জকসু: ছাত্রদল-ছাত্রঅধিকারের ‘১৩ দফা’ এবং শিবিরের ‘২১ দফা’ ইশতেহারে কী আছে

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

https://sangbad.net.bd/images/2025/December/23Dec25/news/IMG-20251223-WA0028%281%29.jpg

প্রতিষ্ঠার দুই দশক পরে প্রথমবারের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ উপলক্ষে ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রদল-ছাত্র অধিকার সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’। ক্যাম্পাস নিরাপত্তা, আবাসন সংকট নিরসন, শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থান- উভয় প্যানেলের ইশতেহারেই এসব বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে, তবে দফাভিত্তিক অগ্রাধিকার ও বাস্তবায়ন কৌশলে রয়েছে ভিন্নতা।

মঙ্গলবার বেলা তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী একেএম রাকিব এই ইশতেহার ঘোষণা করেন। নিরাপদ ক্যাম্পাস, আবাসন সংকট নিরসন, শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।

ছাত্রদল-ছাত্রঅধিকার সমর্থিত প্যানেলের ‘১৩ দফা’

ইশতেহারে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে ভয়ের সংস্কৃতি দূর করা হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘটিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি স্থাপন, রাতব্যাপী আলোর ব্যবস্থা, ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা অ্যাপ চালু এবং আইনি সহায়তা সেল গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

আবাসন সংকট নিরসনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। বেদখলকৃত জমি ও ভবন উদ্ধার করে আবাসিক হল নির্মাণ, নির্মাণাধীন হল দ্রুত শেষ করা, অস্থায়ী হোস্টেল চালু এবং আবাসন ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আবাসিক হল নির্মাণের দাবিও ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ইশতেহারে ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত সংস্কার, আধুনিকায়ন এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে দ্রুত শেষ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সকল ভবনে উচ্চগতির ইন্টারনেট, আধুনিক লাইব্রেরি, টিএসসি উন্নয়ন, উপাসনালয় নির্মাণ এবং ছাত্রী হলে গার্ডিয়ান লাউঞ্জ স্থাপনের অঙ্গীকার করা হয়।

পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে বাসের ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন রুট চালু, চক্রাকার বাস সম্প্রসারণ এবং লাইভ লোকেশনভিত্তিক অ্যাপ চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, আধুনিক মেডিকেল সেন্টার, স্বাস্থ্যবীমা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথাও ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়।

শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অনলাইন স্টুডেন্ট পোর্টাল, সেশনজট নিরসন, গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি, আধুনিক ল্যাব, গবেষণা সফটওয়্যার সুবিধা এবং আন্তর্জাতিক একাডেমিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক সেবা ডিজিটালাইজ করে হয়রানি কমানোর কথাও বলা হয়।

এছাড়া কর্মসংস্থান ও ক্যারিয়ার উন্নয়নে ইন্টার্নশিপ, জব প্লেসমেন্ট, শিক্ষা ঋণ, অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ, জব ফেয়ার আয়োজন এবং স্টার্টআপ সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ, নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার সুরক্ষা, পরিবেশবান্ধব ও প্রাণীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ইশতেহারে।

ইশতেহারে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা ও একটি আধুনিক, গবেষণাভিত্তিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ লক্ষ্যে আসন্ন জকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের সমর্থন কামনা করা হয়।

ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ২১ দফা

https://sangbad.net.bd/images/2025/December/23Dec25/news/Final.00_00_32_28.Still007.jpg

গত রোববার দুপুরে একই স্থানে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম ইশতেহার ঘোষণা করেন। ২১ দফা ইশতেহারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো—স্বপ্নের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন; আবাসন সংকট নিরসন; বর্তমান ক্যাম্পাসের ঐতিহ্য রক্ষা ও আধুনিকায়ন; নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ; বিশ্বমানের শিক্ষা ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা; গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা প্রসার; শিক্ষার্থীবান্ধব লাইব্রেরি ও সেমিনার; ক্যাম্পাস কমিউনিটির স্বাস্থ্যসেবা; নারীর জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস; ছাত্রী হলের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি; ন্যায্যমূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও টিএসসির আধুনিকায়ন; পরিবহন সেবা সম্প্রসারণ; খেলাধুলা ও শরীরচর্চা; মুক্তিযুদ্ধ; জুলাই বিপ্লব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনা সংরক্ষণ; সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণ; ধর্মীয় স্বাধীনতা; আইনি সেবা ও মানবাধিকার সুরক্ষা; বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা; ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাড এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সংগঠন ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতা।

ইশতেহারে প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে তুলে ধরা হয়—দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা, আবাসন সংকট নিরসন, বর্তমান ক্যাম্পাসের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও আধুনিকায়ন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। র‍্যাগিং, সাইবার বুলিং, মাদক এবং সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের কথা বলা হয়।

এসময় তারা শিক্ষার মানোন্নয়নে আউটপুট বেজড এডুকেশন (ওবিই) কারিকুলাম বাস্তবায়ন, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা, উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণ, পেপারলেস প্রশাসন চালু এবং পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে দেখার ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে স্কলারশিপ, রিসার্চ ফেস্ট, সেমিনার এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম জোরদারের কথা উল্লেখ করা হয়।

এ ছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা অ্যাপ, নারী নিরাপত্তা সেল, ব্রেস্টফিডিং কর্নার, ডে-কেয়ার সেন্টার এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, আবাসন এবং এক্সেসিবল ক্যাম্পাস গড়ার অঙ্গীকারও করা হয়।

ইশতেহারে আরও বলা হয়—ন্যায্যমূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণ, পরিবহন সেবা সম্প্রসারণ, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম জোরদার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সুরক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার উন্নয়নে জব ফেয়ার, স্টার্টআপ সামিট ও পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অংশ হিসেবে জকসুর মাসিক কার্যক্রম অনলাইনে প্রকাশ এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের অঙ্গীকার করা হয়।

‘ক্যাম্পাস’ : আরও খবর

সম্প্রতি