শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে হত্যার শিকার জাতির বরেণ্য সন্তানদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। দিনটিকে স্মরণ করতে আনুষ্ঠানিক কোনো পরিকল্পনাও ছিল না। আজ রোববার সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে দুপুর দেড়টার পর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বাদ আছর একটি দোয়া মাহফিল ও সন্ধ্যায় আলোচনা সভা আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
তবে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে রাতের প্রথম প্রহরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (রাবিসাস)। পরে ভোর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন হল, বিভাগ, ইন্সটিটিউট ও ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন, সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ ছাড়াও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে সম্মাননা স্মারক, আলোচনা সভা, নাটক বিশেষ প্রার্থনাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাকসুর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি না করার বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এমন কর্মকাণ্ড তাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাধ্য। সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়ার কথাও বলেছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) ও শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘দিবসটিকে ঘিরে গতকাল থেকে আমাদের আলোচনা চলছিল। আমরা একটি আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করার কথা আলোচনা করছিলাম। কিন্তু স্থান, সময়, ব্যানার নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হয়ে গেছে।’
আলোচনা সভায় অতিথি কে কে থাকবেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কারও নাম বলতে পারেননি। তিনি রাকসুর বিতর্ক ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে বলেছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি না ঘোষণার বিষয়টিকে ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার অংশ হিসেবে দেখছেন রাবি শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর। তিনি বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাকসুর কোনো আনুষ্ঠানিক আয়োজন নেই, এটি শুনে আমি অত্যন্ত ব্যথিত। আমরা দেখেছি, ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে একটি গোষ্ঠী ৭১কে মুছে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। তারা একটি দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ইতিহাস বিকৃত করছে। রাকসু যদি ইতিহাস বিকৃতির এই পথে যায় তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়নি। ফেইসবুকে সমালোচনার পর তারা দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। রাকসু একটি নির্দিষ্ট দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে৷ পাকিস্তানপন্থী বিভিন্ন দিক তারা ঘটা করে পালন করছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ড ৭১ কে মুছে ফেলার প্রচেষ্টার নামান্তর।’
এবার রাকসুতে অধিকাংশ পদেই জিতেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রর্থীরা। জামায়াতের তত্বাবধানে ও তাদের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে গঠন করা হয়েছিল ‘আল বদর ও আল শামস’ বাহিনী, যারা পাকিস্তান সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৭১ সালে বুদ্বিজীবি হত্যায় এই দুই বাহিনীর বড় ভূমিকা ছিল।