alt

প্রাণ ফিরল ঢাবি ক্যাম্পাসে

১৮ মাস পর স্তব্ধতা ভেঙে মুখর

খালেদ মাহমুদ, ঢাবি ক্যাম্পাস : মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলেছে । ক্যাম্পাস হয়ে উঠলো আনন্দমুখর। দীর্ঘ বিরতির পর সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর কুশোল বিনিময় করে একে অপরে -সংবাদ

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দীর্ঘ ১৮ মাসের অচলায়তন ভেঙে আবারও চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। করোনার নিদারুণ কষাঘাতে নির্জনতা আর নিস্তব্ধতা ভেঙে আবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে ঢাবি ক্যাম্পাস।

দীর্ঘ সময়ের পর ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার শেষ ধাপে খুলে দেয়া হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা আসতে থাকেন তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ফুল ও চকলেট দিয়ে বরণ করে নেয় হল কর্তৃপক্ষ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অন্তত এক ডোজ টিকা নেয়ার প্রমাণপত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সাপেক্ষে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করতে পারবেন। সেই ঘোষণার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকেই শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে শুরু করেন তাদের নিজ নিজ হলে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল পরিদর্শনে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান। হল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে আমাদের জন্য একটি আনন্দের দিন, একেবারে ঈদের দিনের মতো। প্রতিটি হলে সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিচ্ছে। এই হল ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের জন্য, তাদের পেয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও একটি প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের স্থবিরতার অবসান ঘটলো।’ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘যেভাবে শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতাবোধ তৈরি করে টিকা কর্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। দুটি সূচক আমাদের সামনে আছে যে দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আনার অনুকূলে যায়। একটি হলো সংক্রমণ হার, যেটা একেবারে নিচের দিকে এবং আরেকটি হলো শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের আওতায় আসার যে হার সেটিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দুটিই আশাব্যঞ্জক সূচক। এই দুটি সূচক বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারব।’

হল খোলার পর থেকেই মুখে মাস্ক, কাঁধে ব্যাগ, দুহাত ভরে প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র নিয়ে ‘সেকেন্ড হোম’ খ্যাত আপন নীড়ে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা। এর মাধ্যমে অবসান ঘটলো করোনাকালীন দীর্ঘদিনের স্থবিরতার। এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির এক জরুরি সভায় ১০ তারিখ থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের জন্যও হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া সভায় ১৬ তারিখ থেকে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর খুলে দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও বিভাগের সেমিনার। গ্রন্থাগার খুলে দেয়ায় সেখানেও বেড়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।

এদিকে সোমবার (৪ অক্টোবর) শিক্ষার্থীদের শতভাগ করোনা টিকা নিশ্চিত করতে অনস্পট নিবন্ধনে টিকাদান শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার। যাদের এনআইডি নাই তারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিতে পারছেন।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে। বিকেল হতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, বটতলা, কার্জন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন পর হল খোলায় তাদের মাঝে উৎসব আমেজ তৈরি হয়েছে। হল প্রশাসনের আন্তরিকতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আজকের দিনকে ঈদের দিনের মতই মনে হচ্ছে।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী রকিব রানা মাসুদ বলেন, ‘করোনা মহামারীর কারণে হল বন্ধ হওয়ার পর থেকেই শুধু চাতক পাখির মতো আশায় ছিলাম কবে আবার হল খুলবে। আজ সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো। আজকে সত্যিই ঈদের দিনের মতো লাগছে। আজকে হলে উঠার এই অনুভূতি ভাষায় বুঝানো যাবে না।’

মাস্টার দা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন বলেন, ‘অনেকদিন পর হলে প্রবেশ করে ভালো লাগছে। এতদিন বাসায়, মেসে অনেক কষ্টে ছিলাম। হলে একটা ভালো পড়াশোনার পরিবেশ পাওয়া যাবে।’

মঙ্গলবার সকালে কয়েকটি আবাসিক হলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা লাইন ধরে হলে ঢুকছেন। ফটকের ভেতর হল প্রাধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের অন্তত এক ডোজ টিকা নেয়ার প্রমাণপত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র আছে কি না, তা যাচাই করে দেখছেন। মাপা হচ্ছে সবার শরীরের তাপমাত্রা। কোন হলে শিক্ষার্থীদের ফুল আবার কোথাও চকলেট দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এ সময় সব হলেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধিসম্বলিত প্রচারপত্র বিলি করা হয়

মঙ্গলবার সকাল থেকেই হলের কেন্টিনগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, বিজয় একাত্তর হল, কবি জসিম উদ্দিন হল, মাস্টার দ্যা সূর্যসেন হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, অমর একুশে হল, রোকেয়া হল এবং পিজে হার্টস হল। মঙ্গলবার সকাল থেকে খাবার বিতরণ শুরু না করে পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয় মাথায় রেখে দুপুর থেকে খাবার চালু করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শামসুন নাহার হল এবং স্যার এ এফ রহমান হলে। হল খোলায় খুশি কেন্টিন মালিক-কর্মচারীরাও।

প্রতিটি হলে বসানো হয়েছে হাত ধোয়ার বেসিন। হলের দেয়ালগুলো চুনকাম ছাড়াও প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজও শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলগুলোতে গণরুম বন্ধ রেখেছেন।

ছবি

রাকসু: ১৭ কেন্দ্রে ভোট, নিরাপত্তায় থাকবে দুই হাজার পুলিশ

ছবি

জকসুসহ ৩ দাবিতে বাগছাস ও ছাত্র অধিকারের অনশন

ছবি

ডাকসু নির্বাচন: ভোট হাতে গণনার আবেদন উমামা ফাতেমার

ছবি

এক সপ্তাহের মধ্যে জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ ৫ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের

ছবি

নারায়ণগঞ্জ চারুকলায় মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালুর দাবি, প্রো-ভিসির আশ্বাস

ছবি

রাকসু: চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা, ভিপি পদে ১৮

ছবি

জাকসু নির্বাচন নিয়ে ১৬ অভিযোগ: নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের

ছবি

রাকসু: তিন সাবেক সমন্বয়কের ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল, শিবিরের ‘ছায়ার’ গুঞ্জন

ছবি

জাকসু: ভোট গণনায় অসঙ্গতি, বৈধ ভোটের চেয়ে বেশী ভোটের হিসাব, বিজয়ী ঘোষণা করে পরে বাতিল

ছবি

রাকসু: নির্বাচনী প্রচারণায় মানতে হবে যেসব নিয়ম

ছবি

রাকসু: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৯ জন হল সংসদে নির্বাচিত

ছবি

ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ

ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু নির্বাচনে ঘোষিত নয়টি প্যানেল

ছবি

চাকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু, প্রথম দিনেই সংগ্রহ ২৮টি

ছবি

রাকসু: স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একাংশের প্যানেল, তবে নেই ভিপি, জিএস, এজিএস

ছবি

ডাকসুর প্রথম সভায় সিনেটের জন্য ৫ প্রতিনিধি মনোনীত

ছবি

৩৫ বছর পর চাকসু: মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু

ছবি

রাকসুর নীতিমালা সংশোধন, লটারিতে নির্ধারিত হবে ব্যালট নম্বর

জাকসু নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারায়নি: নবনির্বাচিত জিএস মাজহারুল

ছবি

রাকসু: আচরণবিধি ‘লঙ্ঘন’ করে চলছে প্রচার-প্রচারণা

ছবি

অব্যবস্থাপনায় প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে জাকসুতেও অধিকাংশ শিবির, তবে ভিপি স্বতন্ত্র সাবেক ছাত্রলীগ

ছবি

৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভিপি, শিবিরের প্রার্থী জিএসে বিজয়ী

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর: হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল, বিজয়ীদের তালিকা

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর: হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল, বিজয়ীদের তালিকা

ছবি

অব্যবস্থাপনায় প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে জাকসুতেও অধিকাংশ শিবির, ভিপি স্বতন্ত্র সাবেক ছাত্রলীগ

ছবি

বেরোবির দাওয়া সোসাইটি’র নবীন বরণে শিক্ষার্থীদের কুরআনসহ বিভিন্ন উপহার প্রদান

ছবি

জাকসু: অবশেষে ভোটের ফল ঘোষণা চলছে

ছবি

জাকসু নির্বাচন: আরেক কমিশনারের পদত্যাগ, অনিয়মে বর্জনের হিড়িক

ছবি

জাকসু: অবশেষে ভোট গোণা শেষ, তবে ফল ঘোষণা সন্ধ্যায়

ছবি

জাবি: রোববার ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ

ছবি

জাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতে পারে শনিবার সন্ধ্যায়

ছবি

জাকসু: এবার বেলা ১টার মধ্যে ভোট গণনা ‘শেষের আশা’

ছবি

জাকসু: ৪০ ঘণ্টা পরও গণনা শেষ হয়নি

জাকসু: ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অনিয়মের অভিযোগে বিবৃতি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের, অবগত নয় তালিকাভুক্ত শিক্ষক

ছবি

জাকসু: অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন তিন শিক্ষক

ছবি

প্রশ্নবিদ্ধ জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনা চলছেই

tab

প্রাণ ফিরল ঢাবি ক্যাম্পাসে

১৮ মাস পর স্তব্ধতা ভেঙে মুখর

খালেদ মাহমুদ, ঢাবি ক্যাম্পাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলেছে । ক্যাম্পাস হয়ে উঠলো আনন্দমুখর। দীর্ঘ বিরতির পর সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর কুশোল বিনিময় করে একে অপরে -সংবাদ

মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দীর্ঘ ১৮ মাসের অচলায়তন ভেঙে আবারও চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। করোনার নিদারুণ কষাঘাতে নির্জনতা আর নিস্তব্ধতা ভেঙে আবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে ঢাবি ক্যাম্পাস।

দীর্ঘ সময়ের পর ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার শেষ ধাপে খুলে দেয়া হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা আসতে থাকেন তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ফুল ও চকলেট দিয়ে বরণ করে নেয় হল কর্তৃপক্ষ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অন্তত এক ডোজ টিকা নেয়ার প্রমাণপত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সাপেক্ষে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করতে পারবেন। সেই ঘোষণার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকেই শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে শুরু করেন তাদের নিজ নিজ হলে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল পরিদর্শনে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান। হল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে আমাদের জন্য একটি আনন্দের দিন, একেবারে ঈদের দিনের মতো। প্রতিটি হলে সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিচ্ছে। এই হল ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের জন্য, তাদের পেয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও একটি প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের স্থবিরতার অবসান ঘটলো।’ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘যেভাবে শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতাবোধ তৈরি করে টিকা কর্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। দুটি সূচক আমাদের সামনে আছে যে দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আনার অনুকূলে যায়। একটি হলো সংক্রমণ হার, যেটা একেবারে নিচের দিকে এবং আরেকটি হলো শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের আওতায় আসার যে হার সেটিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দুটিই আশাব্যঞ্জক সূচক। এই দুটি সূচক বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারব।’

হল খোলার পর থেকেই মুখে মাস্ক, কাঁধে ব্যাগ, দুহাত ভরে প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র নিয়ে ‘সেকেন্ড হোম’ খ্যাত আপন নীড়ে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা। এর মাধ্যমে অবসান ঘটলো করোনাকালীন দীর্ঘদিনের স্থবিরতার। এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির এক জরুরি সভায় ১০ তারিখ থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের জন্যও হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া সভায় ১৬ তারিখ থেকে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর খুলে দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও বিভাগের সেমিনার। গ্রন্থাগার খুলে দেয়ায় সেখানেও বেড়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।

এদিকে সোমবার (৪ অক্টোবর) শিক্ষার্থীদের শতভাগ করোনা টিকা নিশ্চিত করতে অনস্পট নিবন্ধনে টিকাদান শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার। যাদের এনআইডি নাই তারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিতে পারছেন।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে। বিকেল হতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, বটতলা, কার্জন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন পর হল খোলায় তাদের মাঝে উৎসব আমেজ তৈরি হয়েছে। হল প্রশাসনের আন্তরিকতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আজকের দিনকে ঈদের দিনের মতই মনে হচ্ছে।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী রকিব রানা মাসুদ বলেন, ‘করোনা মহামারীর কারণে হল বন্ধ হওয়ার পর থেকেই শুধু চাতক পাখির মতো আশায় ছিলাম কবে আবার হল খুলবে। আজ সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো। আজকে সত্যিই ঈদের দিনের মতো লাগছে। আজকে হলে উঠার এই অনুভূতি ভাষায় বুঝানো যাবে না।’

মাস্টার দা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন বলেন, ‘অনেকদিন পর হলে প্রবেশ করে ভালো লাগছে। এতদিন বাসায়, মেসে অনেক কষ্টে ছিলাম। হলে একটা ভালো পড়াশোনার পরিবেশ পাওয়া যাবে।’

মঙ্গলবার সকালে কয়েকটি আবাসিক হলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা লাইন ধরে হলে ঢুকছেন। ফটকের ভেতর হল প্রাধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের অন্তত এক ডোজ টিকা নেয়ার প্রমাণপত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র আছে কি না, তা যাচাই করে দেখছেন। মাপা হচ্ছে সবার শরীরের তাপমাত্রা। কোন হলে শিক্ষার্থীদের ফুল আবার কোথাও চকলেট দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এ সময় সব হলেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধিসম্বলিত প্রচারপত্র বিলি করা হয়

মঙ্গলবার সকাল থেকেই হলের কেন্টিনগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, বিজয় একাত্তর হল, কবি জসিম উদ্দিন হল, মাস্টার দ্যা সূর্যসেন হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, অমর একুশে হল, রোকেয়া হল এবং পিজে হার্টস হল। মঙ্গলবার সকাল থেকে খাবার বিতরণ শুরু না করে পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয় মাথায় রেখে দুপুর থেকে খাবার চালু করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শামসুন নাহার হল এবং স্যার এ এফ রহমান হলে। হল খোলায় খুশি কেন্টিন মালিক-কর্মচারীরাও।

প্রতিটি হলে বসানো হয়েছে হাত ধোয়ার বেসিন। হলের দেয়ালগুলো চুনকাম ছাড়াও প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজও শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলগুলোতে গণরুম বন্ধ রেখেছেন।

back to top