আর্থিক সেবা খাতে উদ্ভাবন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রগতিতে অবদানের জন্য এ বছর ১৮টি প্রতিষ্ঠান ‘মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে। মোট ১৯টি শ্রেণিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে মোট ৩৩টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কার্যক্রমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ পুরস্কার দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার র্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এ বছর বিজয়ীদের মধ্যে সর্বোচ্চ চারটি শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক। এরপর তিনটি শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও ব্র্যাক ব্যাংক। দুটি শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে ঢাকা ব্যাংক। একটি করে শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এসএসএল কমার্জ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, পাঠাও পে, এসিআই লজিস্টিকস (স্বপ্ন) ও বিকাশ।
মাস্টারকার্ড জানায়, এটি অ্যাওয়ার্ড আয়োজনের সপ্তম সংস্করণ। ব্যাংকিং, পেমেন্টস ও ফিনটেক খাতের উদ্ভাবন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রগতি- এই ক্ষেত্রগুলোতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে এ অ্যাওয়ার্ড চালু করা হয়। এবারের আয়োজনের মাধ্যমে মাস্টারকার্ড বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমের এক যুগ পূর্তিও উদ্যাপন করেছে।
অনুষ্ঠানে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাত বহু দিক থেকেই পিছিয়ে রয়েছে। তবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে- এ নিয়ে কোনো দ্বিধা বা দোদুল্যমানতা থাকা উচিত নয়। কার্ড নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া, টিআইএন নম্বরের বাধাসহ বিভিন্ন জটিলতা আমরা দূর করেছি। গত সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের টিকিট ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনার ক্ষেত্রে যে সমস্যা ছিল, তা সমাধান করেছি। এভাবে আমরা ডিজিটাল লেনদেনের নানা বাধা দূর করছি।’
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সামগ্রিক উন্নয়নকে ‘হতাশাজনক’ উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘এর পেছনে রয়েছে সুশাসনের ব্যর্থতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সীমাবদ্ধতা ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাব। আইনকানুন কঠোর হলেও অনেক অনিয়ম ভেতরে-ভেতরে ঘটে যায়, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটা অনেকটা “বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর” মতো অবস্থা। আমাদের আর্থিক খাতের আকার খুবই ছোট। এ কারণে আর্থিক খাত থেকে অর্থনীতিতে যে সুবিধা আসার কথা, তা আমরা পাচ্ছি না। দুর্নীতি, সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা এ ক্ষেত্রে বড় বাধা।’ অনুষ্ঠানে মাস্টারকার্ডের সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট গৌতম আগরওয়াল বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ কোটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) হিসাব সক্রিয়, ইন্টারনেট ব্যবহার ৭০-৭৪ শতাংশ এবং প্রতিবছর ২৫০ কোটি থেকে ২৬০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে আসে। এত অগ্রগতি সত্ত্বেও মোট লেনদেনের এখনো ৭৪ থেকে ৮০ শতাংশ নগদ লেনদেননির্ভর, যা ডিজিটালাইজেশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’
আগরওয়াল আরও বলেন, ‘ভারতের ক্ষেত্রেও একই পথ পাড়ি দিতে হয়েছে; ১১ বছর আগে দেশটিতে ডিজিটাল লেনদেন ছিল মাত্র ২-৫ শতাংশ, যা ক্রমে বেড়ে ৩০-৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান তাই ব্যাপক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। ১৮ কোটি মানুষের এই দেশ ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে একদিন বিশ্বের সামনে উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। এই সম্ভাবনা উপলব্ধি করেই মাস্টারকার্ড ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।’
সূচনা বক্তব্যে মাস্টারকার্ডের এদেশীয় ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই আমরা বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের ১২ বছর তথা এক যুগ পূর্তি উদ্যাপন করেছি। বর্তমানে আমাদের পুরো কার্যালয় বাংলাদেশিদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা এই দেশে আরও বেশি উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চাই। গত ১২ মাসে মোট ৩০টি পণ্য চালু করেছি।’
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘মাস্টারকার্ড একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান। ২২২টি দেশে আমাদের কার্যক্রম রয়েছে। বিশ্বের প্রতি ৫টি ফিনটেকের মধ্যে ৪টি মাস্টারকার্ডকে তাদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বেছে নেয়।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের পরিচালক জাকিয়া সুলতানা ও সোহেল আলিমসহ বাংলাদেশ ব্যাংক, দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক, ফিনটেক কোম্পানি, কূটনীতিক ও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
আর্থিক সেবা খাতে উদ্ভাবন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রগতিতে অবদানের জন্য এ বছর ১৮টি প্রতিষ্ঠান ‘মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে। মোট ১৯টি শ্রেণিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে মোট ৩৩টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কার্যক্রমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ পুরস্কার দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার র্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এ বছর বিজয়ীদের মধ্যে সর্বোচ্চ চারটি শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক। এরপর তিনটি শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও ব্র্যাক ব্যাংক। দুটি শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে ঢাকা ব্যাংক। একটি করে শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এসএসএল কমার্জ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, পাঠাও পে, এসিআই লজিস্টিকস (স্বপ্ন) ও বিকাশ।
মাস্টারকার্ড জানায়, এটি অ্যাওয়ার্ড আয়োজনের সপ্তম সংস্করণ। ব্যাংকিং, পেমেন্টস ও ফিনটেক খাতের উদ্ভাবন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রগতি- এই ক্ষেত্রগুলোতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে এ অ্যাওয়ার্ড চালু করা হয়। এবারের আয়োজনের মাধ্যমে মাস্টারকার্ড বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমের এক যুগ পূর্তিও উদ্যাপন করেছে।
অনুষ্ঠানে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাত বহু দিক থেকেই পিছিয়ে রয়েছে। তবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে- এ নিয়ে কোনো দ্বিধা বা দোদুল্যমানতা থাকা উচিত নয়। কার্ড নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া, টিআইএন নম্বরের বাধাসহ বিভিন্ন জটিলতা আমরা দূর করেছি। গত সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের টিকিট ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনার ক্ষেত্রে যে সমস্যা ছিল, তা সমাধান করেছি। এভাবে আমরা ডিজিটাল লেনদেনের নানা বাধা দূর করছি।’
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সামগ্রিক উন্নয়নকে ‘হতাশাজনক’ উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘এর পেছনে রয়েছে সুশাসনের ব্যর্থতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সীমাবদ্ধতা ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাব। আইনকানুন কঠোর হলেও অনেক অনিয়ম ভেতরে-ভেতরে ঘটে যায়, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটা অনেকটা “বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর” মতো অবস্থা। আমাদের আর্থিক খাতের আকার খুবই ছোট। এ কারণে আর্থিক খাত থেকে অর্থনীতিতে যে সুবিধা আসার কথা, তা আমরা পাচ্ছি না। দুর্নীতি, সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা এ ক্ষেত্রে বড় বাধা।’ অনুষ্ঠানে মাস্টারকার্ডের সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট গৌতম আগরওয়াল বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ কোটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) হিসাব সক্রিয়, ইন্টারনেট ব্যবহার ৭০-৭৪ শতাংশ এবং প্রতিবছর ২৫০ কোটি থেকে ২৬০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে আসে। এত অগ্রগতি সত্ত্বেও মোট লেনদেনের এখনো ৭৪ থেকে ৮০ শতাংশ নগদ লেনদেননির্ভর, যা ডিজিটালাইজেশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’
আগরওয়াল আরও বলেন, ‘ভারতের ক্ষেত্রেও একই পথ পাড়ি দিতে হয়েছে; ১১ বছর আগে দেশটিতে ডিজিটাল লেনদেন ছিল মাত্র ২-৫ শতাংশ, যা ক্রমে বেড়ে ৩০-৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান তাই ব্যাপক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। ১৮ কোটি মানুষের এই দেশ ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে একদিন বিশ্বের সামনে উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। এই সম্ভাবনা উপলব্ধি করেই মাস্টারকার্ড ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।’
সূচনা বক্তব্যে মাস্টারকার্ডের এদেশীয় ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই আমরা বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের ১২ বছর তথা এক যুগ পূর্তি উদ্যাপন করেছি। বর্তমানে আমাদের পুরো কার্যালয় বাংলাদেশিদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা এই দেশে আরও বেশি উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চাই। গত ১২ মাসে মোট ৩০টি পণ্য চালু করেছি।’
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘মাস্টারকার্ড একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান। ২২২টি দেশে আমাদের কার্যক্রম রয়েছে। বিশ্বের প্রতি ৫টি ফিনটেকের মধ্যে ৪টি মাস্টারকার্ডকে তাদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বেছে নেয়।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের পরিচালক জাকিয়া সুলতানা ও সোহেল আলিমসহ বাংলাদেশ ব্যাংক, দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক, ফিনটেক কোম্পানি, কূটনীতিক ও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।