পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনাকে ‘অবান্তর’ বলে মন্তব্য করায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগ দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুরে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’-এর ব্যানারে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। একই সঙ্গে তারা উপ-উপাচার্য শামীম উদ্দিন খানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।
এ কর্মসূচিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, নারী অঙ্গনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে শামীম উদ্দিন খানের মন্তব্যের প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে। তিনি দ্রুত নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে তার পদত্যাগের দাবি অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
উল্লেখ্য, বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিষয়টি ‘অবান্তর’ বলে মন্তব্য করেন।
সভায় তিনি বলেন, “যে সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে, সে সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে; আমি মনে করি এটি রীতিমত অবান্তর। কারণ, ওই সময় তারা তাদের জীবন শঙ্কায় ছিলেন।”
এই বক্তব্যের পরই রাতের মধ্যে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে তার বক্তব্যের সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির বলেন, উপ-উপাচার্য শামীম উদ্দিন খানের বক্তব্যের মাধ্যমে রাজাকারদের পক্ষে বয়ান তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি এটিকে ঘৃণ্য ও লজ্জাজনক মন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেন এবং জানান, আগের দিনের বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার পর নারী অঙ্গনের প্রতিনিধি সুমাইয়া সিকদার বলেন, একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে উপ-উপাচার্যের এ ধরনের মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হেয় করা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন বক্তব্য দেওয়ার সাহস না পায়, সে জন্য শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর দায় স্বীকৃত হলেও উপ-উপাচার্য শামীম উদ্দিন খান তা অস্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন। তার মতে, গণহত্যাকারীদের দায়মুক্ত করার উদ্দেশ্যেই এমন মন্তব্য করা হয়েছে। তিনি ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বেলা ১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনে ঝোলানো তালা বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খোলা হয়নি।
এ সময় প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।
ঘটনাটি নিয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে, উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শামীম উদ্দিন খান তার থেকে পদমর্যাদায় ঊর্ধ্বতন হওয়ায় এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।