আমদানির পর পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও এখনও সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে আসেনি। মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু হলেও এখনও প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি।
শুক্রবার, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার ওপরে
কিছুটা কমলেও অন্যান্য বছরের চেয়ে বাড়তি সবজির দাম
ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে
এছাড়া কিছুটা কমলেও ভরপুর শীতের মৌসুমে অধিকাংশ সবজি এখনও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার, (১২ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
শুক্রবার, কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা যায়, গত মৌসুমে উৎপাদিত প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ এখন ১৪০-১৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর বাজারে নতুন আসা মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে, কোথাও কোথাও অবশ্য ১৩০ টাকাতেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়।
যদিও প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ১৫-১৬ রুপি, যা আমদানি করে আনলে দেশের বাজারে ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে বিক্রি করা সম্ভব। অথচ এই আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ দেশের পাইকারি বাজারগুলোতেই এখন ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩-৪ দিন আগে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দেশের পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা কমেছিল। কিন্তু শেষ দুদিনের মধ্যেই দাম আবার বেড়ে যায়।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের একজন আড়তদার বলেন, ‘আমদানি করা এবং মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ খুব একটা বেশি নেই। অল্প পরিসরে যেমন আমদানি হচ্ছে, তেমনই মুড়িকাটাও উঠছে খুব কম। এখনও সব পাইকারি দোকানে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়েনি। এ কারণে দামটাও বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে শুরু করবে।’
গত নভেম্বরের শুরুতে হঠাৎ অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের বাজার। তখন ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম ১১০-১২০ টাকায় স্থিতিশীল হয়। সর্বশেষ ১০-১২ দিন আগে ফের পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে, দাম ওঠে ১৫০-১৬০ টাকায়। এরপরই আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।
পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় নানান ধরনের সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। তবে ভরপুর শীতের এই মৌসুমে সবজির দাম এর চেয়েও কম থাকে অন্যান্য বছর।
বাজারে এখন নতুন আলুর দাম কমতির দিকে। শুক্রবার, প্রতি তিন কেজি আলুর প্যাকেজ হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। অর্থাৎ, কেজি পড়ছে ৩৩ টাকা। আর প্রতি কেজি নতুন আলু খুচরায় ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা কমে বরবটি, বেগুন ও করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। একইভাবে কেজিতে ঢেঁড়স ও পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। অন্যদিকে ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম আরও কমেছে। মাঝারি আকারের এ দুটি সবজির প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।
এছাড়া বেশ কয়েক মাস নিম্নমুখী ডিম ও মুরগির বাজার। ফার্মের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা দামে।
গত রোববার প্রতি লিটার বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে যথাক্রমে ৬ ও ৭ টাকা। এছাড়া প্রতি লিটার পাম তেলের দাম ১৬ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয় ৩৩ টাকা। এতে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে হয় ১৯৫ টাকা যা আগে ছিল ১৮৯ টাকা।
৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯২২ টাকা থেকে বেড়ে ৯৫৫ টাকা হয়েছে। এছাড়া এক লিটার খোলা সয়াবিনের দাম এখন ১৭৬ টাকা এবং প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৬ টাকায়। তবে বাজারে অন্য মুদি পণ্যগুলোর দাম অনেকটাই অপরিবর্তিত দেখা গেছে।
বাজারে সবজি থেকে শুরু করে অন্য সব কিছুর দাম ওঠানামা করলেও মাছের দাম দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি রয়েছে। শুক্রবার, বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ (মাঝারি) বিক্রি হয়েছে ৩২০-৩৫০ টাকায়, কই মাছ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, প্রতি কেজি চাষের শিং ৪৫০ টাকা, প্রতি কেজি তেলাপিয়া আকারভেদে ২২০-২৫০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৩০০-৩৫০ টাকা, বড় চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০-৯০০ টাকা, পাঙাস প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, শোল প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, টেংড়া প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা, মলা প্রতি কেজি ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া শুক্রবার, ব্রয়লার প্রতি কেজি ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সোনালি প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, লেয়ার প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬০০-৬৫০ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মাছের দামের বিষয়ে একজন ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে সবকিছুর দাম ওঠে-নামে, কমবেশি হয়, তবে মাছের দাম একেবারেই কমে না। কোনো সময় মাছের দাম কমে যেতে দেখলাম না। একই রকম দামে সব সময় মাছ বিক্রি হয়। পাঙাস, তেলাপিয়া, চাষের কই মাছ ছাড়া অন্য সব ধরনের মাছের দাম অতিরিক্ত বেশি। এত বেশি দাম দিয়ে মাছ কিনে খাওয়া যায় না।’