ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এ ব্যবহৃত ব্যালট পেপার নিয়ে নতুন করে বড় প্রশ্ন উঠেছে। বেসরকারি টেলিভিশনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় অরক্ষিতভাবে নীলক্ষেত এলাকায় ব্যালট ছাপা ও কাটা হয়েছে। এর সঙ্গে ব্যালট সংখ্যা নিয়েও ধরা পড়েছে বড় ধরনের অসঙ্গতি। বিশেষ করে প্রায় ৮ হাজার ব্যালটের হিসাব মিলছে না। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন তদন্ত শুরু করেছে।
নীলক্ষেতে ছাপা ও কাটার অভিযোগ
টিভি প্রতিবেদনে উঠে আসে, নীলক্ষেতের জালাল প্রেসে ব্যালট ছাপা হয়েছে এবং পাশের মক্কা পেপার কাটিং হাউজে সেগুলো কাটা হয়েছে। জালাল প্রেসের মালিক প্রথমে সাংবাদিককে বলেন, ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপা হয়েছে। তবে পরে তিনি দাবি করেন, প্রকৃত সংখ্যা ৮৬ হাজারের বেশি নয়। তার ব্যাখ্যা, ‘রিম হিসাবেই আমরা কাগজ ধরি, আলাদা করে ব্যালট গোনা হয় না। সাংবাদিক প্রশ্ন করায় আমি ৯৬ হাজার বলে ফেলেছিলাম।’
অন্যদিকে মক্কা কাটিং হাউজ জানায়, তারা ২২ রিম কাগজ কেটে প্রায় ৮৮ হাজার ব্যালট তৈরি করেছে। ফলে দুই প্রতিষ্ঠানের হিসাবের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার ব্যালটের গরমিল থেকে যায়। কাটিং হাউজের মালিক আলিফের বক্তব্য, ‘কালির সমস্যা, মেশিনের ত্রুটি বা কাটার সময় ব্যালট নষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। তবে ঠিক কত ব্যালট টিকে আছে, সেটা সাপ্লায়ারই বলতে পারবেন।’
টেন্ডারধারী প্রতিষ্ঠানের দাবি
ব্যালট ছাপানো ও গণনার দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান আঞ্জা করপোরেশন জানিয়েছে, তারা কেরানীগঞ্জে নিজেদের প্রেসে কাজ করেছে। সংস্থাটির চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন দাবি করেন, তাদের প্রেস থেকে মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ব্যালট ছাপা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে নীলক্ষেতের প্রেস ও কাটিং হাউজের সম্পৃক্ততা প্রশ্ন তুলেছে পুরো প্রক্রিয়াকে ঘিরে।
ভোটার সংখ্যা বনাম
ব্যালট হিসাব
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী ভোটার সংখ্যা ৩৯,৭৭৫। প্রতিটি ভোটারের জন্য ৬ পাতায় ভোট দেয়ার নিয়মে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫০ ব্যালট দরকার হওয়ার কথা। অথচ নীলক্ষেত থেকে পাওয়া হিসাব সর্বোচ্চ ৯৬ হাজারে থেমে গেছে। ফলে প্রকৃত ব্যালটের সংখ্যা কোথায়, তা নিয়েই মূল বিতর্ক ঘনীভূত হয়েছে।
কমিশনের অবস্থান
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেছেন, ব্যালট প্রক্রিয়া অত্যন্ত বিশেষায়িত। এ জন্য যে মেশিন লাগে, তা কেবল নির্দিষ্ট সংস্থার কাছেই রয়েছে। তাই নীলক্ষেতে ছাপানোর সুযোগ নেই বলে তাদের দাবি। তবে সংবাদে উল্লিখিত প্রমাণ ও জবানবন্দির কারণে বিষয়টি তদন্তে নেয়া হয়েছে। শিগগিরই কমিশন বিস্তারিত জানাবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।
ছাত্র সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
ডাকসু ভিপি ও শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘যেসব অভিযোগ আসছে, সেগুলোর উত্তর কমিশনকেই দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ভোটে অংশ নিয়েছে, গণনার সময় পোলিং এজেন্ট ও সাংবাদিকরাও ছিলেন। অভিযোগগুলো তদন্ত হওয়া দরকার।’
প্রশ্নের পর প্রশ্ন
অনুসন্ধানে পাওয়া নথি ও সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি ঘিরে এখন প্রশ্ন উঠেছে, আঞ্জা করপোরেশন কেরানীগঞ্জে ছাপানোর দাবি করলে নীলক্ষেতের প্রমাণ ব্যাখ্যা কীভাবে হবে? জালাল প্রেস ও মক্কা কাটিং হাউজের হিসাবের মধ্যে যে ৮ হাজার ব্যালটের গরমিল, তা কোথায় গেল? কাগজ সরবরাহ, চালান ও স্টোরেজের সঠিক নথি কি কমিশনের কাছে আছে ছাত্র সংগঠনগুলো স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে। কমিশন জানিয়েছে, সব প্রমাণ যাচাই করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সাদা দলের প্রতিক্রিয়া
ব্যালট ইস্যুতে উদ্বুদ্ধ ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। শুক্রবার সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ডাকসু নির্বাচনে গুরুতর অনিয়মের এ অভিযোগ ঢাবির গৌরবময় ঐতিহ্য এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চার কেন্দ্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত করে পুনরায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। আর তা না হলে এ নির্বাচনটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
যা বলছে ছাত্রদল
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এ নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে নতুন করে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাসময়ে ও যথাযথভাবে আবেদনগুলো পর্যালোচনা না করে বরং অভিযোগগুলোকে ‘সারবত্তাহীন’ ও ‘অনির্দিষ্ট’ বলে খারিজ করেছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে আরও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতি দেয় ছাত্রদল।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এ ব্যবহৃত ব্যালট পেপার নিয়ে নতুন করে বড় প্রশ্ন উঠেছে। বেসরকারি টেলিভিশনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় অরক্ষিতভাবে নীলক্ষেত এলাকায় ব্যালট ছাপা ও কাটা হয়েছে। এর সঙ্গে ব্যালট সংখ্যা নিয়েও ধরা পড়েছে বড় ধরনের অসঙ্গতি। বিশেষ করে প্রায় ৮ হাজার ব্যালটের হিসাব মিলছে না। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন তদন্ত শুরু করেছে।
নীলক্ষেতে ছাপা ও কাটার অভিযোগ
টিভি প্রতিবেদনে উঠে আসে, নীলক্ষেতের জালাল প্রেসে ব্যালট ছাপা হয়েছে এবং পাশের মক্কা পেপার কাটিং হাউজে সেগুলো কাটা হয়েছে। জালাল প্রেসের মালিক প্রথমে সাংবাদিককে বলেন, ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপা হয়েছে। তবে পরে তিনি দাবি করেন, প্রকৃত সংখ্যা ৮৬ হাজারের বেশি নয়। তার ব্যাখ্যা, ‘রিম হিসাবেই আমরা কাগজ ধরি, আলাদা করে ব্যালট গোনা হয় না। সাংবাদিক প্রশ্ন করায় আমি ৯৬ হাজার বলে ফেলেছিলাম।’
অন্যদিকে মক্কা কাটিং হাউজ জানায়, তারা ২২ রিম কাগজ কেটে প্রায় ৮৮ হাজার ব্যালট তৈরি করেছে। ফলে দুই প্রতিষ্ঠানের হিসাবের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার ব্যালটের গরমিল থেকে যায়। কাটিং হাউজের মালিক আলিফের বক্তব্য, ‘কালির সমস্যা, মেশিনের ত্রুটি বা কাটার সময় ব্যালট নষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। তবে ঠিক কত ব্যালট টিকে আছে, সেটা সাপ্লায়ারই বলতে পারবেন।’
টেন্ডারধারী প্রতিষ্ঠানের দাবি
ব্যালট ছাপানো ও গণনার দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান আঞ্জা করপোরেশন জানিয়েছে, তারা কেরানীগঞ্জে নিজেদের প্রেসে কাজ করেছে। সংস্থাটির চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন দাবি করেন, তাদের প্রেস থেকে মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ব্যালট ছাপা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে নীলক্ষেতের প্রেস ও কাটিং হাউজের সম্পৃক্ততা প্রশ্ন তুলেছে পুরো প্রক্রিয়াকে ঘিরে।
ভোটার সংখ্যা বনাম
ব্যালট হিসাব
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী ভোটার সংখ্যা ৩৯,৭৭৫। প্রতিটি ভোটারের জন্য ৬ পাতায় ভোট দেয়ার নিয়মে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫০ ব্যালট দরকার হওয়ার কথা। অথচ নীলক্ষেত থেকে পাওয়া হিসাব সর্বোচ্চ ৯৬ হাজারে থেমে গেছে। ফলে প্রকৃত ব্যালটের সংখ্যা কোথায়, তা নিয়েই মূল বিতর্ক ঘনীভূত হয়েছে।
কমিশনের অবস্থান
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেছেন, ব্যালট প্রক্রিয়া অত্যন্ত বিশেষায়িত। এ জন্য যে মেশিন লাগে, তা কেবল নির্দিষ্ট সংস্থার কাছেই রয়েছে। তাই নীলক্ষেতে ছাপানোর সুযোগ নেই বলে তাদের দাবি। তবে সংবাদে উল্লিখিত প্রমাণ ও জবানবন্দির কারণে বিষয়টি তদন্তে নেয়া হয়েছে। শিগগিরই কমিশন বিস্তারিত জানাবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।
ছাত্র সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
ডাকসু ভিপি ও শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘যেসব অভিযোগ আসছে, সেগুলোর উত্তর কমিশনকেই দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ভোটে অংশ নিয়েছে, গণনার সময় পোলিং এজেন্ট ও সাংবাদিকরাও ছিলেন। অভিযোগগুলো তদন্ত হওয়া দরকার।’
প্রশ্নের পর প্রশ্ন
অনুসন্ধানে পাওয়া নথি ও সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি ঘিরে এখন প্রশ্ন উঠেছে, আঞ্জা করপোরেশন কেরানীগঞ্জে ছাপানোর দাবি করলে নীলক্ষেতের প্রমাণ ব্যাখ্যা কীভাবে হবে? জালাল প্রেস ও মক্কা কাটিং হাউজের হিসাবের মধ্যে যে ৮ হাজার ব্যালটের গরমিল, তা কোথায় গেল? কাগজ সরবরাহ, চালান ও স্টোরেজের সঠিক নথি কি কমিশনের কাছে আছে ছাত্র সংগঠনগুলো স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে। কমিশন জানিয়েছে, সব প্রমাণ যাচাই করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সাদা দলের প্রতিক্রিয়া
ব্যালট ইস্যুতে উদ্বুদ্ধ ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। শুক্রবার সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ডাকসু নির্বাচনে গুরুতর অনিয়মের এ অভিযোগ ঢাবির গৌরবময় ঐতিহ্য এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চার কেন্দ্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত করে পুনরায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। আর তা না হলে এ নির্বাচনটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
যা বলছে ছাত্রদল
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এ নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে নতুন করে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাসময়ে ও যথাযথভাবে আবেদনগুলো পর্যালোচনা না করে বরং অভিযোগগুলোকে ‘সারবত্তাহীন’ ও ‘অনির্দিষ্ট’ বলে খারিজ করেছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে আরও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতি দেয় ছাত্রদল।