইনি ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিদর্শন এবং তদন্তে সরাসরি ক্ষমতা পেতে আমরা কাজ করছি।”
অনিয়মকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে ডিএসই ডিলিস্টিং নীতিমালার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। চেয়ারম্যান বলেন, “যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর যৌক্তিক কারণ ছাড়া আর্থিক দুরবস্থায় পড়ে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বিধান আরোপ করা হবে। এ ধরনের কোম্পানিগুলো যাতে সরকারি সুবিধা না পায় এবং নতুন করে ব্যবসার সুযোগ না পায়, সে জন্য সংশোধিত নীতিমালা তৈরি হচ্ছে।”
মমিনুল ইসলাম শেয়ারবাজারের কারসাজি এবং সুবিধাভোগী লেনদেনকে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “ডিএসইর অবস্থান এ ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতা। বাজারে কারসাজির ঘটনায় যদি ডিএসইর কেউ জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারসাজি রোধে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারেও কাজ চলছে।”
ডিএসই নতুন ও ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে আর্থিক প্রণোদনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। কর সুবিধা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আসতে উৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের মান নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, “কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির আগে বেশি লাভজনক দেখানো হয়, কিন্তু পরে তা রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এটি রোধে আর্থিক প্রতিবেদনের মান উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে ডিএসই সমন্বিত ব্যাকঅফিস সফটওয়্যার চালুর পরিকল্পনা করেছে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারী সহায়তা তহবিলের আকার বাড়ানোর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হবে।
ডিএসই চেয়ারম্যান আশাবাদী যে, নতুন উদ্যোগগুলো সফল হলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং বাজারে গতি ফিরে আসবে। তিনি বলেন, “আগামী জুনের মধ্যে শেয়ারবাজারে দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন আশা করছি। ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাজারে গতি সঞ্চার করবে।”