রাকসু নির্বাচনে ভোট দেয়ার পর
তপ্ত অক্টোবরের সকাল। সূর্যের আলো তখন পুরো ক্যাম্পাসে ঝলমল করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাঘাটে শিক্ষার্থীদের মুখে উৎসাহ, উত্তেজনা আর প্রত্যাশার আলো। ৩৫ বছর পর সেই কাক্সিক্ষত রাকসু নির্বাচন!
১৯৮৯ সালের পর থেমে থাকা গণতন্ত্রের ঘড়ি আবার টিকটিক করা শুরু করে। গতকাল সকাল ৯টা বাজতেই শুরু হয় ভোটগ্রহণ, চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ক্যাম্পাসজুড়ে উচ্ছ্বাস, স্লোগান আর হাসির মেলা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
উৎসবেও অভিযোগের ঢেউ
দিনভর উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হলেও কিছু অভিযোগ ছুঁয়ে যায় দিনের আনন্দকে। ছাত্রদল ও তাদের সমর্থিত কয়েকটি প্যানেল অভিযোগ করেন কিছু বিষয়ে। অভিযোগ করে তারা বলেন, কিছু কেন্দ্রে অতিরিক্ত সই করা ব্যালট পেপার রাখা হয়েছে, কোথাও কালি উঠে গেছে, আবার কিছু কেন্দ্রে ভোট ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার অভাব দেখা গেছে।
এক কেন্দ্রে ভোটার আসার আগেই এক সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শতাধিক ব্যালটে সই করে রাখেন।
পোলিং এজেন্ট মহিউদ্দিন আহমেদ সীমান্ত বলেন, ‘স্যার ভোটার আসার আগেই সই দিচ্ছিলেন। পছন্দের ভোটার এলে একাধিক ব্যালট দিতে পারবেন এ উদ্দেশেই করছিলেন।’
প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তবে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সেতাউর রহমান
বলেন, ‘আনন্দমুখর পরিবেশে কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।’
কী বললেন প্রার্থীরা
ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, ‘সকালে নির্বাচন ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে যায়। ক্যাম্পাসে সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সমর্থকরা বহিরাগতদের তাদের টি-শার্ট পরিয়ে ঢুকিয়েছে।’
আর ইসলামী ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ভিন্ন সুরে বলেন,
‘নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু মনে হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছে। ক্যাম্পাসে অনেক জায়গায় আনন্দঘন মুহূর্ত দেখেছি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি তাদের বিষয়ে মন্তব্য করবো ফলাফল ঘোষণার পর। তবে আমাদের প্রত্যাশা, তারা যেন কোনো পক্ষপাতমূলক বা বিবাদসুলভ আচরণ না করে।”
ক্যাম্পাসের বাইরেও ভোটের উত্তাপ
ক্যাম্পাসের ফটকগুলোর আশপাশে অবস্থান নেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিনোদপুর ফটকে দেখা যায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ব্যস্ততা; অন্যদিকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা কাজলা ফটক ও ইসলামি ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেয়। বরইবাগান এলাকায় তাদের রান্নার আয়োজনও নজর কাড়ে — কেউ ভাত দিচ্ছে, কেউ স্লোগান তুলছে।
পর্যবেক্ষক দল কী বললো
পর্যবেক্ষক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম কিছু বুথের জায়গা বড় আর কিছু বুথের জায়গা ছোট। যেখানে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। যেটা আমাদের কাছে ব্যবস্থাপনার ক্রুটি মনে হয়ছে। প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম কোন প্রকার সমস্যা হচ্ছে না। ভোটকেন্দ্রের ভিতরে আমরা জানতে চাইছিলাম কোন অভিযোগ আছে কিনা, সেখানে কেউ আমাদের অভিযোগ দেয়নি সবকিছু ঠিকঠাক ছিল।’
ভোটের পরিসংখ্যান
মোট ভোটার ছিল ২৮,৯০৯ জন, যার মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২০,১৮৭ জন। উপস্থিতি ৬৯.৮৩ শতাংশ।
হলভিত্তিক ভোটের হারও ছিল —সোহরাওয়ার্দী হল ৭৭.৬০%, বিজয়-২৪ হল ৭৪.৭১%, মতিহার হল ৭৩.২%, জিয়াউর রহমান হল ৭০.৯৬%, নবাব লতিফ হল ৭০.১৩%, রোকেয়া হল ৫৯.৫% ,।
ভোটারদের প্রতিক্রিয়া
সন্ধ্যা নামতেই ব্যালট বাক্সগুলো একে একে জমা পড়ছে প্রশাসন ভবনে। কেউ ক্লান্ত, কেউ উৎফুল্ল, কেউ আবার অপেক্ষায় ফল ঘোষণার।
৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আবার সাক্ষী হলো এক নতুন ইতিহাসের, যেখানে অভিযোগ আর আনন্দ, আশা আর আশঙ্কা মিলেমিশে তৈরি করল গণতন্ত্রের এক দিনের উৎসব।
এক শিক্ষার্থী ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘আজকে ভোট দিতে পারছি এই অনুভূতিটাই আলাদা। যাই হোক, রাকসু ফিরে এসেছে, এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।
রাকসু নির্বাচনে ভোট দেয়ার পর
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
তপ্ত অক্টোবরের সকাল। সূর্যের আলো তখন পুরো ক্যাম্পাসে ঝলমল করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাঘাটে শিক্ষার্থীদের মুখে উৎসাহ, উত্তেজনা আর প্রত্যাশার আলো। ৩৫ বছর পর সেই কাক্সিক্ষত রাকসু নির্বাচন!
১৯৮৯ সালের পর থেমে থাকা গণতন্ত্রের ঘড়ি আবার টিকটিক করা শুরু করে। গতকাল সকাল ৯টা বাজতেই শুরু হয় ভোটগ্রহণ, চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ক্যাম্পাসজুড়ে উচ্ছ্বাস, স্লোগান আর হাসির মেলা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
উৎসবেও অভিযোগের ঢেউ
দিনভর উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হলেও কিছু অভিযোগ ছুঁয়ে যায় দিনের আনন্দকে। ছাত্রদল ও তাদের সমর্থিত কয়েকটি প্যানেল অভিযোগ করেন কিছু বিষয়ে। অভিযোগ করে তারা বলেন, কিছু কেন্দ্রে অতিরিক্ত সই করা ব্যালট পেপার রাখা হয়েছে, কোথাও কালি উঠে গেছে, আবার কিছু কেন্দ্রে ভোট ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার অভাব দেখা গেছে।
এক কেন্দ্রে ভোটার আসার আগেই এক সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শতাধিক ব্যালটে সই করে রাখেন।
পোলিং এজেন্ট মহিউদ্দিন আহমেদ সীমান্ত বলেন, ‘স্যার ভোটার আসার আগেই সই দিচ্ছিলেন। পছন্দের ভোটার এলে একাধিক ব্যালট দিতে পারবেন এ উদ্দেশেই করছিলেন।’
প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তবে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সেতাউর রহমান
বলেন, ‘আনন্দমুখর পরিবেশে কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।’
কী বললেন প্রার্থীরা
ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, ‘সকালে নির্বাচন ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে যায়। ক্যাম্পাসে সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সমর্থকরা বহিরাগতদের তাদের টি-শার্ট পরিয়ে ঢুকিয়েছে।’
আর ইসলামী ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ভিন্ন সুরে বলেন,
‘নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু মনে হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছে। ক্যাম্পাসে অনেক জায়গায় আনন্দঘন মুহূর্ত দেখেছি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি তাদের বিষয়ে মন্তব্য করবো ফলাফল ঘোষণার পর। তবে আমাদের প্রত্যাশা, তারা যেন কোনো পক্ষপাতমূলক বা বিবাদসুলভ আচরণ না করে।”
ক্যাম্পাসের বাইরেও ভোটের উত্তাপ
ক্যাম্পাসের ফটকগুলোর আশপাশে অবস্থান নেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিনোদপুর ফটকে দেখা যায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ব্যস্ততা; অন্যদিকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা কাজলা ফটক ও ইসলামি ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেয়। বরইবাগান এলাকায় তাদের রান্নার আয়োজনও নজর কাড়ে — কেউ ভাত দিচ্ছে, কেউ স্লোগান তুলছে।
পর্যবেক্ষক দল কী বললো
পর্যবেক্ষক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম কিছু বুথের জায়গা বড় আর কিছু বুথের জায়গা ছোট। যেখানে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। যেটা আমাদের কাছে ব্যবস্থাপনার ক্রুটি মনে হয়ছে। প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম কোন প্রকার সমস্যা হচ্ছে না। ভোটকেন্দ্রের ভিতরে আমরা জানতে চাইছিলাম কোন অভিযোগ আছে কিনা, সেখানে কেউ আমাদের অভিযোগ দেয়নি সবকিছু ঠিকঠাক ছিল।’
ভোটের পরিসংখ্যান
মোট ভোটার ছিল ২৮,৯০৯ জন, যার মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২০,১৮৭ জন। উপস্থিতি ৬৯.৮৩ শতাংশ।
হলভিত্তিক ভোটের হারও ছিল —সোহরাওয়ার্দী হল ৭৭.৬০%, বিজয়-২৪ হল ৭৪.৭১%, মতিহার হল ৭৩.২%, জিয়াউর রহমান হল ৭০.৯৬%, নবাব লতিফ হল ৭০.১৩%, রোকেয়া হল ৫৯.৫% ,।
ভোটারদের প্রতিক্রিয়া
সন্ধ্যা নামতেই ব্যালট বাক্সগুলো একে একে জমা পড়ছে প্রশাসন ভবনে। কেউ ক্লান্ত, কেউ উৎফুল্ল, কেউ আবার অপেক্ষায় ফল ঘোষণার।
৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আবার সাক্ষী হলো এক নতুন ইতিহাসের, যেখানে অভিযোগ আর আনন্দ, আশা আর আশঙ্কা মিলেমিশে তৈরি করল গণতন্ত্রের এক দিনের উৎসব।
এক শিক্ষার্থী ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘আজকে ভোট দিতে পারছি এই অনুভূতিটাই আলাদা। যাই হোক, রাকসু ফিরে এসেছে, এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।