স্বতন্ত্রতা রক্ষায় সতর্কতা, ঢাকা অচল করার হুঁশিয়ারি
রাজধানীর সাত কলেজ নিয়ে গঠন হতে যাওয়া ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রস্তাবিত ‘স্কুলিং কাঠামো’ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ। তারা বলছেন, এই কাঠামো বহাল থাকলে তিতুমীর কলেজসহ সাত কলেজের স্বাতন্ত্র্য নষ্ট হবে। এমন পরিস্থিতিতে স্বতন্ত্রতা রক্ষার দাবি তুলে তারা ঢাকা অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান তুলে ধরেন।
২০২৩–২৪ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার বলেন, “গুরুত্বসহকারে একটি কথা উল্লেখ করছি— আমরা সবাই সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি চাই, আমরা কেউই তার বিরোধিতা করছি না। আমরা বিরোধিতা করছি স্কুলিং কাঠামোর।”
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজকে নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের উদ্যোগ চলছে। তবে এর কাঠামো নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অংশের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে।
প্রস্তাবিত কাঠামোয় সাতটি কলেজসহ দেশের সব সরকারি কলেজে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি ও মৌলিক অধিকারের ক্ষতিতে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে বর্তমান শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি কাঠামো দ্রুত নিশ্চিত করে অধ্যাদেশ জারির দাবি তুলছেন। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক থেকে অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতোই ‘স্কুলিং কাঠামো’-র বিরোধিতা করে বলছে— এতে কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য থাকবে না।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে। এতে সাত কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি’ বা ‘স্কুলিং’ কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব উঠে আসে। পাশাপাশি সাত কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানও চলমান রাখার কথা বলা হয়।
এ নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলেন, সাত কলেজে দেড় হাজার পদ তাদের ক্যাডারের বাইরে চলে গেলে পদোন্নতি নিয়ে বড় জটিলতা তৈরি হবে।
দাবি ওঠার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, খসড়া অধ্যাদেশ পরিমার্জনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে চূড়ান্ত করতে আরও সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে।
অধ্যাদেশের খসড়া সমালোচনা করে শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার বলেন, “খসড়ায় বলা হয়েছিল— রাজধানীর স্বনামধন্য সাত কলেজের স্বতন্ত্র অবস্থা বিলীন করে একেকটি কলেজকে একেকটি স্কুলে রূপান্তর করা হবে, বিভাগ সংখ্যা কমানো হবে এবং ধর্মীয় শিক্ষা তুলে নেওয়া হবে। অর্থাৎ কলেজগুলোকে হাইব্রিড ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া হবে।
“খসড়ার বিরুদ্ধে তিতুমীরসহ ছয় কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানায়। এরপর ১৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে আমরা প্রমাণ করেছি, স্কুলিং কাঠামো আমরা মেনে নেব না— সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীও এর বিরোধিতা করছে। এর পরই খসড়াটি আটকে যায় এবং আমাদের স্বতন্ত্রতা রক্ষার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই তিতুমীরসহ বাকি ছয় কলেজকে স্বতন্ত্র রাখুন এবং নতুন কাঠামো তৈরি করে ২৪–২৫ সেশনের শিক্ষার্থীদের দ্রুত শ্রেণিকক্ষে পাঠানোর ব্যবস্থা নিন।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন—
১. নিঃশর্তভাবে তিতুমীর কলেজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে হবে।
২. তিতুমীর কলেজের কোনো বিভাগ বিলুপ্ত করা যাবে না।
৩. তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা হ্রাস করা যাবে না।
৪. একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল করে নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের নিয়ে নতুন রূপরেখা করতে হবে।
এদিকে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির পুরো প্রকল্পেরই বিরোধিতা করে তিতুমীর কলেজকেই আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি জানিয়ে আসছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
স্বতন্ত্রতা রক্ষায় সতর্কতা, ঢাকা অচল করার হুঁশিয়ারি
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
রাজধানীর সাত কলেজ নিয়ে গঠন হতে যাওয়া ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রস্তাবিত ‘স্কুলিং কাঠামো’ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ। তারা বলছেন, এই কাঠামো বহাল থাকলে তিতুমীর কলেজসহ সাত কলেজের স্বাতন্ত্র্য নষ্ট হবে। এমন পরিস্থিতিতে স্বতন্ত্রতা রক্ষার দাবি তুলে তারা ঢাকা অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান তুলে ধরেন।
২০২৩–২৪ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার বলেন, “গুরুত্বসহকারে একটি কথা উল্লেখ করছি— আমরা সবাই সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি চাই, আমরা কেউই তার বিরোধিতা করছি না। আমরা বিরোধিতা করছি স্কুলিং কাঠামোর।”
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজকে নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের উদ্যোগ চলছে। তবে এর কাঠামো নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অংশের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে।
প্রস্তাবিত কাঠামোয় সাতটি কলেজসহ দেশের সব সরকারি কলেজে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি ও মৌলিক অধিকারের ক্ষতিতে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে বর্তমান শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি কাঠামো দ্রুত নিশ্চিত করে অধ্যাদেশ জারির দাবি তুলছেন। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক থেকে অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতোই ‘স্কুলিং কাঠামো’-র বিরোধিতা করে বলছে— এতে কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য থাকবে না।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে। এতে সাত কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি’ বা ‘স্কুলিং’ কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব উঠে আসে। পাশাপাশি সাত কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানও চলমান রাখার কথা বলা হয়।
এ নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলেন, সাত কলেজে দেড় হাজার পদ তাদের ক্যাডারের বাইরে চলে গেলে পদোন্নতি নিয়ে বড় জটিলতা তৈরি হবে।
দাবি ওঠার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, খসড়া অধ্যাদেশ পরিমার্জনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে চূড়ান্ত করতে আরও সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে।
অধ্যাদেশের খসড়া সমালোচনা করে শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার বলেন, “খসড়ায় বলা হয়েছিল— রাজধানীর স্বনামধন্য সাত কলেজের স্বতন্ত্র অবস্থা বিলীন করে একেকটি কলেজকে একেকটি স্কুলে রূপান্তর করা হবে, বিভাগ সংখ্যা কমানো হবে এবং ধর্মীয় শিক্ষা তুলে নেওয়া হবে। অর্থাৎ কলেজগুলোকে হাইব্রিড ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া হবে।
“খসড়ার বিরুদ্ধে তিতুমীরসহ ছয় কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানায়। এরপর ১৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে আমরা প্রমাণ করেছি, স্কুলিং কাঠামো আমরা মেনে নেব না— সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীও এর বিরোধিতা করছে। এর পরই খসড়াটি আটকে যায় এবং আমাদের স্বতন্ত্রতা রক্ষার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই তিতুমীরসহ বাকি ছয় কলেজকে স্বতন্ত্র রাখুন এবং নতুন কাঠামো তৈরি করে ২৪–২৫ সেশনের শিক্ষার্থীদের দ্রুত শ্রেণিকক্ষে পাঠানোর ব্যবস্থা নিন।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন—
১. নিঃশর্তভাবে তিতুমীর কলেজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে হবে।
২. তিতুমীর কলেজের কোনো বিভাগ বিলুপ্ত করা যাবে না।
৩. তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা হ্রাস করা যাবে না।
৪. একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল করে নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের নিয়ে নতুন রূপরেখা করতে হবে।
এদিকে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির পুরো প্রকল্পেরই বিরোধিতা করে তিতুমীর কলেজকেই আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি জানিয়ে আসছে।