রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। হামলার পরে আহত দুই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আহত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা ফটকের সামনে কাজলা ক্যান্টিনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে রাত সাড়ে ১২টা থেকে কাজলা ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের ওপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন, ফাইন্যান্স বিভাগের ২০২১-২১ শিক্ষাবর্ষের আল ফারাবী, ২০২৩-২৪ বর্ষের তাহমিদ আহমেদ বখশী এবং নাট্যকলা বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ।
আহত আল ফারাবী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হল শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৫ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী, বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলায় অবস্থিত কাজলা ক্যান্টিনে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন ফারাবি ও তার সঙ্গে কয়েকজন। এ সময় ১০-১৫ টি মোটরসাইকেলের করে মুখে কালো কাপড় বেধে এবং হেলমেট পরিহিত একটি দল রেস্টুরেন্টে আসে। তারা শিক্ষার্থীদের ছবি
দেখিয়ে একজনের খোঁজ করেন।
এরপরই হুট করে তারা এলোপাতাড়ি হামলা শুরু করেন। তাদের হাতে হাতুড়ি, রড, রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্রও দেখা গেছে। পরে সেখান থেকে মারধর করে ফারাবি এবং বখশীকে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে পৌনে ১২টার দিকে ফারাবীকে বিনোদপুর এলাকায় বেতার মাঠের পাশে এবং বখশীকে হবিবুর রহমান হলের সামনের থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারের পরে অপহরণের শিকার শিক্ষার্থী ফারাবীর পিঠের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। পরে ফারাবী এবং মিনহাজ রামেকে চিকিৎসা নেন। ফারাবী বর্তমানে রামেকের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। আর অপহরণের শিকার আরেক শিক্ষার্থীকে হাবিবুর রহমান হলের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শংকর কে. বিশ্বাস বলেন, ‘সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে এসেছিল। তাদের একজন এখানে ভর্তি আছে। দুজনেরই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কালসিটে দাগ রয়েছে।’
উদ্ধার হওয়ার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তামজিদ হাসান বখশী বলেন, ‘আমরা কাজলায় রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছিলাম। এ সময় ১০-১৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে মুখোশ ও হেলমেট পরিহিত একদল আমাদের ওপর হামলা করে। পরে তারা রেস্টুরেন্টের সামনে ফেলে আমাকে পিটায় এবং আমাকে রিকশায় করে তুলে নিয়ে সুইটের মোড়ের দিকে নিয়ে যায়। পরে সেখানে আমাকে অন্ধকারে বসায় এবং নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। এর ভেতর একটি কল আসে এবং তাদের বলে ‘আসলটাকে’ পেয়েছি। পরে আমি বলি আমি ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই। আমি আন্দোলনের পরে ক্যাম্পাসে এসেছি। পরে আমাকে নিয়ে কাজলাস্থ মোল্লা স্কুলের এখানে রেখে চলে যায়। এ ঘটনায় কারা ছিল আমি মুখ বেঁধে রাখার কারণে চিনতে পারিনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমরা বসে খাবার খাচ্ছিলাম। এ সময় হেলমেট ও মুখোশ পরে একদল লোক একজনের ছবি দেখিয়ে তার খোঁজ করে। হঠাৎ তারা এলোপাতাড়ি হামলা চালায় এবং দুইজনকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের হাতে লোহার রড, রামদা, ছুরিসহ নানান অস্ত্র ছিল। তাদের আঘাতে আমাদের আরও এক শিক্ষার্থীর কোপ লাগে।’
অপহরণের শিকার আরেক শিক্ষার্থী আল ফারাবী বলেন, ‘হামলা শেষে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে আমাকে পথে মারতে থাকে এবং বেতার মাঠের পাশে আমাকে ফেলে রেখে চলে যায়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এ সময় পুলিশ কার্যক্রম অসন্তোষজনক ছিল। পরে দুজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
জানতে চাইলে নগরের মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে এখনও অভিযানে রয়েছি। বিষয়টি সম্পন্ন হলে বিস্তারিত জানানো হবে।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। হামলার পরে আহত দুই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আহত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা ফটকের সামনে কাজলা ক্যান্টিনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে রাত সাড়ে ১২টা থেকে কাজলা ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের ওপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন, ফাইন্যান্স বিভাগের ২০২১-২১ শিক্ষাবর্ষের আল ফারাবী, ২০২৩-২৪ বর্ষের তাহমিদ আহমেদ বখশী এবং নাট্যকলা বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ।
আহত আল ফারাবী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হল শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৫ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী, বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলায় অবস্থিত কাজলা ক্যান্টিনে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন ফারাবি ও তার সঙ্গে কয়েকজন। এ সময় ১০-১৫ টি মোটরসাইকেলের করে মুখে কালো কাপড় বেধে এবং হেলমেট পরিহিত একটি দল রেস্টুরেন্টে আসে। তারা শিক্ষার্থীদের ছবি
দেখিয়ে একজনের খোঁজ করেন।
এরপরই হুট করে তারা এলোপাতাড়ি হামলা শুরু করেন। তাদের হাতে হাতুড়ি, রড, রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্রও দেখা গেছে। পরে সেখান থেকে মারধর করে ফারাবি এবং বখশীকে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে পৌনে ১২টার দিকে ফারাবীকে বিনোদপুর এলাকায় বেতার মাঠের পাশে এবং বখশীকে হবিবুর রহমান হলের সামনের থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারের পরে অপহরণের শিকার শিক্ষার্থী ফারাবীর পিঠের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। পরে ফারাবী এবং মিনহাজ রামেকে চিকিৎসা নেন। ফারাবী বর্তমানে রামেকের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। আর অপহরণের শিকার আরেক শিক্ষার্থীকে হাবিবুর রহমান হলের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শংকর কে. বিশ্বাস বলেন, ‘সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে এসেছিল। তাদের একজন এখানে ভর্তি আছে। দুজনেরই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কালসিটে দাগ রয়েছে।’
উদ্ধার হওয়ার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তামজিদ হাসান বখশী বলেন, ‘আমরা কাজলায় রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছিলাম। এ সময় ১০-১৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে মুখোশ ও হেলমেট পরিহিত একদল আমাদের ওপর হামলা করে। পরে তারা রেস্টুরেন্টের সামনে ফেলে আমাকে পিটায় এবং আমাকে রিকশায় করে তুলে নিয়ে সুইটের মোড়ের দিকে নিয়ে যায়। পরে সেখানে আমাকে অন্ধকারে বসায় এবং নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। এর ভেতর একটি কল আসে এবং তাদের বলে ‘আসলটাকে’ পেয়েছি। পরে আমি বলি আমি ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই। আমি আন্দোলনের পরে ক্যাম্পাসে এসেছি। পরে আমাকে নিয়ে কাজলাস্থ মোল্লা স্কুলের এখানে রেখে চলে যায়। এ ঘটনায় কারা ছিল আমি মুখ বেঁধে রাখার কারণে চিনতে পারিনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমরা বসে খাবার খাচ্ছিলাম। এ সময় হেলমেট ও মুখোশ পরে একদল লোক একজনের ছবি দেখিয়ে তার খোঁজ করে। হঠাৎ তারা এলোপাতাড়ি হামলা চালায় এবং দুইজনকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের হাতে লোহার রড, রামদা, ছুরিসহ নানান অস্ত্র ছিল। তাদের আঘাতে আমাদের আরও এক শিক্ষার্থীর কোপ লাগে।’
অপহরণের শিকার আরেক শিক্ষার্থী আল ফারাবী বলেন, ‘হামলা শেষে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে আমাকে পথে মারতে থাকে এবং বেতার মাঠের পাশে আমাকে ফেলে রেখে চলে যায়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এ সময় পুলিশ কার্যক্রম অসন্তোষজনক ছিল। পরে দুজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
জানতে চাইলে নগরের মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে এখনও অভিযানে রয়েছি। বিষয়টি সম্পন্ন হলে বিস্তারিত জানানো হবে।’