কোটা সংস্কার আন্দোলনে পক্ষ-বিপক্ষের সংঘর্ষ, উত্তেজনার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব হলে ছাত্র ‘রাজনীতি নিষিদ্ধ’ ঘোষণার অঙ্গীকারনামা জারি করেছেন শিক্ষার্থীরা। সেসব অঙ্গীকারনামায় প্রাধ্যক্ষ বা প্রভোস্টদের স্বাক্ষরও নিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার দিনভর দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর মাঝরাতে এসব অঙ্গীকারনামায় প্রধ্যক্ষদের স্বাক্ষর আদায় করেন শিক্ষার্থীরা। তার আগে ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকের কক্ষ ভাঙচুর করে, তাদের হল থেকে বের করে দেয় শিক্ষার্থীরা।
রোকেয়া হল, শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, কুয়েত মৈত্রী হল, অমর একুশে হল, সুফিয়া কামাল হল, হাজী মুহাম্মদ মহসীন হল, শামসুননাহার হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল থেকে শিক্ষার্থীরা এসব অঙ্গীকারনামার ছবি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টারদের পাঠিয়েছেন।
তবে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকবাল রউফ জানান প্রভোস্টদের হলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ‘এখতিয়ার নেই’। তিনি বলেন, ‘এর জন্য সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বিভিন্ন হলে প্রভোস্টরা বাধ্য হয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করছেন।’
তবে অধ্যাপক মো. ইকবাল বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ছাড়া তাদের সব দাবি মেনে নেব। কেননা এগুলো তাদের নিরাপত্তার সাথে জড়িত। কিন্তু তারা তা মানেনি। তাই বাধ্য হয়ে প্রভোস্টরা স্বাক্ষর করেছেন।’ এ বিষয় পরে বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
ছাত্র রাজনীতি ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণার পাশাপাশি এসব অঙ্গীকারনামায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের ‘সিদ্ধান্তের’ কথাও বলা হয়েছে।
প্রথম বেগম রোকেয়া হল থেকে অঙ্গীকারনামা পাঠানো হয়। বাকি হলগুলো থেকে পাঠানো অঙ্গীকারনামাগুলোর ভাষাও মোটাদাগে একই রকম।
তবে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীদের পাঠানো অঙ্গীকারনামায় সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু বিষয়ের কথা বলা হয়ঃ
# শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে স্থায়ীভাবে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো।
# কোনো বহিরাগত হলে অবস্থান করতে পারবে না।।
# শিক্ষার্থী কোনও প্রকার ক্ষতির (শারীরিক ও মৌখিক) সম্মুখীন হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
# প্রশাসনিকভাবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সিট বণ্টনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
# হলের সকল ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আর রোকেয়া হলের অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, ‘আমরা রোকেয়া হলের মেয়েরা আজ এই মর্মে লিখিত নিচ্ছি যে, আজ ১৭-০৭-২০২৪ তারিখ থেকে রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের ছাত্র রাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, যুবদল, জামাত-শিবির ইত্যাদি) নিষিদ্ধ করা হলো। কোনো ধরনের পলিটিক্যাল রুম বা গণরুম থাকবে না, কোনো পলিটিক্যাল প্রোগ্রাম হলে হবে না। কোনো ধরনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা হলের সাথে থাকবে না।
‘আমরা হলের মেয়েরা যদি এসব দলের দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই, তাহলে এই দায় প্রশাসন ও হল প্রভোস্টকে নিতে হবে। আজ থেকে রোকেয়া হলকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হলো।’
আর শামসুন নাহার হল থেকে পাঠানো অঙ্গীকারনামায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রীদের শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে।
সেখানে আরো বলা হয়েছে, ‘ছাত্রলীগের সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনাকারী মেয়েরা মুচলেকা দিয়ে বের হতে হবে যে, তারা কখনো হলে ফিরবে না এবং হলের বাইরে থেকে কোনোরকম রাজনৈতিক (কর্মকান্ড) পরিচালনা করার চেষ্টা করবে না।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পক্ষ-বিপক্ষের সংঘর্ষ, উত্তেজনার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব হলে ছাত্র ‘রাজনীতি নিষিদ্ধ’ ঘোষণার অঙ্গীকারনামা জারি করেছেন শিক্ষার্থীরা। সেসব অঙ্গীকারনামায় প্রাধ্যক্ষ বা প্রভোস্টদের স্বাক্ষরও নিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার দিনভর দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর মাঝরাতে এসব অঙ্গীকারনামায় প্রধ্যক্ষদের স্বাক্ষর আদায় করেন শিক্ষার্থীরা। তার আগে ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকের কক্ষ ভাঙচুর করে, তাদের হল থেকে বের করে দেয় শিক্ষার্থীরা।
রোকেয়া হল, শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, কুয়েত মৈত্রী হল, অমর একুশে হল, সুফিয়া কামাল হল, হাজী মুহাম্মদ মহসীন হল, শামসুননাহার হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল থেকে শিক্ষার্থীরা এসব অঙ্গীকারনামার ছবি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টারদের পাঠিয়েছেন।
তবে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকবাল রউফ জানান প্রভোস্টদের হলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ‘এখতিয়ার নেই’। তিনি বলেন, ‘এর জন্য সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বিভিন্ন হলে প্রভোস্টরা বাধ্য হয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করছেন।’
তবে অধ্যাপক মো. ইকবাল বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ছাড়া তাদের সব দাবি মেনে নেব। কেননা এগুলো তাদের নিরাপত্তার সাথে জড়িত। কিন্তু তারা তা মানেনি। তাই বাধ্য হয়ে প্রভোস্টরা স্বাক্ষর করেছেন।’ এ বিষয় পরে বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
ছাত্র রাজনীতি ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণার পাশাপাশি এসব অঙ্গীকারনামায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের ‘সিদ্ধান্তের’ কথাও বলা হয়েছে।
প্রথম বেগম রোকেয়া হল থেকে অঙ্গীকারনামা পাঠানো হয়। বাকি হলগুলো থেকে পাঠানো অঙ্গীকারনামাগুলোর ভাষাও মোটাদাগে একই রকম।
তবে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীদের পাঠানো অঙ্গীকারনামায় সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু বিষয়ের কথা বলা হয়ঃ
# শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে স্থায়ীভাবে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো।
# কোনো বহিরাগত হলে অবস্থান করতে পারবে না।।
# শিক্ষার্থী কোনও প্রকার ক্ষতির (শারীরিক ও মৌখিক) সম্মুখীন হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
# প্রশাসনিকভাবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সিট বণ্টনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
# হলের সকল ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আর রোকেয়া হলের অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, ‘আমরা রোকেয়া হলের মেয়েরা আজ এই মর্মে লিখিত নিচ্ছি যে, আজ ১৭-০৭-২০২৪ তারিখ থেকে রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের ছাত্র রাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, যুবদল, জামাত-শিবির ইত্যাদি) নিষিদ্ধ করা হলো। কোনো ধরনের পলিটিক্যাল রুম বা গণরুম থাকবে না, কোনো পলিটিক্যাল প্রোগ্রাম হলে হবে না। কোনো ধরনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা হলের সাথে থাকবে না।
‘আমরা হলের মেয়েরা যদি এসব দলের দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই, তাহলে এই দায় প্রশাসন ও হল প্রভোস্টকে নিতে হবে। আজ থেকে রোকেয়া হলকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হলো।’
আর শামসুন নাহার হল থেকে পাঠানো অঙ্গীকারনামায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রীদের শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে।
সেখানে আরো বলা হয়েছে, ‘ছাত্রলীগের সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনাকারী মেয়েরা মুচলেকা দিয়ে বের হতে হবে যে, তারা কখনো হলে ফিরবে না এবং হলের বাইরে থেকে কোনোরকম রাজনৈতিক (কর্মকান্ড) পরিচালনা করার চেষ্টা করবে না।’