image

শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে মন্তব্যের প্রতিবাদে চবিতে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা বর্জন চাকসু এজিএসসহ ৯ প্রতিনিধি

মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা বর্জন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) এজিএসসহ বিভিন্ন হল সংসদের মোট ৯ জন প্রতিনিধি। শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করা সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের উপস্থিতির প্রতিবাদে তাঁরা এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জারুলতলায় ‘সাম্প্রতিক বাংলাদেশে বিজয় দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন। সভা শুরু হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একটি মিছিল অনুষ্ঠানস্থলে আসে। মিছিল থেকে মঞ্চে উপস্থিত সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগ দাবি করা হয়। একপর্যায়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে চাকসুর এজিএস আয়ুবুর রহমান সভা বর্জনের ঘোষণা দেন।

বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আয়ুবুর রহমান বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে কথা বলার পরও সহ-উপাচার্য শামীম উদ্দিন খান দুঃখপ্রকাশ কিংবা ক্ষমা চাননি। এরপরও তিনি এই আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়েছেন। এ কারণে আমরা সভা বর্জন করছি।’

এজিএসের সঙ্গে সভা বর্জন করেন আরও ৯ জন প্রতিনিধি। তাঁরা হলেন— মাস্টারদা সূর্য সেন হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) মো. তাজিম ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মো. সাদমান; এ এফ রহমান হল সংসদের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক তানজিম আশরাফ; শাহজালাল হল সংসদের এজিএস ইমতিয়াজ জাবেদ এবং সমাজসেবা, পরিবেশ ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান; আলাওল হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক মো. নূরনবী এবং খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক বনি আল আমিন সরকার; অতীশ দীপঙ্কর হল সংসদের ভিপি রিপুল চাকমা; এবং শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের স্বাস্থ্য, আবাসন ও যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক জামিল হোসেন।

বর্জনের সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আয়ুবুর রহমান বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর বক্তব্য দেন চাকসুর ভিপি মো. ইব্রাহীম। তিনি ছাত্রদলকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ে এসে আমাদের কী বোঝাতে চান। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা আছেন। আমি প্রশাসনের কাছে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর সাঈদ বিন কামাল চৌধুরী বলেন, ‘আলোচনা সভা এখনো চলছে। সভা শেষে প্রক্টর বিস্তারিত বলবেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে আমাদের পক্ষে কোনো বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়।’

এর আগে রোববার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘যে সময় আমি (পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী) দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছি, আমি জীবিত থাকব না মৃত থাকব, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি; সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে—এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’ একই বক্তব্যে তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যার বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।

এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলসহ ছয়টি সংগঠন তাঁর পদত্যাগ দাবি করে। দাবির অংশ হিসেবে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়। এতে রাত প্রায় পৌনে ৯টা পর্যন্ত ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

‘ক্যাম্পাস’ : আরও খবর

সম্প্রতি