image

চবি প্রশাসনিক ভবনে তালা, মুখোমুখি অবস্থানে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল–বাম সংগঠন

সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খানের বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে দেখা যায় ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদল ও বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই পক্ষের মাঝখানে অবস্থান নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা। এ সময় সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানান চাকসুর ভিপি ইব্রাহীম হোসেন রনি।

উপ-উপাচার্যের বক্তব্যের প্রতিবাদে কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকের সামনে আগে থেকেই ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ ব্যানারে অবস্থান নেন ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে ভবনের দুই পাশে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।

অবস্থানের সময় ছাত্রশিবিরের মিছিল থেকে ‘চাঁদা চাঁদা করিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না’, ‘ভিক্ষা লাগলে ভিক্ষা কর, চাঁদাবাজি ছাড় দে’, ‘লন্ডনে কামলা, দেশে চাঁদাবাজি শামলা’ এবং ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’—এ ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।

অন্যদিকে ছাত্রদল ও বাম ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘বাঁচতে হলে, লড়তে হলে—এই লড়াইয়ে জিততে হবে’, ‘তোমার দেশ, আমার দেশ—বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘রাজাকারের চামড়া তুলে ফেলবো আমরা’ এবং ‘রাজাকার ও পাকিস্তানের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’—এমন স্লোগান দেন।

পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই চাকসুর ভিপি ইব্রাহীম হোসেন রনি সেখানে গিয়ে বলেন, “প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার যে সংস্কৃতি আগে ছিল, তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তালার কারণে সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছে। যাদের কোনো দাবি বা সমস্যা আছে, তারা আমাদের জানান। আমরা সেগুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরব।”

ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে জয়ী এই ছাত্রনেতা দ্রুত প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দেওয়ারও আহ্বান জানান।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খানের মন্তব্যের প্রতিবাদে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ ব্যানারে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ বিভিন্ন বাম ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এর আগে বুদ্ধিজীবী দিবসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিষয়টিকে ‘অবান্তর’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “যে সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে, সে সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে; আমি মনে করি এটি রীতিমত অবান্তর। কারণ, ওই সময় তারা তাদের জীবন শঙ্কায় ছিলেন।”

এই বক্তব্যের পরপরই রাতেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে তার বক্তব্যের সমালোচনা শুরু হয়।

পরদিন সকালে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের দাবি জানান। এ কর্মসূচিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, নারী অঙ্গনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা যায়।

‘ক্যাম্পাস’ : আরও খবর

সম্প্রতি