দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের কাছে নিরাপদ ও নারীবান্ধব ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অনেকে।
তাদের ভাষ্য, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্যানেলগুলো দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ইশতেহারে নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে এখন দেখার বিষয়—এই প্রতিশ্রুতিগুলোর কতটুকু বাস্তবে রূপ নেয়। পাশাপাশি আবাসন সংকট নিরসনের প্রতিশ্রুতিও যেন কেবল ইশতেহারে সীমাবদ্ধ না থাকে, সেই প্রত্যাশাও জানিয়েছেন তারা।
আগামী বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার ৫১৬ শিক্ষার্থী এই নির্বাচনে ভোট দেবেন, যার মধ্যে ছাত্রী ভোটার প্রায় ১১ হাজার ৩২৯ জন। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আইটি ভবন, নতুন কলা ভবন, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও বাণিজ্য (বিবিএ) অনুষদ ভবনে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানান, প্রতিটি শিক্ষার্থী চাকসুর ২৬টি এবং হলের ১৪টি পদে ভোট দেবেন। এজন্য গোপন কক্ষ তৈরি করা হয়েছে।
এ নির্বাচনে ৪১৫ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তারা ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্র শিবির, বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ১২টি প্যানেলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া প্রতিটি পদে স্বতন্ত্রভাবে আরও ডজনখানেক প্রার্থী লড়ছেন।
সব প্যানেল ও প্রার্থীদের ইশতেহারে আবাসন, যোগাযোগব্যবস্থা ও নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গঠনের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীরা ইশতেহার নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা সোমবার রাতে শেষ হবে।
ক্যাম্পাসে ছাত্রীরা এসব ইশতেহার বিশ্লেষণ করছেন—কেউ আশাবাদী, কেউ আবার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।
চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তানজিলা রহমান দিয়া বলেন, “চাকসু ও হলের নেতৃত্বে যারা আসবেন, তাদের কাছে প্রথম দাবি নিরাপদ ক্যাম্পাস। যেন ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে চলাচলে নিরাপত্তা থাকে এবং হলের বাইরে যারা মেসে থাকেন, তারাও নিরাপদে থাকতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “ইশতেহারে আবাসন ও যোগাযোগের উন্নতির কথা বলা হলেও, এক বছরের মেয়াদে সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।”
সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী আনিকা আনজুম মনে করেন, দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা বেশি।
“এখানে ছাত্রদের জন্য এক ধরনের নিয়ম, আর ছাত্রীদের জন্য অন্য নিয়ম। ছেলেরা রাজনীতিতে সহজে অংশ নিতে পারে, কিন্তু মেয়েরা জড়ালে কটূক্তির শিকার হয়,” বলেন আনিকা।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “চাকসু নেতৃত্ব যেন ছেলেমেয়ে ভেদাভেদ না করে সত্যিকারের নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলে এবং আমাদের অধিকার নিশ্চিত করে।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী ফাহমিদা অর্পি বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন, যার ভুক্তভোগী বেশি ছাত্রীদেরই।”
তিনি জানান, “আগে হলে উঠতে হলে দলীয় পরিচয় লাগত। এখন ‘মেধার ভিত্তিতে’ সিট বণ্টনের অজুহাতে অনেককে বঞ্চিত করা হচ্ছে। প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের তো ফলাফলও থাকে না, ফলে তারা আসন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
অর্পি বলেন, “দেশের নানা অঞ্চল থেকে মেয়েরা এখানে পড়তে আসে। কিন্তু প্রথম বর্ষে ছাত্রীদের থাকার সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি। নিরাপত্তা বড় বিষয় হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়া কঠিন। আশা করি নতুন নেতৃত্ব দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবে।”
ছাত্রীরা আরও জানান, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে হয়। তাই হলগুলোতে সুপার শপ ও ফার্মেসি স্থাপনের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
অর্পির একই বিভাগের ছাত্রী ইবতিসাম আহমেদ বলেন, “আমাদের হলগুলোতে নিরাপত্তার অজুহাতে প্রবেশের সময় সীমিত করা হয়েছে। আমরা চাই সময়টা বাড়ানো হোক। এছাড়া বুলিংয়ের বিষয়টিও গুরুতর—রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরে গেলেই নানা অপমান সহ্য করতে হয়।”
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে অর্থনীতি বিভাগের কয়েকজন ছাত্রী জানান, তাদের কাছে নিরাপত্তা ও আবাসনই প্রধান ইস্যু। শহর থেকে আসা-যাওয়া করা শাটল ট্রেনের ছাত্রীদেরও নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করতে হয় বলে জানান তারা।
এক ছাত্রী বলেন, “শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আমাদের ক্যাম্পাসটা গ্রামের ভেতরে, স্থানীয় বখাটেদের কারণেও সমস্যা হয়। আশা করি নতুন নেতৃত্ব এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করবে।”
অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া মমতাজ মিম বলেন, “ছাত্রীদের নানা ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হয়, এমনকি খেলাধুলাতেও। ছাত্রদের জন্য বিভিন্ন সময়ে খেলাধুলার আয়োজন হলেও ছাত্রীদের জন্য বছরে মাত্র একবার ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়।”
অহনা হালদার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “ছাত্রীরা অনেক সময় শহরে টিউশনে বা জরুরি কাজে যায়। ফেরার ট্রেন ক্যাম্পাসে পৌঁছায় রাত সাড়ে ৯টায়, খেয়ে হলে ফিরতে প্রায় ১০টা বাজে। তাই আমরা চাই, হলের প্রবেশের সময়টা আরেকটু বাড়ানো হোক।”
সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের কাছে নিরাপদ ও নারীবান্ধব ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অনেকে।
তাদের ভাষ্য, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্যানেলগুলো দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ইশতেহারে নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে এখন দেখার বিষয়—এই প্রতিশ্রুতিগুলোর কতটুকু বাস্তবে রূপ নেয়। পাশাপাশি আবাসন সংকট নিরসনের প্রতিশ্রুতিও যেন কেবল ইশতেহারে সীমাবদ্ধ না থাকে, সেই প্রত্যাশাও জানিয়েছেন তারা।
আগামী বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার ৫১৬ শিক্ষার্থী এই নির্বাচনে ভোট দেবেন, যার মধ্যে ছাত্রী ভোটার প্রায় ১১ হাজার ৩২৯ জন। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আইটি ভবন, নতুন কলা ভবন, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও বাণিজ্য (বিবিএ) অনুষদ ভবনে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানান, প্রতিটি শিক্ষার্থী চাকসুর ২৬টি এবং হলের ১৪টি পদে ভোট দেবেন। এজন্য গোপন কক্ষ তৈরি করা হয়েছে।
এ নির্বাচনে ৪১৫ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তারা ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্র শিবির, বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ১২টি প্যানেলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া প্রতিটি পদে স্বতন্ত্রভাবে আরও ডজনখানেক প্রার্থী লড়ছেন।
সব প্যানেল ও প্রার্থীদের ইশতেহারে আবাসন, যোগাযোগব্যবস্থা ও নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গঠনের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীরা ইশতেহার নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা সোমবার রাতে শেষ হবে।
ক্যাম্পাসে ছাত্রীরা এসব ইশতেহার বিশ্লেষণ করছেন—কেউ আশাবাদী, কেউ আবার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।
চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তানজিলা রহমান দিয়া বলেন, “চাকসু ও হলের নেতৃত্বে যারা আসবেন, তাদের কাছে প্রথম দাবি নিরাপদ ক্যাম্পাস। যেন ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে চলাচলে নিরাপত্তা থাকে এবং হলের বাইরে যারা মেসে থাকেন, তারাও নিরাপদে থাকতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “ইশতেহারে আবাসন ও যোগাযোগের উন্নতির কথা বলা হলেও, এক বছরের মেয়াদে সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।”
সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী আনিকা আনজুম মনে করেন, দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা বেশি।
“এখানে ছাত্রদের জন্য এক ধরনের নিয়ম, আর ছাত্রীদের জন্য অন্য নিয়ম। ছেলেরা রাজনীতিতে সহজে অংশ নিতে পারে, কিন্তু মেয়েরা জড়ালে কটূক্তির শিকার হয়,” বলেন আনিকা।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “চাকসু নেতৃত্ব যেন ছেলেমেয়ে ভেদাভেদ না করে সত্যিকারের নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলে এবং আমাদের অধিকার নিশ্চিত করে।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী ফাহমিদা অর্পি বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন, যার ভুক্তভোগী বেশি ছাত্রীদেরই।”
তিনি জানান, “আগে হলে উঠতে হলে দলীয় পরিচয় লাগত। এখন ‘মেধার ভিত্তিতে’ সিট বণ্টনের অজুহাতে অনেককে বঞ্চিত করা হচ্ছে। প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের তো ফলাফলও থাকে না, ফলে তারা আসন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
অর্পি বলেন, “দেশের নানা অঞ্চল থেকে মেয়েরা এখানে পড়তে আসে। কিন্তু প্রথম বর্ষে ছাত্রীদের থাকার সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি। নিরাপত্তা বড় বিষয় হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়া কঠিন। আশা করি নতুন নেতৃত্ব দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবে।”
ছাত্রীরা আরও জানান, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে হয়। তাই হলগুলোতে সুপার শপ ও ফার্মেসি স্থাপনের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
অর্পির একই বিভাগের ছাত্রী ইবতিসাম আহমেদ বলেন, “আমাদের হলগুলোতে নিরাপত্তার অজুহাতে প্রবেশের সময় সীমিত করা হয়েছে। আমরা চাই সময়টা বাড়ানো হোক। এছাড়া বুলিংয়ের বিষয়টিও গুরুতর—রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরে গেলেই নানা অপমান সহ্য করতে হয়।”
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে অর্থনীতি বিভাগের কয়েকজন ছাত্রী জানান, তাদের কাছে নিরাপত্তা ও আবাসনই প্রধান ইস্যু। শহর থেকে আসা-যাওয়া করা শাটল ট্রেনের ছাত্রীদেরও নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করতে হয় বলে জানান তারা।
এক ছাত্রী বলেন, “শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আমাদের ক্যাম্পাসটা গ্রামের ভেতরে, স্থানীয় বখাটেদের কারণেও সমস্যা হয়। আশা করি নতুন নেতৃত্ব এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করবে।”
অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া মমতাজ মিম বলেন, “ছাত্রীদের নানা ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হয়, এমনকি খেলাধুলাতেও। ছাত্রদের জন্য বিভিন্ন সময়ে খেলাধুলার আয়োজন হলেও ছাত্রীদের জন্য বছরে মাত্র একবার ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়।”
অহনা হালদার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “ছাত্রীরা অনেক সময় শহরে টিউশনে বা জরুরি কাজে যায়। ফেরার ট্রেন ক্যাম্পাসে পৌঁছায় রাত সাড়ে ৯টায়, খেয়ে হলে ফিরতে প্রায় ১০টা বাজে। তাই আমরা চাই, হলের প্রবেশের সময়টা আরেকটু বাড়ানো হোক।”