alt

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : গোপনেই সব দখলে নিতে মরিয়া শিবির

মাহমুদ তানজীদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

# ছাত্রলীগের সাথে আঁতাত করে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে কোণঠাসা করে রাখতো ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরাই

# শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটি শিবিরের নিয়ন্ত্রনে নিতে বামপন্থী, ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয় প্রথম কয়েক দিনেই

# ৬ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির তালা ভেঙে কার্যালয় দখল করে শিবিরপন্থী ‘সাংবাদিকরা’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত সাংবাদিক, সেবামূলক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে শিবিরের ‘গুপ্ত’ সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সংগঠনগুলোতে অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীরা শিবিরের সিন্ডিকেটের কারণেই নেতৃত্বে আসতে পারেনা। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের সাথে আঁতাত করে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের‘শিবির’ট্যাগ দিয়ে কোণঠাসা করে রাখতো শিবিরের নেতাকর্মীরাই।

আর ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রগতিশীল সংগঠন ও সাধারণ ছাত্রদের স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্মগুলোর একচেটিয়া দখল নিতে মরিয়া ছাত্রশিবির। দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিবিরের কমিটি আত্মপ্রকাশ করলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এখনো তারা গোপন।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, অবকাশ ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের কক্ষ রয়েছে। তবে জায়গা সংকুলানের ‘অভাবে’ অনেকের সেখানে অফিস নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে- আবৃত্তি সংসদ, চলচ্চিত্র সংসদ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ডিবেটিং সোসাইটি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠী, মাইম সোসাইটি, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, আইটি সোসাইটি, রঙ্গভূমি, সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি, ফিল্ম ক্লাব, বাঁধন, ব্যান্ড মিউজিক এসোসিয়েশন, বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ইউনিট, ক্যারিয়ার ক্লাব, প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতি, রিপোর্টার্স ইউনিটির মতো সংগঠন রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের আমল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কার্যক্রম চলছে। ক্যাম্পাসের সহশিক্ষা কার্যক্রম দিয়ে শিবির তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে বিভিন্ন আন্দোলনে শিবির নেতৃত্ব দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে শিবিরের ‘গুপ্ত আধিপত্য’।

৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটি নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিতে বামপন্থী, ছাত্রদলের কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয় প্রথম কয়েক দিনেই। তবে ক্যাম্পাসে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পুরো প্ল্যাটফর্মটি থেকে পদত্যাগ করে শিবিরপন্থীরা। এরপর থেকে ‘জবি সংস্কার আন্দোলন’ ও ‘হিউম্যান রাইট সোসাইটি’ নামে দুটি প্ল্যাটফর্ম থেকে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে শিবির।

৬ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির তালা ভেঙে কার্যালয় দখল করে শিবিরপন্থী ‘সাংবাদিকরা’। ওই সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সভাপতি বলে চিহ্নিত ইকবাল হোসাইনকে এ বিষয়ে জানানো হলে, তিনি অন্য সাংবাদিকদের (যারা শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত নন) ক্যাম্পাস ছাড়া করার হুমকি দেন। ইকবাল হোসাইন নিজেও দাবি করেছেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি। তবে এর বাইরে আর কেউ শিবিরের সদস্য বলে নিজেদের প্রকাশ করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির এক নেতা বলেন, ‘শিবির তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজস্ব সংগঠনের লোকদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি বা সেক্রেটারি নির্বাচিত করে। যাতে করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আন্দোলন শিবির নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। যার ফলে অনেক যোগ্য অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বে আসতে পারে না। আওয়ামী আমলে অরাজনৈতিক শিক্ষার্থী যাদেরকে দমানো যেতো না, শিবির কর্মীরাই তাদেরকে ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে দমিয়ে রাখতো।‘

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমের সংগঠনগুলোতে সেই নারীরাই নেতৃত্ব আসতো, যাদেরকে শিবির কর্মীরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতো। আমি ডিবেটিং সোসাইটির নির্বাচন করার সময় আমাকে শিবির হিসেবে ট্যাগ দিয়ে নানান ভয়ভীতি দেখানো হয়। এখন এসে দেখি, যে আমাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে ভয় দেখিয়েছিলো, সে নিজেই শিবিরের নেতা,’ বলেন তিনি।

ছাত্রশিবিরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইকবাল হোসাইন ওরফে সাফওয়ান সংবাদকে বলেন, ‘সংগঠন বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্ট্যটেজি নিয়ে কাজ করে। সবকিছু সংগঠনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই হয়। আর আমরা আত্মপ্রকাশ করবো কিনা সেটা কেন্দ্রীয় সংগঠন সিদ্ধান্ত দিলে তখন দেখা যাবে।‘

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ইভান তাহসীব বলেন, ‘অপ্রকাশ্য রাজনীতি ভয়াবহ, যা সাধারণ মানুষ বা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর। যারা এধরনের রাজনীতি করছে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করছে। আদর্শভিত্তিক রাজনীতি প্রকাশ্যে হওয়া জরুরি।‘

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মোঃ আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, ‘আমরা শিবিরের মতো গুপ্ত রাজনীতি করি না। তাই শিবিরের মতো আমাদের আত্মপ্রকাশের প্রয়োজন নেই। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে আমাদের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে মেধা ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে পারেনি। সামনের দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবনে অর্থাৎ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে আমাদের বিচরণ দৃশ্যমান হবে, ইনশাআল্লাহ।‘

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. কে এ এম রিফাত হাসান বলেন, ‘যারা বেনামি রাজনীতি করে তাদের প্রকাশ্যে আসা উচিত। আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রমাণ ছাড়া কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনা। যারা গোপনে রাজনীতি করে তারা শান্ত পরিবেশকে নাড়াচাড়া দিয়ে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেও গুজব তৈরি হতে পারে। প্রত্যেকটি মানুষেরই একটা নিজস্ব মত আছে তাই আমরা অন্যকে কতটুকু সহ্য করতে পারবো, কতটুকু স্পেস দিচ্ছি, এটা কিন্তু তার গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিচয়।‘

ছবি

বুয়েটের শ্রীশান্তের বিরুদ্ধে মামলায় ধর্মানুভূতিতে আঘাতের ধারা

ছবি

পুলিশের বলা ‘ত্রিভুজ প্রেমের গল্প’ নিয়ে প্রশ্ন জোবায়েদের শিক্ষকের

ছবি

ছাত্রীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য: বুয়েটছাত্র শ্রীশান্ত কারাগারে

ছবি

রাবি: সভাপতির অপসরণসহ চার দাবিতে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘শাটডাউন’

ছবি

রাকসুর গেজেট প্রকাশ, শপথ ‘২৬ অক্টোবর’

ছবি

ব্রিটিশ কাউন্সিল পুরস্কার পেলেন ইংরেজি মাধ্যমের ৪২ শিক্ষার্থী

ছবি

তিস্তা প্রকল্পের দাবিতে রাবিতে ‘তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন’ কর্মসূচী

ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হবে ২৭ অক্টোবর

ছবি

রাতে উত্তাল বুয়েট: ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

জবি ছাত্র জোবায়েদ হত্যাকাণ্ড: নেপথ্যে ‘ত্রিভুজ প্রেম’

ছবি

পছন্দের কথা জানতে পেরেই জবি শিক্ষার্থীকে খুন: পুলিশ

ছবি

পুলিশের ধারণা ছাত্রীর প্রেমিকের সন্দেহে জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ খুন

ছবি

জবি শিক্ষার্থী খুন: একদিনের শোক ঘোষণা, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস স্থগিত

ছবি

ছুরিকাঘাতে জবি ছাত্রদল নেতার খুন, আটক ছাত্রী

পুরান ঢাকায় ছুরিকাঘাতে জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

রাকসুতেও শিবিরের জয়-জয়কার জাহিদুল ইসলাম

ছবি

রাকসুতে শিবিরের প্যানেল থেকে বিজয়ী হলেন সনাতন ধর্মালম্বী সুজন

ছবি

রাকসু: কোন পদে কে জয়ী

ছবি

একচেটিয়া জয় শিবিরের, ছাত্রদলের ভরাডুবি

ছবি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: র‌্যাগিং, শৃঙ্খলাভঙ্গসহ বিভিন্ন দায়ে ১২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

ছবি

জবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’ হরণের অভিযোগ হিন্দু শিক্ষার্থীদের

ভিপি-জিএস শিবিরের, এজিএস ছাত্রদলের

ছবি

আনন্দ, অভিযোগে রাকসুর ভোট শেষ, ফলের অপেক্ষা

ছবি

স্টামফোর্ডে সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক কর্মশালা অনু‌ষ্ঠিত

ছবি

স্টামফোর্ডে নারী স্বাস্থ্য সচেতনতা অনুষ্ঠান: পিসিওএস ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতার আহ্বান

ছবি

আনন্দ, অভিযোগে রাকসুর ভোট শেষ, ফলের অপেক্ষা

ছবি

রাকসু: ভোটার আসার আগেই শতাধিক ব্যালটে স্বাক্ষর, কারচুপির অভিযোগ

ছবি

অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে শেষ হলো রাকসুর ভোট, ফলাফলের অপেক্ষা

ছবি

রাকসু: ৫ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ‘৬০ শতাংশ’

ছবি

রাকসুর ভোট: বাইরে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান

ছবি

রাকসু: ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ছাত্রদলের

ছবি

রাকসুতে একচেটিয়া জয় শিবিরের, ছাত্রদলের ভরাডুবি

রাকসু: ভোট দিলেন ছাত্রশিবিরের ভিপি-জিএস প্রার্থী, তারপর যা বললেন

ছবি

রাকসু: ভোট দিয়ে যা বললেন ছাত্রদলের ভিপি-জিএস প্রার্থী

ছবি

রাকসু: আড়াই ঘন্টায় ভোট পড়েছে ২৫ শতাংশ

ছবি

চাকসু নির্বাচনে একচেটিয়া জয় শিবিরের

tab

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : গোপনেই সব দখলে নিতে মরিয়া শিবির

মাহমুদ তানজীদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

# ছাত্রলীগের সাথে আঁতাত করে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে কোণঠাসা করে রাখতো ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরাই

# শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটি শিবিরের নিয়ন্ত্রনে নিতে বামপন্থী, ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয় প্রথম কয়েক দিনেই

# ৬ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির তালা ভেঙে কার্যালয় দখল করে শিবিরপন্থী ‘সাংবাদিকরা’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত সাংবাদিক, সেবামূলক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে শিবিরের ‘গুপ্ত’ সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সংগঠনগুলোতে অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীরা শিবিরের সিন্ডিকেটের কারণেই নেতৃত্বে আসতে পারেনা। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের সাথে আঁতাত করে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের‘শিবির’ট্যাগ দিয়ে কোণঠাসা করে রাখতো শিবিরের নেতাকর্মীরাই।

আর ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রগতিশীল সংগঠন ও সাধারণ ছাত্রদের স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্মগুলোর একচেটিয়া দখল নিতে মরিয়া ছাত্রশিবির। দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিবিরের কমিটি আত্মপ্রকাশ করলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এখনো তারা গোপন।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, অবকাশ ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের কক্ষ রয়েছে। তবে জায়গা সংকুলানের ‘অভাবে’ অনেকের সেখানে অফিস নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে- আবৃত্তি সংসদ, চলচ্চিত্র সংসদ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ডিবেটিং সোসাইটি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠী, মাইম সোসাইটি, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, আইটি সোসাইটি, রঙ্গভূমি, সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি, ফিল্ম ক্লাব, বাঁধন, ব্যান্ড মিউজিক এসোসিয়েশন, বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ইউনিট, ক্যারিয়ার ক্লাব, প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতি, রিপোর্টার্স ইউনিটির মতো সংগঠন রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের আমল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কার্যক্রম চলছে। ক্যাম্পাসের সহশিক্ষা কার্যক্রম দিয়ে শিবির তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে বিভিন্ন আন্দোলনে শিবির নেতৃত্ব দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে শিবিরের ‘গুপ্ত আধিপত্য’।

৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটি নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিতে বামপন্থী, ছাত্রদলের কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয় প্রথম কয়েক দিনেই। তবে ক্যাম্পাসে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পুরো প্ল্যাটফর্মটি থেকে পদত্যাগ করে শিবিরপন্থীরা। এরপর থেকে ‘জবি সংস্কার আন্দোলন’ ও ‘হিউম্যান রাইট সোসাইটি’ নামে দুটি প্ল্যাটফর্ম থেকে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে শিবির।

৬ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির তালা ভেঙে কার্যালয় দখল করে শিবিরপন্থী ‘সাংবাদিকরা’। ওই সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সভাপতি বলে চিহ্নিত ইকবাল হোসাইনকে এ বিষয়ে জানানো হলে, তিনি অন্য সাংবাদিকদের (যারা শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত নন) ক্যাম্পাস ছাড়া করার হুমকি দেন। ইকবাল হোসাইন নিজেও দাবি করেছেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি। তবে এর বাইরে আর কেউ শিবিরের সদস্য বলে নিজেদের প্রকাশ করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির এক নেতা বলেন, ‘শিবির তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজস্ব সংগঠনের লোকদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি বা সেক্রেটারি নির্বাচিত করে। যাতে করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আন্দোলন শিবির নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। যার ফলে অনেক যোগ্য অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বে আসতে পারে না। আওয়ামী আমলে অরাজনৈতিক শিক্ষার্থী যাদেরকে দমানো যেতো না, শিবির কর্মীরাই তাদেরকে ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে দমিয়ে রাখতো।‘

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমের সংগঠনগুলোতে সেই নারীরাই নেতৃত্ব আসতো, যাদেরকে শিবির কর্মীরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতো। আমি ডিবেটিং সোসাইটির নির্বাচন করার সময় আমাকে শিবির হিসেবে ট্যাগ দিয়ে নানান ভয়ভীতি দেখানো হয়। এখন এসে দেখি, যে আমাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে ভয় দেখিয়েছিলো, সে নিজেই শিবিরের নেতা,’ বলেন তিনি।

ছাত্রশিবিরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইকবাল হোসাইন ওরফে সাফওয়ান সংবাদকে বলেন, ‘সংগঠন বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্ট্যটেজি নিয়ে কাজ করে। সবকিছু সংগঠনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই হয়। আর আমরা আত্মপ্রকাশ করবো কিনা সেটা কেন্দ্রীয় সংগঠন সিদ্ধান্ত দিলে তখন দেখা যাবে।‘

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ইভান তাহসীব বলেন, ‘অপ্রকাশ্য রাজনীতি ভয়াবহ, যা সাধারণ মানুষ বা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর। যারা এধরনের রাজনীতি করছে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করছে। আদর্শভিত্তিক রাজনীতি প্রকাশ্যে হওয়া জরুরি।‘

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মোঃ আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, ‘আমরা শিবিরের মতো গুপ্ত রাজনীতি করি না। তাই শিবিরের মতো আমাদের আত্মপ্রকাশের প্রয়োজন নেই। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে আমাদের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে মেধা ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে পারেনি। সামনের দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবনে অর্থাৎ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে আমাদের বিচরণ দৃশ্যমান হবে, ইনশাআল্লাহ।‘

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. কে এ এম রিফাত হাসান বলেন, ‘যারা বেনামি রাজনীতি করে তাদের প্রকাশ্যে আসা উচিত। আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রমাণ ছাড়া কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনা। যারা গোপনে রাজনীতি করে তারা শান্ত পরিবেশকে নাড়াচাড়া দিয়ে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেও গুজব তৈরি হতে পারে। প্রত্যেকটি মানুষেরই একটা নিজস্ব মত আছে তাই আমরা অন্যকে কতটুকু সহ্য করতে পারবো, কতটুকু স্পেস দিচ্ছি, এটা কিন্তু তার গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিচয়।‘

back to top